ঐতিহ্যের লীলাভূমি বিক্রমপুর
রাজীব পাল রনী
এক সময় ছিল ঢাকার দক্ষিণ থেকে বরিশালের উত্তর পর্যন্ত। পশ্চিমে পদ্মা থেকে মেঘনা, বহ্মপুত্র জলরাশি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। গুপ্তবংশ, চন্দ্রবংশ, বর্মবংশ, পালবংশ ও সেন বংশীয় পর্যায়ক্রমে রাজাদের রাজধানী ছিল বিক্রমপুর। প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে বিক্রমপুর নানা কারণে বিখ্যাত। বর্তমানে এ অঞ্চলটি মুন্সীগঞ্জ হিসেবে পরিচিত। এ জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে অনেক প্রাচীন নিদর্শন। বাংলার প্রাচীন রাজধানী বিক্রমপুরের সেই জৌলুস এখন তেমন আর নেই। কিন্তু ইতিহাস ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এখনও প্রাচীন বিক্রমপুরের কথা মনে করিয়ে দেয়। তাই ঐতিহ্যের লীলাভূমি বিক্রমপুর শীতের এই ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন।
ইদ্রাকপুর দুর্গ : মুন্সীগঞ্জ শহরের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন ইদ্রাকপুর দুর্গ। জলদস্যু ও পর্তুগিজদের আক্রমণ থেকে বাংলার রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ সমগ্র এলাকাকে রক্ষা করার জন্য এই দুর্গ নির্মিত হয়। বাংলার সুবেদার ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলার মেঘনা, ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গমস্থলের পশ্চিম তীরে ইদ্রাকপুর নামক স্থানে দুর্গটি নির্মাণ করেন। এটি মোগল স্থাপত্যের অনন্য সাক্ষী। সুউচ্চ প্রাচীর বিশিষ্ট এই দুর্গের প্রতিটি কোনায় রয়েছে একটি বৃত্তাকার বেষ্টনী। দুর্গের মাঝে মূল দুর্গ ড্রামের মতো দেখতে। দুর্গের প্রাচীর শাপলা ফুলের পাপড়ির মতো ছড়িয়ে আছে ও প্রতিটি পাপড়িতে ছিদ্র রয়েছে। ছিদ্র দিয়ে শত্রুকে মোকাবিলা করার জন্য বন্দুক ও কামান ব্যবহার হতো। মূল প্রাচীরের পূর্ব দেয়ালের মাঝামাঝি অংশে ৩৩ মিটার ব্যাসের একটি গোলাকার উঁচু মঞ্চ রয়েছে, দূর থেকে শত্রু চলাচল পর্যবেক্ষণের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। দুর্গের উত্তরদিকে প্রাচীর মূল বিশালাকার প্রবেশপথ রয়েছে। এই দুর্গের প্রবেশপথের পাশেই একটি সুড়ঙ্গ পথ রয়েছে। কথিত আছে, এই সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে ঢাকা লালবাগের দুর্গে যাওয়া যেত।
অতীশ দীপঙ্কর স্মৃতিস্তম্ভ : সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী অতীশ দীপঙ্কর ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে মুন্সীগঞ্জ জেলার তথা বিক্রমপুর পরগনার বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার স্মৃতিকে চিরঞ্জীব করে রাখার জন্য বজ্রযোগিনী গ্রামে তার ভিটায় স্থাপিত হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। সে সময় প্রখ্যাত বৌদ্ধ পণ্ডিত অবধূত জেতারির কাছ থেকে ব্যাকরণ ও অংক শাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শী হয়ে ওঠেন। চীন সম্রাট দীপঙ্করের পাণ্ডিত্য ও বিজ্ঞতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ‘অতীশ শ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তার রচিত বহু মূল্যবান গ্রন্থ ইতালির টুচি ও পণ্ডিত হরপ্রসাদ আবিষ্কার করেন। স্তম্ভটি দেখতে যেতে হলে মুন্সীগঞ্জ থেকে স্কুটারে অথবা রিকশায় যাওয়া যায়। মুন্সীগঞ্জ শহর থেকে বজ্রযোগিনী ৪ কিলোমিটার।
জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি জাদুঘর : বাংলাদেশের কৃতী সন্তান এবং বিশ্বে স্বীকৃতি অর্জনকারী প্রথম সফল বিজ্ঞানী হলেন স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু। তিনি বেতার বার্তার পথদ্রষ্টা ও উদ্ভিদের যে প্রাণ আছে তিনি প্রথম প্রমাণ করেন। পৈতৃক আদি নিবাস বিক্রমপুরের শ্রীনগর থানার ঢ়াঢ়িখাল গ্রামে যা কিনা মুন্সীগঞ্জ শহর থেকে যেতে সময় লাগে ৫০ মিনিট। বিশ্ববরেণ্য এ বিজ্ঞানীর মৃত্যুর পর পৈতৃক বাড়িটি স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। এই বাড়ির মধ্যে রয়েছে ৬টি পুকুর। এছাড়া তার মধ্যে ১৯২১ সালে স্কুল ও পরে ১৯৯১ সালে কলেজ স্থাপন করা হয়। ৬ কক্ষবিশিষ্ট বিল্ডিংয়ের মধ্যে একটি কক্ষকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে। এ জাদুঘরের মধ্যেও তেল রং দিয়ে আঁকা ১৭টি দুর্লভ ছবি রয়েছে। জাদুঘরে জগদীশ চন্দ্র বসুর উপর উক্তি করা লেখা ও চিঠি রয়েছে। জাদুঘরের ভেতরে শোকেসগুলোর মধ্যে তার স্মৃতি বিজড়িত কিছু ব্যবহৃত বাসনপত্র রয়েছে।
তাছাড়া বিক্রমপুরের ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে সোনা রংয়ের জোড়া মঠ, বাবা আদমের মসজিদ, পোড়া মাটির নকশা করা এবং আদম মসজিদ সুলতানি আমলে তৈরি করা হয়েছে। উপমহাদেশের বিখ্যাত সাঁতারু ব্রজেন দাসের বাড়ি, বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী ঔপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি, রাজা বল্লাল সেনের দীঘি, ৮০০ বছরের ইটের পুল এবং সর্বোচ্চ মঠ শ্রীনগরের শ্যামসিদ্ধির মঠ ইত্যাদি বিক্রমপুরের ইতিহাসের পাতায় কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে যুগ যুগ ধরে। ভ্রমণপিপাসুরা ঐতিহ্যের লীলাভূমি বিক্রমপুরকে একনজর দেখার জন্য ছুটে আসে। আপনিও ইচ্ছা করলে ঘুরে আসতে পারেন ঐতিহ্যের লীলাভূমি বিক্রমপুরে।
কীভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে ৩০ কিলোমিটারের পথ বিক্রমপুরের মুন্সীগঞ্জ। গুলিস্তান থেকে বাসে সময় লাগে এক ঘণ্টা। শঙ্খচিল, গাংচিল, নয়ন, ডিটিএল পরিবহনে মুন্সীগঞ্জে ঘুরে আসা যায়। মুন্সীগঞ্জ থেকে সিএনজিতে সারাদিনের জন্য রিজার্ভ করে ঘুরে আসতে পারেন। মুন্সীগঞ্জের ভেতরে আবাসিক ও অনাবাসিক হোটেল রয়েছে। তাছাড়া মুন্সীগঞ্জের পদ্মা রিসোর্টে থাকার সুব্যবস্থা আছে। এই রিসোর্টটিতে চারদিকে পদ্মা নদী প্রবাহিত হওয়ায় চরাঞ্চলের গ্রামজীবন ও পুরো চরজুড়ে চোখে পড়বে পদ্মা নদীর স্রোতধারা। দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য রয়েছে পদ্মার টাটকা ইলিশ মাছ, সবজি, ঘন ডাল ও মুরগির মাংস। পদ্মা রিসোর্টে ঘুরতে চাইলে অথবা খাওয়া-দাওয়া করতে চাইলে যোগাযোগ করুন : মিলেনিয়াম ট্যুর অপারেটর, ৮৪ নয়া পল্টন, ঢাকা, মোবাইল : ০১১৯-৯৪২৮৩৫৪, ০১৯১-৩৫৩১৮২০ অথবা ০১৭১-৩০৩৩০৪৯।
ইদ্রাকপুর দুর্গ : মুন্সীগঞ্জ শহরের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন ইদ্রাকপুর দুর্গ। জলদস্যু ও পর্তুগিজদের আক্রমণ থেকে বাংলার রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ সমগ্র এলাকাকে রক্ষা করার জন্য এই দুর্গ নির্মিত হয়। বাংলার সুবেদার ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলার মেঘনা, ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গমস্থলের পশ্চিম তীরে ইদ্রাকপুর নামক স্থানে দুর্গটি নির্মাণ করেন। এটি মোগল স্থাপত্যের অনন্য সাক্ষী। সুউচ্চ প্রাচীর বিশিষ্ট এই দুর্গের প্রতিটি কোনায় রয়েছে একটি বৃত্তাকার বেষ্টনী। দুর্গের মাঝে মূল দুর্গ ড্রামের মতো দেখতে। দুর্গের প্রাচীর শাপলা ফুলের পাপড়ির মতো ছড়িয়ে আছে ও প্রতিটি পাপড়িতে ছিদ্র রয়েছে। ছিদ্র দিয়ে শত্রুকে মোকাবিলা করার জন্য বন্দুক ও কামান ব্যবহার হতো। মূল প্রাচীরের পূর্ব দেয়ালের মাঝামাঝি অংশে ৩৩ মিটার ব্যাসের একটি গোলাকার উঁচু মঞ্চ রয়েছে, দূর থেকে শত্রু চলাচল পর্যবেক্ষণের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। দুর্গের উত্তরদিকে প্রাচীর মূল বিশালাকার প্রবেশপথ রয়েছে। এই দুর্গের প্রবেশপথের পাশেই একটি সুড়ঙ্গ পথ রয়েছে। কথিত আছে, এই সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে ঢাকা লালবাগের দুর্গে যাওয়া যেত।
অতীশ দীপঙ্কর স্মৃতিস্তম্ভ : সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী অতীশ দীপঙ্কর ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে মুন্সীগঞ্জ জেলার তথা বিক্রমপুর পরগনার বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার স্মৃতিকে চিরঞ্জীব করে রাখার জন্য বজ্রযোগিনী গ্রামে তার ভিটায় স্থাপিত হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। সে সময় প্রখ্যাত বৌদ্ধ পণ্ডিত অবধূত জেতারির কাছ থেকে ব্যাকরণ ও অংক শাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শী হয়ে ওঠেন। চীন সম্রাট দীপঙ্করের পাণ্ডিত্য ও বিজ্ঞতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ‘অতীশ শ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তার রচিত বহু মূল্যবান গ্রন্থ ইতালির টুচি ও পণ্ডিত হরপ্রসাদ আবিষ্কার করেন। স্তম্ভটি দেখতে যেতে হলে মুন্সীগঞ্জ থেকে স্কুটারে অথবা রিকশায় যাওয়া যায়। মুন্সীগঞ্জ শহর থেকে বজ্রযোগিনী ৪ কিলোমিটার।
জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি জাদুঘর : বাংলাদেশের কৃতী সন্তান এবং বিশ্বে স্বীকৃতি অর্জনকারী প্রথম সফল বিজ্ঞানী হলেন স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু। তিনি বেতার বার্তার পথদ্রষ্টা ও উদ্ভিদের যে প্রাণ আছে তিনি প্রথম প্রমাণ করেন। পৈতৃক আদি নিবাস বিক্রমপুরের শ্রীনগর থানার ঢ়াঢ়িখাল গ্রামে যা কিনা মুন্সীগঞ্জ শহর থেকে যেতে সময় লাগে ৫০ মিনিট। বিশ্ববরেণ্য এ বিজ্ঞানীর মৃত্যুর পর পৈতৃক বাড়িটি স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। এই বাড়ির মধ্যে রয়েছে ৬টি পুকুর। এছাড়া তার মধ্যে ১৯২১ সালে স্কুল ও পরে ১৯৯১ সালে কলেজ স্থাপন করা হয়। ৬ কক্ষবিশিষ্ট বিল্ডিংয়ের মধ্যে একটি কক্ষকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে। এ জাদুঘরের মধ্যেও তেল রং দিয়ে আঁকা ১৭টি দুর্লভ ছবি রয়েছে। জাদুঘরে জগদীশ চন্দ্র বসুর উপর উক্তি করা লেখা ও চিঠি রয়েছে। জাদুঘরের ভেতরে শোকেসগুলোর মধ্যে তার স্মৃতি বিজড়িত কিছু ব্যবহৃত বাসনপত্র রয়েছে।
তাছাড়া বিক্রমপুরের ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে সোনা রংয়ের জোড়া মঠ, বাবা আদমের মসজিদ, পোড়া মাটির নকশা করা এবং আদম মসজিদ সুলতানি আমলে তৈরি করা হয়েছে। উপমহাদেশের বিখ্যাত সাঁতারু ব্রজেন দাসের বাড়ি, বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী ঔপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি, রাজা বল্লাল সেনের দীঘি, ৮০০ বছরের ইটের পুল এবং সর্বোচ্চ মঠ শ্রীনগরের শ্যামসিদ্ধির মঠ ইত্যাদি বিক্রমপুরের ইতিহাসের পাতায় কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে যুগ যুগ ধরে। ভ্রমণপিপাসুরা ঐতিহ্যের লীলাভূমি বিক্রমপুরকে একনজর দেখার জন্য ছুটে আসে। আপনিও ইচ্ছা করলে ঘুরে আসতে পারেন ঐতিহ্যের লীলাভূমি বিক্রমপুরে।
কীভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে ৩০ কিলোমিটারের পথ বিক্রমপুরের মুন্সীগঞ্জ। গুলিস্তান থেকে বাসে সময় লাগে এক ঘণ্টা। শঙ্খচিল, গাংচিল, নয়ন, ডিটিএল পরিবহনে মুন্সীগঞ্জে ঘুরে আসা যায়। মুন্সীগঞ্জ থেকে সিএনজিতে সারাদিনের জন্য রিজার্ভ করে ঘুরে আসতে পারেন। মুন্সীগঞ্জের ভেতরে আবাসিক ও অনাবাসিক হোটেল রয়েছে। তাছাড়া মুন্সীগঞ্জের পদ্মা রিসোর্টে থাকার সুব্যবস্থা আছে। এই রিসোর্টটিতে চারদিকে পদ্মা নদী প্রবাহিত হওয়ায় চরাঞ্চলের গ্রামজীবন ও পুরো চরজুড়ে চোখে পড়বে পদ্মা নদীর স্রোতধারা। দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য রয়েছে পদ্মার টাটকা ইলিশ মাছ, সবজি, ঘন ডাল ও মুরগির মাংস। পদ্মা রিসোর্টে ঘুরতে চাইলে অথবা খাওয়া-দাওয়া করতে চাইলে যোগাযোগ করুন : মিলেনিয়াম ট্যুর অপারেটর, ৮৪ নয়া পল্টন, ঢাকা, মোবাইল : ০১১৯-৯৪২৮৩৫৪, ০১৯১-৩৫৩১৮২০ অথবা ০১৭১-৩০৩৩০৪৯।
No comments:
Post a Comment