রীমা কুমিল্লা থেকে, by সাপ্তাহিক ২০০০
কালের সাী হয়ে মানুষের ভালো লাগার মুহূর্ত এনে দেওয়ার জন্য আজো দাঁড়িয়ে আছে কুমিল্লা শহরে বাদুড়তলায় শতবর্ষ পুরনো মহুয়া বৃটি।
শীত আসার আগে কুমিল্লা শহরের বাদুড়তলা ও ঝাউতলার প্রধান সড়ক ধরে যাতায়াত করতে গেলে বাতাসে একটা পোলাও পোলাও গন্ধ ভেসে আসে। অনেকে ভাবেন হয়তো আশপাশে কোথায় বিয়ে বা অনুষ্ঠানাদির আয়োজন চলছে। এই শহরে যারা নতুন বা অভ্যাগত তাদের ধারণা এমনই হয়। কিন্তু মহুয়া ফুলের এমন মাতাল করা গন্ধ এ শহরকে মাতাল করে রাখে। কুমিল্লার একমাত্র মহুয়া গাছটি শহরের ঝাউতলার বাদুড়তলা মধ্যবর্তী পথে কালের নিদর্শন হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। গাছটির বয়স অনুমান করা হচ্ছে প্রায় ২০০ বা এর বেশি। এ গাছের বয়সী লোকজন সবাই গত হয়েছে। জানতে চাওয়া হলে সবার একই কথা, আমি ছোটকাল থেকেই এ মহুয়া গাছটি দেখে আসছি। সুতরাং এর বয়স কেউ এখনো ঠিক করে বলতে পারছে না। তবে লোককাহিনী আছে, কোনো সাধু এ স্থানটিতে বসে ধ্যান করতেন এবং তার মৃত্যুও হয়েছিল এ স্থানে। সাধুর জাতভেদ কারো জানা ছিল না বলে কেউ আগ্রহ করে তার লাশটি সৎকার করেনি। তখন এ স্থানটি ছিল পরিত্যক্ত একটি স্থান। তাই সেখানেই তার লাশ পচে-গলে মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। কিন্তু বছর না ঘুরতে নিজে নিজে নাকি এ মহুয়া গাছটির উৎপত্তি হয় ঠিক সাধুর মরদেহ পড়ে থাকা স্থানটি থেকে এবং স্থানটির অদূরে ছিল এক ধোপিনীর বাসস্থান। একরাতে তাকে নাকি স্বপ্ন দেখায় এখানে যে গাছটির জন্ম হয়েছে সে-ই সাধু। কারণ সে সাধু ছিল অমর। পৃথিবীতে সে থাকবে তবে গাছ হয়ে। গাছটির ফুল ফুটবে, সুগন্ধ মোহিত করবে এ চরাচর। তাছাড়া বৌদ্ধ অধ্যুষিত তৎকালীন কুমিল্লার অনেক ভিু গাছটির ছায়াতলে বসে ধ্যানমগ্ন হতেন। পুরো এলাকাটি তখন ছিল ঘন জঙ্গলে পূর্ণ। কাছেই ধর্মসাগর দিঘি। দিঘি দর্শনার্থীদের অনেকেই গাছটির ছায়াতলে বিশ্রাম নিতেন। সনাতনধর্ম অবলম্বনকারীরা ভাবতেন এ গাছের নিবিড় ছায়া ও ফুলের মাতাল গন্ধ নাকি শারীরিক মঙ্গল এনে দিত।
আগরতলার মহারাজের পতœী নাকি একবার কুমিল্লা বেড়াতে এসে এ মহুয়া গাছটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং গাছটি আগরতলাতে হস্তান্তর করার জন্য বহু চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু গাছটি বেশ বড় হয়ে যাওয়াতে রানীর সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। তবে তিনি পরবর্তী সময়ে এ গাছের বীজ সংগ্রহ করে নিয়েছিলেন।
এ মহুয়া গাছে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে ফুল ফোটে। এ ফুলের এত সুগন্ধ যে, রাস্তা দিয়ে লোক যাতায়াত করতে একবার হলেও থমকে দাঁড়ায় ফুল দেখার জন্য। বাদুড়তলার লোকেরা বলেন, এ ফুল যখন ফোটে তখন সারা এলাকা ফুলের গন্ধে মম করে। আশ্চর্যের বিষয় গাছটি বেশির ভাগ সময় পত্রহীন থাকে। তবে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসের দিকে পাতা হয়ে গাছটি পুনরায় জীবন পায়। ফুল আসে। ফোটার পর ফুলের স্থায়িত্বকাল এক সপ্তাহ। তবে বছরে একবারই ফোটে। এ ফুলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ফুল ফুটলে মৌমাছি ও বাদুড়দের আনাগোনা দেখা যায়। জনশ্র“তি আছে, গাছটির যখন যৌবনকাল ছিল ফুল ফুটলে প্রচুর বাদুড়ের আনাগোনা হতো। বাদুড়ের শব্দে এলাকার মানুষের মধ্যে বিরক্ত এসে যেত। বাদুড় তাড়ানোর জন্য এলাকাবাসী টিন বেঁধে শব্দের মাধ্যমে চেষ্টা চালাত। বাদুড় অধ্যুষিত এ এলাকার নাম সম্ভবত তাই হয়েছে বাদুড়তলা।
বাদুড়তলার লোকজন এ মহুয়া ফুলের গাছটিকে এলাকার ঐতিহ্য মনে করেন। মহুয়া ফুলের মধ্যে এক ধরনের মাদকতার প্রভাব আছে। এ গাছের ফল খেলে মানুষ মাতাল হয়ে যায়Ñ এ কথাও প্রচলিত আছে। স্থানীয় একজন অধিবাসী মাহফুজুল আলম চৌধুরী বলেন, শহরের ঐতিহ্য বহন করা এ গাছের যতœ ও সুষ্ঠু পরিচর্যা করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে পৌরসভা দায়িত্ব নিতে পারে, কারণ গাছ শহরে সৌন্দর্র্য বর্ধন করে। বিশেষ করে এ জাতীয় বিরল প্রজাতির গাছ।
মহুয়া গাছটিকে সংরণ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে এলাকাবাসীও। গত বছর কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় গাছ রণাবেণের জন্য ফুটপাথের কংক্রিট থেকে গাছটিকে আলগা করে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। তাছাড়া একই বছর ফটো অ্যাসোসিয়েশনের কুমিল্লা শাখার সদস্যরা গাছটি সংরণের জন্য এগিয়ে আসেন। গাছের গায়ে কোনো পোস্টার ও পেরেক ঠোকা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু কর্তব্যজ্ঞানহীন মানুষ তাদের বিভিন্ন ব্যবসার প্রচারের জন্য গাছটিতে পোস্টার, টুকরো সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে শতাব্দীর পুরনো এ বৃটির তিসাধন করছে।
শীত আসার আগে কুমিল্লা শহরের বাদুড়তলা ও ঝাউতলার প্রধান সড়ক ধরে যাতায়াত করতে গেলে বাতাসে একটা পোলাও পোলাও গন্ধ ভেসে আসে। অনেকে ভাবেন হয়তো আশপাশে কোথায় বিয়ে বা অনুষ্ঠানাদির আয়োজন চলছে। এই শহরে যারা নতুন বা অভ্যাগত তাদের ধারণা এমনই হয়। কিন্তু মহুয়া ফুলের এমন মাতাল করা গন্ধ এ শহরকে মাতাল করে রাখে। কুমিল্লার একমাত্র মহুয়া গাছটি শহরের ঝাউতলার বাদুড়তলা মধ্যবর্তী পথে কালের নিদর্শন হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। গাছটির বয়স অনুমান করা হচ্ছে প্রায় ২০০ বা এর বেশি। এ গাছের বয়সী লোকজন সবাই গত হয়েছে। জানতে চাওয়া হলে সবার একই কথা, আমি ছোটকাল থেকেই এ মহুয়া গাছটি দেখে আসছি। সুতরাং এর বয়স কেউ এখনো ঠিক করে বলতে পারছে না। তবে লোককাহিনী আছে, কোনো সাধু এ স্থানটিতে বসে ধ্যান করতেন এবং তার মৃত্যুও হয়েছিল এ স্থানে। সাধুর জাতভেদ কারো জানা ছিল না বলে কেউ আগ্রহ করে তার লাশটি সৎকার করেনি। তখন এ স্থানটি ছিল পরিত্যক্ত একটি স্থান। তাই সেখানেই তার লাশ পচে-গলে মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। কিন্তু বছর না ঘুরতে নিজে নিজে নাকি এ মহুয়া গাছটির উৎপত্তি হয় ঠিক সাধুর মরদেহ পড়ে থাকা স্থানটি থেকে এবং স্থানটির অদূরে ছিল এক ধোপিনীর বাসস্থান। একরাতে তাকে নাকি স্বপ্ন দেখায় এখানে যে গাছটির জন্ম হয়েছে সে-ই সাধু। কারণ সে সাধু ছিল অমর। পৃথিবীতে সে থাকবে তবে গাছ হয়ে। গাছটির ফুল ফুটবে, সুগন্ধ মোহিত করবে এ চরাচর। তাছাড়া বৌদ্ধ অধ্যুষিত তৎকালীন কুমিল্লার অনেক ভিু গাছটির ছায়াতলে বসে ধ্যানমগ্ন হতেন। পুরো এলাকাটি তখন ছিল ঘন জঙ্গলে পূর্ণ। কাছেই ধর্মসাগর দিঘি। দিঘি দর্শনার্থীদের অনেকেই গাছটির ছায়াতলে বিশ্রাম নিতেন। সনাতনধর্ম অবলম্বনকারীরা ভাবতেন এ গাছের নিবিড় ছায়া ও ফুলের মাতাল গন্ধ নাকি শারীরিক মঙ্গল এনে দিত।
আগরতলার মহারাজের পতœী নাকি একবার কুমিল্লা বেড়াতে এসে এ মহুয়া গাছটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং গাছটি আগরতলাতে হস্তান্তর করার জন্য বহু চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু গাছটি বেশ বড় হয়ে যাওয়াতে রানীর সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। তবে তিনি পরবর্তী সময়ে এ গাছের বীজ সংগ্রহ করে নিয়েছিলেন।
এ মহুয়া গাছে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে ফুল ফোটে। এ ফুলের এত সুগন্ধ যে, রাস্তা দিয়ে লোক যাতায়াত করতে একবার হলেও থমকে দাঁড়ায় ফুল দেখার জন্য। বাদুড়তলার লোকেরা বলেন, এ ফুল যখন ফোটে তখন সারা এলাকা ফুলের গন্ধে মম করে। আশ্চর্যের বিষয় গাছটি বেশির ভাগ সময় পত্রহীন থাকে। তবে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসের দিকে পাতা হয়ে গাছটি পুনরায় জীবন পায়। ফুল আসে। ফোটার পর ফুলের স্থায়িত্বকাল এক সপ্তাহ। তবে বছরে একবারই ফোটে। এ ফুলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ফুল ফুটলে মৌমাছি ও বাদুড়দের আনাগোনা দেখা যায়। জনশ্র“তি আছে, গাছটির যখন যৌবনকাল ছিল ফুল ফুটলে প্রচুর বাদুড়ের আনাগোনা হতো। বাদুড়ের শব্দে এলাকার মানুষের মধ্যে বিরক্ত এসে যেত। বাদুড় তাড়ানোর জন্য এলাকাবাসী টিন বেঁধে শব্দের মাধ্যমে চেষ্টা চালাত। বাদুড় অধ্যুষিত এ এলাকার নাম সম্ভবত তাই হয়েছে বাদুড়তলা।
বাদুড়তলার লোকজন এ মহুয়া ফুলের গাছটিকে এলাকার ঐতিহ্য মনে করেন। মহুয়া ফুলের মধ্যে এক ধরনের মাদকতার প্রভাব আছে। এ গাছের ফল খেলে মানুষ মাতাল হয়ে যায়Ñ এ কথাও প্রচলিত আছে। স্থানীয় একজন অধিবাসী মাহফুজুল আলম চৌধুরী বলেন, শহরের ঐতিহ্য বহন করা এ গাছের যতœ ও সুষ্ঠু পরিচর্যা করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে পৌরসভা দায়িত্ব নিতে পারে, কারণ গাছ শহরে সৌন্দর্র্য বর্ধন করে। বিশেষ করে এ জাতীয় বিরল প্রজাতির গাছ।
মহুয়া গাছটিকে সংরণ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে এলাকাবাসীও। গত বছর কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় গাছ রণাবেণের জন্য ফুটপাথের কংক্রিট থেকে গাছটিকে আলগা করে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। তাছাড়া একই বছর ফটো অ্যাসোসিয়েশনের কুমিল্লা শাখার সদস্যরা গাছটি সংরণের জন্য এগিয়ে আসেন। গাছের গায়ে কোনো পোস্টার ও পেরেক ঠোকা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু কর্তব্যজ্ঞানহীন মানুষ তাদের বিভিন্ন ব্যবসার প্রচারের জন্য গাছটিতে পোস্টার, টুকরো সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে শতাব্দীর পুরনো এ বৃটির তিসাধন করছে।
No comments:
Post a Comment