সুন্দরবনে বানরের ইংরেজি জ্ঞান!
সবুজ হয়ে উঠেছে সুন্দরবন। বেড়েছে বাঘ, বানর ও হরিণসহ প্রাণিকুলের বিচরণ। তাকালেই চোখে পড়ে উড়ন্ত বিচিত্র প্রজাতির পাখির আনাগোনা। বনের বিভিন্ন প্রান্তে হরিণের পাল, বানরের দল, বকের সারি, ওত পেতে থাকা কুমির। চোখে পড়ল ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়াও। সুন্দরী, বাইন, গেওয়া আর কেওড়া গাছে ছেয়ে গেছে পুরো সুন্দরবন। সরেজমিন চাঁদপাই থেকে শুরু করে দুবলার চর, পশ্চিমে চুনকুঁড়ি-হরিণটানা হয়ে সুন্দরবনের শেষ সীমানা কটকার কাছে বলেশ্বর নদ পর্যন্ত ঘনসবুজ বনের দৃশ্য দৃষ্টিকে করে তৃপ্ত। গত বুধবার সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য আর প্রাকৃতিক
মনোমুগ্ধকর এসব দৃশ্য দেখে বিমোহিত হলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লিওনচেন জিগমে ইয়োসার থিনলে। বিশ্বে একক বন হিসেবে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা সর্বাধিক আর বনজুড়ে বাঘের বিচরণের কথা শুনে পুলকিত হন তিনি। নিজেকে বাঘের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, আমি নিজে বাঘের মতো গতি ও অটুট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। বিশ্ব প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে তিনি সুন্দরবনের পক্ষে ভোট দেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তার সফরসঙ্গী মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীদের তার দেশের জনগণকে সুন্দরবনের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে আহ্বান জানান। স্পিডবোটে করমজলসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। করমজলে তিনি হরিণ, কুমির, বানরসহ নানা প্রজাতির পাখির অবাধ বিচরণ দেখে মুগ্ধ হন। তিনি করমজল সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা আর এগুলোর প্রাকৃতিক উপায়ে বেড়ে ওঠার কথা শুনে অবাক হন। বনের সুন্দরী, গেওয়া, গরান, বাইন, কেওড়া, গোলপাতার ঝাড় দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ সময় পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী প্রতীকী একটি বাঘের ক্রেস্ট উপহার হিসেবে তার হাতে তুলে দেন। চলতি বছরকে বিশ্বে 'বাঘ বর্ষ' ঘোষণা করা হয়েছে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাঘ রক্ষায় বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। করমজলের কুমির প্রজনন কেন্দ্রে কুমিরের জ্যান্ত মুরগি খাওয়া ও বানরের ইংরেজি জ্ঞান দেখে রীতিমতো ভড়কে যান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। সুন্দরবনের করমজল এলাকার বানরগুলোকে বনকর্মীরা ইংরেজিতে কাছে আসাসহ নানা শব্দ শিখিয়েছে। ফলে বিদেশি অতিথি গেলে ইংরেজিতে তাদের প্রশ্ন করলে অঙ্গভঙ্গিতে বানরগুলো কাছে এসে নির্দেশ অনুসারে কাজ করে।
২০০৭ সালে আড়াইশ' কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানা সিডরে বিধ্বস্ত সুন্দরবনের ক্ষতবিক্ষত চেহারা চোখে পড়েছে সে সময়। ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার আঘাতেও ক্ষতবিক্ষত হয় সুন্দরবন ও উপকূলীয় এলাকা। এসব দৃশ্যও এ সময় দেখেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কঠোর সিদ্ধান্তে কোনো কিছু স্পর্শ না করায় সুন্দরবন নিজেই নিজের ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে। সিডরের পর বনের ভেঙে পড়া গাছ সরাতে দেয়নি বন বিভাগ। ছিল সব ধরনের সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ। স্থানীয়রা বলেন, এ সিদ্ধান্তের সুফল পাওয়া গেছে। সুন্দরবন নিজেকে বদলে ফেলেছে, পুরনো যৌবন ফিরে পেয়েছে।
বনকর্মীরা জানান, সুন্দরবনের প্রাণীরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। গত ১০ বছর ধরে সুন্দরবনে থাকার অভিজ্ঞতার আলোকে বনকর্মী হানিফ জানান, শীতের সময় গুলবনের হাঁস, লাল ও নীল মাছরাঙা এবার বেশি দেখা যাচ্ছে। হরিণ, বানর ও বন্য শূকরের সংখ্যাও আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। করমজল এলাকার ঘনসবুজ গাছপালা আবার জেগে উঠেছে। গজিয়েছে নতুন পাতা।
এ বিষয়ে বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানান, খুব অল্প সময়ে সুন্দরবন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
১০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিশ্বের বৃহত্তম এ বনের দুই-তৃতীয়াংশ বাংলাদেশের সীমানায়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় এ বনের অবস্থান। অষ্টাদশ শতকের শুরুতে স্থানীয় জমিদার ও বনজীবীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সুন্দরবন বর্তমান আয়তনের দ্বিগুণ ছিল। সুন্দরবনে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড পাওয়ার তথ্য রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সুন্দরী, কেওড়া, গরান, গোলপাতা, পশুর, কাঁকড়া, হেতাল, বলা, সিংড়া, খলসী গাছ বেশি জন্মে। এ বনের প্রাণিজগতে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বহুল আলোচিত হলেও ৩৭৫-এরও বেশি প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে এখানে। যার মধ্যে ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩১৫ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৯১ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া ও ৪৩ প্রজাতির মলাস্কা রয়েছে। লোনাপানির কুমির, বন্য শূকর, বানর, ডলফিন, মেছো ও বনবিড়াল এবং বিখ্যাত চিত্রা হরিণ রয়েছে সুন্দরবনে। ২০০৪ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি_ ইউএনডিপির জরিপ অনুযায়ী, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ৪৪০টি। বাচ্চার সংখ্যা ২১টি। ব্রিটিশ জুয়োলজিক্যাল সোসাইটির হিসাব অনুযায়ী, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ২০০টি। সিডরের আঘাতে একটি ও মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত তিনটি বাঘ মারা গেছে। তবে এসব তথ্য অনেক আগের।
Source: Daily Samakal, 16th January
মনোমুগ্ধকর এসব দৃশ্য দেখে বিমোহিত হলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লিওনচেন জিগমে ইয়োসার থিনলে। বিশ্বে একক বন হিসেবে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা সর্বাধিক আর বনজুড়ে বাঘের বিচরণের কথা শুনে পুলকিত হন তিনি। নিজেকে বাঘের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, আমি নিজে বাঘের মতো গতি ও অটুট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। বিশ্ব প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে তিনি সুন্দরবনের পক্ষে ভোট দেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তার সফরসঙ্গী মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীদের তার দেশের জনগণকে সুন্দরবনের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে আহ্বান জানান। স্পিডবোটে করমজলসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। করমজলে তিনি হরিণ, কুমির, বানরসহ নানা প্রজাতির পাখির অবাধ বিচরণ দেখে মুগ্ধ হন। তিনি করমজল সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা আর এগুলোর প্রাকৃতিক উপায়ে বেড়ে ওঠার কথা শুনে অবাক হন। বনের সুন্দরী, গেওয়া, গরান, বাইন, কেওড়া, গোলপাতার ঝাড় দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ সময় পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী প্রতীকী একটি বাঘের ক্রেস্ট উপহার হিসেবে তার হাতে তুলে দেন। চলতি বছরকে বিশ্বে 'বাঘ বর্ষ' ঘোষণা করা হয়েছে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাঘ রক্ষায় বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। করমজলের কুমির প্রজনন কেন্দ্রে কুমিরের জ্যান্ত মুরগি খাওয়া ও বানরের ইংরেজি জ্ঞান দেখে রীতিমতো ভড়কে যান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। সুন্দরবনের করমজল এলাকার বানরগুলোকে বনকর্মীরা ইংরেজিতে কাছে আসাসহ নানা শব্দ শিখিয়েছে। ফলে বিদেশি অতিথি গেলে ইংরেজিতে তাদের প্রশ্ন করলে অঙ্গভঙ্গিতে বানরগুলো কাছে এসে নির্দেশ অনুসারে কাজ করে।
২০০৭ সালে আড়াইশ' কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানা সিডরে বিধ্বস্ত সুন্দরবনের ক্ষতবিক্ষত চেহারা চোখে পড়েছে সে সময়। ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার আঘাতেও ক্ষতবিক্ষত হয় সুন্দরবন ও উপকূলীয় এলাকা। এসব দৃশ্যও এ সময় দেখেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কঠোর সিদ্ধান্তে কোনো কিছু স্পর্শ না করায় সুন্দরবন নিজেই নিজের ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে। সিডরের পর বনের ভেঙে পড়া গাছ সরাতে দেয়নি বন বিভাগ। ছিল সব ধরনের সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ। স্থানীয়রা বলেন, এ সিদ্ধান্তের সুফল পাওয়া গেছে। সুন্দরবন নিজেকে বদলে ফেলেছে, পুরনো যৌবন ফিরে পেয়েছে।
বনকর্মীরা জানান, সুন্দরবনের প্রাণীরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। গত ১০ বছর ধরে সুন্দরবনে থাকার অভিজ্ঞতার আলোকে বনকর্মী হানিফ জানান, শীতের সময় গুলবনের হাঁস, লাল ও নীল মাছরাঙা এবার বেশি দেখা যাচ্ছে। হরিণ, বানর ও বন্য শূকরের সংখ্যাও আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। করমজল এলাকার ঘনসবুজ গাছপালা আবার জেগে উঠেছে। গজিয়েছে নতুন পাতা।
এ বিষয়ে বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানান, খুব অল্প সময়ে সুন্দরবন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
১০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিশ্বের বৃহত্তম এ বনের দুই-তৃতীয়াংশ বাংলাদেশের সীমানায়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় এ বনের অবস্থান। অষ্টাদশ শতকের শুরুতে স্থানীয় জমিদার ও বনজীবীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সুন্দরবন বর্তমান আয়তনের দ্বিগুণ ছিল। সুন্দরবনে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড পাওয়ার তথ্য রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সুন্দরী, কেওড়া, গরান, গোলপাতা, পশুর, কাঁকড়া, হেতাল, বলা, সিংড়া, খলসী গাছ বেশি জন্মে। এ বনের প্রাণিজগতে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বহুল আলোচিত হলেও ৩৭৫-এরও বেশি প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে এখানে। যার মধ্যে ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩১৫ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৯১ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া ও ৪৩ প্রজাতির মলাস্কা রয়েছে। লোনাপানির কুমির, বন্য শূকর, বানর, ডলফিন, মেছো ও বনবিড়াল এবং বিখ্যাত চিত্রা হরিণ রয়েছে সুন্দরবনে। ২০০৪ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি_ ইউএনডিপির জরিপ অনুযায়ী, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ৪৪০টি। বাচ্চার সংখ্যা ২১টি। ব্রিটিশ জুয়োলজিক্যাল সোসাইটির হিসাব অনুযায়ী, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ২০০টি। সিডরের আঘাতে একটি ও মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত তিনটি বাঘ মারা গেছে। তবে এসব তথ্য অনেক আগের।
Source: Daily Samakal, 16th January
No comments:
Post a Comment