Search This Blog

FCO Travel Advice

Bangladesh Travel Advice

AFRICA Travel Widget

Asia Travel Widget

Sunday, January 2, 2011

সুন্দরবনে অজগর

সুন্দরবনে অজগর

খসরু চৌধুরী, সুন্দরবন থেকে ফিরে | তারিখ: ৩০-১২-২০১০

গাছে অজগর
বিগত ৫০ বছরে সুন্দরবনে মেঘডম্বুর বা অজগর সাপের সংখ্যা এমন হারে কমেছে যে, বনচারীদের মধ্যে খুব কম মানুষ এই সরীসৃপের দেখা পেয়েছেন। অথচ সুন্দরবন-সংক্রান্ত বহুল প্রচলিত গল্পের একটি এ রকম—একদল গাছকাটা বাওয়ালি জঙ্গলের ভেতর গাছ কুপিয়ে ক্লান্ত হয়ে তামাকের অপেক্ষায় মাটিতে পড়ে থাকা মরা একটি গাছের ওপর বসে ছিল। হাতে হাতে ঘুরে শেষ ব্যক্তিরও হুঁকা টানা হয়ে গেছে। শেষ ব্যক্তি কলকে উপুড় করে বসে থাকা গাছের ওপর আগুনসহ পোড়া তামাক ঝেড়ে ফেলে। আর তাতেই ছ্যাঁকা খেয়ে সেই গাছ জ্যান্ত হয়ে মোচড়ানো শুরু করলে কাঠুরিয়ারা টের পায়, তারা বসে ছিল অজগরের পিঠে।
এটি হয়তো নিছক গল্প, অজগরের বিশালত্ব বোঝাতে তৈরি। দু-একজন পুরোনো বাওয়ালি, বন বিভাগের বনমাঝিদের কাছে শোনা ছাড়া অজগর দেখার কথা কেউ তেমন বলেন না এখন। আমি দেড় শতাধিকবার বিভিন্ন মেয়াদে সুন্দরবনে থেকেও অজগর দেখেছি মাত্র দুবার। বন থেকে ধরা দুটি অজগর দেখেছিলাম করমজল কুমির প্রজননকেন্দ্রে। বেশ কয়েক বছর আগে কচিখালী অভয়ারণ্যের বন কর্মচারীরা মাঠের মধ্যে এক বিশাল অজগরের সন্ধান পান। একটি শিঙেল হরিণ খেয়ে মরণাপন্ন হয়ে পড়ে ছিল সাপটি। হরিণের শিং অজগরের পেট ফুঁড়ে বের হয়ে পড়েছিল। বনরক্ষীরা অজগরটি ধরে শরণখোলা হয়ে সেটিকে খুলনায় নিয়ে ডাক্তারের কাছে সোপর্দ করে। ডাক্তার সাহেব চমৎকার অপারেশন করে মরা হরিণটি বের করে আনেন। অবশ্য অজগরটি অপারেশনের ধকল সহ্য করতে পারেনি।
মেঘডম্বুর বা অজগর মাঝেমধ্যে গাছে জড়িয়ে থাকলেও প্রধানত মাটিতে বা জলার ধারে ঘাপটি মেরে থাকা প্রাণী। সাংবাদিক বন্ধু মোরশেদ আলী খান এ বছর জিউধারার কাছে একটি ছোট খালে এমনই এক অজগর দেখতে পান। প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ প্রাণীটি জলার ধারে গা ডুবিয়ে গ্রামবাসীদের পোষা হাঁস ধরার চেষ্টায় ছিল।
১৯৭০ সালের পর থেকে উপর্যুপরি জলোচ্ছ্বাস, বনের ঘাসের মাঠ, জলাভূমিতে ঘাসকাটা বাওয়ালিদের উৎপাত অজগর কমে যাওয়ার মূল কারণ। নির্বিষ এই সাপটি মারতে বনচারীদের বেশ উৎসাহ। কারণ বোধ হয়, এর চামড়া বিক্রি করা যায়।
আনন্দের কথা, সম্প্রতি কয়েকজন প্রকৃতিবিদ আলোকচিত্রী কচিখালী অভয়ারণ্যে এই সাপটি দেখেছেন, ছবি তুলেছেন। আলোকচিত্রী যিশু সেন কচিখালী খাল বেয়ে নৌকায় চলার সময় উত্তরের হালকা জঙ্গলে গাছে পেঁচানো অবস্থায় অজগরটি দেখতে পান। প্রাণিবিজ্ঞানী মনিরুল খানকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘কচিখালীতে গত বছর অজগরের আলামত আমিও পেয়েছি।’
বর্তমানে সুন্দরবনে কচিখালী-কটকা, আন্ধারমানিক, জোংরা, পোড়ামহল, শুবদিগুবদি, তিত্তরকাটি, আলকী, হিরণ পয়েন্ট, মাদারবাড়িয়া ও কালীরচর এলাকায় কিছু অজগর হয়তো আছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Python molurus। বিস্ময়কর এই প্রাণীটি রক্ষা করা প্রয়োজন সুন্দরবনের স্বার্থেই।

Source:

Prothom Alo

No comments:

Post a Comment