Search This Blog

FCO Travel Advice

Bangladesh Travel Advice

AFRICA Travel Widget

Asia Travel Widget

Monday, January 31, 2011

বাহের দেশে হাঁকাও গাড়ি

বাহের দেশে হাঁকাও গাড়ি রাসেদ শাহএইখানে ভোর নামে শিশিরের শব্দে
এইখানে সন্ধ্যারা পাতা ঝরায় শাল-সেগুনের বনে
তবু, কোথাও উধাও হয়েছে আজ নাগরিক মননে_
নিধুয়া প্রান্তর কুয়াশার শরীরে
নতুন করে বানানো খড়ের 'ছই' বসানো এত গরুর গাড়ি যখন শাল-সেগুনের ছোট্ট বনটা ছেড়ে বের হলো অত ভোরে, তখন আমরা নিজেদের পাগলামিতে নিজেরাই মুগ্ধ হয়ে পড়েছি। ফুলকপি, শিম, মটরশুঁটি ক্ষেত পার হয়ে যখন কৃষকের খোলা পার হতে চলেছে গরুর গাড়ির শোভাযাত্রা, তখন কুয়াশা ভেদ করে যেন ভেসে এল এক সম্ভাষণ : বাহে...কোন্ঠে যাছেন? বিয়াবাড়ি নাকি বাহে?ঝিরঝিরে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ছে ভোররাত থেকেই। কৃষকের উঠানে মিনারের মতো পাঁজা করা খড়ের স্তূপের আড়াল ভেদ করে শ্মশ্রুমণ্ডিত সরল এক বৃদ্ধের মুখে ফুটে উঠল নরম হাসি। অবাক বিস্ময়ে শহুরে মানুষের কাণ্ডকারখানা দেখে বুঝে উঠল না কিছুই। তাঁর প্রশ্নের তেমন কোনো জবাবও দিল না কেউ, শুধু হাসল গাড়োয়ানরা।রাতভর গান, উল্লাস আর সীমাহীন আড্ডা চলেছে গাছের গুঁড়ি জ্বালানো আগুনের পাশে গোল হয়ে। সাঁওতাল মেয়েরা কোথাও নেচেছে আজ আঁচলে মনসার ফণা তুলে, মাদল বাজিয়ে নেচেছে হাত ধরে সাঁওতাল ছেলেরা। বনকুটিরের পাশে এক ছোট্ট নদী_নাম তার নর্ত। হয়তো বা নদী সে আপন মনে নৃত্যরতা_চলেছিল এঁকেবেঁকে বনের সবুজের সঙ্গে কথা কইতে কইতে। কে গো তুমি অমন নামটি রেখেছিলে মাদলের বোলে। কাল রাতে নর্ত ঘুমাতে পারেনি হঠাৎ বহুদিন পর। বনকুটিরের সামনে গাছের নিচে আগুন জ্বালিয়ে কারা যেন জেগে আছে সারা রাত? এই বন, এই নদী ঘুমাবে কী করে আজ তাদের ঘুম না পাড়িয়ে!চলার শুরুগত বছরের শেষ দিনটিতে ঢাকা থেকে উত্তরের দেশে এসে ভোরবেলা সুপরিসর বাস থেকে নামে ২১ জনের একটি দল। এই পথ আর কিছু দূর গেলে তেঁতুলিয়ার সীমান্ত, তারপর আর কিছু দূর গেলেই হিমালয়! পৌষের মাঝামাঝি সেই হিমালয়ের হিমঝরা ভোরে আমরা এসে দাঁড়িয়েছি 'সিঙড়া' বনের দুয়ারে। ছোট্ট এ বন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায়, বাস থেকে নামতে হয় বীরগঞ্জ পার হয়ে ছয়-সাত কিলোমিটার পর বটতলীতে। বীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরে এ রকম বন আরো অনেক আছে। হয়তো একসময় যুক্ত ছিল সেসব বন একে অপরের সঙ্গে। এসব বনে মূলত শাল-সেগুনেরই বাড়-বাড়ন্ত। শোনা যায়, একসময় বন্য প্রাণীর বেশ আনাগোনা ছিল এখানে। এখন নানা রকম পাখি আর খরগোশ, শেয়াল, বনবেড়াল এসব। এসব বনকে কেন্দ্র করে একসময় রাজমহল পাহাড় থেকে তীর-ধনুক হাতে নেমে এসেছিল যেসব সাঁওতাল, ওঁড়াও, মুণ্ডা, রাজবংশী জনগোষ্ঠী_তাদের প্রধান জীবিকা ছিল শিকার এবং নানা কৃত্যে এই শিকারই ছিল বীরত্বের প্রতীক।দীর্ঘ বৃক্ষরাজির বুকচেরা মসৃণ পথ দিয়ে যেতে যেতে নিশ্চুপে পাখির ডাক শুনি বহু দিন পর নগরের বিদীর্ণ শব্দে অতিষ্ঠ কানে। আমাদের দলের (বিটিইএফ_বাংলাদেশ ট্যুরিজম এঙ্পানশন ফোরাম) এবারের ভ্রমণে উদ্দেশ্য ছিল দুটি : শীতার্ত মানুষের জন্য যৎসামান্য গরম কাপড় বিতরণ এবং এ জনপদে গরুর গাড়িতে চড়ে ইতিহাসের শেষ শোভাযাত্রা করা! প্রথম উদ্দেশ্য ভাগ করে নিয়েছে আমাদের উত্তরের দুই বন্ধু। আর দ্বিতীয় উদ্দেশ্য সফল করেছে এক বন্ধুর নেতৃত্বে 'সিঙড়া' বনের পাশের গাঁয়ের বেশ কিছু মানুষ। আমাদের খুব শখ হয়েছিল গরুর গাড়ি ভ্রমণ করি! উত্তরবঙ্গে কোনো গাড়িয়াল ভাইয়ের সঙ্গে ধুধু প্রান্তর দিয়ে চলি চিলমারী বন্দর। কিন্তু হায়, আমাদের জানাই ছিল না যে এই শকটটি আজ বিলীন হতে চলেছে প্রায়! বেশ কয়েকটি উপজেলায় খোঁজ করে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না একসঙ্গে ৮-১০টি গরুর গাড়ি। যদিও বা কোথাও দুই-তিনটি মেলে, সেগুলোর না আছে টোপর, না আছে সেই আদি কাঠের চাকা। হায়, গরুর গাড়ি চড়ে নাইওর যাওয়ার দিন যে শেষ! এখন গাঁয়ের শেষ বাড়িটির দুয়ার অবধি যে পেঁঁৗছে গেছে অটোরিকশা কিংবা রিকশাভ্যান। সময়ের হিসাবে তাকে অস্বীকার করি কিভাবে? শেষ অবধি পাওয়া গেল এইখানে, এই নর্ত নদীর গাঁয়ে, কিন্তু 'ছই' কই? ছই মানে গাড়ির ওপর যে টোপর থাকে সেই টোপর। নেই তাতে কি_ওরা খড় দিয়ে ছেয়ে, বাতা দিয়ে বেঁধে সুন্দর করে বানিয়ে দিল আটটি গাড়ির 'ছই'। ধুয়ে-মুছে খড় বিছিয়ে সাজিয়ে দিল। আর যদিও বা নামে 'গরুগাড়ি', আসলে গরুর বদলে মোষ। আগে গরুর গাড়ি টানত বলদ, তারা হালও বাইত। এখন হাল চষে পাওয়ার টিলার, কে পোষে আর বলদ! আমাদের ভ্রমণের প্রথম দিন রাতে ডিসেম্বরের শেষ সন্ধ্যায় চলে এল এসব গাড়ি। আর তারা জোয়াল নামিয়ে নতুন বছরের ভোর অবধি গোল হয়ে ঘিরে থাকল কতগুলো ছায়া-শরীর। মহিষরা ওম নিল ধিকিধিকি আগুনের অঁাঁচে।হাঁকাও গাড়ি তুই..প্রতিটি গাড়িতে তিনজন যাত্রী। সকালে আরো তিনজন ঢাকা থেকে এসে যোগ দিয়েছে দলে। গতকাল ছিল ঝকঝকে রোদ, আর আজ দার্জিলিংয়ের ওয়েদার! গরুর গাড়ির বহর একটা গাঁ পেরোতেই পথের ধারে দেখা মিলল স্কুল, লাগোয়া মাঠ, বটের ঝুরি আর বিশাল দিঘি। থামাও গাড়ি। এসে গেল শীতের পিঠা! সঙ্গে গরম ধোঁয়া ওঠা চা। চায়ের ধোঁয়া আর মুখের কুয়াশার ধোঁয়া মেলানোর খেলায় মেতে উঠল আমাদের দলের দুই নবদম্পতি তাদের নতুন জীবনের আনন্দে। গাঁয়ের ছেলেমেয়েরা তাদের ঘিরে মজা দেখছে। জোয়ালে আবার মহিষ জুত, আবার চলো সামনে। এবার বসতি ছেড়ে বিরান ক্ষেতের মাঝ দিয়ে পথ। দুই পাশে সরিষা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলুর ক্ষেত। সব যেন কেমন পরিপাটি, চকচকে, প্রাণবন্ত করে সাজানো। শিশিরভেজা পথ দিয়ে যেতে যেতে মনের ভেতর গান আসছে; কিন্তু শীতে জবুথবু হয়ে গলা দিয়ে আর সে গান বের হয় না।গরুর গাড়ি আবার একটা গাঁয়ে ঢুকে পড়ল, আর কোথা থেকে সব ছোট ছোট ছেলেমেয়ে পিলপিল করে বের হয়ে পিছু নিল শোভাযাত্রার। বউরা-মেয়েরা লাউয়ের মাচা থেকে উঁকি দেয়, কেউ কেউ রোয়াকে এসে মুখে অঁাঁচল ঢেকে সলজ্জ হেসে জানতে চায় কোথায় যাচ্ছি, বরযাত্রী নাকি? তবে 'কইনা কই বাহে...'। আমাদের একজন বলে, 'বাহে' মানে কী? আরে 'ভাই', ভাই হে...। আহা, এমন মধুর সম্বোধনে অন্যকে কত সহজে কাছে টানা! 'কইনা'র কথায় আমাদের মেয়েরা অকারণে লজ্জা পেয়ে পুলকিত হয়। ছেলেদেরও কেমন যেন লাগে, পাড়ার দুই পাশ থেকে অমন ভিড় করে আসা মানুষের কৌতুক দৃষ্টির অত কাছ ঘেঁষে পার হতে হতে কারো চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না, অথচ মাটির দিকেও তো আর তাকিয়ে থাকা যায় না! এবার যেন সত্যি সত্যিই নিজেদের বরযাত্রী মনে হতে লাগল। ছোটবেলায় যেমন দুই-একবার গিয়েছিলাম তেমন করে গাঁয়ের বাড়িতে, গাড়ির পেছনে পা ঝুলিয়ে আর আখ চিবাতে চিবাতে। আজ নতুন বছরের নতুন দিনটা কুয়াশার চাদরে থেকেও ঝকঝকে সোনালি আলোয় ভরে গেল!দেয়ালে দেয়ালে লাল রংযেমন সোনালি আলোর সূর্যাস্ত দেখা হলো বছরের শেষ বিকেলে গতকাল বনের পাশে সাঁওতাল গ্রামে। তাদের বাড়ি নিকানো হয়েছে গেরুয়া রঙের মাটির প্রলেপ আর লোকজ নকশায়_ফুল, পাতা, বন্য প্রাণী এসবে। পাড়ার মাঝখানে মাটির চার্চে যিশু আছেন বেশ! আর সব কটা ঘরের মাঝখানে উঠান। দেয়ালে দেয়ালে লাল রঙের আলপনা। সেখানে এসে পড়েছিল শেষ বিকেলের লালচে আলো। সেই গেরুয়া মাটির নকশাকে আবহে রেখে সামনে ফসলের ক্ষেতের ওপর সিঁদুর ছড়িয়ে যখন বিদায় নিল হাস্যোজ্জ্বল সূর্যটা, তখন ভাবতেই পারিনি আজ এমন গুমরে থাকবে সারা দিন। কাল দুপুর অবধি আমরা হেঁটে হেঁটে ঘুরেছি শাল-সেগুনের বুকচেরা পথে, দেখেছি স্নিগ্ধ সাঁওতাল গ্রাম আর পৌষের শীর্ণ নদীর হাঁটু পানি। আর বিকেলে বনের আরেক পথে পাখির ডাক শুনে শুনে অলস হাঁটতে হাঁটতে পেঁৗছে গিয়েছি আরেক সাঁওতাল গ্রামে। 'তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও_/ আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাব; দেখিব কাঁঠালপাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে; দেখিব খয়েরি ডানা শালিখের সন্ধ্যায় হিম হয়ে আসে/ধবল রোমের নিচে তাহার হলুদ ঠ্যাং ঘাসে অন্ধকারে/নেচে চলে_একবার_ দুইবার_তারপর হঠাৎ তাহারে/বনের হিজলগাছ ডাক দিয়ে নিয়ে যায় হৃদয়ের পাশে';
গরুর গাড়ি এবার চলতে চলতে ঢলেপড়া দুপুরে এসে দাঁড়াল এক প্রাচীন দিঘির ধারে। তার চারধার উঁচু পাড়। আশপাশে জনমানবের চিহ্ন নেই। ধুধু বিরান প্রান্তরে এই দিঘির গায়ে হেলান দিয়ে আমাদের মধ্যাহ্নভোজন। পাড়গুলো ঘাসের পরিপাটি বুননে সবুজ হয়ে আছে। দিঘির গভীর শীতল জল আমাদের টানছে, ডাকছে, কিন্তু এই হিমশীতল দিনে কেউ সাড়া দিল না। অথচ কাল অনেকেই বলেছিল দিঘি পেলে সাঁতার কাটবে। ধোঁয়া ওঠা তপ্ত খিচুড়ি এই ঠাণ্ডায় অন্য রকম স্বাদ দিল যেন। তারপর আবার যাত্রা। সন্ধ্যার মুখে গাড়ির বহর ফিরে এল বাংলোর হাতায়।
আর আঁধার ঘনিয়ে এলে ভেসে এল মাদলের বোল। লাল ফুলে খোঁপা বেঁধে লালপাড় শাড়ি কোমরে পেঁচিয়ে হাতে হাত ধরে পায়ে পা মিলিয়ে ধামসা নাচে ঘোর লাগিয়ে দিল সাঁওতাল দল। গানের সুর তার সপ্তক ছেড়ে বহুদূর যেতে চায় সেগুনের মাথায় মাথায়। কী মায়ায় নিমতেলের গন্ধ মেশে চুলের বিনুনি থেকে বাতাসের কণায়। রাত ১০টায় বড় রাস্তায় আমাদের বাস এসে দাঁড়াবে। তারই মধ্যে আরো যতটুকু পারা যায় শুষে নাও, আরো যতটুকু পারা যায় দেখে নাও! শালবনের গাঢ় অন্ধকারে সাঁওতালি সুর আর আগুনের আভার মতো সব স্মৃতিময় রং ভাসিয়ে নিয়ে যায় একটু একটু করে সময়ের দায়ে। আমরা ফিরতে থাকি, কিন্তু অস্তিত্ব থাকে সেখানেই, যেখানে প্রকৃতি তার সবুজ বিছিয়ে রেখেছে অকৃপণ আঁচলে। '...তারপর দূরে নিরুদ্দেশে/চলে যায় কুয়াশায়,_তবু জানি কোনো দিন পৃথিবীর ভিড়ে/হারাব না তারে আমি_...।'কিভাবে যাবেন : ঢাকার গাবতলী থেকে ঠাকুরগাঁওগামী নাবিল বা শ্যামলী পরিবহনের বাসে চড়তে হবে। ভাড়া ৩৫০ টাকা। নামতে হবে বীরগঞ্জের বটতলীতে। সেখান থেকে ভ্যানে করে সিঙরা বনের বিশ্রামাগারে (রেস্ট হাউস) যেতে ভাড়া লাগে ১৫ টাকা।
ছবি : হাসিব

পাহাড়ে পুকুর আছে

পাহাড়ে পুকুর আছে জাকারিয়া সবুজপাহাড়ে যতবার গেছি পুকুরপাড়ার গল্প শুনেছিই। শেষে এই ২৩ ডিসেম্বর রাতে রাকিবকে সঙ্গে নিয়ে বান্দরবান রওনা হলাম। রিপন যোগ দিল চট্টগ্রাম থেকে এসে। পাঁচ দিনের ট্যুর বলে ব্যাকপ্যাকের আকারও হয়েছে দশাসই। জাদিপাড়ার এক মারমা দোকানে নাস্তা সেরে রুমাগামী মিনিবাসে চড়ে বসলাম। বাসটি আমাদের নিয়ে যাবে কৈক্ষ্যংঝিরি ঘাট অবধি। সেখান থেকে নৌকায় যেতে হবে রুমাবাজার।রুমাবাজারে কেনাকাটারুমাবাজারে পেঁৗছে দেখি আড়াইটা বাজে। আমাদের চেনা গাইড শাপুল বড়ুয়াকে পেয়ে খুশি হয়ে গেলাম। বড় ভালো মানুষ শাপুলদা। রুমা থানা এবং আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে আর দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সারতে বিকেল নেমে এল। ইচ্ছা ছিল প্রথম রাত বগামুখপাড়ায় থাকব, কিন্তু দেরি হয়ে যাওয়ায় রুমাবাজারের লাইরনপী পাহাড়ে নাথান বমের লাইমি হিল সাইড রিসোর্টে থাকলাম। ডরমিটরিতে প্রতি বিছানা ৫০০ টাকা। এখানে রাতের আকাশ তারাভরা, সকালে বিস্তীর্ণ প্রান্তর কুয়াশায় ঢাকা। সাধারণত বিকেল ৪টার পর ওপরের দিকে যাওয়ার অনুমতি দেয় না নিরাপত্তা বাহিনী। সন্ধ্যাবেলায় তেল, লবণ, মসলা, পেঁয়াজ, ডাল, আলু, শুঁটকিসহ বেশ কিছু শুকনো খাবার কিনে নিলাম বাজার থেকে। চার দিনের প্রয়োজনীয় সব কিছু দিয়ে আরেকটি ব্যাগ পুরিয়ে ফেললাম। শাপলুদা আছে, তাই ভয় পেলাম না।মেন্দুইপাড়ার পথেপরদিন সকালবেলায় হাঁটা শুরু করলাম মেন্দুইপাড়ার পথে। লাইরনপী পার হতে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়। পাহাড় প্রথম পরীক্ষা নেয় লাইরনপীতেই। এর পর ঝিরি ধরে হেঁটে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পর বগামুখে পেঁৗছে ঝটপট রান্নার আয়োজন করে ফেলি। জুমের চাল কিনলাম এক বাড়ি থেকে। এখানে আছে মারমাপাড়া। ঝিরির পানিতে গোসল সেরে নিয়ে খাওয়ার পর একটু বিশ্রাম নিয়েই আবার হাঁটা। পাহাড় শুরু হয়ে গেল। কম করেও দেড় ঘণ্টা শুধু ওপরেই উঠলাম। গোধূলির সোনা রঙে অবশ্য মন রাঙানো ছিল। পাহাড়ের ধূসর, নীলচে ও ছাই রং লাল আভায় মিশে এক অপার্থিব পরিবেশ তৈরি করেছে। দূর পাহাড়ের ওপারে একসময় সূর্যটা টুপ করে ডুব দিল। টর্চের আলোয় বাকি পথটুকু হেঁটে আমরা যখন মেন্দুইপাড়ায় পেঁৗছলাম তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। এ পাড়ায় মুরংদের বাস। আমরা লাংরাম মুরং নামে এক যুবকের বাসায় আশ্রয় নিলাম। পাড়ার পোলাপানদের সঙ্গে মুড়ি, বিস্কুট ও ক্যান্ডি খেয়ে চমৎকার সময় কাটালাম। পাহাড়ে সবচেয়ে সুন্দর এর মানুষগুলো। এদের থেকে অনেক শেখার আছে। এরা নিজের খাবার, পোশাক, আবাস সব নিজেরা তৈরি করে_চাওয়া কম, হিংসা বুঝি নেই। বছরখানেক আগে শাপুলদার ফেলে যাওয়া একটা ছুরি লাংরাম সযত্নে রেখে দিয়েছে ফেরত দেওয়ার জন্য। রাতে ওর কাছ থেকে চাল আর পাহাড়ি কচু পেয়ে খাওয়াটাও জমল বেশ। ঘরের মধ্যেই চুলো, শীতের কাছে হার মেনে সেটা জ্বালিয়ে রেখেই এর আশপাশে সবাই ঘুমে গেলাম।এবার পুকুরপাড়াসকালের খাওয়া সেরে নিয়ে পুকুরপাড়ার দিকে হাঁটা দিলাম। পথ খুবই দুর্গম। কোথাও খাড়া পাহাড় তো কোথাও ঝিরির বুকে বড় বড় পাথর আর জলপ্রপাত। ঝিরির ঠাণ্ডা পানি পার হতে গেলে পা দুটো বুঝি জমে যায়! কোনো জায়গা ঘন গাছপালায় ঢাকা সুড়ঙ্গের মতো। বিশ্রাম নিয়ে এগিয়ে চললাম। বেলা ১২টার দিকে পাড়ায় পেঁৗছলাম। বিশাল পুকুরটা দেখে ঘোর লেগে গেল। পুকুরটির নাম রাইক্ষ্যং লেক। পুকুরের এধার-ওধার দিয়ে পাহাড় উঠে গেছে। জল গাঢ় নীল, আকাশকেও টেক্কা দেয় বুঝি! নেরুহা ত্রিপুরার বাড়িতে গিয়ে উঠলাম। আমাদের অভ্যর্থনা জানাল বাঁশের ভেতর তৈরি করা পিঠা দিয়ে। দুপুরের খাওয়া চুকিয়ে কাছের আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করে আসলাম। পাড়াতেই সব জিনিসপত্র রেখে এর পর গেলাম রাইক্ষ্যংঝিরি দেখতে। এক ঘণ্টার পথ। সে এক আরেক অপরূপ জগৎ। পাথরের ধাপে ধাপে শুভ্র ফেনিল জলধারা বয়ে চলেছে। সবুজ-শান্ত প্রকৃতির মধ্যে পানির গর্জন, নাম না জানা ফুলে ফুলে প্রজাপতির ওড়াউড়ি, ঝিঁঝিঁপোকার ডাক আর শেষ বিকেলের মিষ্টি রোদ আমাদের পেয়ে বসল। জায়গামতো বসলে আর উঠতে ইচ্ছে করে না। গোসল করার লোভটা সামলাতে পারলাম না এই শীতেও। সন্ধ্যাবেলায় পাড়ায় ফিরে মোরগ পুড়িয়ে ফেলল রাকিব। বাতাস বইল হিম হিম। আকাশে চাঁদ আর লাখো তারার মেলা বসল। নেরুহার ছেলেমেয়ে হাঁস্তেরুং, রুঁস্তেরু, হাঁনোরু, ক্লিন্টদের সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে উঠলাম।কেওক্রাডং-বগালেক হয়ে ফেরাপরদিন সকালবেলায় মেন্দুইপাড়ার উদ্দেশে ফিরতি পথ ধরলাম। পেঁৗছলাম দুপুরে। এ পাড়াতেই রাতটা থেকে যাওয়ার স্থির করলাম। পাহাড়ে একমাত্র মুরংরাই তাদের আদি সংস্কৃতি এখনো ধরে রেখেছে। পরদিন সূর্য ওঠার আগে রওনা দিয়ে সাইকতপাড়া-হারমুনপাড়া-দার্জিলিংপাড়া হয়ে কেওক্রাডংয়ে উঠলাম। এরপর চলে গেলাম বগালেক। ১০ ঘণ্টার এই হাঁটায় শুকনো খাবার আর ঝিরির পানি খুব কাজে দিল। বগালেকে সিয়াম বমের বাসায় উঠলাম। সন্ধ্যাবেলায় লেকের স্বচ্ছ টলটলে পানিতে গোসল সারতেই ক্লান্তি পালাল। পরদিন ফিরে এসেছিলাম রুমাবাজার।যেভাবে যাবেন ও যেখানে থাকবেনঢাকার ফকিরাপুল, কমলাপুর থেকে এস আলম, ইউনিকসহ আরো কিছু পরিবহনের বাসে বান্দরবান যাওয়া যায়। ভাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। বান্দরবান থেকে কৈক্ষ্যংঝিরি বাস ভাড়া ৭০ টাকা। নৌকা ভাড়া ২০ টাকা। গাইডকে দিতে হয় দুই থেকে তিন হাজার টাকা। রাতে থাকতে হয় পাড়ার কোনোবাড়িতে। রান্নাবান্নার হাঁড়ি-পাতিল তাদের কাছ থেকে নেওয়া যায়। তবে রাঁধতে হয় নিজেদেরই। ঘরে থাকার কোনো ভাড়া নেই। খুশি হয়ে সবাই কিছু ধরে দেয়।সঙ্গে নেবেন : অবশ্যই মাথাল ও টর্চলাইট নেবেন। ক্যামেরা নিতে ভুলবেন না। শীত হলে হালকা একটা কম্বল নেবেন। আরো নেবেন পাহাড়ি পথে হাঁটার উপযোগী স্যান্ডেল বা কেডস, টয়লেট টিস্যু, মশানিরোধক ক্রিম ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র।
ছবি : লেখক
Source: Daily Kalerkantho

Sunday, January 30, 2011

পার্কের আদলে মসজিদ

পার্কের আদলে মসজিদ

সাইনবোর্ড না পড়লে যে কেউ মনে করবেন এটি একটি পার্ক। আসলে এটি কোনো পার্ক নয়, পার্কের আদলে তৈরি মসজিদ। যার অবস্থান পূণ্যভূমি সিলেটের ওসমানীনগর থানার তাজপুরের দিঘিরপাড়ে। দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদ নির্মাণ করেছেন এলাকার বিশিষ্ট ধনাঢ্য ব্যক্তি ধন মিয়া।
শৈল্পিক কারুকাজখচিত মসজিদের পাশেই রয়েছে সুবিন্যস্ত পাঠাগার। নামাজ আদায় ছাড়াও বিকালে লোকজন এখানে বই পড়তে আসেন। ভিড় করেন বিভিন্ন স্থান থেকে আগত সৌন্দর্যপিপাসুরাও। পাঠাগারের পেছনে রয়েছে সুবিশাল দিঘি। সুসজ্জিত ফুলের বাগান, নারিকেল গাছ, বসার ছাউনি, দোলনা, ছোট-বড় গেট। সব মিলিয়ে মনে হবে এটি কোনো পার্কের দৃশ্য। লোকমুখে শোনা যায়, ধন মিয়া স্বপ্নযোগে মসজিদ নির্মাণের আদেশ পেয়ে এটি নির্মাণ করেন। মসজিদের নির্মাণকাজ কয়েক বছর আগে শুরু হলেও শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। পড়ন্ত বিকালে দিঘিরপাড়ের মনোরম দৃশ্য ঘুরতে আসা মানুষকে বিমোহিত করে। যান্ত্রিক জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে অবসরে ঘুরে আসতে পারেন ওসমানীনগরের দিঘিরপাড় মসজিদ।
-রামিল মাসুদ
Daily Bangladesh pratidin

টুকটুক ইকো ভিলেজ

টুকটুক ইকো ভিলেজ

রফিকুল আমীন খান
পাহাড় আর লেকে ঘেরা রাঙামাটির প্রতিটি খাঁজে খাঁজে লুকিয়ে আছে বিস্ময় আর আনন্দ। সৌন্দর্যপিপাসুরা এ বিস্ময় আর আনন্দের টানে বারবার ছুটে চলেন রূপের রানী খ্যাত রাঙামাটি জেলায়। ভ্রমণপ্রিয়দের আনন্দ দিতে কী নেই এখানে। জেলাজুড়ে রয়েছে ভ্রমণের অসংখ্য স্পট। সব রূপলাবণ্যে ভরপুর। রূপের রাণী সেজে বসে আছে ভ্রমণপ্রিয়দের মনে আনন্দ দিতে। কিন্তু দু-এক দিনের ছুটিতে সবার সৌন্দর্য দর্শন দুরূহ ব্যাপার। তাই এক একবারের ছুটিতে রাঙামাটির এক একটি স্পট বা এলাকা দর্শনের চিন্তা করাই শ্রেয়।
রাঙামাটিতে এবার নিয়ে সপ্তমবারের মতো ভ্রমণ। তা সত্ত্বেও আমিসহ সহযাত্রীদের আনন্দ ও উত্সাহের শেষ নেই। নতুনদের মাঝে তা আরও উত্সাহ। সবার চোখে শুধু রাজ্যের বিস্ময়। হাজার হাজার টাকা খরচ করে অনেকেই নিজ দেশ ছেড়ে বিদেশ গেছেন পাহাড়-টিলা-হ্রদের সৌন্দর্যের খোঁজে। কিন্তু নিজ দেশে এত কাছে সেই আকাশসম পাহাড়, সবুজে মোড়া টিলা-উপটিলা, দিগন্ত বিস্মৃত কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ পানিধারা আছে, তা ক’জনের জানা ছিল? ভাবতে অবাক লাগে, মনের অজান্তে কণ্ঠে ভেসে ওঠে ‘ধন-ধন্যে পুষ্পে ভরা ... ... এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি।’ এরকম হাজারো মন ভোলানো গান শিল্পীর কণ্ঠে এমনিতে যে ভেসে ওঠেনি, তা সহজেই বোঝা যায় কেবল রাঙামাটিতে গেলে।
রাঙামাটিতে আমাদের এবারের ভ্রমণ আয়োজন ছিল বেসরকারি ভ্রমণ আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান নোঙর ট্যুরিজমের উদ্যোগে। বিচিত্র আর বৈচিত্র্যে ভরা এখানকার নানা উপজাতির সমাজ-সংস্কৃতি কাছ থেকে দেখা ছাড়াও কাপ্তাই লেকে নৌভ্রমণ ছিল ভ্রমণ পরিকল্পনায়। পরিকল্পনা অনুসারে কোনোটিই বাদ রইল না। সব স্মৃতিই মনের ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো। সে সবের মাঝে টুক টুক ইকো ভিলেজ দর্শনের স্মৃতিই মনের জানালায় ভেসে ওঠে বারবার। সম্পূর্ণ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা এ পর্যটন কেন্দ্রটি ভ্রমণপ্রিয়দের কাছে দারুণ উপভোগ্য। রাঙামাটি এলে এটি না দেখে চলে যেতে মন চাইবে না।
জেলা সদরের বালুখালী ইউনিয়নের কিল্ল্যামুড়া এলাকায় অবস্থিত এই পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রটি। চারদিকে কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ পানি রাশির মাঝে হঠাত্ই জেগে ওঠা সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় গড়ে তোলা এই ভ্রমণ স্পটে খানিক বসতেই নিমিশেই হিমেল হাওয়ার ঝাপটা নিয়ে যাবে কোনো এক স্বর্গীয় অনুভূতির সন্ধানে। কাপ্তাই লেকে দীর্ঘ নৌভ্রমণে যখন ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অবস্থা, তখন টুক টুক ইকো ভিলেজের রেস্তোরাঁর রকমারি খাবারের স্বাদ গ্রহণ জিবে এনে দেয় নতুন তৃপ্তি। কাঠ এবং বাঁশের কারুকাজে তৈরি এ রেস্তোরাঁয় মিলে দেশীয় ও পাহাড়ি আদিবাসীদের মজাদার সব খাবারের আইটেম। লেকের পথে সারা দিনের জন্য যারা নৌভ্রমণে বের হন দুপুরের খাবারটা তারা এখানেই সেরে নিতে বেশি পছন্দ করেন। চারদিকে কাপ্তাই হ্রদের সারি সারি পানিরাশি আর পাহাড়ি বন-বনানীর এমন নির্জন পরিবেশে আয়েশি মেজাজে পেটপুরে খেতে গিয়ে টাকার অংকটা একটু বেশি গুনতে হলেও এর মাঝেও আছে অন্য রকম আনন্দ।
পুরো ইকো ভিলেজটি ৫০ একর পাহাড়ি জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত। বহু টিলা-উপটিলা বিভক্ত এ পর্যটন কেন্দ্রে থেকে থেকে গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি কাঠের কটেজ। অ্যাটাশ বাথ, ব্যালকনি-সমেত এ কটেজগুলোয় থাকার জন্য রয়েছে সুব্যবস্থা। এগুলোয় রাত যাপনের আনন্দস্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে জীবনভর। জানালার ফাঁকগলিয়ে দূরে পাহাড়ের ঢালে কাপ্তাইয়ের পানিতে পূর্ণিমার চাঁদের খেলা করার দৃশ্য অসাধারণ। রাতে পাহাড়ি বন-বনানীর মাঝ থেকে ভেসে আসা ঝিঁঝি পোকার একটানা ডাক সঙ্গে নাম জানা-অজানা নিশাচর পশু-পাখির বিচিত্র শব্দে কেবলই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যেতে চায় মন। পর্যটকদের অবস্থান নির্বিঘ্ন করতে আছে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রাকৃতিক পরিবেশে আড্ডা দেয়ার জন্য ইকো ভিলেজে তৈরি করা হয়েছে ১৫টি গোলঘর। শিশুদের আনন্দ দিতে প্রশস্ত খেলার মাঠ, কাঠের ব্রিজ সবই আছে এখানে। চারদিকে পাহাড়ি গাছ-গাছালি ছাড়াও ইকো ভিলেজের চড়াই-উত্রাইয়ে থেকে থেকে লাগানো হয়েছে নানান রকমের ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ। লাল গোলাপ, সাদা গোলাপ, আফ্রিকান গাদায় ভরপুর পার্কটিতে পা ফেললেই বাতাসের সঙ্গে ভেসে আসা কোমল গন্ধে মন জুড়িয়ে যায়। এগুলোর নির্মল ছায়ায় মাঝেমধ্যেই পিকনিক পার্টির লোকদের ভিড় জমাতে দেখা যায়। ভ্রমণ এবং পিকনিক পার্টির আয়োজনের বাইরে অনেককে গবেষণার কাজেও যেতে দেখা যায় এখানে। বিশেষ করে যারা প্রকৃতিপ্রেমী, প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্য পছন্দ করেন, তাদের জন্য নির্ঝঞ্ঝাট ও ঝামেলামুক্ত পরিবেশে কয়েকটি মুহূর্ত কাটানোর এমন সুযোগ আর দু-একটি মেলানো দায়।
পর্যটন এবং বিনোদন কেন্দ্রের বাইরে ইকো ভিলেজ কেন্দ্রটি আজ প্রাকৃতিক জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায়ও দারুণ ভূমিকা রেখে চলেছে। যদিও পুরোপুরি প্রতিষ্ঠার কাজ এখনও খানিকটা বাকি আছে, তা সত্ত্বেও আশা করা যায় প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন হলে এটি হবে দেশের ইকোপার্কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। কারণ, একমাত্র এই ইকোপার্কেই রচিত হয়েছে প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত পাহাড়, হ্রদ, ঝরনাধারা আর কোমল পরিবেশের মিলন বন্ধন। প্রকৃতির সৌন্দর্য যে কত বিচিত্র্য হতে পারে, তা এখানের দৃশ্য দেখে বোঝা যায়। প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাঝে একটু নান্দনিকতার ছোঁয়ায় যে ইকো পার্ক গড়ে উঠেছে রাঙামাটির এই স্বচ্ছ পানির মাঝে, তা পর্যটক মনে রাঙামাটির প্রতি ভ্রমণের আকর্ষণ ক্রমেই বাড়াবে—এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
রাঙামাটি শহর থেকে টুক টুক ইকো ভিলেজে যাওয়ার জন্য শহরের রিজার্ভ বাজারের শহীদ মিনার এলাকা থেকে রয়েছে নিজস্ব বোটের ব্যবস্থা। জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা। তবে আমাদের ২০ জনের এই ক্ষুদ্র দলটি বহনের জন্য আলাদা রিজার্ভ ট্রলার ভাড়া করেছিল নোঙর ট্যুরিজম কর্তৃপক্ষ। সারা দিন লেকের পথে টুক টুক ইকো ভিলেজসহ রাঙামাটির অনন্য দর্শনীয় পর্যটন স্পট দেখা শেষে সন্ধ্যায় যখন রিজার্ভ বাজারের ট্রলারঘাটে আমাদের নামিয়ে দিল ততক্ষণে স্মৃতিতে জমা পড়েছে রাঙামাটি ভ্রমণের আরও কিছু নতুন অভিজ্ঞতা। এ অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। জীবনের সুখ স্মৃতিগুলোর মাঝে যেগুলো চির ভাস্বর হয়ে থাকে জীবনভর।
শীত এলে টুক টুক ইকো ভিলেজসহ রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্রেগুলোয় পর্যটকদের ঢল নামে । এ সময় রাঙামাটি ভ্রমণের মজাই আলাদা। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করতে পারেন ০১৯২২১১২৬৭৬ নম্বরে।
Source: Daily Amardesh, 31-01-2011

রাঙামাটির ছবি ব্লগ [পর্ব-৫]

আজকের পর্বে থাকছে টুকটুক ইকো ভিলেজ-এ যাওয়ার সময় এবং অবস্থান করা কালীন কয়েকটি ছবি। রাঙামাটিতে গেলে কখনই ১ দিনে পুরোটা ঘুরে শেষ করতে পারবে না কেউ। ১ রাত থাকতেই হবে আপনাকে। রাত কাটানোর কাজটা আপনারা সেরে নিতে পারেন এই টুকটুক ইকো ভিলেজ এই। এখানে কয়েকটি রিসোর্ট গড়ে তোলা হয়েছে। সবগুলো রিসোর্টই পাহাড়ের কিনারায় কাঠের ভিত্তির উপড় তৈরী (ছবিতে দেখবেন)। ধারনা করছি সেগুলো খুবই সাধারন। প্রতি রুম ১ হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়। এক রুমে ৩ জন পর্যন্ত থাকতে পারবেন। সুতরাং তুলনামুলক অনেক সস্তা। এই সব রিসোর্টে ইলেক্টট্রিসিটির ব্যবস্থা করা হয়েছে সোলার এনার্জির মাধ্যমে। রাখা আছে জেনারেটর ও। আসুন কয়েকটি ছবি দেখি…


১)

টুকটুক ইকো ভিলেজ-এ যাওয়ার সময়

২)

টুকটুক ইকো ভিলেজ-এর প্রবেশ পথ

৩)

টুকটুক রেষ্টুরেন্ট

৪)

সাদা ভাত এবং চিকেন ইন বেম্বু। স্থানীয় ভাষায় এই খাবারের নাম “কুমোতকুড়া”

৫)

সবুজের মাঝে টুকটুক রিসোর্ট

৬)

একটি নির্মানাধীন রিসোর্টের উপড় আমরা

৭)

টুকটুক ইকো ভিলেজের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি ছোট খাল

৮)

কাশফুল

৯)

পাহাড়ের উপড় থেকে তোলা

১০)

গহীন নীলিমা

১১)

নাম না জানা কোন ফুল

১২)

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, যাবার সময় হলো…

al_berunie লেখক : আদনান আল বিরুনী
Prothom-alo Blog

যাবেন... মধুটিলা ইকোপার্ক!

যাবেন... মধুটিলা ইকোপার্ক!
সবুজ পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে যাচ্ছে সাদা ঝরণারাশি। যেন সবুজ মখমলের গায়ে মুক্তোর ধারা। এর সঙ্গে বৈচিত্র্যময় আদিবাসী জীবনযাপন। শাল, সেগুন পরিবেষ্টিত টিলাময় মধুটিলা ইকোপার্ক আপনার নাগরিক জীবনের অবসরে প্রশান্তি এনে দেবে...

পাহাড়ি ঝরনার ঝিরঝির শব্দ আর পাখির কলকাকলি গারো পাহাড়ের আকর্ষণ। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ গারো পাহাড়। সবুজ-শ্যামল বন, পাহাড়, টিলা আর ঝরনাবেষ্টিত দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা মধুটিলা। ভ্রমণবিলাসীদের জন্য এক মনোরম স্থান। ভ্রমণকে আরও আনন্দময় করে তুলতে এই অবকাশ কেন্দ্রে রয়েছে ব্যাপক আয়োজন। নগরীর যান্ত্রিক সভ্যতা থেকে অনেক দূরে গারো পাহাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে নয়নাভিরাম এক শৈল্পিক ভুবন। কোলাহলমুক্ত পরিবেশ আর নির্মল বাতাসের স্বাদ নিতে সেখানে পাহাড়ের টিলাকে অবিকল রেখে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে গড়ে তোলা হয়েছে সুদৃশ্য ভবন। সেখানে পাহাড়ের টিলাকে অবিকল রেখে এখানকার সবুজ প্রকৃতি যেন আপন করে নেয়। শ্যামল বৃক্ষরাজির মাঝ দিয়ে পাকা সড়কপথ যেন সুড়ঙ্গের দিকে ঢুকে যাচ্ছে। সারি সারি শাল, গজারি, সেগুন ও লতাগুল্মের বিন্যাস প্রকৃতিপ্রেমীদের দোলা দিয়ে যাবে নিশ্চয়ই। শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের সমশ্চুড়া ইকোপার্কের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ভ্রমণবিলাসীরা বারবার ছুটে আসেন এখানে। পড়ন্ত বিকেলে এখানকার পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে ভারতের তোড়া পাহাড়কে দেখা যায়। মনে হবে ওই তোড়া পাহাড় যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। মনের মাঝে জাল বুনবে, হায় জন্ম যদি হতো এই গারো পাহাড়ে। তাই তো আবারও গারো পাহাড়ের মধুটিলা ইকোপার্কে আসার জন্য মন আকুলি-ব্যাকুলি করবে। ফি বছর শীত মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে এখানে ভ্রমণবিলাসীদের ঢল নামে। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বন বিভাগের জমিতে এ ইকোপার্ক গড়ে তোলা হয়।
কীভাবে যাবেন :ঢাকা থেকে নিজস্ব বাহনে শেরপুর আসতে সময় লাগে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টা। আবার শেরপুর থেকে মধুটিলা ইকোপার্কের দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার। ঢাকার মহাখালী টার্মিনাল থেকে ড্রিমল্যান্ড বাসে শেরপুর আসা যায়। ভাড়া ১৯০ টাকা। এখান থেকে সকাল সাড়ে ৭টায় সাদিকা গেটলক বাস ছাড়ে। দুপুর দেড়টায় ছাড়ে এসি বাস। এসি বাসের ভাড়া ২২০ টাকা। ভুল করে স্পেশাল ড্রিমল্যান্ড ছাড়া অন্য গাড়িতে উঠবেন না। এসব ছাড়া অন্য বাসগুলো লোকাল। এসব বাসে সময়ও লাগে বেশি, ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। শেরপুর নবীনগর বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিএনজি নিয়ে সোজা চলে যেতে পারেন ইকোপার্কে। ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। আবার নিউমার্কেট অথবা জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সামনে থেকে মাইক্রোবাস পাওয়া যায়। ভাড়া ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা। আর বাসে শেরপুর থেকে ইকোপার্ক পর্যন্ত ভাড়া ৩০ টাকা।
কী কী দেখবেন : প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি দেখতে পাবেন আদিবাসী গারো, হাজং, কোচ, হদি বর্মণ সম্প্র্রদায়ের অধিবাসীদের। গারো পাহাড়ের গজারি বনের মাঝ দিয়ে সরু রাস্তায় গাড়ি চালানোর রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলো আপনি উপভোগ করতে পারেন। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে চিন্তার তো কোনো অবকাশই নেই বরং মনকে প্রফুল্ল রাখতে আছে টাটকা খাবারের সুব্যবস্থা। মধুটিলা ইকোপার্কে ঢুকতে প্রবেশ মূল্য দু'জন যাত্রীসহ মোটরসাইকেল ২০, বড় বাস ৫০০, মিনিবাস ২০০ ও লোকাল বাস ৪৫০ টাকা। ইকোপার্কের গেট পার হলেই চোখে পড়বে দু'পাশে গাছের সারির মাঝ দিয়ে রাস্তা। মনে হবে নিচের দিকে ঢুকে যাচ্ছি। আবার ওপরে উঠতেই দু'পাশে দণ্ডায়মান দুটি হাতি আপনাকে অভিবাদন জানাচ্ছে। আরেকটু এগোলে দেখবেন সাপ, বানর, পাখি আপনাকে সালাম দিচ্ছে। এখানে লেখা রয়েছে আমাকে মারবেন না, আমি বনের অলঙ্কার। সামনে এগোলেই মিনি চিড়িয়াখানা। তারপর কৃত্রিম লেক। লেকে প্যাডেল বোট চলছে। প্রতি প্যাডেল বোটে ৫-৬ জন বসা যায়। ৩০ মিনিট চালাতে ভাড়া ৫০ টাকা। বাঁয়ে ১০০ গজ এগিয়ে গেলে ৫৫ ফুট উঁচু টাওয়ার। টাওয়ারে ওঠার টিকিট ৫ টাকা। এখানে দাঁড়িয়ে খালি চোখে আবছা আবছা ভারতের বিএসএফ ক্যাম্প দেখা যায়। আবার পরিষ্কারভাবে দেখতে চাইলে টাওয়ারে বাইনোকুলার রয়েছে। আপনি টাওয়ারে উঠতেই ডাক শুনবেন, স্যার ভারতের ক্যাম্প দেখবেন! দূরবিন হাতে দিয়েই বলবে, দেখুন স্যার কী পরিষ্কার ভারতের ক্যাম্প দেখা যাচ্ছে। আরও জানাবে, দেখেন ক্যাম্পে ২টি পতাকা উড়ছে না স্যার। একটা পতাকা লাল আর একটা সাদা। দূরবিনে ভারতের ক্যাম্প দেখতে ৫ টাকা লাগে। টাওয়ার থেকে ডানদিকে এগোলে উঁচু পাহাড়ে ওঠার সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়িটি এত খাড়া যে, এটাতে কেউ একবার উঠলে বসে একটু বিশ্রাম না নিলে হাঁফিয়ে উঠতে হবে। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই চোখে পড়বে অত্যাধুনিক বন বিভাগের রেস্ট হাউস। এ রেস্ট হাউস থেকে নেমে আসার পথে চোখে পড়বে শিশুদের জন্য শিশুপার্ক। রেস্ট হাউসে প্রতি রুমের ভাড়া ৫০০ টাকা। তবে এখানে রাত কাটানো নিরাপদ নয়। ফিরে আসুন শেরপুরে।

লেখা ও ছবি : আমিরুজ্জামান লেবু
Source: Daily Samakal, 25 th January-2011

Tuesday, January 25, 2011

প্রকৃতির সম্পদ বরমীর বানর

প্রকৃতির সম্পদ বরমীর বানর গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিবাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যের একটি অংশ দখল করে আছে বানর। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বানরের পদচারণা থাকলেও ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে প্রকৃতির অন্যতম এ প্রাণীটি। এদের রক্ষায় নেই সরকারি বা বেসরকারি কোনো পদক্ষেপ। এভাবে চলতে থাকলে একসময় হয়তো বিলুপ্তি ঘটবে প্রাণীটির।
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার বরমীতে এমনই এক বানরের অভয়ারণ্য টিকে আছে যুগ যুগ ধরে। এখানে দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন বানর দেখতে আসে শত শত মানুষ। তারা বানরের জন্য নিয়ে আসে মুড়ি, পাউরুটি, বিস্কুট, বাদামসহ অনেক কিছু।
তবে অতিথিদের নিয়ে আসা খাবার তো আর এত সংখ্যক বানরের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর বানরগুলো দল বেঁধে খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। অভাবে নষ্ট করে দিয়েছে তাদের স্বভাব। শিখিয়েছে দক্ষ চুরি। সুযোগ পেলে বাসা-বাড়ি ও বিভিন্ন দোকানে ঢুকে খাবার চুরি করে এরা। এদের নেতৃত্ব দেয় সবচেয়ে প্রবীণতম বানর। এমনিতেও চলে এরা দল বেঁধে। শীতলক্ষ্যায় গোসল করে দল বেঁধেই। কোনো বানরকে কেউ আঘাত করলে এরা জোটবদ্ধ হয়ে তাকে আক্রমণ করে। এলাকাবাসীর কারও কারও বেশ সহানুভূতি থাকলেও অনেকে বানরগুলোর চলাফেরা বা কাজকর্মকে অত্যাচারই মনে করেন।
শ্রীপুরের শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় ঘেঁষে প্রাচীন এই বরমী বাজারে একসময় হাজার হাজার বানর বসবাস করলেও দেখভালের অভাবে এ সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। এখানকার বানরগুলো হারিয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে নানা কারণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, অত্যাচার থেকে মুক্ত পেতে খাবারে বিষ মিশিয়ে নির্বিচারে হত্যা। এ কাজগুলো করে থাকেন বাজারের একশ্রেণীর দোকানি বা আশপাশের বাড়িওয়ালারা। এ ছাড়া এলোমেলো বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়েও মারা যাচ্ছে অনেক বানর। তবে স্থানীয়দের ধারণা, মূলত খাবারের অভাবেই গত দুই যুগে তিনশরও বেশি মারা গেছে।
গাজীপুরের কাপাসিয়া এবং ময়মনসিংহের ভালুকা ও গফরগাঁওয়ের সীমান্তবর্তী এলাকা শ্রীপুরের বরমী বাজারে সমপ্রতি এসেছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একদল গবেষক। তাদের গবেষণায় ওঠে আসে এখানকার বানর বিলুপ্তির কারণ। গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঐতিহ্যের ধারক বরমীর বানর বাঁচিয়ে রাখতে কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি কোনো মহল থেকে। সরকার দ্রুত দেখভালে এগিয়ে না এলে অচিরেই এদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
সোমবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় এখানকার বানরগুলোর করুণ দশা। শতাধিক বানর খাবারের জন্য লাফিয়ে বেড়াচ্ছে দোকানগুলোর এ-ছাদ থেকে ও-ছাদে। মুড়ি, পাউরুটি, বিস্কুট, বাদাম ইত্যাদি দিতে দেখা গেল বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শিশু-কিশোর তরুণ-তরুণীদের। তাদের সহানুভূতিতে এমনভাবে ছুটে আসে বানরগুলো, যেন অনেক দিনের চেনা।
মানুষের সহানুভূতির ওপর নির্ভরশীল বানরগুলো এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে সারা বাজার মাতিয়ে রাখে। দর্শনার্থীরাও বেশ উপভোগ করেন বানরের খেলা। কিন্তু ক্ষুধার তাড়নায় বানরগুলো বটের ছায়ায় কখনো নীরবে আবার কখনো সরবে কেঁদে ওঠে। এর সত্যতা পাওয়া গেল বরমী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি অহিদুল হক ভূঁইয়ার কথায়। বললেন, এখানকার বানরগুলোর খাবারের অভাব এতটাই প্রকট যে অসংখ্য বানর চলে গেছে শ্রীপুরের গজারী বনে।
তবে এখানে এখনো পাঁচ শতাধিক বানর রয়েছে বলে জানান বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর। বরমী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বাদল সরকার বললেন, বানরগুলোর জন্য নিরাপদ আশ্রয়, খাদ্যের ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে একাধিকবার সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও সাড়া মেলেনি।
শ্রীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আতাউর রহমান বলেন, শীতলক্ষ্যার দূষিত পানিতে গোসলের কারণে বানরগুলোর শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। এ ছাড়া খাবারের অভাবজনিত রোগ তো আছেই। বানরগুলোকে বাঁচাতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

Source: Daily Bangladesh Pratidin

বে ড়া নো : চিম্বুক যাত্রা

বে ড়া নো : চিম্বুক যাত্রা

রফিকুল আমীন খান
মেঘদের ছুটে চলার দৃশ্য আকাশপানে তাকালেই দেখা যায়। কিন্তু মেঘকে ছুঁয়ে দেখা কিংবা ঘন মেঘমালার মাঝে হারিয়ে যাওয়া কি সম্ভব! সম্ভব, চিম্বুক চূড়ায় উঠলে। এ কারণেই চিম্বুক চূড়াকে বলা হয় বাংলার দার্জিলিং। যারা ভারতের দার্জিলিং বেড়াতে গেছেন কিংবা যাওয়ার মনস্থির করছেন তারা চিম্বুক চূড়ায় একবার বেড়িয়েই আসুন না। দার্জিলিংয়ের সঙ্গে চিম্বুকের মিলটা কোথায় নিজেই বুঝতে পারবেন। অমিলটা নিয়ে মাথা নাইবা ঘামালেন। নিজ দেশকে নিয়ে গর্ব করার মতো প্রকৃতি হাজারও সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে বসে আছে চিম্বুক পাহাড়ে আপনাকে স্বাগত জানাতে।
বান্দরবান শহরের যে স্থান থেকে রামু, থানছি ও মিলনছড়ির দিকে রাস্তা চলে গেছে সেখান থেকে চিম্বুকের দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার। এক-দেড় ঘণ্টার পথ। চিম্বুক পৌঁছার আগ পর্যন্ত পুরো সময়টাই কাটে দারুণ আনন্দে। চলার পথে যখন-তখন গাড়ি থামিয়ে নামতে ইচ্ছে করে। যাদের ক্যামেরার ফ্রেমে স্মৃতিকে ধরে রাখাই বেশি পছন্দ, তারা লেন্স থেকে চোখ ফেরাতেই চান না এ সময়। আবার ক্যামেরার কৃত্রিমতা যাদের পছন্দ নয় তারা চক্ষু লেন্সকেই ক্যামেরার কাজে ব্যবহার করেন আপন মনে। চারপাশের প্রকৃতিকে তারা স্মৃতির ফ্রেমে ধরে রাখেন পরম যত্নে। কেবল মাঝেমধ্যে দু’এক জায়গা খানাখন্দে ভরা। বাকি পথের পুরোটাই নির্মল আনন্দে ভরপুর। কেবলই হারিয়ে যেতে চায় মন। প্রকৃতিপ্রেমীরা মনের অজান্তেই গেয়ে ওঠেন—‘ধন-ধন্যে পুষ্পে ভরা/আমাদের এই বসুন্ধরা/স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা সে যে সকল দেশের সেরা...।’ বান্দরবান শহর থেকে চিম্বুকের পথে চলতে গিয়ে এরকম অসংখ্য গান ওঠে আসে গায়কের কণ্ঠে। দেশ এবং প্রকৃতির এ গানগুলো শুনলে তখন গর্বে মন জুড়িয়ে যায়। তাই ভ্রমণ দলে একজন গানওয়ালা অর্থাত্ শিল্পী রাখলে মন্দ হয় না। গানওয়ালা না পাইলেও সমস্যা নেই। নিজেই গলা ছেড়ে শুরু করে দিন। বেড়াতে গিয়ে এক-আধটু গাইলে মনে ফুরফুরে ভাব চলে আসে। দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তির মাঝেও চেহারায় আয়েশি ভাব দেখা যায়। তবে এ সময় শব্দযন্ত্রের ব্যবহার হলে এ ভাব সামান্যই ফুটে ওঠে। কারণ অকৃত্রিমতার মাঝে কৃত্রিমতায় পুরো আনন্দ মিলে না। বান্দরবানের যে অকৃত্রিম সৌন্দর্য পর্যটক মনে আনন্দ দিতে প্রকৃতির রানী সেজে বসে আছে। সেখানে যে কোনো ধরনের কৃত্রিমতাই সৌন্দর্যহীনতার কারণ হতে পারে। প্রকাশ্যে অথবা অগোচরে সেখানে যেভাবে নির্বনায়নের কাজ চলছে তাতে করে সৌন্দর্যের রানীখ্যাত বান্দরবানকে মুকুটহীন রানীতে পরিণত করার পথকেই ত্বরান্বিত করা হচ্ছে বলা চলে। এখানকার বন, পাহাড়, লেক, নদী সর্বত্র নাম জানা-অজানা হাজারও পশু-পাখির বসবাস। শব্দযন্ত্রের আওয়াজ বনে এগুলোর স্বাভাবিক চলাচলকে অস্বাভাবিক করে তোলে। উপজাতি সম্প্রদায়ের জীবন-যাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে। ফলে তারা (উপজাতীয়রা) এক সময় পর্যটকদের ওপর বিরক্ত হয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়তে পারেন। এমনটা হলে পর্যটকদের ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। সেই সঙ্গে ক্ষতি হবে আমাদের পর্যটন শিল্পের। কারণ বান্দরবানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দর্শন যেমনি উপভোগ্য, ঠিক তেমনই উপভোগ্য বিচিত্র আর বৈচিত্র্যে ভরা এ আদিবাসী সম্প্রদায়ের সমাজ-সংস্কৃতির দর্শন, যার টানে প্রতি বছর হাজারও পর্যটকের আগমন ঘটে বান্দরবানে। চিম্বুক যাওয়ার পথে সে সবের অনেকটাই চোখে পড়ে। চাইলে একেবারে কাছ থেকেও দেখে আসা যায়। আদিবাসীরা পর্যটকদের এ চাওয়াকে অপূর্ণ রাখেন না। এতে তাদেরই লাভ। আদিবাসীদের হাতে তৈরি করা মনকাড়া ডিজাইনের লুঙ্গি, গামছা, ফতুয়া, চাদর পাহাড়ে জুম চাষ করে আবাদ করা কলা, আনারস, কমলা পর্যটকদের কাছে বেশ প্রিয়। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে তারা রাস্তার দু’পাশে এসব পণ্য সাজিয়ে বসে থাকেন। পর্যটকদের অনেকে গাড়ি থেকে নেমে পছন্দের পণ্যটি কিনেন আনন্দের সঙ্গে।
এভাবে নানা আনন্দ আর উত্সাহের মাঝে কখন যে চিম্বুকের একেবারে কাছাকাছি চলে যাবেন টেরই পাবেন না। টের পাবেন একটু পরই, যখন বুকে কিছুটা চাপ বোধ করবেন। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে অনেকেরই মাথা ঘুরে এসময়। কারও বমি বমি ভাব দেখা যায়। তবে ভয়ের কিছু নেই। সমতল ভূমি থেকে এ স্থানের উচ্চতা দেড় থেকে দুই হাজার ফুট। ভূমি থেকে এতটা উচ্চতায় উঠলে মানুষের ওপর প্রকৃতির কিছু বিরূপ প্রভাবের কথা বিজ্ঞানই বলে দেয়। এ অবস্থায় জোরে নিঃশ্বাস নিলে ভালো লাগে। বুকের ওপর থেকে চাপ কমে যাবে। এবার দৃষ্টিকে প্রসারিত করুন, চোখের সামনে অন্য এক বাংলাদেশকে দেখতে পাবেন। কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে বাধ্য হবেন, সত্যিই এর রূপের নাইকো শেষ। রূপের মন ভোলানো সৌন্দর্যে চেহারা থেকে কখন যে ভয় আর উত্তেজনার ছাপ মুছে যাবে বুঝতেই পারবেন না। যখন বুঝবেন তখন চিম্বুকের চূড়া থেকে একটু দূরে, মূল সড়কে দাঁড়িয়ে। ডান পাশ দিয়ে আরেকটা সড়ক ওঠে গেছে আকাশপানে। শেষ হয়েছে চিম্বুক চূড়ায় গিয়ে। যাদের শরীরে শক্তি বেশি তারা গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা ধরেন চিম্বুক চূড়ার উদ্দেশ্যে। যারা একটু বেশি আয়েশি স্বভাবের তারা সোজা গাড়ি নিয়েই ছুটে চলেন। চিম্বুক চূড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই হাজার চারশ’ ফুট ওপরে। এখানেই চিম্বুক ছুঁয়েছে মেঘকে। মেঘেরা চিম্বুক চূড়ায় খেলা করছে। আপনি হতে পারেন সে খেলার মনোযোগী দর্শক। এমন দৃশ্য ভাবতে ভালোই লাগে। আপনার এই ভাবনার রাজ্যকে হার মানাতে চিম্বুক প্রস্তুত। রোমাঞ্চ-ভয়-উত্তেজনা-আনন্দ—সবই আছে এখানে। প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শক ছুটে আসেন প্রকৃতির টানে। বর্ষার সময়েও যে সংখ্যাটা একেবারে নগণ্য নয়। বর্ষার এ বাদলা দিনে গোটা চিম্বুকই ফিরে পায় নতুন লাবণ্য। চার পাশের সবুজ বনানী ফিরে পায় সজীবতা। কোথাও কোথাও দেখা যায় নতুন লতাপাতা। এ সবের বাইরে ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় যুক্ত হয় নতুন আরও কত কি!
এক পাশে অজোরে বৃষ্টি ঝড়ছে, অন্যপাশে স্বচ্ছ নীলাকাশ। একপাশে মেঘের ঘনঘাটা এত বেশি যে, পাহাড় চূড়া থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সূর্যকীরণ তার (মেঘ) ওপর আছরে পড়ছে। কিন্তু তা ভূপৃষ্ঠকে স্পর্শ করতে পারছে সামান্যই। ফলে এ পাশের সবুজে মোড়া পাহাড় আর বনবনানীগুলোকে মনে হচ্ছে কালো চাদরে ঢাকা। এমন দৃশ্য বর্ষার এ সময়ে চিম্বুক চূড়ায় দাঁড়িয়ে হরহামেশাই দেখা যায়। পূর্ব-দক্ষিণে তাকালে চোখে পড়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, পূর্ব-উত্তরে তাকালে পাহাড়ি নদী সাঙ্গুর চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য। ভারতের মিজোরামে যার উত্পত্তি। চিম্বুক চূড়া থেকে এ নদীকে দু’পাশের পাহাড় আর বনবনানীর মাঝ দিয়ে বয়ে চলা সামান্য পানি রেখার মতোই মনে হয়। এর আশপাশে দু’একটি ঝর্নারও দেখা মিলে বর্ষার এ সময়। দূরে-কাছে কোথাও লোকালয়ের দেখা না মিললেও মাঝে মাঝেই ধোঁয়ার কুণ্ডলীই সেগুলোর অস্তিত্ব বলে দেয়। পাহাড়ি আদিবাসীরা লোকালয়ের আশপাশের পাহাড়ে ঝুম চাষের সময় আগুন লাগালে এ ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। এ ধরনের চাষাবাদের মাধ্যমে তারা আদা, আলু, আনারস চাষ করেন। যেগুলো বাজারে বিক্রি করে সারা বছরের রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা করেন। চিম্বুক চূড়া থেকে পাহাড়িদের জীবন-যাত্রার ছিটেফোঁটা চোখে পড়লেও আন্দাজ করা যায় অনেকখানিই। যারা আরও কাছ থেকে দেখে আসতে চান তাদের অনেকেই পাহাড় বেয়ে নেমে পড়েন লোকালয়ে। তবে অচেনা-অজানা এই পথে সঙ্গীহীন না নামাই ভালো। এর পদে পদে আছে ভয় আর শঙ্কা। সে সব ভয় আর আশঙ্কাকে পেছনে ফেলে চিম্বুক জয়ের প্রশান্তি নিয়ে ভালোয় ভালোয় বান্দরবান শহরে ফিরে আসার মাঝেই আছে ভ্রমণের তৃপ্তি। তবে ফিরে আসার আগে চিম্বুক পার হয়ে আরও সামনে এগিয়ে প্রকৃতির আরেক বিস্ময় নীলগিরি’র অপার সৌন্দর্য দেখে আসতে পারলে মন্দ হয় না। ফিরতি পথে শৈলপ্রপাতের পাহাড়ি ঝর্নায় খানিক যাত্রা বিরতি মনে এনে দিতে পারে ফুরফুর আমেজ। এর ফলে বান্দরবান ভ্রমণের এবারের পর্বে চিম্বুক পথের এ যাত্রায় আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে একটি নয়, যুক্ত হতে পারে এক সঙ্গে তিনটি স্পটের নাম। আর্থিক মন্দার এ যুগে একঢিলে তিন পাখি মারার মাঝেই তো আসল কৃতিত্ব। সুতরাং চিন্তা না করে কোনো এক ছুটির দিনকে সামনে রেখে বেরিয়ে পড়ুন বান্দরবানের উদ্দেশ্যে।
ঢাকা থেকে এসি-ননএসি অনেক বাসই ছেড়ে যায় বান্দরবানের উদ্দেশ্যে। থাকার জায়গার কোনো সমস্যা নেই সেখানে। হোটেলের সামনেই চাইলে পাবেন চিম্বুকের পথে ছুটে চলার উপযোগী চাঁদের গাড়ি। পনের থেকে ২০ জনের বসার উপযোগী এগুলোর ভাড়া পড়বে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। যারা এটুকু তথ্যে সন্তুষ্ট নন, তারা যোগাযোগ করতে পারেন ০১৯২২১১২৬৭৬ এ নম্বরে।
Source: Daily Amardesh


ঘুরে আসুন চিম্বুক

পাহাড়ের পর পাহাড়। মাঝখানে জেলা বান্দরবান। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতাসম্পন্ন পাহাড়গুলোর অবস্থান এই বান্দরবানে। এর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে বিজয় (প্রায় ৫০০০ ফুট), তাজিংডন(৪৫০০ ফুট), কেওক্রাডাং, চিম্বুক (৩২০০ ফুট), ইত্যাদি। পার্বত্য জেলার ১৩টি আদিবাসীর প্রায় সবগুলোর অবস্থান এই বান্দরবানে। আদিবাসীগুলো হচ্ছে চাকমা, মারমা, টিপরা, ম্রো, খুমি, লুসাই, বোম, উসুই, পাংখো, তঞ্চ্যঙ্গা, খ্যাং, ওচাক। তবে মারমা সমপ্রদায়ের লোকসংখ্যাই বেশি বান্দরবানে।
পুরো বান্দারবান জেলাই প্রাকৃতিক দৃশ্যে ভরপুর।বান্দরবান থেকে পুরো রাস্তা আকাবাঁকা উচুনিচু। চিম্বুকে যাওয়ার পথের পাশে রয়েছে অসংখ্য উপজাতির আবাসস্থল। ঘরগুলো মাচার মতো উঁচু করে তৈরি। চিম্বুকের চূড়া থেকে যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই শুধু পাহাড় আর পাহাড়। সবুজ-শ্যামল পাহাড়ের দৃশ্য চোখ জুড়ানোর অবস্থা। পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে প্রবাহমান সাংগু নদী যা আপনাকে নিয়ে যাবে অনেক দূরে। স্থানীয় উপজাতীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, চিম্বুকের চূড়ায় দাঁড়িয়ে অনেক সময় মেঘও ধরা যায়।
ঢাকা থেকে বাস/ট্রেন/বিমানযোগে চট্রগ্রাম এসে সেখান থেকে বাসে বান্দরবান যাওয়া যায়। বান্দারবান থেকে চিম্বুকে যেতে হবে জিপ গাড়িতে। যাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় চান্দের গাড়ি। চান্দের গাড়িতে গেলে নামতে হবে বুলি বাজারে। ভাড়া করা জিপ নিয়ে সরাসরি চূড়ায় যাওয়া যায়। নিজস্ব জিপ নিয়েও যাওয়া যায়। বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৩৬৪ টি ছোট-বড় মোড় অতিক্রম করে ২৬ কিঃমিঃ দূরে চিম্বুকে যেতে হবে।
বান্দারবানে থাকার জন্য রয়েছে নানা রকম আবাসিক হোটেল। এছাড়া সরকারী রেস্টহাউসসহ জেলা পরিষদ, সড়ক ও জনপথ, বন বিভাগ, এলজিইডি ও পার্বত্য জেলা পরিষদের রেস্টহাউসও রয়েছে। এছাড়াও বান্দরবান জেলা থেকে ৪.২ কিঃমিঃ দূরে চিম্বুক সড়কের মিলনছড়িতে রয়েছে দি গাইড টু্রস লিঃ এর হিল সাইড রিসোর্ট। এখানে থাকার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি মনোরম কটেজ ঘর ও ডরমিটরি। কটেজগুলোর একক ভাড়া ৭৫০ টাকা দুজন ১০০০ টাকা। পুরো কটেজ ভাড়া নেওয়া যায়। বোম ঘরের ভাড়া একক ৪৫০ টাকা, দুজন ৭০০ টাকা, মারমা ঘরের ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা, দুজনের ৪০০ টাকা, ডরমিটরির ভাড়া প্রতি বেড ১৫০ টাকা । বেশি বেড নিলে ভাড়া কম।
বাংলাদেশনিউজ২৪x৭.কম

চিম্বুক

‘‘বাংলার দার্জিলিং’’ খ্যাত চিম্বুকের নাম দেশের গন্ডী পেরিয়ে আজ বিদেশেও পরিচিত। এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী পর্যটন স্পট যেখানে গাড়িতে চড়ে সরাসরি পাহাড় চূড়োয় পৌছানো যায়। জেলা শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে চিম্বুকের অবস্থান। সমুদ্র পৃষ্ট হতে এর উচ্চতা ২৩০০ ফুট। চিম্বুকের পাশে আদিবাসী মুরংদের বসবাস বেশি। জেলার সব ক’টি উপজেলার সাথে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এখানে টিএন্ডটি বোর্ড একটি বেইজ স্টেশন ও একটি টাওয়ার স্থাপন করেছে। পর্যটকদের দৃষ্টিতে এ টাওয়ারটি খুবই আকর্ষণীয়। এ স্থান থেকে বঙ্গোপসাগর দেখা যায়। এখানে প্রায়ই নাটক ও বিজ্ঞাপন চিত্রের স্যুটিং হয়। এখানে সড়ক বিভাগের একটি রেস্ট হাউস রয়েছে ইহা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের একটি অত্যাধুনিক রেষ্ট হাউজ এখানে নির্মিত হয়েছে। চাঁদের গাড়ীতে চিম্বুক যেতে ১৫০০-২০০০ টাকা এবং জীপ গাড়ীতে ২০০০-২৫০০ টাকা লাগবে।

Source: www.dcbandarban.gov.bd

Friday, January 21, 2011

টেকনাফের জাহাজপুরা হতে পারে সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা

টেকনাফের জাহাজপুরা হতে পারে সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা

০০ উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা

একদিকে পাহাড়, অপরদিকে বঙ্গোপসাগর, মাঝখানে প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি গর্জন বন। নৈসর্গিক এ সৌন্দর্য যে কারো মন কেড়ে নেবে। পাহাড়, সাগর আর প্রকৃতির অপরূপ এই মেলবন্ধন টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুরা গ্রাম। টেকনাফ উপজেলা শহরের অদূরে সাগর পাহাড় বেষ্টিত এ গ্রামের মানুষের আয়ের উৎস সাগরে মৎস্য শিকার, বন-জঙ্গলে কাঠ আহরণ। স্থানীয় বাসিন্দারা বনসম্পদ পাহারা দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করার ফলে জাহাজপুরার বনসম্পদ এখন দেশের অদ্বিতীয় বনাঞ্চল হিসাবে রূপান্তরিত হয়েছে। স্থানীয়রা মনে করেন, টেকনাফের অবহেলিত জনপদ জাহাজপুরায় সরকারি উদ্যোগে পর্যটন অবকাঠামো সৃষ্টি করা হলে জাহাজপুরা হতে পারে কক্সবাজারের ২য় পর্যটন নগরী।

শীলখালী বন রেঞ্জ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, জাহাজপুরা বন বাগানের যে সব গর্জন গাছ রয়েছে সেগুলোর সংরক্ষণ করা গেলে জেলার অভয়ারণ্যে পরিণত হবে জাহাজপুরা। বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফেজ সাইফুল ইসলাম জানান, জাহাজপুরার উপকূলীয় বনসম্পদ রক্ষা করে এখানে আধুনিক পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে। তাছাড়া এলাকার শত শত বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
Source: Daily Ittefaq

Wednesday, January 19, 2011

আজ বান্দরবানে শুরু হচ্ছে সপ্তাহব্যাপী রাজপুণ্যাহ

আজ বান্দরবানে শুরু হচ্ছে সপ্তাহব্যাপী রাজপুণ্যাহ

০০ মিলন চক্রবর্তী, বান্দরবান সংবাদদাতা, জানুয়ারি ২০, ২০১১,

আজ ২০ জানুয়ারি থেকে ৭দিনব্যাপী বান্দরবান বোমাং সার্কেলের ঐতিহ্যবাহী রাজপুণ্যাহ উৎসব শুরু হচ্ছে। বৃটিশ শাসনামল থেকেই প্রজাদের কাছ থেকে বছরে একবার খাজনা আদায় এবং প্রজাদের সঙ্গে রাজার সম্মিলনের আন্তরিক ইচ্ছে নিয়েই বোমাং রাজা অংশৈপ্রু চৌধুরী সুদীর্ঘকালের ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ন রাখার প্রয়াসে রাজপুণ্যাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছেন। রাজকর প্রদান, রাজদর্শন লাভের বর্ণাঢ্য অনন্য মহাআনন্দ উৎসব বোমাং রাজপুণ্যাহ। বোমাং সার্কেলে বসবাসরত ১১ ভাষাভাষী আদিবাসীসহ বাঙালীদের কাছেও কিংবদন্তীর এই রাজপুণ্যাহ সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
রাজপুণ্যাহকে কেন্দ্র করে বান্দরবানে যে সাড়া পড়ে তা এক কথায় অবর্ণনীয়। এই সাড়া প্রাণ উৎসারিত। এর আবেদন কোন বিনোদনের ইঙ্গিতবহ নয়। এটি শাশ্বত সুন্দর এবং চিরন্তন সংস্কৃতির অঙ্গ। এটুকু গর্ব করার আছে যে, আমাদের গর্বের সম্পদ উপজাতীয় সংস্কৃতি রয়ে গেছে নির্ভেজাল এবং নির্মল। রাজপুণ্যাহকে কেন্দ্র করে তা উৎসারিত হয়। নিবেদিত হয়। এটি এক অপার পাওয়া। রাজপুণ্যাহ পার্বত্য মানুষের প্রাণের অনুষ্ঠান। এটি বান্দরবানে বসবাসরত ১১টি আদিবাসী সম্প্রদায়সহ সকল সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের পরিচায়ক। এবারের রাজপুণ্যাহ ১৩৫ তম। বোমাং সার্কেলের ৯৬ বছর বয়স্ক ১৫তম রাজা অংশৈপ্রু চৌধুরী রাজপুণ্যাহ উৎসবের মধ্যমণি। ১৩৪ বছরের পুরনো রাজপুণ্যাহ অনুষ্ঠানকে ঘিরে বান্দরবান শহর হয়ে উঠে লোকে লোকারণ্য ও উৎসবের নগরী হিসেবে।
রাজা আছেন, রানী আছে। আছে রাজ সিংহাসন। তবে নেই রাজ্য, নেই রাজদণ্ড। তবুও তিনি রাজা। রাজা অংশৈপ্রু চৌধুরী। বয়স ৯৬। নাই থাকল রাজ্যপট, নাই থাকল রাজদণ্ড। আগের সেই ক্ষমতা নেই, জৌলুসও নেই। বান্দরবানের আদিবাসীদের কাছে তিনিই রাজা। তারা পরম শ্রদ্ধায়, ভালবাসায় মান্য করেন তাকে। প্রতিবছর বোমাং রাজপুণ্যাহে তারা রাজার হাতে তুলে দেন রাজস্ব আর উপঢৌকন। খাজনা আদায় এবং প্রজাদের সঙ্গে মিলনের আন্তরিক ইচ্ছে নিয়েই রাজারা বংশ পরম্পরায় সুদীর্ঘকাল ধরে রাজপুণ্যাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছেন। ১৮৯৭ সালে নবম বোমাং রাজা সাকনাইঞোর আমল থেকে রাজপুণ্যাহ চলে আসছে। রাজসিক হাঁক-ডাক এখন আর না থাকলেও রয়েছে ঐতিহ্য আর নিজস্ব সংস্কৃতি। বোমাং রাজা অংশৈপ্রু চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, বয়সে বৃদ্ধ হলেও আমি মানসিকভাবে এখনো তরুণ। ১৭২৭ সালে আমাদের পূর্বপুরুষ রাজা কংহ্লাপ্রু প্রথম বান্দরবানে আসেন। বোমাং রাজার সার্কেল হচ্ছে দুই হাজার বর্গমাইল। রাজার মাধ্যমে ১০৯ জন হেডম্যান ও হাজারখানেক পাড়া কারবারী রয়েছেন। রাজার ৫ ছেলে, ২ মেয়ে আর নাতী-নাতনী আছে ২৪ জন। রাজা বলেন, বাংলাদেশের অপরাপর জেলার তুলনায় বান্দরবান সর্বাধিক শান্তিপূর্ণ এলাকা। এখানে সকল সম্প্রদায়ের জনগণ ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সহাবস্থান করছেন। এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের জনগণের ভূমিকা খুবই প্রশংসনীয়। লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে পার্বত্য জেলা বান্দরবান শহর। রাজপুণ্যাহ উৎসবে বোমাং সার্কেলের ১১ ভাষাভাষী আদিবাসী সম্প্রদায়ের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। সার্কাস, যাত্রা, পুতুল নাচ, নাগরদোলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, উপজাতীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকে এ মহামিলন মেলায় । মারমা ভাষায় রাজপুণ্যাহকে বলে'পইংজ্রা'।
রাজবাড়ি মাঠে এ উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী মেলা বসে। বৃটিশ শাসনামল থেকেই বছরে একবার প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় এবং প্রজাদের সঙ্গে রাজার সম্মিলনের আন্তরিক ইচ্ছে নিয়েই সুদীর্ঘকালের রাজপুণ্যাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছেন।
Source: Daily Ittefaq

সুস্থ থাকুন ভ্রমনে

সুস্থ থাকুন ভ্রমনে

এখন চলছে ভ্রমনের মৌসুম। এই লেখা যখন আপনার হাতে - হতে পারে আপনি তখন ব্যাগপত্র গুছিয়ে ভ্রমনে। হতে পারে বাসে কিংবা ট্রেনে। অথবা প্রস্তুুতি নিচ্ছেন বেরিয়ে পড়বার। শীত ভ্রমনের জন্য উপযুক্ত সময়। তবে ভ্রমনে হতে পারে অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা। অসুখ বিসুখে ভ্রমনের আনন্দটাই যেন মাটি না হয়ে যায় তার জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
মোশন সিকনেস: মোশন সিকনেস' ভ্রমনের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। 'মোশন সিকনেস' মূলত মস্তিকের এক ধরনের সমস্যা। বিশেষ করে বাস, প্রাইভেটকার বা এ জাতীয় অন্যবাহন গুলিতে এ সমস্যা হয়। শরীরের অন্তঃকর্ণ আমাদের শরীরের গতি ও জড়তার ভারসাম্য রক্ষা করে। যখন গাড়ীতে চড়ি তখন অন্তঃকর্ণ মস্তিষ্কে খবর পাঠায় যে সে গতিশীল। কিন্তুু চোখ বলে ভিন্ন কথা। কারণ তার সামনের বা পাশের মানুষগুলো কিংবা গাড়ীর সিটগুলো তো স্থির। চোখ আর অন্তঃকর্ণের এই সমন্বয়হীনতার ফলে তৈরী হয় 'মোশন সিকনেস'। 'মোশন সিকনেস' এ বমির ভাব হয়। সেই সাথে মাথা ঘোরা, মাথা ধরা প্রভৃতি। মোশন সিকনেস থেকে বাঁচার উপায় হলো, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকা। বড় বড় শ্বাস নিতে হবে। প্রয়োজন হলে চোখ বুজে থাকুন। বই পড়বেন না বা স্থির কোন কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। আদা চিবাতে পারেন। মোশন সিকনেসে কাজে দেবে। ভ্রমনে যাদের বেশী সমস্যা হয় তারা গাড়ীতে ওঠার আধঘন্টা আগে ডমপেরিডন জাতীয় ওষুধ খেয়ে নিতে পারেন।
ট্রাভেলার্স ডায়রিয়া: ভ্রমনের খুব কমন একটি সমস্যা। বেশ কয়েকপদের ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের কারণে এটি হয়। সাধারণত: বিভিন্ন ধরনের খাবার যেমন অল্প সিদ্ধ মাংস, সি ফুড, অপাস্তরিত দুধ এবং দুগ্ধ জাত খাবার, পানি ইত্যাদির মাধ্যমে এটি ছড়ায়। তাই খাবার এবং পানির ব্যাপারে সাবধান থাকুন।
ডিপ ভেইন থ্রম্বসিস: দীর্ঘ ভ্রমনে আরেকটি সমস্যা হল 'ডিপ ভেইন থ্রম্বসিস'। অনেকক্ষন বসে থাকলে শরীরের গভীর অংশের শিরাগুলোতে রক্ত জমাট বেঁধে থ্রম্বাস তৈরী হয়। এই থ্রম্বাস গুলো ব্রেইনে চলে গেলে স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে। তাই দর্ীঘ ভ্রমনে একটানা বসে না থেকে একটু হাঁটাচলা করুন। সম্ভব না হলে জায়গায় বসেই হাত পা নাড়-ন। এই সমস্যাটা বয়স্কদের বেশী হয়।
ভ্রমন যখন পাহাড়ে: বাংলাদেশের পাহাড়ী এলাকায় ভ্রমনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ম্যালেরিয়া। তাই পার্বত্য এলাকায় ভ্রমনের পূর্বেই প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ম্যালেরিয়ার প্রতিরোধক ওষুধ খেয়ে নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে মশা নিধনকারী সপ্রে বা এরোসল, মশারী ব্যবহার করবেন। আকাশে ভ্রমন যখন: আকাশ ভ্রমনে সমস্যা হয় উচ্চতার কারণে। আমরা জানি একটি নির্দিষ্ট উচ্চতার পরে বাতাসে অক্সিজেনের চাপ কমতে থাকে। মানব শরীরে অক্সিজেনের চাপের সাথে বাতাসের এই অক্সিজেনের চাপের তারতম্য শরীরে নানারকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে যেমন মাথাঘোরা, কানে তালালাগা, বমির ভাব হওয়া। এই সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারেন। চুইংগাম চাবানো, ঘনঘন ঢোক গিলা, জুস খাওয়া ইত্যাদি হতে পারে এর সমাধান। তবে যাদের শ্বাস কষ্ট, হার্টের অসুখ, বুকে ব্যথা (এনজাইনা) প্রভৃতি সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো আরো জটিল হতে পারে। ঠান্ডা, সর্দি নাক বন্ধ থাকলে বিমান ভ্রমন অস্বস্তিকর হতে পারে। বেড়ে যেতে পারে সাইনাসের সংক্রমণ। তাই আগেভাগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শিশু ও সুস্থ থাকুক: ভ্রমনে শিশুদের প্রতি বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। ঠান্ডা, সর্দি, শ্বাসনালীর ইনফেকশন শিশুদের সেই সাথে আপনাদের ভ্রমনের আনন্দকে মাটি করে দিতে পারে। কোন ভাবেই ঠান্ডা লাগানো যাবেনা গরম কাপড় মাফলার কান টুপি নিশ্চিত করুন। বাইরের খাবার হতে সাবধান। প্যারাসিটামল, এন্টিহিসটামিন, নাকের ড্রপ সাথে রাখতে পারেন। ডাক্তার বললে কমন কিছু এন্টিবায়েটিকও রাখতে পারেন।
আন্ত:দেশীয় ভ্রমনে: দেশ ভেদে অসুখ-বিসুখের ধরন ও মাত্রা বিভিন্ন। যে দেশে যাবেন সে দেশের অসুখ বিসুখ সমর্্পকে আগে থেকেই তথ্য নেবেন। প্রয়োজনে ভ্যাকসিন দিয়ে নিবেন। হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস -বি, টাইফয়েড, চিকেন পক্স, ইয়েলো ফিভার (যে সব দেশে ইয়োলো ফিভারের প্রকোপ আছে সে দেশের ক্ষেত্রে) প্রভৃতি ভ্যাকসিন সম্ভব হলে দিয়ে নেবেন। সেসব দেশের আবহাওয়া ও তাপমাত্রা সমর্্পকে আগেভাগে জেনে নেবেন। প্রয়োজনে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
আরো কিছু টিপস: ০০ ভ্রমনে এসিডিটি হতে পারে। আগে থেকেই এসিডিটির ওষুধ সাথে রাখুন। ০০ উচ্চ রক্তচাপের রোগীরাও বিশেষ সর্তক থাকবেন। ভ্রমনের দু'একদিন আগে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের চেম্বার ঘুরে আসুন। ০০ ডায়বেটিসের রোগীদের জন্যও একই পরামর্শ। ডায়াবেটিসের রোগীরা ভ্রমন কালীন সময়ে সাথে গস্নুকোজ গোলানো পানির বোতল রাখুন। সুগার কমে 'হাইপোগস্নাইসোমিয়া' হয়ে যেতে পারে যে কোন সময়। ০০ হাতের কাছে বিশুদ্ধ পানির বোতল রাখুন। অনিরাপদ খোলা পানি খাবেন না। ০০ বাইরের খাবারের ব্যাপারে সাবধান থাকবেন। অল্প সিদ্ধ মাংস, অপাস্তুরিত দুধ খাবেন না। ০০ আপনার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কমন কিছু এন্টিবায়েটিক সহ জরুরি কিছু ওষুধ সাথে রাখুন। ০০ একটা ট্রাভেল কিট বানিয়ে নিতে পারেন যেখানে থাকবে প্রয়োজনীয় ওষুধসহ, গজ, ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক মলম বা সলু্যশন। ০০ ভ্রমনের ধরন এবং আবহাওয়া অনুযায়ী পোষাক নির্বাচন করুন। জুতার ব্যপারে বাড়তি মনোযোগ প্রয়োজন। আরামদায়ক কেডস হলে ভালো হয়। মেয়েরা হিল জুতা ব্যবহার না করলেই ভালো।
আপনার ভ্রমন আনন্দময় হোক। অসুখ যেন ভ্রমনের সুখকে বিঘি্নত না করে।

ডাঃ গুলজার হোসেন উজ্জ্বল; স্বাস্থ্য নিবন্ধকার

পল্লীভ্রমণ: গন্তব্য হাজাছড়ি মারমাপল্লী

পল্লীভ্রমণ: গন্তব্য হাজাছড়ি মারমাপল্লী
মৃত্যুঞ্জয় রায়
by সাপ্তাহিক ২০০০ 13 জানুয়ারি 2011

রাঙামাটিতে টানা কয়েকদিন বৃষ্টির পর এমন একটা সূর্যস্নাত সকাল দেখে মনটা আনন্দে নেচে উঠল। খুশির আর একটা কারণ, ইউএনডিপির আমন্ত্রণে আমাদের প্রত্যন্ত এলাকার একটা মারমাপাড়ায় যাওয়ার কথা। রাঙামাটি থেকে সে পাড়াটা প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। কাপ্তাই হ্রদের মধ্য দিয়ে বোটে যেতে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক লাগে। তবে ইউএনডিপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সুপ্রিয় ত্রিপুরা জানালেন, ‘দাদা আপনাদের জন্য ইউএনডিপির স্পিডবোটের ব্যবস্থা হয়েছে। ডাবল ইঞ্জিনের এই স্পিডবোট মিনিটে দেড় কিলোমিটার চলে। তাই হয়তো ৪০-৪৫ মিনিটের মধ্যেই আমরা সেখানে পৌঁছে যাব।’ ইউএনডিপির কর্মকর্তা সুপ্রিয় ত্রিপুরার কথা শুনে তাই আনন্দ দ্বিগুণ বেড়ে গেল। কর্ণফুলী নদী, মায়াবী পাহাড়-জলের কাপ্তাই হ্রদ, জলজঙ্গল পেরিয়ে ছুটে চলব আমরা এক অদেখা ভুবনে, অজানা দেশে।

ঠিক সাড়ে ৮টায় চাকমা রাজবাড়ির কাছে ইউএনডিপি ঘাট থেকে স্পিডবোট ছাড়ল। পেছনে ফেনিল ঢেউ তুলে তীব্র বেগে ছুটে চলল বোটটা। লেকের এদিক-ওদিকের দৃশ্যগুলো খুব দ্রুত মুছে যেতে লাগল। এমনকি ভালো লাগা দৃশ্যগুলো স্থির হয়ে একটু ভালো করে ছবি তোলার সুযোগও পেলাম না। তবে এর মধ্যেই ক্যামেরার শাটার টিপে যেতে লাগলাম, যা আসে। প্রথমেই পেরিয়ে গেলাম রাঙামাটির ব্যস্ততম বনরূপার ভাসমান বাজার। ভিয়েতনামের বাজারের মতো চিত্র এই বাজারের। শত শত নৌকা ভিড়েছে বনরূপা বাজারের ঘাটে। আনারস আর কাঁঠালের দাপটটাই যেন বেশি। নৌকায় নৌকায় চলছে বেচাকেনা, পণ্য ওঠানামা। সুপ্রিয় বলল, ‘আজ তো বুধবার। বনরূপার হাট। তাই নৌকা আর পণ্যের আনাগোনা বেশি।’
রাঙামাটিতে প্রচুর কাঁঠাল উৎপন্ন হয়। এমনও হয়, বাজারে খুব বেশি কাঁঠাল ওঠায় কখনো কখনো দাম খুব নেমে যায়। অনেকের বোটে আনার ভাড়াও ঠিকমতো ওঠে না। তবে এখন দিন অনেকটাই বদলে গেছে। ঢাকা ও চিটাগাং থেকে অনেক পার্টি আসে। প্রতি বুধবার বনরূপা থেকে কয়েক ট্রাক কাঁঠাল ও আনারস চলে যায় রাঙামাটির বাইরে। উপজাতিয়রা সাধারণত এ ধরনের কোনো ব্যবসা করেন না। কিছু স্থানীয় উপজাতিয়রা অভিযোগ করেন, একসময় রাঙামাটিতে বাঙালি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট খুব জোরাল ছিল। সব বাঙালি ব্যাপারী একজোট হয়ে শলাপরামর্শ করে একটা দাম ঠিক করে আনারস ও কাঁঠাল কিনত। তারা যা দাম বলত সে দামেই প্রায় সবাই আনারস ও কাঁঠাল বেচতে বাধ্য হতো।
দেখা গেছে, আনারসের দাম চট্টগ্রামে দশ টাকা, সেই আনারসই রাঙামাটিতে বিক্রি হতো টাকায় একজোড়া। এমন দিনও গেছে, পিঠে ঝুড়িভর্তি করে উপজাতি মেয়েরা দশ-বারো কিলোমিটার হেঁটে রাঙামাটিতে আনারস বেচতে নিয়ে এসেছে। এসে দেখে একশ আনারস পঞ্চাশ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে না। তাই কেউ কেউ রাগ করে সেসব আনারস আর ফেরত না নিয়ে কাপ্তাই হ্রদের জলে ফেলে দিয়ে খালি ঝুড়ি নিয়ে আবার দশ-বারো কিলোমিটার হেঁটে বাড়ি ফিরত। তখন তো মোবাইলের যুগ ছিল না। তাই ঢাকা বা চট্টগ্রামে আনারসের দাম কত তা উপজাতিয়রা জানতে পারত না। ফলে বাজারে পণ্য বিক্রি করতে এসে প্রায়ই তাদের ঠকতে হতো। মজার ব্যাপার হলো, তারা যে ঠকছে সেটাও অনেকে বুঝত না। ভাবত ওটাই ন্যায্য দাম। হিসাবও অনেকে ঠিকমতো বুঝত না। অনেক উপজাতি নাগরিকই শত কিংবা হাজার গুনতে পারে না, তারা প্রায়ই কুড়ি হিসাবে টাকা গোনে।
খুব সকালে বনরূপা বাজারের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জনৈক ব্যবসায়ী প্রিয়তোষ চাকমার কাছ থেকে কথাগুলো শুনছিলাম আর প্রায় একশ বছর আগেও তাদের প্রায় একই দশার কথা মনে করে লজ্জিত হচ্ছিলাম। সেকালেও অধিকাংশ উপজাতি মানুষের কাছেই বাঙালি ও মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীরা ‘শঠ’ হিসাবে পরিচিত ছিল। সে যুগেও এসব ব্যবসায়ী লবণ ও সাবান বিক্রি করত চড়া দামে নতুবা ধান ও অন্য শস্যের বিনিময়ে। সেেেত্রও অধিকাংশ উপজাতিই বিশ্বাস করত, ওটাই বোধহয় ন্যায্য দাম। তবে অতীতে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে তারা পণ্য বেচতে বাজারে আসত না। সকালবেলা শোনা এসব কথা ভাবতে ভাবতেই একে একে পার হয়ে গেলাম ডিসি বাংলো ও পর্যটন। পেছনে পড়ে রইল রাঙামাটি শহর আর আকাশে হেলান দেওয়া পাহাড়গুলো।
আমরা যাচ্ছি কাপ্তাইয়ের পথে। তবে কাপ্তাই যাওয়ার পথ থেকে স্পিডবোটটা টার্ন নিল অন্যপথে। একটু এগ্রিয়ে সুপ্রিয় দেখাল বিলাইছড়ি যাওয়ার পথটাও। যেতে যেতে হ্রদের পানিটা যেন টলটলে হয়ে এলো, রাঙামাটির কাছে কর্ণফুলীর সেই ঘোলাটে রূপ নেই। কেমন শান্ত, নির্জন একটা পরিবেশ। বৃষ্টিতে দিনে দিনে লেকের পানি বাড়ছে। স্বচ্ছ সে জলের বুক যেন এক ঢাউস আয়না। সে আয়নার মধ্যে পড়েছে সবুজ অরণ্য আর নীলাভ পাহাড়ের ছায়া। কোনো কোনো পাহাড়কে ন্যাড়া করে তার বুকে জুমচাষ করা হয়েছে। সেসব জুমে চারা গজিয়ে সবে পাহাড়ের গায়ে একটা সবুজ প্রলেপ পড়েছে। ঢেউ ঢেউ সেসব সবুজ ওড়না পরা পাহাড়ের বুকগুলো হ্রদের জলে ছায়া ফেলেছে। হ্রদের বুকে ফিনফিনে বাতাসের ঢেউ অথবা স্পিডবোট থেকে ধেয়ে যাওয়া ঢেউগুলো সেসব ছবিকে রেখায় রেখায় ভেঙে দিচ্ছে। চমৎকার সে দৃশ্য। স্পিডবোট থেকে দেখা যাচ্ছে পাহাড়ের ঢালে ঢালে মাচাং ঘর, উপজাতিপল্লী, নৌকার আনাগোনা। এসব দেখতে দেখতে হ্রদের নির্জনতা ছেড়ে একটা জনপদের কাছাকাছি এসে পড়লাম বলে মনে হলো। সুপ্রিয় জানাল, ওটা নেভাল ক্যাম্প। আমরা জীবতলি ইউনিয়নে এসে পড়েছি। কিন্তু ওটাকে ডানে রেখে স্পিডবোট ছুটে চলল আরো দূরে। এবার আরো বেশি নির্জনতা, পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় আষাঢ়ী মেঘের মাতামাতি। এসব দৃশ্যে মুগ্ধ হতে হতেই আমরা পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্যে। এটাই সেই হাজাছড়ি অংচাজাই কারবারিপাড়া, উপজাতি মারমাদের গ্রাম।
স্পিডবোট থেকে নেমে এবার পাহাড় চূড়ায় ওঠার পালা। লাল মাটির বুক বেয়ে ওপরে ওঠার জন্য নির্দিষ্ট কোনো পথ নেই। তাই যে যেভাবে পারি সুবিধামতো হেঁটে ওপরে উঠে এলাম। উঠতে উঠতে মনে হলো আমরা যেন এক ফলবীথিতে প্রবেশ করছি। কী নেই সে পাহাড়ের ঢালে। কাঁঠাল, লিচু, আম, কুল, বেল, বেতফল, আতা, লেবু, নারকেল, পেয়ারা, তেঁতুল সব গাছই আছে। লিচু, আম, তেঁতুলগাছগুলো বেশ বড়, পুরনো। পাহাড়ের চূড়ায় উঠেই একটা বিশাল তেঁতুলগাছ চোখে পড়ল। আহ্, কী চকচক করছে সবুজ পাতাগুলো। গাছের ডালপালাভর্তি ঘন পত্রপল্লবে শীতল ছায়ার আহ্বান। দলের অঞ্জন বললেন, ‘আপনি যে কোনো মারমাপাড়ায় গেলে তেঁতুলগাছের দেখা পাবেন। তারা নতুন কোনো পাহাড়ে বসতি শুরু করার সময় প্রথম যে গাছটি লাগায় সেটি হলো তেঁতুল। শুধু পাড়ায় না, এমনকি অনেক মারমা বাড়িতেও দেখবেন তেঁতুলগাছ আছে। বলতে পারেন এটা ওদের এক ধরনের সংস্কার। ওরা ভূতপ্রেতে খুব বিশ্বাস করে। অনেক মারমাই মনে করে, দেবতাদের মতো ভূতপ্রেতদেরও পুজো দিতে বা সন্তুষ্ট রাখতে হয়। না হলে ওইসব অপদেবতা যে কোনো সময় তি করতে পারে। মারমাদের বিশ্বাস, দেবতাদের পুজো দিতে হয় তাদের কাছ থেকে বর বা আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য। আর অপদেবতাদের পুজো করতে হয় তাদের রোষ থেকে বাঁচার জন্য। পৃথিবীতে শান্তিময় জীবনের জন্য ভালো ও মন্দ এই দুটি জিনিসকেই বশে রাখার প্রয়োজন আছে।’ হয়তো তেঁতুলের সঙ্গে ভূতপ্রেতদের কোনো সম্পর্ক আছে। তাছাড়া মারমারা খুব তেঁতুল খায়। রান্নায় টক একটি অনিবার্য খাবার। ওদের এ সংস্কার আছে কি না জানি না, তবে পাড়াটায় বেশ কয়েকটা প্রাচীন তেঁতুলগাছের দেখা পেলাম।
লেক থেকে পাড়াটা প্রায় চার-পাঁচশ ফুট ওপরে হবে। তাই অত উঁচুতে জলের স্পর্শ পাওয়া কঠিন। কিন্তু কী আশ্চর্যজনকভাবে অত উঁচু পাহাড়ের মাথায় বিশাল দৈত্যের মতো তেঁতুলগাছগুলো দাঁড়িয়ে রয়েছে। শুধু দাঁড়িয়ে রয়েছে বললে ভুল হবে, ঘনপত্রপল্লবে সে উদ্ভিন্ন যৌবনা, থোকা থোকা হৃষ্টপুষ্ট তেঁতুল ফলে গাছটা সালঙ্কারা। পাহাড়ের ঢালে কাঁঠালগাছগুলোও কম তেজি না, সেগুলোতে কাঁঠালও ধরেছে প্রচুর। উঠতে উঠতে শুধু ফলের গাছই নয়, কিছু বাড়ির আঙিনাতে অনেক বাহারি পাতা ও ফুলের গাছও চোখে পড়ল। তবে পাড়াটার কোথাও কোনো সমতল জমি চোখে পড়ল না। পাহাড়ের চূড়া ও ঢালে ঢালে বাঁশ, কাঠ আর ছন/খড় দিয়ে তৈরি মারমাদের মাচাং ঘর। কয়েকটা মাটির দেয়াল দেওয়া টিনের ঘরও অবশ্য রয়েছে সে গাঁয়ে। আর কারবারির (পাড়াপ্রধান) বাড়িটা নতুন করে তৈরি হচ্ছে ইট-সিমেন্ট দিয়ে। কয়েকজন বাঙালি মিস্ত্রি সে ঘর তৈরির কাজ করছে। এ যেন আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের মারমাদেরও আবাসন ব্যবস্থা এবং জীবনধারা ধীরে ধীরে বদলে যাওয়ার ইঙ্গিত।
ছবি : লেখক

Monday, January 17, 2011

খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে কয়লার সন্ধান

খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে কয়লার সন্ধান

তারিখ: ১৭-০১-২০১১

খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়ি এলাকায় গহীন অরণ্যে কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে। একটি নির্ভরযোগ্য সংবাদের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসন যৌথভাবে রোববার পরিদর্শনে গিয়ে এ কয়লার সন্ধান লাভ করে।
জানা গেছে, বর্মাছড়ি এলাকায় কয়লার খনি আছে—এমন খবর সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আসার পর ১২ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি লক্ষ্মীছড়ি জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. সালাহউদ্দিন আল মুরাদ এবং লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান, থানা ইনচার্জ মো. শাহজাহান, থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবুল হাসেমসহ একটি দল কয়লার খনি পরিদর্শন করেন।
লে. কর্নেল সালাহউদ্দিন ও ইউএনও মিজানুর জানান, তাঁরা একটি পাহাড়জুড়েই কয়লা দেখতে পেয়েছেন। পাশের পাহাড়ি ছড়া দিয়ে পানিতে কয়লার টুকরো ভেসে ভেসে চলে যাচ্ছে। পথচারীরা আগুন দিয়ে কয়লা পুড়ে পরীক্ষা করেছে—এমন চিহ্ন পড়ে আছে।
এলাকাবাসী জানান, কেউ কেউ এ পাহাড় থেকে কয়লা নিয়ে বাসা-বাড়িতে রান্না করছে। পরিদর্শনে যাওয়া কর্মকর্তারা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য নিয়ে এসেছেন এবং শিগগিরই খনিজ ও জ্বালানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পরীক্ষা করার জন্য পাঠাবেন বলে ইউএনও জানান।
এর আগে ৩০ ফিল্ড রেজিমেন্টের আর্টিলাটির তত্কালীন জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আসিফ আবদুর রউফ প্রথম এ কয়লার সন্ধান পেয়ে তদন্ত করার চেষ্টা চালান। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ঘটনাস্থলে যেতে পারেননি। বাসস।

আলুটিলা আর নয়নাভিরাম রিসাং

আলুটিলা আর নয়নাভিরাম রিসাং
এপ্রিলের এক রৌদ্রময় সকালে বেরিয়ে পড়লাম পার্বত্য চট্টগ্রামের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের লীলাভূমি খাগড়াছড়ির উদ্দেশে। সঙ্গে আমার সবসময়কার ভ্রমণসঙ্গী বন্ধু মুসা আহমেদ, সাকিব হোসেন আর আবদুর রউফ। শিক্ষাজীবন চট্টগ্রামে হওয়ায় তাদের সঙ্গে চষে বেড়িয়েছি চট্টগ্রাম আর পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় সব জায়গা। এবার খাগড়াছড়ি ভ্রমণে আমাদের মূল গন্তব্য ছিল আলুটিলা আর রিসাং ঝরনা। ঘুরে এসে লিখেছেন কাউসার মোঃ নূরুন্নবী
বাসস্ট্যান্ডে গিয়েই পড়লাম বিপাকে। সকাল সকাল পেঁৗছলেও বাস মিস করলাম। কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা জানালেন, ২ ঘণ্টার আগে আর কোনো গাড়ি নেই। আমাদের তো মাথায় হাত! কারণ রাতেই আবার চট্টগ্রাম ফিরে আসতে হবে। উপায়ান্তর না দেখে চড়ে বসলাম লোকাল বাসে। আর এখানেই ভুলটা করে বসলাম। রীতিমতো যুদ্ধ করে বাসে সিট দখল করতে হলো। একে তো মানুষের উপচেপড়া ভিড়, তার ওপর বাসের পেছনের সিটে বসায় ঝাঁকি খেতে খেতে প্রাণ যায় অবস্থা। তবে মাটিরাঙা পেঁৗছার পর অবস্থা পাল্টে গেল। পথের দুই ধারের মনকাড়া রূপ আস্তে আস্তে আমাদের ক্লান্তির অনেকখানিই প্রশমিত করে দিল। সারি সারি উঁচু পাহাড় আর জুমক্ষেত পেছনে ফেলে আমাদের বাস ছুটে চলেছে। আমরা একেকজন হারিয়ে গেলাম মায়াবী এক জগতে। কিছুক্ষণ পর আমাদের বাসটি উঁচু-নিচুু রাস্তায় গিয়ে পেঁৗছল। হঠাৎ বাসটি একবার খাড়া ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছে তো এই আবার বিপজ্জনকভাবে নেমে আসছে। কিছু কিছু জায়গায় দেখলাম, সেতুর আগে ঝুঁকিপূর্ণ সতর্ক নির্দেশ দেওয়া। খাগড়াছড়ির পথে পথে এরকম অনেক ছোট ছোট ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতু চোখে পড়ে।
বাসের হেলপারকে আগেই বলে রেখেছিলাম আলুটিলা নামিয়ে দিতে। ৩ ঘণ্টার বাস জার্নিটাকে ৪ ঘণ্টা বানিয়ে খাগড়াছড়ি শহরের প্রায় ছয় কিলোমিটার আগে বাস নামিয়ে দিল আমাদের গন্তব্যস্থল আলুটিলায়। অনেকেই হয়তো জানেন, আলুটিলা বিখ্যাত তার রহস্যময় সুড়ঙ্গের কারণে। আমাদেরও ব্যাপারটা আগে থেকেই জানা ছিল। তাই আলুটিলায় নেমেই আমাদের মধ্যে একটা অ্যাডভেঞ্চার অ্যাডভেঞ্চার ভাব চলে এলো। পাঁচ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম। প্রবেশমুখেই দেখতে পেলাম পর্যটকদের আকর্ষণ করতে আলুটিলা কর্তৃপক্ষের সাইনবোর্ড। অনেকখানি হেঁটে আর প্রায় শ'খানেক ধাপ সিঁড়ি ভাঙার পর গিয়ে মিলল সুড়ঙ্গমুখের দেখা। বন্ধু রউফ মোবাইলটর্চের আলোতে সুড়ঙ্গের ভেতর ঢুকে পড়ল। তবে কিছুদূর গিয়েই বোঝা গেল, এরকম ঘুটঘুটে অন্ধকারে সুড়ঙ্গ জয় সম্ভব নয়। তাছাড়া কোনো কারণ ছাড়াই গা ছমছম করছিল। তাই আবার ফিরে গিয়ে মশাল কিনে আনলাম। সুড়ঙ্গের পথ কিছুটা কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল। তলদেশে প্রবহমান ঝরনা। মাথার ওপর ঘুটঘুটে অন্ধকারে বাদুড়ের কর্কশ চিৎকার। পাহাড়ের নিচে খুব সাবধানে মশাল নিয়ে সুড়ঙ্গের ভেতর যেতে হয়। এভাবে মিনিট দশেক যাওয়ার পর পাওয়া গেল সুড়ঙ্গের অপর প্রান্ত। বেশ একটা অ্যাডভেঞ্চার হয়ে গেল ভাব নিয়ে আমরা মনোযোগ দিলাম মশাল হাতে ফটোসেশনে।
আলুটিলা সুড়ঙ্গ জয় (!) শেষে আমরা বেরিয়ে এলাম। আলুটিলার উল্টোপাশেই রয়েছে আবাসিক হোটেল 'ইমাং'। পাহাড়ের ওপর অবস্থিত এ হোটেল থেকে খাগড়াছড়ি শহরটিকে ছবির মতো সুন্দর দেখায়। ইমাংয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আমরা রওনা হলাম রিসাংয়ের উদ্দেশে। আলুটিলা থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার আগে রিসাং। সেখান থেকে ঝাড়া সোয়া দুই কিলো হাঁটাপথ। সমতল পথ নয়, জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ি পথ। যাওয়ার সময় ঝিরিঝিরি বৃষ্টি সঙ্গী হওয়ায় হেঁটে যেতে তেমন কষ্ট হলো না। কিন্তু ফেরার সময় প্রচণ্ড রোদ থাকায় পাহাড়ি রাস্তায় চলতে চলতে আমাদের দম বের হওয়ার জোগাড়। স্থানীয়দের কাছে রিসাং ঝরনা 'তেরাংতৈ কালাই ঝরনা' নামে বেশি পরিচিত। আর মারমা ভাষায়, 'রিসাং' মানে পাহাড় থেকে পানি পড়া।
রিসাং যাওয়ার পথে আদিবাসীদের ঘরবাড়িগুলো চোখে পড়ার মতো। বেশিরভাগ বাড়িই পাহাড়ি মাটির তৈরি। দেখতে চমৎকার। স্থানীয় একজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মাটির তৈরি হলেও বাড়িগুলো যথেষ্ট মজবুত। জানা গেল, ওখানে টিপরা বা ত্রিপুরার অধিবাসীদের বাস।
হাঁটতে হাঁটতে পেয়ে গেলাম সিঁড়ির দেখা। কয়েকশ' ধাপ। কিছু ধাপ পেরোতেই শুনতে পেলাম পাহাড় থেকে অনবরত জলপতনের ধ্বনি। বুঝে গেলাম রিসাংয়ের খুব কাছে চলে এসেছি। আরও কিছুটা নামার পর দেখা গেল যৌবনবতী রিসাংয়ের। সিঁড়ির শেষ ধাপটি পেরিয়ে কাদাময় পিচ্ছিল পথ আর ছড়াটা অনেকটা দৌড়ে রিসাংয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। চোখ জুড়িয়ে গেল, মন ছেয়ে গেল প্রশস্তিতে। আর দেরি করলাম না। কাপড়-চোপড় নিয়েই আমরা নেমে পড়লাম ঝরনার পানিতে শরীর জুড়াতে। দুঃসাহসী কয়েকজনকে দেখলাম, ঝরনার ঢালু অংশ থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে নিচের ছড়ায় পড়ছে। ব্যাপারটা আনন্দদায়ক সন্দেহ নেই; কিন্তু বিপজ্জনকও বটে। রিসাংয়ে গিয়ে আমাদের কারোরই ফিরতে মন চাইছিল না।
রিসাং থেকে বাসে করে খাগড়াছড়ি শহরে গিয়ে পেঁৗছলাম। রিসাংয়ের মায়াবী রূপ আমাদের আবার বাস মিস করিয়ে দিল। শহরে পেঁৗছে জানলাম, বিরতিহীন শেষ বাসটি মাত্র ছেড়ে গেছে। শেষ লোকাল বাসটি আর মিনিট বিশেক পর ছাড়বে। টিকিট কেটে তড়িঘড়ি করে কিছু খেয়ে নিলাম। ক্লান্ত বিধ্বস্ত শরীর নিয়ে বাসে উঠে দেখি, আমাদের সিটে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একজন বসে আছে। মাটিরাঙা পর্যন্ত তার স্ত্রী আর সন্তানকে বসতে দিতে লোকটি আমাদের অনুরোধ করলেন। কী আর করা! ক্লান্ত বিধ্বস্ত শরীরে প্রায় অর্ধেকটা পথ বাসে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
খাগড়াছড়িতে গেলে ফেরার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। পাহাড়ি রাস্তায় কোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য সন্ধ্যার পর বাস চলাচল করতে দেওয়া হয় না। পার্বত্য চট্টগ্রামের সব জায়গাতেই সন্ধ্যার আগেই শেষ বাসটি ছেড়ে যায়।
যেভাবে যাবেন
একদিনের ভ্রমণ হওয়ায় খাগড়াছড়ি শহরটি খুব ভালো করে দেখার সুযোগ হয়নি। তবে বাস থেকে শহরটিকে মনে হয়েছে, ছিমছাম সাজানো-গোছানো। খাগড়াছড়ি যেতে চাইলে ঢাকা থেকে যে কোনো এসি বা নন-এসি পরিবহনে যাওয়া যাবে। এসি পরিবহন স্টারলাইনের ভাড়া ৪০০ টাকা। আর শ্যামলী, এস আলমসহ বিভিন্ন নন-এসি পরিবহনের ভাড়া ৩০০ টাকা। ট্রেনে গেলে প্রথমে চট্টগ্রাম নামতে হবে। তারপর যেতে হবে বাসে। চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকে পাওয়া যাবে বিরতিহীন বাস 'শান্তি'। ভাড়া ১৪০ টাকা। যেতে লাগবে ৩ ঘণ্টা। রিসাংয়ের কাছাকাছি থাকার জায়গা হচ্ছে পর্যটন মোটেল । তবে প্রকৃতির দুর্গমতাকে জয় করে সৌন্দর্য উপভোগ করার মজাটা কিন্তু একেবারেই আলাদা।

ছবি : লেখক
Source: Daily Samakal


এবার কাণ্ড খাগড়াছড়িতে

এবার কাণ্ড খাগড়াছড়িতে

লিখেছেন অদ্রোহ, তারিখ: শুক্র, ২৯ অক্টো ২০১০

39103_1532905009916_1453524600_1413453_4058355_n

রাঙ্গামাটির মাটি লাল রঙের কিনা জানিনা,বান্দরবানে বাঁদরদের বান ডাকে সেটাও হলফ করে বলা যাবেনা,কিন্তু খাগড়াছড়িতে যে নল-খাগড়া এন্তার দেখা যায়,সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। মেলা আগে নাকি খাগড়াছড়ির বুক চিরে বয়ে যাওয়া চেঙ্গি নদির দুপাশে ঘন নল-খাগড়ার বন ছিল, আর সেই থেকেই নাকি খাগড়াছড়ি নামটা কল্কে পেয়েছে। পাহাড়ি ঝর্নার জল জমা হলে পরে তাকে বলা যায় ছড়ি,এমন ছড়ি খাগড়াছড়িতে মিললেও মিলতে পারে বৈকি। যাকগে, ওসব জ্ঞানগর্ভ আলাপ থাক, বলছিলাম খাগড়াছড়ি ভ্রমণের কথা। সফরটা আদপেই একেবারে ঝটিকাগোছের ছিল, বলা যায় অনেকটা দুম করেই আমরা এক ঘনঘোর বর্ষার দিনে বেরিয়ে পড়েছিলাম খাগড়াছড়ির পানে।

তখন বেমক্কা মিলে যাওয়া একটি ছুটিতে বন্ধুরা সব চাঁটগায়। হাতে অফুরন্ত অবসর,বেলা করে ঘুম থেকে উঠে, বিকেলে ফুটবলে কষে লাথি হাঁকিয়ে আর রাত্তিরে রাজা-উজির মেরেই দিন গুজরান করছিলাম। হঠাৎ মাথায় ভূত চাপল কোথাও ঢুঁ মেরে আসার। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত হল খাগড়াছড়িই যাওয়াই সই, ওদিকটায় একদমই ঢুঁ মারা হয়নি। পরদিন ভোরবেলা রওনা দেওয়ার কথা , কিন্তু আমরা একেকজন কুঁড়ের বাদশা, বেশ অনেকটা সময় বিছানায় ওপাশ এপাশ করে, বিকট স্বরে বাজতে থাকা অ্যালার্মঘড়িকে কড়কে দিয়ে যখন আমরা চোখ ডলতে ডলতে বাস-স্টেশনে এসে পড়লাম , তখন ঘড়ির কাঁটা নটা ছুঁই ছুঁই। তবে আকাশের গোমড়ামুখো সুরত দেখে মনটা দমে গেল, তার ওপর বাঁধল নতুন বিপত্তি। শুনলাম খাগড়াছড়িগামী একমাত্র বিরতিহীন বাসটাকে আমরা অল্পের জন্য মিস করেছি। ওদিকে টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে, আর লোকাল বাসের হেলপাররা অক্লান্তভাবে কর্ণপ্রদেশে "আঁইয়ুন, আঁইউন, বাস ছাড়ি যারগই" বলে হাঁকডাক শুরু করে দিয়েছে। কী আর করা, কা তব কান্তা বলে শেষমেশ ওই লোকাল বাসই ভরসা। আর সিটটাও পড়েছে একেবারে বেকায়দা জায়গায়, সামনের রাস্তায় ঝাঁকুনির কথা ভেবে তখন থেকেই আমাদের মধ্যে দুর্বলচিত্তদের মুখ পাংশুটে হয়ে গেল। ওদিকে তখন বৃষ্টি বেশ ভালভাবে জেঁকে বসেছে, তবে ফটিকছড়ি পেরুনোর পর চারপাশের প্রকৃতি বদলে যেতে লাগল। বর্ষার সবুজে ছাওয়া সদ্যস্নাত বন দেখে মনে হল এক্ষুনি বাস থামিয়ে নেমে পড়ি। এভাবে একে একে বিভিন্ন এলাকা ছাড়িয়ে মানিকছড়ি এসে পৌঁছুলাম। এরপর পথ রীতিমত শ্বাসরোধকরা, বারবার পাক খেয়ে উপরে উঠে গেছে, কখনোবা এঁকেবেঁকে নিচে নেমে গেছে ।এরমক খাড়া নিচের দিকে নেমে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝেই কানের দুপাশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। আগেই বিভিন্ন "শুভানুধ্যায়ীরা" বাঁকা হাসি হেসে বলেছিল, রাস্তা তো খুব একটা সুবিধের নয় হে, ওসব রাস্তায় হামেশাই দুর্ঘটনা ঘটে। আমরাও তখন তুড়ি মেরে বলেছিলাম, আরে ছোহ! এসবের থোড়াই কেয়ার করি, এ আর এমন কি ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে পরে মনে হয়েছিল, আমরা না হয় পেছনের সিটে উটপাখির মত মাথা গুঁজে চোখটোখ বন্ধ করে দিব্যি থাকতে পারি, তবে এসব হতচ্ছাড়া পথে গাড়ি হাঁকানোর জন্য ড্রাইভার ব্যাটাদের এলেমদার হতে হয় বৈকি, একটু অসাবধান হলেই একেবারে খাদে পড়ে পঞ্চত্বপ্রাপ্তি নিশ্চিত। এসব করতে করতে হঠাত চোখ কচলে দেখলাম ,আরে ওই তো বড় বড় করে লেখা "আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র"। তবে লটবহর নিয়ে আমরা সে যাত্রায় আর নামলামনা, সামনের পর্যটন মোটেলেই আস্তানা গাড়বো বলে মনস্থ করা হল। সেখানে গিয়ে দেখি পুরো মোটেল খা খা করছে, আর একজন লোক কাউন্টারে বসে জাদু হ্যায় নাশা হ্যায় না কি জানি একটা হিন্দি গানে মশগুল। বারকয়েক গলা খাঁকারি দেওয়ার পর তার মর্জি হল, আমরা যথাসম্ভব বিনীত স্বরে বললাম, আমাদের থাকার বন্দোবস্ত দরকার, তবে তার আগে পেটপূজো না করলেই নয়। ওদিকে রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখি সেখানেও গুটিকয়েক মাছি ভনভন করছে, ইনফ্যাক্ট মাছি মারার মত লোকও নেই। অনেক হাঁকডাকের পর কে জানি এসে জানাল, খাবারের কিঞ্চিত দিরং আছে। এহেন পৈশাচিক ভ্রমণের পর এই নির্মম স্তোকে আমাদের কেউ কেউ হল অগ্নি, আর বাকিরা শর্মা। সাথে সাথে প্ল্যান চেঞ্জড, এখন শহরে যাওয়াই সই। বাইরে এসে অবশ্য খিঁচড়ে থাকা মেজাজটা কিছুটা শান্ত হল, পাশ দিয়ে দেখলাম বেশ সুন্দর একটা নদী, নামটা অবশ্য বিতিকিচ্ছিরি কিসিমের-চেঙ্গি। ওখান থেকে ব্যাটারিচালিত শম্বুকগতির টমটমে করে শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা।

পর্যটন রিসর্টের দোরগোড়ায়-
38842_1367348300891_1147195504_30874811_4282116_n

উঁকিঝুঁকি মারতে থাকা নদী

40678_1367357861130_1147195504_30874831_2690639_n

মনে হচ্ছিল তখুনি ঝাঁপ দেই-
38842_1367348260890_1147195504_30874810_3310664_n

খাগড়াছড়ি শহরটা একেবারেই ছোট, আর তাই খুঁজেপেতে একটা চলনসই গোছের হোটেলে উঠে আমরা একটা জবরদস্ত উদরপূর্তি করলাম। তারপর খানিক গড়িয়ে যখন শহরটা ঢুঁ মারতে বের হলাম, তখন দুপুর গড়িয়ে গেল বলে। বর্ষার দিন,মেঘের ফাঁকে ফাঁকে সূর্য মাঝেমাঝেই ঘাই মেরে যাচ্ছে। তবে ভাগ্যদেবী এযাত্রায় সহায় হলেন , উটকো বৃষ্টি বাগড়া দিলে সেদিনকার প্লেন কেঁচে গন্ডুষ হয়ে যেত। ততক্ষণে বেলা বয়ে গেছে, তাই আলুটিলা প্রজেক্টে সেদিনকার মত ইস্তফা দিয়ে সাব্যস্ত হল এরপরের গন্তব্য শহরের ঠিক বাইরের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। জায়গাটা ছিমছাম, পরিপাটি করে সাজানো। বেশ কজায়গায় দেখলাম লোভনীয় পেয়ারা-কামরাঙ্গা-আমড়ার গাছ। বড় বড় করে লেখা, "ফল পাড়তে বারণ করা হল- আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ"। কিন্তু আমাদের মত বিটকেলেদের কাছে ব্যাপারটা হয়ে গেল পাগলকে সাঁকো নাড়াতে নিষেধ করার মত।

40678_1367357821129_1147195504_30874830_3332248_n

ঐ কেন্দ্রের ভেতরেই আবার ছবির মত সুন্দর কিছু জলাধার। সকালের বৃষ্টিতে পুরো পথ ভিজে কাদাটে হয়ে আছে- এর মাঝে রয়েসয়ে পথ চলতে হচ্ছিল। কিছুক্ষণ থেকেই কী একটা বোঁটকা গন্ধ নাকে আসছিল- ব্যাপারটা তলিয়ে দেখতে গিয়ে বুঝলাম পুকুরপাড়ের কাঁঠাল গাছের নিচে কাঁঠাল পচে অমন বিদঘুটে গন্ধ ছড়িয়েছে। ভাত ছড়ালে যে কখনো সখনো কাকের অভাব হয় সেটাও বুঝলাম।ওদিকে টলটলে পানি দেখে আমাদের কারো কারো গা কুটকুট করতে লাগল, ওদিকে পড়ন্ত বেলার রোদও বেখাপ্পাভাবে চড়ে বসেছে, জলকেলি করার জন্য নিঃসন্দেহে প্রশস্ত সময়। তবে আমাদের সবাই পরিপাটি বস্ত্রাচ্ছাদিত হওয়ায় সেদিনকার মত এ প্রস্তাব মুলতবি রাখতে হল।

Source: www.sachalayatan.com

সিলেটের পর্যটন এলাকাসমূহ

সিলেটের পর্যটন এলাকাসমূহ

১. হজরত শাহ জালাল রহমত উল্লাহের মাযার
সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্রে হযরত শাহজালাল (র.) এর সমাধি। মূল সড়ক থেকে বিশাল তোরণ পেরিয়ে একটু ভেতরে হেঁটে গেলেই মূল মাজার কমপেস্নক্স। এখানে প্রবেশের শুরুতেই দেখা মিলবে দরগাহ মসজিদের। মসজিদটি বর্তমানে আধুনিক রূপ নিলেও এটি তৈরি হয়েছিল ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে। মসজিদের পাশেই রয়েছে মাজারে ওঠার সিঁড়ি। উপরে উঠে মাজারে প্রবেশ করতে হয় গম্বুজ বিশিষ্ট একটি হলঘরের মধ্য দিয়ে। এই হলঘরের ঠিক পশ্চিমের ভবনটি ঘড়িঘর। ঘড়িঘরের আঙিনার পূর্ব দিকে যে তিনটি কবর রয়েছে, তা হযরত শাহজালালের ঘনিষ্ঠ তিনজন সঙ্গীর। এর দক্ষিণ পাশে গ্রিলঘেরা ছোট্ট ঘরটি হযরত শাহজালালের চিলস্নাখানা। দুই ফুট চওড়া এ চিলস্নাখানায় তিনি জীবনের তেইশটি বছর ধ্যানমগ্ন কাটিয়েছেন বলে কথিত আছে। চিলস্নাখানার উত্তরের প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়বে উঁচু ইটে বাঁধানো হযরত শাহজালাল (র.) এর সমাধি। এটি নির্মাণ করা হয় ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে। এর পাশেই রয়েছে ইয়েমেনের রাজা শাহজাদ আলীর কবর এবং ১৪১০ খ্রিস্টাব্দে সিলেটের শাসনকর্তা মুক্তালিব খান উজিরের কবর। এ মাজারে প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, সুলতান শামসুদ্দীন ফিরোজশাহের শাসনকালে ১৩০৩ সালে হযরত শাহজালালের হাতে এ অঞ্চল বিজিত হয়। তিনি হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দকে পরাজিত করে এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। সে সময়ে তুরস্কের কুনিয়া শহর থেকে তিনি ৩১৩ জন শিষ্যসহ এ দেশে আসেন। বহু যুদ্ধে বিজয়ের পর সিলেটেই তিনি থেকে যান। ১৩৪০ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃতু্যবরণ করেন। হযরত শাহজালালের পুরো মাজার কমপেস্নক্সটি ঘুরে দেখার মতো। মাজার কমপেস্নক্সে পূর্ব পাশের পুকুরে দেখা মিলবে বহুকালের ঐতিহ্য গজার মাছের। শত শত জালালি কবুতরও রয়েছে এখানে। মাজার কমপেস্নক্সের পশ্চিম পাশের একটি ঘরে এখনও রক্ষিত আছে হযরত শাহজালালের ব্যবহূত তলোয়ার, পেস্নট, বাটি ইত্যাদি।

2. লাকাতুরা চা বাগান :সিলেট শহর থেকে বিমানবন্দর রোড ধরে কিছু দূর এগোলেই চোখে পড়বে এ চা বাগান। এখানকার চা বাগান ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগবে।


৩. মালনিছড়া চা বাগান :লাকাতুরা চা বাগান ছেড়ে বিমানবন্দরের দিকে একটু এগোলেই হাতের বামপাশে সুন্দর এ চা বাগানটির অবস্থান। এটিকে বলা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো চা বাগান। ইংরেজ সাহেব হার্ডসনের হাত ধরে ১৮৫৪ সালে এ চা বাগানের প্রতিষ্ঠা। মালনিছড়া চা বাগানের ভেতরে ঘুরে বেড়ানোর মজাটাই আলাদা। অনুমতি নিয়ে চা বাগানের কোনো কর্মচারীর সহায়তায় ঘুরে দেখা যেতে পারে বাগানটি। মালনিছড়া চা বাগানের মধ্যে একটি কমলালেবুর বাগানও আছে।

৪.সিলেট পর্যটন :মালনিছড়া থেকে কিছুদূর সামনে ক্যাডেট কলেজ ছাড়িয়ে রয়েছে হাতের ডানপাশে পাহাড়ি টিলার উপরে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ভ্রমণ কেন্দ্র। বেড়ানোর জন্য এ জায়গাটিও চমৎকার। এ জায়গাটিতে বসে দূর পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এ ছাড়া বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সিলেটের মোটেলটিও এখানেই।

৫. শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : সিলেট শহরের পাশে কুমারগাঁও এলাকায় ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলামেলা ক্যাম্পাসটি ভালো লাগবে সবার।
৬.কি্বন ব্রিজ :হযরত শাহজালালের সমাধি থেকে ২৫-৩০ টাকা রিকশা ভাড়ার দূরত্বে কি্বন ব্রিজ। সুরমা ব্রিজ নামেও এটি বেশ পরিচিত। ১৯৩৬ সালে নির্মাণ করা হয় এটি। তৎকালীন ইংরেজ গভর্নর মাইকেল কি্বনের নামেই এর নামকরণ করা হয়। ১১৫০ ফিট লম্বা এবং ১৮ ফিট প্রস্থ এ ব্রিজটি দেখতে ধনুকের মতো বাঁকানো। ১৯৭১ সালে পাক হানাদাররা ব্রিজটির একাংশ উড়িয়ে দেয়। পরে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের অর্থায়নে বিধ্বস্ত অংশটির পুনঃনির্মাণ করা হয়।

৭. আলী আমজাদের ঘড়িঘর :কি্বন ব্রিজ থেকে নিচে তাকালেই চোখে পড়ে একটি ঘড়িঘর। ব্রিজের পাশে চাঁদনীঘাটে অবস্থিত এ ঘড়িঘরটি আজও দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। জানা যায়, পৃথি্ব পাশার বিখ্যাত জমিদার আলী আমজাদ খাঁ দিলস্নীর চাঁদনীচকে শাহজাদী জাহানারা কতর্ৃক নির্মিত ঘড়িঘর দেখে মুগ্ধ হন। তাই তিনি সুরমা নদীর তীরে চাঁদনীঘাটের কাছে অনুরূপ একটি ঘড়িঘর নির্মাণ করেন। এ জন্যই সবাই একে জানেন আলী আমজাদের ঘড়িঘর নামে।

৮.মনিপুরী জাদুঘর :শহরের সুবিদবাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এ জাদুঘরটি। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসী সমপ্রদায় মনিপুরীদের শত বছরের কৃষ্টি আর ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে এ জাদুঘরের মাধ্যমে। এ জাদুঘরে দেখা মিলবে কয়েকশ বছরের পুরোনো ঘণ্টা, ধমর্ীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহূত নানান দ্রব্যসামগ্রী, যুদ্ধে ব্যবহূত সরঞ্জাম, মনিপুরীদের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প সামগ্রীসহ আরো অনেক কিছু।

৯. এমসি কলেজ :সিলেট শহরে অবস্থিত প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুরারীচাঁদ কলেজ বা সিলেট এমসি কলেজ। ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজটি এ অঞ্চলের শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে।
১০. ওসমানী স্মৃতি জাদুঘর :সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্টের কাছে নাইওরপুলে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গণি ওসমানীর বাসভবন 'নূর মঞ্জিল'। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনায় এখানে রয়েছে ওসমানী স্মৃতি জাদুঘর। এ জাদুঘর খোলা থাকে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর সকাল ১০.৩০ মিনিট থেকে বিকাল ০৫.৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং অক্টোবর থেকে মার্চ সকাল ৯.৩০ মিনিটি থেকে বিকাল ৪.৩০ মিনিট পর্যন্ত। শুক্রবার খোলা থাকে বিকেল ৩.৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিট পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার এবং অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে জাতীয় জাদুঘর বন্ধ থাকে। এ জাদুঘরের কোনো প্রবেশমূল্য নেই।

.হযরত শাহপরান (র.) এর সমাধি :হযরত শাহ পরান ছিলেন হযরত শাহজালালের ভাগ্নে। তিনিও ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক সাধক। শহর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার পূর্ব দিকে দক্ষিণগাছের খাদিমপাড়ায় রয়েছে এই মহান সাধকের মাজার। বিশাল বটগাছের ছায়াতলে এ মাজারে উঠতে হয় সিঁড়ি বেয়ে। প্রতিদিন হাজার হজার ভক্তের পদচারণায় মুখরিত থাকে পুরো মাজার এলাকা। মাজারের পাশেই রয়েছে মুঘল স্থাপত্য রীতিতে তৈরি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ।
2. মাধবকুন্ড জলপ্রপাত

clip_image0015মাধবকুন্ড দক্ষিণবাগ রেল ষ্টেশন হতে ৩ কিলোমিটার দুরে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত যেখানে প্রতি বছর অনেক দর্শনার্থী আসেন। মাধবকুন্ডের ঝর্ণা হচ্ছে পর্যটকদের জন্য সিলেট বিভাগের মধ্যে একমাত্র আকর্ষণীয় স্হান। অসংখ্য পর্যটক ও বনভোজনকারীরা এখানকার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রতি দিন আসেন।

যেভাবে আসবেন:
বাস যোগে কুলাউড়া রেলষ্টেশন হতে মাধবকুন্ডে আসতে হলে ১ ঘন্টায় আসা যায়। ভ্রমণের সময় আশপাশে সবুজ চা বাগানের দৃশ্য চোখে পড়বে। পাহাড়ের ঝিকঝাক রোড আপনার ভ্রমণকে আরও আনন্দদায়ক করবে। মাধবকুন্ডে একটি বড় পাহাড়ী প্রাকৃতিক ঝর্ণা আছে। ২০০ ফুট হতে লক্ষ লক্ষ টন পানি নীচের দিকে পড়তে থাকে। পাথরের বড় বড় স্তুপ ও কালো পাথরগুলো মাধবকুন্ডকে সুন্দর আকৃতি দিয়েছে। এখানে পর্যটন মোটেলের সাথে থাকা ও খাওয়ার সুবিধা দেয়ার জন্য একটি রেস্টুরেন্ট আছে। রাতকাটানোর জন্য একটি জেলা বাংলোও আছে । জঙ্গলের মধ্যে অবস্হান আপনাকে অতিরিক্ত আনন্দ দিতে পারে। জেলা বাংলো বুকিং দেয়ার জন্য আপনাকে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ অফিসে যোগযোগ করতে হবে।

. শ্রীমঙ্গল
শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের "চা রাজধানী" নামে খ্যাত।
clip_image0016
যা যা দেখবেন:
শ্রীমঙ্গলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ চা বাগান আছে যা সবুজ কার্পেট নামে খ্যাত। এখানে চা গবেষণা কেন্দ্র ও একটি চা উৎপাদনের কারখানা আছে। প্রতি বছর বাংলাদেশের উৎপাদিত মানসম্মত চায়ের একটি বিরাট অংশ বিদেশে রপ্তানী হয়ে থাকে। শ্রীমঙ্গলে অধিকাংশ জায়গা জুড়েই চা বাগান চোখে পড়বে। যদি আপনি চা বাগানে থাকার ব্যবস্হা করতে পারেন তাহলে সে ভ্রমণটি আপনার স্মৃতিময় হয়ে থাকবে। শ্রীমঙ্গলের রেস্ট হাউজ অথবা অন্যান্য অনেক জায়গা আছে থাকার জন্য। তবে এখানে থাকার জন্য আগে থেকে বাগানের মালিক কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়।
. চৈতন্য দেবের মন্দির
শ্রী চৈতন্য দেবের মন্দির সিলেট শহর হতে ৪৫ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে অবস্হিত। প্রায় ৫০০ বছরের পুরাতন এ শ্রী চৈতন্যের মন্দিরটি। প্রতি বছর বাংলা ফাল্গুন মাসে পূর্ণিমা রাতে এখানে একটি মেলার আয়োজন হয়ে থাকে যেখানে হাজার হাজার দেশী বিদেশী ভক্ত মেলাটি উপভোগ করেন।
. শাহী ঈদগাঁহ
১৭ শতাব্দীতে মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব একটি পাহাড়ের উপরে সার্কিট হাউজের দক্ষিণ পূর্বে তিন কিলোমিটার দূরে শাহী ঈদগাঁহ নির্মাণ করেছিলেন। এটি দেখতে দূর্গের মত মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে মুসলিম সম্প্রদায়ের দুটি বড় ঈদের জামাত এখানে আয়োজন করা হয়ে থাকে।
. গৌর গোবিন্দের দূর্গ
একটি সৌন্দর্যময় পাহাড়ের চূড়ায় মুরারিরচাঁদ সরকারী কলেজটি অবস্হিত যার দক্ষিণ পশ্চিম দিকে রাজা গৌর গোবিন্দ দূগর্টি রয়েছে। এটিও একটি দর্শণীয় স্হান।
. জৈন্তাপুর রাজবাড়ি
জন্তাপুর সিলেট শহর হতে ৪৩ কিলোমিটার দূরে সিলেট শিলং রোডের পাশে অবস্হিত। প্রাচীন রাজার রাজধানী নামে খ্যাত এ জৈন্তাপুর। এখানে খাশিয়া ও জৈন্তা পাহাড় ও জৈন্তা ভূমি আছে। জৈন্তাপুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এ রাজার রাজত্বের নিদর্শনগুলো। জৈন্তাপুর বন এবং জাফলং এলাকার আশেপাশে, শ্রীপুর এবং তামাবিল এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রচুর লোকজন এখানে আসে।
যদি আপনি জাফলং-এ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন তাহলে জাফলং-এ সারাদিন বেড়িয়ে সন্ধ্যায় সিলেট শহরে ফিরে যেতে হবে। সাধারণত: শীতকালে জাফলং ভ্রমণের উপযুক্ত সময় তবে পাহাড়ী ঝর্ণা উপভোগ করতে চাঁদনী রাতে আসা উচিত। জৈন্তাপুর রাজবাড়ি জাফলং হতে ৫ কিলোমিটার দূরে, এখানে একটি সুন্দর চা বাগান আছে। সিলেট শহরের দক্ষিণ পশ্চিমে ৩৫ কিলোমিটার দূরে এটি অবস্হিত। শ্রীপুর ভ্রমণের পর জৈন্তাপুরের জৈন্তা রাজপ্রাসাদ পরিদর্শন করতে ভুলবেন না। ১৮ শতকে জৈন্তা রাজার রাজধানী ছিল এ জৈন্তাপুর। জৈন্তা রাজাবাড়ি হচ্ছে জৈন্তা রাজার রাজপ্রাসাদ। এটি জৈন্তাপুর বাজারের কাছে। এ রাজপ্রাসাদটি বর্তমানে ধ্বংসের পথে তবুও অনেক পর্যটক জৈন্তা রাজার অস্তিত্বতের নিদর্শন দেখতে আসে।
. শ্রীপুর

clip_image0017শ্রীপুর হচ্ছে অন্য একটি পর্যটন স্হান যেখানে আপনি পাহাড়ী ঝর্ণা থেকে পানি পড়ার শব্দ শুনতে পাবেন। এ এলাকার বর্ধিত অংশে ভারতীয় সীমানার ঝর্ণাটি আপনার দৃষ্টিতে আসবে। মাঝেমাঝে বড় বড় পাথর এ ঝর্ণার সাথে শ্রীপুরে আসে। জাফলং এবং তামাবিল ভ্রমণের পর সিলেটে ফেরার পথে শ্রীপুর ভ্রমণ করতে পারেন। জাফলং থেকে শ্রীপুরের দূরত্ব ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার।
. লাউয়াছড়া বন

clip_image0018“লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট” বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন। পর্যটকরা এখানে বানরের গাছে চড়ার দৃশ্য, পাখি যেমন- পেঁচা, টিয়া ইত্যাদি দেখতে পাবেন। এখানে হরিণের ঘোরাফেরা, চিতাবাঘ, বন্যমোরগ, কাঠবিড়ালী এবং অজগর সাপ দেখতে পাবেন। যারা পাখি দেখতে ভালোবাসে তারা কোনভাবে এটা দেখতে ভুলবেননা।
এশিয়ার মধ্যে বিরল ক্লোরোফোর্মের গাছ রয়েছে এখানে যা সত্যিই আকর্ষণীয়। এখানে খাসিয়া ও মুণিপুরী দু’জাতির উপজাতিদের বসবাস । মুণিপুরীদের আকর্ষণীয় নাচ ও গান এখানকার আকর্ষণ অনেকটা বৃদ্ধি করেছে। তাদের একটি ঐতিহ্য হচ্ছে কাপড় বোনা। আপনি এখান থেকে হস্তশিল্প, উলের তৈরি শাল, শাড়ী, নেপকিন, বিছানার চাদর এবং কিছু ব্যাগও কিনতে পারেন। খাসিয়া উপজাতিদের গ্রামগুলো পাহাড়ের উঁচুতে ও গভীর বনের মধ্যে যা শহর থেকে অনেক দূরে। লাউয়াছড়া বনকে বলা হয়ে থাকে স্বর্গের রাজ্য যা আপনাকে এক ধরণের প্রশান্তি এনে দিবে।
2. জাফলং

clip_image0019জাফলং সিলেট বিভাগের অন্যতম আকর্ষণীয় স্হান। সিলেট শহর হতে এটি ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্হিত ও সিলেট শহর হতে দেড়ঘন্টা সময় নিবে এখানে পৌঁছাতে। জাফলং-এর দর্শনীয় দিক হচ্ছে চা বাগান ও পাহাড় থেকে পাথর আহরণ। মারি নদী ও কাশিয়া পাহাড়ের পাদদেশে জাফলং অবস্হিত। মারি নদীর উৎপত্তি হিমালয় থেকে। এর স্রোতে লক্ষ লক্ষ টন পাথর চলে আসে। মারি নদীতে ভ্রমণের মাধ্যমে পাথর সংগ্রহের দৃশ্য আপনাকে সত্যিই আনন্দ দিবে। জাফলং হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য সমৃদ্ধ সম্পূর্ণ পাহাড়ী এলাকা যা সবুজ পাহাড়ের অরণ্যে ঘেরা। এখানে প্রচুর বন্য প্রাণীর বসবাস। বনের কাছাকাছি আসলে আপনাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আপনি জাফলং- এ আসলে খাসিয়া উপজাতিদের জীবন ও জীবিকা চোখে পড়বে। জাফলং- এ আসতে হলে সিলেট থেকে আপনাকে সকাল সকাল যাত্রা করতে হবে যাতে ভ্রমণ শেষে সন্ধ্যার আগে সিলেট ফিরতে পারেন।
. তামাবিল স্হলবন্দর
জাফলং হতে অর্ধেক কিলোমিটার দূরে হচ্ছে তামাবিল যা ভারত সীমান্তের নিকটে অবস্হিত। যদি আপনি ভারতের শিলং ভ্রমণ করতে চান তাহলে কাষ্টমস-এর নিয়মকানুন সেরে সীমানা পাড় হয়ে সেখানে যেতে পারেন। ভারতে যেতে হলে আপনাকে সেখানকার ভিসার মেয়াদ থাকতে হবে। সিলেট শহর হতে তামাবিল সীমানা ৫৫ কিলোমিটার দূরে অবস্হিত। এ এলাকার দর্শনীয় স্হান ও ঝর্ণার উৎস দেখতে হলে তামাবিল দিয়ে বর্ডার পার হতে হবে।
. সুরমা ভেলী

clip_image0020সুরমা ভেলীর দুই দিকে পাহাড় পর্বতের মধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকার মাঝখানে চা রোপণের দৃশ্য ও সবুজ বন সত্যিই মনকে মুগ্ধ করবে। বাংলাদেশের পর্যটন স্হানগুলোর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ খাসিয়া, জৈন্তা ও ত্রিপুরা পাহাড় এখানেই অবস্হিত। ঘন বন, মুণিপুরী উপজাতিদের বন্যজীবনের অনেক নিদর্শন এখানে দেখতে পাওয়া যায়। নীচু পাহাড়ে মাইলের পর মাইলের চা বাগানের বিস্তার একটি সবুজ কার্পেটের মত দেখা যায়। এটি পর্যটকদের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হতে পারে। সিলেট হচ্ছে চা বাগানের একটি শস্যভান্ডার, এখানে ১৫০ টির উপরে চা বাগান আছে যার মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় তিনটি চা বাগান এখানে অবস্হিত। সিলেটের আরেকটি দর্শনীয় স্হান হচ্ছে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী যা উত্তর দক্ষিণে অবস্হিত। এখানে অনেক হাওড় আছে যা শীতের সময় সবুজ ভূমিকে আর প্রসারিত করে কিন্তু বর্ষার সময় অশান্ত সাগরে রূপ নেয়। শীতের সময় সাইবেরিয়া হতে এইসব হাওড়ে লক্ষ লক্ষ অতিথি পাখি আসে। যা সত্যিই দেখার মত।

কিভাবে যাবেন :ঢাকা থেকে রেল, সড়ক ও আকাশ পথে সরাসরি সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬.৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, দুপুর ২.০০ মিনিটে প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০.০০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া এসি বার্থ ৬৯৮ টাকা, এসি সিট ৪৬০ টাকা, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৪২৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ২৭০ টাকা, সি্নগ্ধা শ্রেণী ৪৬০ টাকা, শোভন চেয়ার ১৮০ টাকা, শোভন ১৫০ টাকা, সুলভ ৯৫ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮.১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯.০০ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। প্রথম শ্রেণী বার্থ ৪৬৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ৩২০ টাকা, সি্নগ্ধা শ্রেণী ৫৩৫ টাকা, শোভন চেয়ার ২১০ টাকা, শোভন ১৯০ টাকা।

ঢাকা থেকে গ্রিন লাইন পরিবহন (০২-৮৩৩১৩০২-৪, ০২-৮৩৫৩০০২-৪), সোহাগ পরিবহন (০২-৯৩৪৪৪৭৭, ০১৭১১৬১২৪৩৩), সৌদিয়া এস আলম (০১১৯৭০১৫৬৩২-৩৪) পরিবহনের এসি বাস যায় সিলেটে। ভাড়া ৫৫০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকার ফকিরাপুল, কমলাপুর, সায়েদাবাদ প্রভৃতি জায়গা থেকে শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সিলকম পরিবহন, এনপি ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসও সিলেটে যায়। ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকা। ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান (০২-৭১৬৮৮৪২), জিএমজি এয়ারলাইন্স (০২-৮৯২২২৪৮, ০২-৮৯২৪২৭৪), ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের (০২-৮৯৩২৩৩৮, ০২-৮৯৩১৭১২) বিমান নিয়মিত উড়াল দেয় সিলেটের আকাশে।

কোথায় থাকবেন :সিলেট শহরে থাকার জন্য বেশকিছু ভালো মানের হোটেল আছে। শাহজালাল উপশহরে আছে পাঁচতারকা মানের হোটেল রোজ ভিউ (০৮২১-৭২১৮৩৫), নাইওরপুল এলাকায় হোটেল ফরচুন গার্ডেন (০৮২১-৭১৫৫৯০), জেল সড়কে হোটেল ডালাস (০৮২১-৭২০৯৪৫), ভিআইপি সড়কে হোটেল হিলটাউন (০৮২১-৭১৮২৬৩), লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন (০৮২১-৮১৪৫০৭), শহরের বাইরে বিমানবন্দর সড়কে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের পর্যটন মোটেল (০৮২১-৭১২৪২৬), খাদিম নগরে জেসটেট হলিডে রিসোর্ট (০৮২১-২৮৭০০৪০), খাদিম নগরে আরেকটি আধুনিক রিসোর্ট নাজিমগড় (০৮২১-২৮৭০৩৩৮)। এ ছাড়া শহরে সাধারণ মানের অন্যান্য হোটেল হলো আম্বরখানায় হোটেল পলাশ, (০৮২১-৭১৮৩০৯)। দরগা গেইটে হোটেল দরগাগেইট (০৮২১-৭১৭০৬৬)। দরগা গেইটে হোটেল ঊর্মি (০৮২১-৭১৪৫৬৩)। জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট (০৮২১-৭১৪৮৫০)। তালতলায় গুলশান সেন্টার (০৮২১-৭১০০১৮)। এসব হোটেলে ৪০০-১২,০০০ টাকায় বিভিন্ন মানের কক্ষ আছে।
Source: www.ruralinfobd.com & Daily Ittefaq