Search This Blog

FCO Travel Advice

Bangladesh Travel Advice

AFRICA Travel Widget

Asia Travel Widget

Sunday, January 2, 2011

সবুজ অরণ্য আর পাহাড়ি হ্রদের হাতছানি কাপ্তাই

সবুজ অরণ্য আর পাহাড়ি হ্রদের হাতছানি কাপ্তাই

রেজাউল করিম, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
পাহাড়ি কন্যা কর্ণফুলীর শান্ত-শীতল জলরাশিসমৃদ্ধ হ্রদ আর সবুজ বনানি পাহাড়ের স্বপ্নিল জনপদ কাপ্তাই পার্বত্যাঞ্চল এখন পর্যটকদের স্বপ্নরাজ্য। রাঙামাটি পার্বত্য জেলার মধ্যে কাপ্তাই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে খ্যাত। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, উঁচু-নিচু পাহাড় আর সবুজ অরণ্যানি, কর্ণফুলী নদীর জলতরঙ্গ আর চোখ জুড়ানো নীল জলরাশির কাপ্তাই লেক প্রতিনিয়তই পর্যটকদের দেয় স্বপ্নের হাতছানি। অপরূপা কাপ্তাই এখন শীত মৌসুম শুরু হতে না হতেই শত শত পর্যটকের পদচারণায় মুখর।
কাপ্তাইয়ের আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে কাপ্তাই ৪ রাইফেলস ব্যাটালিয়ন পরিচালিত প্যানোরমা জুম রেস্তোরাঁ, কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্ক। পাহাড়, প্রকৃতি, হ্রদ আর শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ এখানকার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কাপ্তাই জুম রেস্তোরাঁর উল্টোদিকে নদীর অপর পাড়ে রয়েছে ওয়াগ্গাছড়া চা বাগান। কর্ণফুলী নদী পার হয়ে ওয়াগ্গা চা বাগান পরিদর্শন করতে পারেন নির্বিঘ্নে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখানে রয়েছে ওয়াগ্গা বিজিবির (সাবেক বিডিআর) সশস্ত্র প্রহরা। এ ছাড়া আছে কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্ক। এ পার্ক সমৃদ্ধ হয়েছে নানা জীববৈচিত্র্যে। একটু নিরিবিলিতে দাঁড়ালেই দেখতে পাবেন বানর, হরিণ ও নানা প্রজাতির পশুপাখির সমারোহ। ন্যাশনাল পার্ক ও জুম রেস্তোরাঁয় পিকনিক কর্নার এবং শুটিং স্পটসহ সব ধরনের বিনোদন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
আপনাকে মুগ্ধ করার জন্য আরও রয়েছে কাপ্তাই হ্রদ। কাপ্তাই আর রাঙামাটির মাঝখানে এক বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিস্তৃত বিশাল স্ফটিক নীল জলের এ কৃত্রিম হ্রদ। পানিবিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে এ হ্রদ সৃষ্টি হলেও এর কৃত্রিমতা স্বাভাবিক সৌন্দর্যকেও যেন ছাড়িয়ে গেছে। বাঁধের উজানে উঁচু পাহাড়ের মাঝখানে সৃষ্ট মনোহরা স্বচ্ছ নীল জলরাশি কখনো সরু নদীর মতো আবার কখনওবা দিগন্ত বিস্তৃত। উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় আদিবাসী পাহাড়ি বিভিন্ন উপজাতির নিবাস। কাপ্তাই হ্রদে ভ্রমণের বা নৌবিহারের স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে কাপ্তাই বিলাইছড়ি, রাঙামাটি, সুভলং, রাঙামাটি চাকমা রাজবাড়ী ইত্যাদি। কাপ্তাই লেক ছাড়াও বাড়তি আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে কাপ্তাই বাঁধ ও কর্ণফুলী পেপার মিল পরিদর্শনের সুযোগ। অপরদিকে নিরেট প্রকৃতির কোলেই গড়ে উঠেছে কাপ্তাইয়ের চিত্মরমের উপজাতি মারমা পল্লী। প্রাচীন ও আধুনিক বৌদ্ধ মন্দির, প্যাগোডা, আধুনিক রেস্টহাউস আর বিপণি বিতান এখানকার অন্যতম আকর্ষণ।
কাপ্তাই যাওয়ার পথে আরও দেখতে পাবেন এক সময়ের এশিয়ার বিখ্যাত কর্ণফুলী পেপার মিল, বাংলাদেশের একমাত্র কাপ্তাই পানিবিদ্যুত্ কেন্দ্র, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর শহীদ মোয়াজ্জেম প্রশিক্ষণ ঘাঁটি, বাংলাদেশ টিম্বার অ্যান্ড প্লাইউড ইন্ডাস্ট্রিজ, কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কের বর্ণিল বনাঞ্চল ও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য ইত্যাদি। এসব পরিদর্শনের জন্য পূর্বানুমতির প্রয়োজন হয়।
আপনি ঢাকা থেকে সড়ক, রেল বা বিমানে করে চট্টগ্রাম হয়ে সরাসরি কাপ্তাই যেতে পারেন। চট্টগ্রাম শহর থেকে কাপ্তাইয়ের দূরত্ব মাত্র ৫০ কিলোমিটার। অপরদিকে ঢাকা থেকে সরাসরি কাপ্তাই পর্যন্ত বাস সার্ভিস রয়েছে। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে চট্টগ্রাম হয়ে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি গেটলক সার্ভিসে কাপ্তাই যেতে পারেন। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের অবস্থা খুবই ভালো। কাপ্তাই পৌঁছে হ্রদের জেটি ঘাঁট থেকে ইঞ্জিনচালিত দেশি নৌকা বা স্থানীয় সাম্পানে করে পূর্ব-দক্ষিণে সীমান্তবর্তী থানা সদর বিলাইছড়ি, উত্তরের জেলা শহর রাঙামটি, রাঙামাটির অদূরে শিলাময় পাহাড়ঘেরা শুভংল, চাকমা রাজার বাড়ি প্রভৃতি স্থানে নৌপথে ভ্রমণ করতে পারেন। চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি রাঙামটি গিয়েও কাপ্তাই হ্রদে ভ্রমণ করা যায়। শুভলংয়ের পথে ছোট-বড় অনেক ঝরনা চোখে পড়বে। রাঙামাটি ঝুলন্ত ব্রিজ পর্যটকদের জন্য একটি মনোরম আকর্ষণীয় স্থান। কাপ্তাই থেকে সড়কপথে রাঙামাটির দূরত্ব মাত্র ২৪ কিলোমিটার।
কাপ্তাইয়ে সমস্যা একটি আর সেটি হলো থাকা ও খাওয়া। রাঙামাটি জেলা শহরে পর্যটকদের উন্নত থাকা-খাওয়ার যথেষ্ট ব্যবস্থা থাকলেও কাপ্তাইয়ে সেটি গড়ে ওঠেনি। তবে সরকারি কয়েকটি সংস্থার বেশকিছু রেস্টহাউস রয়েছে। যেখানে অনুমতি সাপেক্ষে ভালো থাকা ও খাওয়ার সুব্যবস্থা আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এসব রেস্টহাউসে থাকতে পারেন। পর্যটন শহর উন্মুখ প্রতীক্ষায় আপনারই জন্য।

No comments:

Post a Comment