Search This Blog

FCO Travel Advice

Bangladesh Travel Advice

AFRICA Travel Widget

Asia Travel Widget

Thursday, January 6, 2011

অতিথি পাখির কলতানে মুখর বাইক্কা বিল

অতিথি পাখির কলতানে মুখর বাইক্কা বিল

আতাউর রহমান কাজল, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার)
একটু উষ্ণতার খোঁজে প্রতিবছরই ঝাঁকে ঝাঁকে আসে অতিথি পাখি। শীতের কুয়াশার চাদর গায়ে জড়িয়ে হাজার হাজার অতিথি পাখির কলতানে আর ডানা ঝাপটানোর শব্দে এখন মুখর বাইক্কা বিল। সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে ছুটে আসা এই পাখিরা মুখর করে তুলেছে পুরো এলাকা। এবার আগের চেয়ে বেশি বিচিত্র রং আর হরেক প্রজাতির অতিথি পাখির সমাগম হয়েছে সিলেটের শ্রীমঙ্গলের এই বিলে।
প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নিয়োজিত ‘ইন্টিগ্রেটেড প্রটেকটেড এরিয়া কো-ম্যানেজমেন্টে’র (আইপ্যাক) সিলেট অঞ্চলের ক্লাস্টার ডিরেক্টর মাজহারুল ইসলাম জাহাঙ্গীর জানান, সুদূর সাইবেরিয়া, উত্তর আমেরিকা, হিমালয় অঞ্চলসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শীতের শুরুতে প্রতি বছর ঝাঁকে ঝাঁকে আসে নানা প্রজাতির পাখি। ওইসব অঞ্চলে যখন শীত তীব্র হয়ে ওঠে ঠিক সেসময় এসব পাখি একটু উষ্ণতা ও খাদ্যের অন্বেষণে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে দলবেঁধে। এসব পাখির কিছু অংশ আমাদের দেশের বিভিন্ন হাওর, বিল ও জলাশয়ে ছুটে আসে নিরিবিলি একটু আশ্রয়ের সন্ধানে। এবার বাইক্কা বিলে আসা অতিথি পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—রাজসরালী, পিনটেল, লেঞ্জাহাঁস, সাদাবক, জলপিপি, পানমুরগি, কাস্তেচড়া, বেগুনি কালেম, বালিহাঁস, ভুতিহাঁস, পাতিসরালী, পানকৌড়ি, ঈগলসহ আরও অনেক জাতের পাখি।
আইপ্যাক সূত্র জানায়, শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের বাইক্কা বিলে পাখি শিকারিদের উপদ্রব কমে যাওয়ায় এবং জলজ উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়ায় এখানে অতিথি পাখির আগমন বেড়েই চলেছে। ইউএস এইডের তত্ত্বাবধান ও অর্থায়নে বাইক্কা বিল মত্স্য অভয়াশ্রম গড়ে তোলার পর নিরুপদ্রব বাইক্কা বিল এখন অতিথি পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ফলে আগের চেয়ে আরও বিচিত্র পাখির ঝাঁক ছুটে আসছে। বাড়ছে পাখির সংখ্যাও।
হাওরপাড়ের বাসিন্দা মো. মিন্নত আলী জানান, নভেম্বরের শুরু থেকেই হাওরে অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে। জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের আগমন অব্যাহত থাকবে। শীত শেষে মার্চে গ্রীষ্মের আভাস পেলে এসব পাখি আবার ফিরে যাবে আপন নীড়ে। এরই মধ্যে এ বিলের সৌন্দর্য বেড়ে গেছে অতিথি পাখিদের সমারোহে। নিরাপদ আশ্রয়ে মেতে উঠেছে জলকেলি আর ডুবসাঁতারে। কখনও তারা ঝাঁকে ঝাঁকে চক্রাকারে উড়ে বেড়াচ্ছে বিলের আকাশজুড়ে। কেউবা জলের মধ্যে খাবার জোগাড়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। আগত এসব পাখির কলকাকলি আর কিচিরমিচির শব্দে হাওরে এক মধুময় আবহ সৃষ্টি করে, যা সহজেই মন কাড়ে দেশি-বিদেশি পাখিপ্রেমিক আর পর্যটকদের।
মাজহারুল ইসলাম জাহাঙ্গীর আরও জানান, অতিথি পাখিরা আমাদের পরিবেশের ওপর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাখির বিষ্ঠা জলাভূমির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া পাখিরা কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসলের ক্ষতি রোধ করতে সহায়তা করে। পাখির বিষ্ঠার কারণে দ্রুত বেড়ে ওঠে জলজ উদ্ভিদ, যা খেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পায় তৃণভোজী মাছ। এছাড়াও পাখিদের একটি বৃহত্ অংশ জলজ আগাছার অতিবৃদ্ধি রোধ করে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অতিথি পাখিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
শীতের এই অতিথিদের দেখতে বাইক্কা বিলে প্রতিদিন আসছেন দেশি-বিদেশি পর্যটক। পাখিদের জলকেলি আর নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে এখানে নির্মিত হয়েছে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। টাওয়ারে বসে বাইনোকুলার ও টেলিস্কোপ দিয়ে হাওরের প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করা যায়। নৌকায় চড়ে বাইক্কা বিলের অপরূপ সৌন্দর্য দেখা আর পাখিদের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগও রয়েছে। অনেক বিদেশি পর্যটক এই বিলে এসে ডকুমেন্টারি ফিল্মও তৈরি করেন।
Source: Daily Amardesh, 6th January,2011

অতিথি পাখির কলকাকলীতে মুখরিত শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিল

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা : শীত নামার প্রারম্ভেই মাছ ও পাখির নিরাপদ অভয়াশ্রম শাপলা সালুক পূর্ণ চোখ ধাঁধাঁনো শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিলে আসতে শুরু করেছে হাজার হাজার অতিথি পাখি। হাজার হাজার দেশী বিদেশী পাখির উড়াউড়ি, কিচির মিচির আর কলধ্বনিতে মুখরিত। বরফের দেশ সুদুর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, জিনজিয়াং, নেপাল, ভুটান, ভারত ও পাকিস্তান থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে এসব পাখি আসছে। যে সব দেশে শীত মওসুমে ভয়াবহ ঠান্ডা আর তাপমাত্রা নেমে যায় হিমাঙ্কের অনেক নিচে। এসব দেশ থেকে কনকনে ঠান্ডা থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য পাড়ি জমায় অতিথি পাখিরা। শীত মওসুমে বরফের দেশে পাখিদের প্রকট খাদ্যাভাব দেখা দেয়। তাপমাত্রা ও আবহাওয়া প্রতিকূল হয়ে পড়ে জীবনধারণের জন্য। আর সে কারণেই প্রতি বছর বিশেষ করে শীত মওসুমে পাখিরা মাইগ্রেট করে থাকে। উড়ে যায় দেশ-দেশান্তরে। যেখানে নেই খাদ্যাভাব।
শীত মওসুম পর্যন্ত এসব অতিথি পাখি বাইক্কা বিলে বিচরণ করে। শীত কমতে শুরু করলে আবার এসব অতিথি পাখি নিজ দেশে চলে যায়। তবে বাইক্কা বিলে আমাদের দেশীয় পাখির সাথে প্রেমে আবদ্ধ হয়ে অনেক পাখি নিজ দেশের মায়া ছেড়ে এখানেই স্থায়ী আবাস গড়ে। দেশের একমাত্র সরকার অনুমোদিত ও বৃহৎ পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে বাইক্কা বিল দেশ বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। এ বিলে পাখি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ৩১ ফুট উচ্চতার টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে পর্যটকদের সুবিধার্থে। এটি বাংলাদেশে প্রথম জলাভূমি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। তাছাড়া দিগন্ত বিস্তৃত শাপলা শালুক আর হিজল করচের সমারোহ, হাজার হাজার পাখির উড়াউড়িকে খুব কাছে থেকে দেখার জন্য রয়েছে দুরবীণ ও বাইনোকুলার। পর্যটক ও দর্শনার্থীর জন্য নির্মিত পর্যবেক্ষণ দ্বিতল বিশিষ্ট এ টাওয়ার থেকে দুরবীণ ও বাইনোকুলার দিয়ে পাখি এবং বিশাল বিস্তৃত হাইল হাওরের সৌন্দর্য্যপুর্ণ ফুটন্ত শাপলায় ভরপুর জলাভূমি পর্যবেক্ষণ করা যায়। টাওয়ারের বিভিন্ন তলায় রয়েছে পাখি ও মাছের ছবিসহ পরিচিতি। এখানে এলেই পর্যটকদের আলাদা এক আনন্দ আর অনুভূতিতে পাখির জগতে নিয়ে যায়। শীতের মওসুম ছাড়াও এই সুবিশাল হাইল-হাওরের বাইক্কা বিলে হাজার হাজার পাখিদের জলকেলি, উড়াউড়ি আর কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত থাকে। এ বছরের শীতের শুরু থেকে শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিলের মৎস্য অভয়াশ্রম এলাকায় অতিথি পাখির আগমন উল্লেখযোগ্য এবং সংখ্যাও অন্যান্যবারের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানালেন আইপ্যাক সংশ্লিষ্টরা।
প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা ও দুর্যোগের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বিরল প্রজাতির পাখি। হারিয়ে যাওয়া পাখির নিরাপদ আশ্রয় গড়ে উঠেছে শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের বাইক্কা বিলে। এখানে পাখিরা স্বাধীন ও প্রচুর খাবারসহ পেয়েছে বেঁচে থাকার আশ্রয়। তাইতো প্রতি বছর হাজার হাজার অতিথি পাখি ছুটে আসছে নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের সন্ধানে। ভাব জমিয়ে নিচ্ছে আমাদের দেশী পাখিদের সাথে। ক্রমশ সখ্যতা ও প্রেমের বন্ধনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে প্রচুর পাখি। যে দৃশ্য পর্যটকদের এনে দেয় অনাবিল আনন্দ ও সুখ। বিভিন্ন প্রজাতির দেশী-বিদেশী পাখির অভয়াশ্রম বাইক্কা বিলে পর্যটকদের আহবান করে প্রতিনিয়ত। নিজ চোখে না দেখলে দৃশ্য অনুধাবনে অবিশ্বাস্য মনে হলেও দেশের সর্বপ্রথম ও বৃহৎ পাখির মেলা এখন বাইক্কা বিলে।
আদিকাল থেকে বিশাল এ জলাভূমিতে প্রতিবছর শীত মওসুমে লাখ লাখ অতিথি পাখির আগমন ঘটে। বিশেষ করে মেরু অঞ্চলের বরফময় দেশ সাইবেরিয়ার অতিথি পাখি নিয়ে রয়েছে নানা জনশ্রুতি। চলতি মওসুমে হাইল হাওরের বাইক্কা বিলে পাখির সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। হারিয়ে যাওয়া প্রজাতির মধ্যে পানছি কোড়া, ঈগল, কালা মাথা, মেঠে মাথা ঠিটি ইত্যাদি। বিপন্ন পাখিদের অভয়াশ্রম হিসাবে শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরকে আন্তর্জাতিক পাখি এলাকা হিসাবে নির্বাচন করার সামগ্রিক যোগ্যতা রয়েছে।
পাখি আর মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিতির পাশাপাশি হাইল হাওরের বাইক্কা বিলে হিজল-করচসহ বিভিন্ন গাছের সবুজ বনায়নে হাইল হাওরের দৃশ্যপট আরও বদলে দিয়েছে। বাইক্কা বিলের চারদিকে এখন দিগন্তজুড়ে শুধু কেবল চোখজুড়ানো প্রাকৃতিক দৃশ্য আর সবুজের সমারোহ। হিজল করচের হাইল হাওরে যেমনি সবুজের প্রশান্তি এনে দিয়েছে তেমনি সবুজ রূপে সেজেছে। ২-৩ বছর ধরে হাওরের বাইক্কা বিলে আবারও লাল আর সাদা পদ্ম ফুলে ভরে উঠছে। মাঝে মাঝে দেখা যায় বিরল নীল পদ্ম। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে চারিদিক। এরই মাঝে ফুটে রয়েছে পদ্মটুনা। হাওরের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়া এখনো যে সম্ভব তার একটি উদাহরণ এই হাইল হাওরের বাইক্কা বিল। ইউএসআইডি'র সহায়তাপুষ্ট বেসরকারি সংস্থা মাচ প্রকল্প ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ হিসেবে হাইল-হাওরের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ও জীববৈচিত্র রক্ষার জন্য সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করে ২৫০ একর জলাভূমিকে মাছ ও পাখির জন্য অভয়াশ্রম গড়ে হাইল হাওরের অতীতের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করে। বর্তমানে আইপ্যাক তার দেখভাল করছে। হাইল-হাওরের পাড়, ছড়ারপাড় ও রাস্তার পাশে প্রাকৃতিক বাদাবন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য হিজল আর করচ বনায়ন শুরু করে। একই সঙ্গে লাগানো হয় অর্জুন, ক্ষুদিজাম, বট, জারুল, কাইনজাম, ডুমুর, পিটালী ও মেরুল গাছের চারা। এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮৫ হাজার চারা হাইল হাওরে লাগানো হয়েছে। পশু-পাখির নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ জীববৈচিত্র সংরক্ষণ এ প্রকল্পের কাজ। এছাড়া হাইল হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি মাটির ক্ষয়রোধ এবং পরিবেশের উন্নয়নের উদ্দেশ্যেই এ বনায়ন করা হয়েছে। হাইল হাওরে জীববৈচিত্র্য রক্ষার কাজে নিয়োজিত আইপ্যাকের শ্রীমঙ্গল অফিসের সাইড কো-অর্ডিনেটর আমিনুল ইসলাম জানান, হাইল-হাওর থেকে হারিয়ে যাওয়া মাছ, গাছ ও পাখি মাত্র ৫-৬ বছরের ব্যবধানে হাওরে পুনর্বাসিত হতে শুরু করেছে তাছাড়া স্থানীয় মৎস্যজীবীসহ জলাভূমির অন্যান্য উপকারভোগীদের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তিনি আরও জানান, হাওরের কাগাউড়াকান্দি অর্থাৎ বাইক্কাবিলের পূর্বপাড়, বড় গাঙ্গিনার খালের পাড়, সানন্দাবিলের পাড়, জেঠুয়া বিলের পাড়, খইয়া বিলের পাড়, মেদী বিলের পাড় ও রামাইবিলের পাড়সহ প্রায় ১২ কিলোমিটার স্থান এখন হিজল করচসহ গাছের সবুজ আচ্ছাদন তৈরি করেছে। এসব গাছে এখন বাসা বেঁধেছে দেশীয় পাখি। এখানে ৯৮ প্রজাতির মাছের আবাসস্থল এবং ১৬০ প্রজাতির পাখির বিচরণ ক্ষেত্র। সম্প্রতি বার্ড লাইফ ইন্টারন্যাশনাল এ হাওরকে গুরুত্বপূর্ণ পাখি এলাকা হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে তালিকাভুক্ত করেছে।

Source: Daily Sangram, 6th January

বাইক্কা বিলে ১২ হাজার পাখি

বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) | তারিখ: ১৫-০১-২০১০

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে হাইল হাওরের ‘বাইক্কা বিল অভয়াশ্রমে’ এ বছর ১২ হাজারেরও বেশি পাখি এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে শ্রীমঙ্গলে আইপ্যাক কার্যালয়ে পাখিশুমারি শেষে পরিবেশবাদী সংগঠন ওয়েটল্যান্ডস ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ সমন্বয়কারী ইনাম আল হক এ তথ্য প্রকাশ করেন।
‘এশিয়ান ওয়াটার বার্ড সেনসাসের’ উদ্যোগে ইনাম আল হক ওয়েটল্যান্ডস ইন্টারন্যাশনালের দুজন স্বেচ্ছাসেবক ড. পল এম থম্পসন ও নিক ডায়মন্ডকে নিয়ে হাইল হাওরের বাইক্কা বিল অভয়াশ্রমে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিন অবস্থান করে পাখি গণনা করেন।
পাখি-বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক জানান, হাইল হাওরের বাইক্কা বিলে প্রতিবছর পাখির সংখ্যা এবং প্রজাতি দুটোই বেড়ে চলেছে। এ বছর ৪০ প্রজাতির ১২ হাজার ২৫০টি জলচর পাখি বাইক্কা বিলে পাওয়া গেছে। বিলে একটি ডাহুক ও দুটি ফুলুরি হাঁস পাওয়া গেছে। জলচর পাখি ছাড়া আটটি পালাসী কুড়া ঈগল পাওয়া গেছে।
ইনাম আল হক বলেন, দেশি পাখি ডাহুক এখন সচরাচর দেখা যায় না। ফুলুরি হাঁস সাইবেরিয়া, উত্তর-পূর্ব চীন ও জাপানে বেশি দেখা যেত, কিন্তু এখন এরা প্রায় বিপন্ন। পালাসী কুড়া ঈগলও পৃথিবীব্যাপী বিপন্নপ্রায়।
ড. পল এম থম্পসন বলেন, ২০০৯ সালে বাইক্কা বিলে পাখি পাওয়া গিয়েছিল ৩৪ প্রজাতির নয় হাজার ৪০৫টি। এর আগের বছর পাওয়া যায় ৩৭ প্রজাতির সাত হাজার। এ বছর সবচেয়ে বেশি সাড়ে চার হাজারটি রাজ সরালি পাওয়া গেছে। সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে পাতি সরালি, যার সংখ্যা আড়াই হাজার। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পাখির মধ্যে রয়েছে বেগুনি কালেম, পাতি তেলি হাঁস, কটনটি, দলপিপি, নেউপিপি, ধুপনি বক, সাদা বক, কালাপাখ ঠেঙ্গি, সাইবেরিয়ার গিরিয়া হাঁস ও ল্যাঞ্জা হাঁস এবং মধ্য এশিয়ার মরচেরং ভূতি হাঁস।
বাইক্কা বিলের জীববৈচিত্র্য রক্ষার কাজে নিয়োজিত আইপ্যাক প্রকল্পের কর্মকর্তা (মনিটর) তাপস কুমার রায় জানান, ওয়েটল্যান্ডস ইন্টারন্যাশনালের উদ্যোগে ২৫ বছর ধরে বিভিন্ন দেশে জলচর পাখিশুমারি হয়ে থাকে। পাখিশুমারির মাধ্যমে পাওয়া তথ্যগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়।
Source: Daily Prothom-Alo, 15-01-2010

বাইক্কা বিল শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার হাইল হাওরে অবস্থিত বাইক্কা বিল এখন সাদা পদ্মে ভরা। এর আয়তন প্রায় ১০০ হেক্টর। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ অঞ্চলগুলোর অন্যতম এ হাওরটি ৯৮ প্রজাতির মাছের আবাসভূমি এবং ১৬৫ প্রজাতির পাখির বিচরণক্ষেত্র। এখানে রয়েছে দ্বিতল একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। টাওয়ারে বসে পাখি কিংবা জলজ সম্পদ দেখার জন্য রয়েছে বাইনোকুলার ও টেলিস্কোপ। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে বাইক্কা বিলের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা মোটর বাইকে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটের মধ্যেই পেঁৗছানো যায়।
লেখা ও ছবি : বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

Source: Daily Kalerkantho, 22th July -2010

বাইক্কা বিলের মাখনা ফল ইসমাইল মাহমুদ, শ্রীমঙ্গলসুস্বাদু ফল হিসেবে সমাদৃত মাখনা ফল এখন শ্রীমঙ্গলস্থ হাইল হাওরের বাইক্কা বিলে পাওয়া যাচ্ছে। সুপরিচিত মাখনা ফল হাওরপাড় এবং আশপাশ এলাকার মানুষের কাছে 'ফু-কল' নামে পরিচিত। শহুরে বর্তমান প্রজন্মের অনেকের কাছেই ফলটি সম্পূর্ণ অপরিচিত। মাখনা ফলটি হাওরে জন্মানো কাঁটাযুক্ত ও লতানো ভাসমান এক ধরনের উদ্ভিদের ফল। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল ও সদর উপজেলার হাইল হাওরে কিছু কিছু বিলে মাখনা ফলের দেখা মেলে। ইদানীং শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিলে বিলুপ্তপ্রায় মাখনা উদ্ভিদ ব্যাপকভাবে জন্মাতে শুরু করেছে। বিশেষ করে বাইক্কা বিল মৎস্য অভয়াশ্রম ও পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণার পর পাখিদের নিরাপদে বসার জন্য মাখনা উদ্ভিদের প্রসার বেড়েছে। হাওরপাড়ের বাসিন্দারা হাওর থেকে মাখনা ফল সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য প্রতিদিনই পাঠাচ্ছে ঢাকায়। বাইক্কা বিলের প্রায় ১০০ হেক্টর ফল আয়তনের অভয়াশ্রম এলাকায় বর্তমানে হাজার হাজার মাখনা পাওয়া যাচ্ছে। মাখনা ফলটির আকার অনেকটা লাটিমের মত। ফলটির রঙ গাঢ় সবুজ। গাছের পাতা হালকা সবুজ। লতানো গাছ ও ফলের মধ্যে অজস্র তীক্ষ্ন সুচালো কাঁটা রয়েছে। মাখনা ফলের পাতা বিশাল আকৃতির গোলাকার হওয়ার ফলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি পাতার আড়ালে অনায়াসে লুকিয়ে থাকতে পারে। পাতায় পাতায় হেঁটে বেড়ায় পাখির দল। বাইক্কা বিলের মাখনা ফল সংগ্রাহকরা জানান, মাখনা কাঁটাযুক্ত ফল হলেও পানি থেকে তোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফলটির সুচালো কাঁটা সম্পূর্ণ নেতিয়ে পড়ে। প্রতিটি মাখনার ওজন সাধারণত ১৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত হলেও বাইক্কা বিলে অনেক সময় ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের মাখনাও পাওয়া যায়। প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই শতাধিক হাওরপাড়ের মানুষ মাখনা সংগ্রহ করে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের সবুজবাগ, লালবাগ, ভাড়াউড়া, কালাপুর ইউনিয়নের হাজীপুর, বরুনা, সাতগাঁও ইউনিয়নের রুস্তমপুর, ভূনবীর ইউনিয়নের ভিমশী, ভূনবীর ও মির্জাপুর এলাকার হাওরপাড়ের অধিকাংশ অদিবাসী মৌসুমী ফল মাখনা সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। প্রতিদিন গড়ে হাইল হাওর থেকে ৮ থেকে ১২ হাজার কেজি মাখনাফল সংগ্রহ করা সম্ভব। পাইকারি মাখনা ব্যবসায়ীরা ৭/৮ টাকা কেজি হিসেবে আহরণকারীদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পাঠায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, পুরান ঢাকাবাসীর কাছে যথেষ্ট কদর রয়েছে মাখনা ফলের। তাছাড়া মাখনা ফল প্রসাধন শিল্পের কাঁচামাল ও ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বাইক্কা বিল মৎস্য অভয়াশ্রমের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত 'মাঠ' প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা জানান, দেশের জলাশয় ক্রমেই সংকুচিত হওয়ার কারণে মাখনা ফল প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। তাছাড়া হাওর অঞ্চলের উন্মুক্ত জলাভূমি থেকে ধ্বংসাত্মক পদ্ধতিতে মাছ ও মাখনা আহরণের ফলে ফলটি বিলুপ্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি। বিল সেচ করে মাছ ধরার সময় মাখনা উদ্ভিদকে কেটে ফেলা হয়। তাছাড়া অপরিপক্ব মাখনা ফল আহরণ করার ফলেও এসব হ্রাস পায়। মাখনা গাছে কাঁটা থাকার কারণে পদ্ধতিগত নিয়ম ছাড়া মাখনা আহরণের ফলে উদ্ভিদটি অনেক সময় পচে যায়। বাইক্কা বিল ও দেশের বিভিন্ন জলাশয়ে জন্ম নেওয়া মাখনা সঠিক সময়ে পরিপক্ব উপায়ে সংগ্রহ করা হলে বিপুল পরিমাণ মাখনা দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা যাবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন ।
Source: Daily Bangladesh Pratidin, 15th May, 2010

Related Links:

বেড়া নো : ঘুরে আসুন শ্রীমঙ্গল

No comments:

Post a Comment