প্রকৃতির সম্পদ বরমীর বানর গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিবাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যের একটি অংশ দখল করে আছে বানর। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বানরের পদচারণা থাকলেও ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে প্রকৃতির অন্যতম এ প্রাণীটি। এদের রক্ষায় নেই সরকারি বা বেসরকারি কোনো পদক্ষেপ। এভাবে চলতে থাকলে একসময় হয়তো বিলুপ্তি ঘটবে প্রাণীটির।
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার বরমীতে এমনই এক বানরের অভয়ারণ্য টিকে আছে যুগ যুগ ধরে। এখানে দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন বানর দেখতে আসে শত শত মানুষ। তারা বানরের জন্য নিয়ে আসে মুড়ি, পাউরুটি, বিস্কুট, বাদামসহ অনেক কিছু।
তবে অতিথিদের নিয়ে আসা খাবার তো আর এত সংখ্যক বানরের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর বানরগুলো দল বেঁধে খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। অভাবে নষ্ট করে দিয়েছে তাদের স্বভাব। শিখিয়েছে দক্ষ চুরি। সুযোগ পেলে বাসা-বাড়ি ও বিভিন্ন দোকানে ঢুকে খাবার চুরি করে এরা। এদের নেতৃত্ব দেয় সবচেয়ে প্রবীণতম বানর। এমনিতেও চলে এরা দল বেঁধে। শীতলক্ষ্যায় গোসল করে দল বেঁধেই। কোনো বানরকে কেউ আঘাত করলে এরা জোটবদ্ধ হয়ে তাকে আক্রমণ করে। এলাকাবাসীর কারও কারও বেশ সহানুভূতি থাকলেও অনেকে বানরগুলোর চলাফেরা বা কাজকর্মকে অত্যাচারই মনে করেন।
শ্রীপুরের শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় ঘেঁষে প্রাচীন এই বরমী বাজারে একসময় হাজার হাজার বানর বসবাস করলেও দেখভালের অভাবে এ সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। এখানকার বানরগুলো হারিয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে নানা কারণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, অত্যাচার থেকে মুক্ত পেতে খাবারে বিষ মিশিয়ে নির্বিচারে হত্যা। এ কাজগুলো করে থাকেন বাজারের একশ্রেণীর দোকানি বা আশপাশের বাড়িওয়ালারা। এ ছাড়া এলোমেলো বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়েও মারা যাচ্ছে অনেক বানর। তবে স্থানীয়দের ধারণা, মূলত খাবারের অভাবেই গত দুই যুগে তিনশরও বেশি মারা গেছে।
গাজীপুরের কাপাসিয়া এবং ময়মনসিংহের ভালুকা ও গফরগাঁওয়ের সীমান্তবর্তী এলাকা শ্রীপুরের বরমী বাজারে সমপ্রতি এসেছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একদল গবেষক। তাদের গবেষণায় ওঠে আসে এখানকার বানর বিলুপ্তির কারণ। গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঐতিহ্যের ধারক বরমীর বানর বাঁচিয়ে রাখতে কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি কোনো মহল থেকে। সরকার দ্রুত দেখভালে এগিয়ে না এলে অচিরেই এদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
সোমবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় এখানকার বানরগুলোর করুণ দশা। শতাধিক বানর খাবারের জন্য লাফিয়ে বেড়াচ্ছে দোকানগুলোর এ-ছাদ থেকে ও-ছাদে। মুড়ি, পাউরুটি, বিস্কুট, বাদাম ইত্যাদি দিতে দেখা গেল বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শিশু-কিশোর তরুণ-তরুণীদের। তাদের সহানুভূতিতে এমনভাবে ছুটে আসে বানরগুলো, যেন অনেক দিনের চেনা।
মানুষের সহানুভূতির ওপর নির্ভরশীল বানরগুলো এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে সারা বাজার মাতিয়ে রাখে। দর্শনার্থীরাও বেশ উপভোগ করেন বানরের খেলা। কিন্তু ক্ষুধার তাড়নায় বানরগুলো বটের ছায়ায় কখনো নীরবে আবার কখনো সরবে কেঁদে ওঠে। এর সত্যতা পাওয়া গেল বরমী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি অহিদুল হক ভূঁইয়ার কথায়। বললেন, এখানকার বানরগুলোর খাবারের অভাব এতটাই প্রকট যে অসংখ্য বানর চলে গেছে শ্রীপুরের গজারী বনে।
তবে এখানে এখনো পাঁচ শতাধিক বানর রয়েছে বলে জানান বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর। বরমী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বাদল সরকার বললেন, বানরগুলোর জন্য নিরাপদ আশ্রয়, খাদ্যের ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে একাধিকবার সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও সাড়া মেলেনি।
শ্রীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আতাউর রহমান বলেন, শীতলক্ষ্যার দূষিত পানিতে গোসলের কারণে বানরগুলোর শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। এ ছাড়া খাবারের অভাবজনিত রোগ তো আছেই। বানরগুলোকে বাঁচাতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
Source: Daily Bangladesh Pratidin
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার বরমীতে এমনই এক বানরের অভয়ারণ্য টিকে আছে যুগ যুগ ধরে। এখানে দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন বানর দেখতে আসে শত শত মানুষ। তারা বানরের জন্য নিয়ে আসে মুড়ি, পাউরুটি, বিস্কুট, বাদামসহ অনেক কিছু।
তবে অতিথিদের নিয়ে আসা খাবার তো আর এত সংখ্যক বানরের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর বানরগুলো দল বেঁধে খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। অভাবে নষ্ট করে দিয়েছে তাদের স্বভাব। শিখিয়েছে দক্ষ চুরি। সুযোগ পেলে বাসা-বাড়ি ও বিভিন্ন দোকানে ঢুকে খাবার চুরি করে এরা। এদের নেতৃত্ব দেয় সবচেয়ে প্রবীণতম বানর। এমনিতেও চলে এরা দল বেঁধে। শীতলক্ষ্যায় গোসল করে দল বেঁধেই। কোনো বানরকে কেউ আঘাত করলে এরা জোটবদ্ধ হয়ে তাকে আক্রমণ করে। এলাকাবাসীর কারও কারও বেশ সহানুভূতি থাকলেও অনেকে বানরগুলোর চলাফেরা বা কাজকর্মকে অত্যাচারই মনে করেন।
শ্রীপুরের শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় ঘেঁষে প্রাচীন এই বরমী বাজারে একসময় হাজার হাজার বানর বসবাস করলেও দেখভালের অভাবে এ সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। এখানকার বানরগুলো হারিয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে নানা কারণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, অত্যাচার থেকে মুক্ত পেতে খাবারে বিষ মিশিয়ে নির্বিচারে হত্যা। এ কাজগুলো করে থাকেন বাজারের একশ্রেণীর দোকানি বা আশপাশের বাড়িওয়ালারা। এ ছাড়া এলোমেলো বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়েও মারা যাচ্ছে অনেক বানর। তবে স্থানীয়দের ধারণা, মূলত খাবারের অভাবেই গত দুই যুগে তিনশরও বেশি মারা গেছে।
গাজীপুরের কাপাসিয়া এবং ময়মনসিংহের ভালুকা ও গফরগাঁওয়ের সীমান্তবর্তী এলাকা শ্রীপুরের বরমী বাজারে সমপ্রতি এসেছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একদল গবেষক। তাদের গবেষণায় ওঠে আসে এখানকার বানর বিলুপ্তির কারণ। গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঐতিহ্যের ধারক বরমীর বানর বাঁচিয়ে রাখতে কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি কোনো মহল থেকে। সরকার দ্রুত দেখভালে এগিয়ে না এলে অচিরেই এদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
সোমবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় এখানকার বানরগুলোর করুণ দশা। শতাধিক বানর খাবারের জন্য লাফিয়ে বেড়াচ্ছে দোকানগুলোর এ-ছাদ থেকে ও-ছাদে। মুড়ি, পাউরুটি, বিস্কুট, বাদাম ইত্যাদি দিতে দেখা গেল বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শিশু-কিশোর তরুণ-তরুণীদের। তাদের সহানুভূতিতে এমনভাবে ছুটে আসে বানরগুলো, যেন অনেক দিনের চেনা।
মানুষের সহানুভূতির ওপর নির্ভরশীল বানরগুলো এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে সারা বাজার মাতিয়ে রাখে। দর্শনার্থীরাও বেশ উপভোগ করেন বানরের খেলা। কিন্তু ক্ষুধার তাড়নায় বানরগুলো বটের ছায়ায় কখনো নীরবে আবার কখনো সরবে কেঁদে ওঠে। এর সত্যতা পাওয়া গেল বরমী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি অহিদুল হক ভূঁইয়ার কথায়। বললেন, এখানকার বানরগুলোর খাবারের অভাব এতটাই প্রকট যে অসংখ্য বানর চলে গেছে শ্রীপুরের গজারী বনে।
তবে এখানে এখনো পাঁচ শতাধিক বানর রয়েছে বলে জানান বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর। বরমী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বাদল সরকার বললেন, বানরগুলোর জন্য নিরাপদ আশ্রয়, খাদ্যের ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে একাধিকবার সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও সাড়া মেলেনি।
শ্রীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আতাউর রহমান বলেন, শীতলক্ষ্যার দূষিত পানিতে গোসলের কারণে বানরগুলোর শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। এ ছাড়া খাবারের অভাবজনিত রোগ তো আছেই। বানরগুলোকে বাঁচাতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
Source: Daily Bangladesh Pratidin
No comments:
Post a Comment