Search This Blog

FCO Travel Advice

Bangladesh Travel Advice

AFRICA Travel Widget

Asia Travel Widget

Monday, January 17, 2011

সিলেটের পর্যটন এলাকাসমূহ

সিলেটের পর্যটন এলাকাসমূহ

১. হজরত শাহ জালাল রহমত উল্লাহের মাযার
সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্রে হযরত শাহজালাল (র.) এর সমাধি। মূল সড়ক থেকে বিশাল তোরণ পেরিয়ে একটু ভেতরে হেঁটে গেলেই মূল মাজার কমপেস্নক্স। এখানে প্রবেশের শুরুতেই দেখা মিলবে দরগাহ মসজিদের। মসজিদটি বর্তমানে আধুনিক রূপ নিলেও এটি তৈরি হয়েছিল ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে। মসজিদের পাশেই রয়েছে মাজারে ওঠার সিঁড়ি। উপরে উঠে মাজারে প্রবেশ করতে হয় গম্বুজ বিশিষ্ট একটি হলঘরের মধ্য দিয়ে। এই হলঘরের ঠিক পশ্চিমের ভবনটি ঘড়িঘর। ঘড়িঘরের আঙিনার পূর্ব দিকে যে তিনটি কবর রয়েছে, তা হযরত শাহজালালের ঘনিষ্ঠ তিনজন সঙ্গীর। এর দক্ষিণ পাশে গ্রিলঘেরা ছোট্ট ঘরটি হযরত শাহজালালের চিলস্নাখানা। দুই ফুট চওড়া এ চিলস্নাখানায় তিনি জীবনের তেইশটি বছর ধ্যানমগ্ন কাটিয়েছেন বলে কথিত আছে। চিলস্নাখানার উত্তরের প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়বে উঁচু ইটে বাঁধানো হযরত শাহজালাল (র.) এর সমাধি। এটি নির্মাণ করা হয় ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে। এর পাশেই রয়েছে ইয়েমেনের রাজা শাহজাদ আলীর কবর এবং ১৪১০ খ্রিস্টাব্দে সিলেটের শাসনকর্তা মুক্তালিব খান উজিরের কবর। এ মাজারে প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, সুলতান শামসুদ্দীন ফিরোজশাহের শাসনকালে ১৩০৩ সালে হযরত শাহজালালের হাতে এ অঞ্চল বিজিত হয়। তিনি হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দকে পরাজিত করে এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। সে সময়ে তুরস্কের কুনিয়া শহর থেকে তিনি ৩১৩ জন শিষ্যসহ এ দেশে আসেন। বহু যুদ্ধে বিজয়ের পর সিলেটেই তিনি থেকে যান। ১৩৪০ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃতু্যবরণ করেন। হযরত শাহজালালের পুরো মাজার কমপেস্নক্সটি ঘুরে দেখার মতো। মাজার কমপেস্নক্সে পূর্ব পাশের পুকুরে দেখা মিলবে বহুকালের ঐতিহ্য গজার মাছের। শত শত জালালি কবুতরও রয়েছে এখানে। মাজার কমপেস্নক্সের পশ্চিম পাশের একটি ঘরে এখনও রক্ষিত আছে হযরত শাহজালালের ব্যবহূত তলোয়ার, পেস্নট, বাটি ইত্যাদি।

2. লাকাতুরা চা বাগান :সিলেট শহর থেকে বিমানবন্দর রোড ধরে কিছু দূর এগোলেই চোখে পড়বে এ চা বাগান। এখানকার চা বাগান ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগবে।


৩. মালনিছড়া চা বাগান :লাকাতুরা চা বাগান ছেড়ে বিমানবন্দরের দিকে একটু এগোলেই হাতের বামপাশে সুন্দর এ চা বাগানটির অবস্থান। এটিকে বলা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো চা বাগান। ইংরেজ সাহেব হার্ডসনের হাত ধরে ১৮৫৪ সালে এ চা বাগানের প্রতিষ্ঠা। মালনিছড়া চা বাগানের ভেতরে ঘুরে বেড়ানোর মজাটাই আলাদা। অনুমতি নিয়ে চা বাগানের কোনো কর্মচারীর সহায়তায় ঘুরে দেখা যেতে পারে বাগানটি। মালনিছড়া চা বাগানের মধ্যে একটি কমলালেবুর বাগানও আছে।

৪.সিলেট পর্যটন :মালনিছড়া থেকে কিছুদূর সামনে ক্যাডেট কলেজ ছাড়িয়ে রয়েছে হাতের ডানপাশে পাহাড়ি টিলার উপরে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ভ্রমণ কেন্দ্র। বেড়ানোর জন্য এ জায়গাটিও চমৎকার। এ জায়গাটিতে বসে দূর পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এ ছাড়া বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সিলেটের মোটেলটিও এখানেই।

৫. শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : সিলেট শহরের পাশে কুমারগাঁও এলাকায় ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলামেলা ক্যাম্পাসটি ভালো লাগবে সবার।
৬.কি্বন ব্রিজ :হযরত শাহজালালের সমাধি থেকে ২৫-৩০ টাকা রিকশা ভাড়ার দূরত্বে কি্বন ব্রিজ। সুরমা ব্রিজ নামেও এটি বেশ পরিচিত। ১৯৩৬ সালে নির্মাণ করা হয় এটি। তৎকালীন ইংরেজ গভর্নর মাইকেল কি্বনের নামেই এর নামকরণ করা হয়। ১১৫০ ফিট লম্বা এবং ১৮ ফিট প্রস্থ এ ব্রিজটি দেখতে ধনুকের মতো বাঁকানো। ১৯৭১ সালে পাক হানাদাররা ব্রিজটির একাংশ উড়িয়ে দেয়। পরে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের অর্থায়নে বিধ্বস্ত অংশটির পুনঃনির্মাণ করা হয়।

৭. আলী আমজাদের ঘড়িঘর :কি্বন ব্রিজ থেকে নিচে তাকালেই চোখে পড়ে একটি ঘড়িঘর। ব্রিজের পাশে চাঁদনীঘাটে অবস্থিত এ ঘড়িঘরটি আজও দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। জানা যায়, পৃথি্ব পাশার বিখ্যাত জমিদার আলী আমজাদ খাঁ দিলস্নীর চাঁদনীচকে শাহজাদী জাহানারা কতর্ৃক নির্মিত ঘড়িঘর দেখে মুগ্ধ হন। তাই তিনি সুরমা নদীর তীরে চাঁদনীঘাটের কাছে অনুরূপ একটি ঘড়িঘর নির্মাণ করেন। এ জন্যই সবাই একে জানেন আলী আমজাদের ঘড়িঘর নামে।

৮.মনিপুরী জাদুঘর :শহরের সুবিদবাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এ জাদুঘরটি। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসী সমপ্রদায় মনিপুরীদের শত বছরের কৃষ্টি আর ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে এ জাদুঘরের মাধ্যমে। এ জাদুঘরে দেখা মিলবে কয়েকশ বছরের পুরোনো ঘণ্টা, ধমর্ীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহূত নানান দ্রব্যসামগ্রী, যুদ্ধে ব্যবহূত সরঞ্জাম, মনিপুরীদের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প সামগ্রীসহ আরো অনেক কিছু।

৯. এমসি কলেজ :সিলেট শহরে অবস্থিত প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুরারীচাঁদ কলেজ বা সিলেট এমসি কলেজ। ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজটি এ অঞ্চলের শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে।
১০. ওসমানী স্মৃতি জাদুঘর :সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্টের কাছে নাইওরপুলে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গণি ওসমানীর বাসভবন 'নূর মঞ্জিল'। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনায় এখানে রয়েছে ওসমানী স্মৃতি জাদুঘর। এ জাদুঘর খোলা থাকে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর সকাল ১০.৩০ মিনিট থেকে বিকাল ০৫.৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং অক্টোবর থেকে মার্চ সকাল ৯.৩০ মিনিটি থেকে বিকাল ৪.৩০ মিনিট পর্যন্ত। শুক্রবার খোলা থাকে বিকেল ৩.৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিট পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার এবং অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে জাতীয় জাদুঘর বন্ধ থাকে। এ জাদুঘরের কোনো প্রবেশমূল্য নেই।

.হযরত শাহপরান (র.) এর সমাধি :হযরত শাহ পরান ছিলেন হযরত শাহজালালের ভাগ্নে। তিনিও ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক সাধক। শহর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার পূর্ব দিকে দক্ষিণগাছের খাদিমপাড়ায় রয়েছে এই মহান সাধকের মাজার। বিশাল বটগাছের ছায়াতলে এ মাজারে উঠতে হয় সিঁড়ি বেয়ে। প্রতিদিন হাজার হজার ভক্তের পদচারণায় মুখরিত থাকে পুরো মাজার এলাকা। মাজারের পাশেই রয়েছে মুঘল স্থাপত্য রীতিতে তৈরি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ।
2. মাধবকুন্ড জলপ্রপাত

clip_image0015মাধবকুন্ড দক্ষিণবাগ রেল ষ্টেশন হতে ৩ কিলোমিটার দুরে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত যেখানে প্রতি বছর অনেক দর্শনার্থী আসেন। মাধবকুন্ডের ঝর্ণা হচ্ছে পর্যটকদের জন্য সিলেট বিভাগের মধ্যে একমাত্র আকর্ষণীয় স্হান। অসংখ্য পর্যটক ও বনভোজনকারীরা এখানকার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রতি দিন আসেন।

যেভাবে আসবেন:
বাস যোগে কুলাউড়া রেলষ্টেশন হতে মাধবকুন্ডে আসতে হলে ১ ঘন্টায় আসা যায়। ভ্রমণের সময় আশপাশে সবুজ চা বাগানের দৃশ্য চোখে পড়বে। পাহাড়ের ঝিকঝাক রোড আপনার ভ্রমণকে আরও আনন্দদায়ক করবে। মাধবকুন্ডে একটি বড় পাহাড়ী প্রাকৃতিক ঝর্ণা আছে। ২০০ ফুট হতে লক্ষ লক্ষ টন পানি নীচের দিকে পড়তে থাকে। পাথরের বড় বড় স্তুপ ও কালো পাথরগুলো মাধবকুন্ডকে সুন্দর আকৃতি দিয়েছে। এখানে পর্যটন মোটেলের সাথে থাকা ও খাওয়ার সুবিধা দেয়ার জন্য একটি রেস্টুরেন্ট আছে। রাতকাটানোর জন্য একটি জেলা বাংলোও আছে । জঙ্গলের মধ্যে অবস্হান আপনাকে অতিরিক্ত আনন্দ দিতে পারে। জেলা বাংলো বুকিং দেয়ার জন্য আপনাকে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ অফিসে যোগযোগ করতে হবে।

. শ্রীমঙ্গল
শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের "চা রাজধানী" নামে খ্যাত।
clip_image0016
যা যা দেখবেন:
শ্রীমঙ্গলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ চা বাগান আছে যা সবুজ কার্পেট নামে খ্যাত। এখানে চা গবেষণা কেন্দ্র ও একটি চা উৎপাদনের কারখানা আছে। প্রতি বছর বাংলাদেশের উৎপাদিত মানসম্মত চায়ের একটি বিরাট অংশ বিদেশে রপ্তানী হয়ে থাকে। শ্রীমঙ্গলে অধিকাংশ জায়গা জুড়েই চা বাগান চোখে পড়বে। যদি আপনি চা বাগানে থাকার ব্যবস্হা করতে পারেন তাহলে সে ভ্রমণটি আপনার স্মৃতিময় হয়ে থাকবে। শ্রীমঙ্গলের রেস্ট হাউজ অথবা অন্যান্য অনেক জায়গা আছে থাকার জন্য। তবে এখানে থাকার জন্য আগে থেকে বাগানের মালিক কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়।
. চৈতন্য দেবের মন্দির
শ্রী চৈতন্য দেবের মন্দির সিলেট শহর হতে ৪৫ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে অবস্হিত। প্রায় ৫০০ বছরের পুরাতন এ শ্রী চৈতন্যের মন্দিরটি। প্রতি বছর বাংলা ফাল্গুন মাসে পূর্ণিমা রাতে এখানে একটি মেলার আয়োজন হয়ে থাকে যেখানে হাজার হাজার দেশী বিদেশী ভক্ত মেলাটি উপভোগ করেন।
. শাহী ঈদগাঁহ
১৭ শতাব্দীতে মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব একটি পাহাড়ের উপরে সার্কিট হাউজের দক্ষিণ পূর্বে তিন কিলোমিটার দূরে শাহী ঈদগাঁহ নির্মাণ করেছিলেন। এটি দেখতে দূর্গের মত মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে মুসলিম সম্প্রদায়ের দুটি বড় ঈদের জামাত এখানে আয়োজন করা হয়ে থাকে।
. গৌর গোবিন্দের দূর্গ
একটি সৌন্দর্যময় পাহাড়ের চূড়ায় মুরারিরচাঁদ সরকারী কলেজটি অবস্হিত যার দক্ষিণ পশ্চিম দিকে রাজা গৌর গোবিন্দ দূগর্টি রয়েছে। এটিও একটি দর্শণীয় স্হান।
. জৈন্তাপুর রাজবাড়ি
জন্তাপুর সিলেট শহর হতে ৪৩ কিলোমিটার দূরে সিলেট শিলং রোডের পাশে অবস্হিত। প্রাচীন রাজার রাজধানী নামে খ্যাত এ জৈন্তাপুর। এখানে খাশিয়া ও জৈন্তা পাহাড় ও জৈন্তা ভূমি আছে। জৈন্তাপুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এ রাজার রাজত্বের নিদর্শনগুলো। জৈন্তাপুর বন এবং জাফলং এলাকার আশেপাশে, শ্রীপুর এবং তামাবিল এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রচুর লোকজন এখানে আসে।
যদি আপনি জাফলং-এ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন তাহলে জাফলং-এ সারাদিন বেড়িয়ে সন্ধ্যায় সিলেট শহরে ফিরে যেতে হবে। সাধারণত: শীতকালে জাফলং ভ্রমণের উপযুক্ত সময় তবে পাহাড়ী ঝর্ণা উপভোগ করতে চাঁদনী রাতে আসা উচিত। জৈন্তাপুর রাজবাড়ি জাফলং হতে ৫ কিলোমিটার দূরে, এখানে একটি সুন্দর চা বাগান আছে। সিলেট শহরের দক্ষিণ পশ্চিমে ৩৫ কিলোমিটার দূরে এটি অবস্হিত। শ্রীপুর ভ্রমণের পর জৈন্তাপুরের জৈন্তা রাজপ্রাসাদ পরিদর্শন করতে ভুলবেন না। ১৮ শতকে জৈন্তা রাজার রাজধানী ছিল এ জৈন্তাপুর। জৈন্তা রাজাবাড়ি হচ্ছে জৈন্তা রাজার রাজপ্রাসাদ। এটি জৈন্তাপুর বাজারের কাছে। এ রাজপ্রাসাদটি বর্তমানে ধ্বংসের পথে তবুও অনেক পর্যটক জৈন্তা রাজার অস্তিত্বতের নিদর্শন দেখতে আসে।
. শ্রীপুর

clip_image0017শ্রীপুর হচ্ছে অন্য একটি পর্যটন স্হান যেখানে আপনি পাহাড়ী ঝর্ণা থেকে পানি পড়ার শব্দ শুনতে পাবেন। এ এলাকার বর্ধিত অংশে ভারতীয় সীমানার ঝর্ণাটি আপনার দৃষ্টিতে আসবে। মাঝেমাঝে বড় বড় পাথর এ ঝর্ণার সাথে শ্রীপুরে আসে। জাফলং এবং তামাবিল ভ্রমণের পর সিলেটে ফেরার পথে শ্রীপুর ভ্রমণ করতে পারেন। জাফলং থেকে শ্রীপুরের দূরত্ব ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার।
. লাউয়াছড়া বন

clip_image0018“লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট” বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন। পর্যটকরা এখানে বানরের গাছে চড়ার দৃশ্য, পাখি যেমন- পেঁচা, টিয়া ইত্যাদি দেখতে পাবেন। এখানে হরিণের ঘোরাফেরা, চিতাবাঘ, বন্যমোরগ, কাঠবিড়ালী এবং অজগর সাপ দেখতে পাবেন। যারা পাখি দেখতে ভালোবাসে তারা কোনভাবে এটা দেখতে ভুলবেননা।
এশিয়ার মধ্যে বিরল ক্লোরোফোর্মের গাছ রয়েছে এখানে যা সত্যিই আকর্ষণীয়। এখানে খাসিয়া ও মুণিপুরী দু’জাতির উপজাতিদের বসবাস । মুণিপুরীদের আকর্ষণীয় নাচ ও গান এখানকার আকর্ষণ অনেকটা বৃদ্ধি করেছে। তাদের একটি ঐতিহ্য হচ্ছে কাপড় বোনা। আপনি এখান থেকে হস্তশিল্প, উলের তৈরি শাল, শাড়ী, নেপকিন, বিছানার চাদর এবং কিছু ব্যাগও কিনতে পারেন। খাসিয়া উপজাতিদের গ্রামগুলো পাহাড়ের উঁচুতে ও গভীর বনের মধ্যে যা শহর থেকে অনেক দূরে। লাউয়াছড়া বনকে বলা হয়ে থাকে স্বর্গের রাজ্য যা আপনাকে এক ধরণের প্রশান্তি এনে দিবে।
2. জাফলং

clip_image0019জাফলং সিলেট বিভাগের অন্যতম আকর্ষণীয় স্হান। সিলেট শহর হতে এটি ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্হিত ও সিলেট শহর হতে দেড়ঘন্টা সময় নিবে এখানে পৌঁছাতে। জাফলং-এর দর্শনীয় দিক হচ্ছে চা বাগান ও পাহাড় থেকে পাথর আহরণ। মারি নদী ও কাশিয়া পাহাড়ের পাদদেশে জাফলং অবস্হিত। মারি নদীর উৎপত্তি হিমালয় থেকে। এর স্রোতে লক্ষ লক্ষ টন পাথর চলে আসে। মারি নদীতে ভ্রমণের মাধ্যমে পাথর সংগ্রহের দৃশ্য আপনাকে সত্যিই আনন্দ দিবে। জাফলং হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য সমৃদ্ধ সম্পূর্ণ পাহাড়ী এলাকা যা সবুজ পাহাড়ের অরণ্যে ঘেরা। এখানে প্রচুর বন্য প্রাণীর বসবাস। বনের কাছাকাছি আসলে আপনাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আপনি জাফলং- এ আসলে খাসিয়া উপজাতিদের জীবন ও জীবিকা চোখে পড়বে। জাফলং- এ আসতে হলে সিলেট থেকে আপনাকে সকাল সকাল যাত্রা করতে হবে যাতে ভ্রমণ শেষে সন্ধ্যার আগে সিলেট ফিরতে পারেন।
. তামাবিল স্হলবন্দর
জাফলং হতে অর্ধেক কিলোমিটার দূরে হচ্ছে তামাবিল যা ভারত সীমান্তের নিকটে অবস্হিত। যদি আপনি ভারতের শিলং ভ্রমণ করতে চান তাহলে কাষ্টমস-এর নিয়মকানুন সেরে সীমানা পাড় হয়ে সেখানে যেতে পারেন। ভারতে যেতে হলে আপনাকে সেখানকার ভিসার মেয়াদ থাকতে হবে। সিলেট শহর হতে তামাবিল সীমানা ৫৫ কিলোমিটার দূরে অবস্হিত। এ এলাকার দর্শনীয় স্হান ও ঝর্ণার উৎস দেখতে হলে তামাবিল দিয়ে বর্ডার পার হতে হবে।
. সুরমা ভেলী

clip_image0020সুরমা ভেলীর দুই দিকে পাহাড় পর্বতের মধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকার মাঝখানে চা রোপণের দৃশ্য ও সবুজ বন সত্যিই মনকে মুগ্ধ করবে। বাংলাদেশের পর্যটন স্হানগুলোর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ খাসিয়া, জৈন্তা ও ত্রিপুরা পাহাড় এখানেই অবস্হিত। ঘন বন, মুণিপুরী উপজাতিদের বন্যজীবনের অনেক নিদর্শন এখানে দেখতে পাওয়া যায়। নীচু পাহাড়ে মাইলের পর মাইলের চা বাগানের বিস্তার একটি সবুজ কার্পেটের মত দেখা যায়। এটি পর্যটকদের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হতে পারে। সিলেট হচ্ছে চা বাগানের একটি শস্যভান্ডার, এখানে ১৫০ টির উপরে চা বাগান আছে যার মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় তিনটি চা বাগান এখানে অবস্হিত। সিলেটের আরেকটি দর্শনীয় স্হান হচ্ছে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী যা উত্তর দক্ষিণে অবস্হিত। এখানে অনেক হাওড় আছে যা শীতের সময় সবুজ ভূমিকে আর প্রসারিত করে কিন্তু বর্ষার সময় অশান্ত সাগরে রূপ নেয়। শীতের সময় সাইবেরিয়া হতে এইসব হাওড়ে লক্ষ লক্ষ অতিথি পাখি আসে। যা সত্যিই দেখার মত।

কিভাবে যাবেন :ঢাকা থেকে রেল, সড়ক ও আকাশ পথে সরাসরি সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬.৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, দুপুর ২.০০ মিনিটে প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০.০০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া এসি বার্থ ৬৯৮ টাকা, এসি সিট ৪৬০ টাকা, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৪২৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ২৭০ টাকা, সি্নগ্ধা শ্রেণী ৪৬০ টাকা, শোভন চেয়ার ১৮০ টাকা, শোভন ১৫০ টাকা, সুলভ ৯৫ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮.১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯.০০ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। প্রথম শ্রেণী বার্থ ৪৬৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ৩২০ টাকা, সি্নগ্ধা শ্রেণী ৫৩৫ টাকা, শোভন চেয়ার ২১০ টাকা, শোভন ১৯০ টাকা।

ঢাকা থেকে গ্রিন লাইন পরিবহন (০২-৮৩৩১৩০২-৪, ০২-৮৩৫৩০০২-৪), সোহাগ পরিবহন (০২-৯৩৪৪৪৭৭, ০১৭১১৬১২৪৩৩), সৌদিয়া এস আলম (০১১৯৭০১৫৬৩২-৩৪) পরিবহনের এসি বাস যায় সিলেটে। ভাড়া ৫৫০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকার ফকিরাপুল, কমলাপুর, সায়েদাবাদ প্রভৃতি জায়গা থেকে শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সিলকম পরিবহন, এনপি ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসও সিলেটে যায়। ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকা। ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান (০২-৭১৬৮৮৪২), জিএমজি এয়ারলাইন্স (০২-৮৯২২২৪৮, ০২-৮৯২৪২৭৪), ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের (০২-৮৯৩২৩৩৮, ০২-৮৯৩১৭১২) বিমান নিয়মিত উড়াল দেয় সিলেটের আকাশে।

কোথায় থাকবেন :সিলেট শহরে থাকার জন্য বেশকিছু ভালো মানের হোটেল আছে। শাহজালাল উপশহরে আছে পাঁচতারকা মানের হোটেল রোজ ভিউ (০৮২১-৭২১৮৩৫), নাইওরপুল এলাকায় হোটেল ফরচুন গার্ডেন (০৮২১-৭১৫৫৯০), জেল সড়কে হোটেল ডালাস (০৮২১-৭২০৯৪৫), ভিআইপি সড়কে হোটেল হিলটাউন (০৮২১-৭১৮২৬৩), লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন (০৮২১-৮১৪৫০৭), শহরের বাইরে বিমানবন্দর সড়কে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের পর্যটন মোটেল (০৮২১-৭১২৪২৬), খাদিম নগরে জেসটেট হলিডে রিসোর্ট (০৮২১-২৮৭০০৪০), খাদিম নগরে আরেকটি আধুনিক রিসোর্ট নাজিমগড় (০৮২১-২৮৭০৩৩৮)। এ ছাড়া শহরে সাধারণ মানের অন্যান্য হোটেল হলো আম্বরখানায় হোটেল পলাশ, (০৮২১-৭১৮৩০৯)। দরগা গেইটে হোটেল দরগাগেইট (০৮২১-৭১৭০৬৬)। দরগা গেইটে হোটেল ঊর্মি (০৮২১-৭১৪৫৬৩)। জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট (০৮২১-৭১৪৮৫০)। তালতলায় গুলশান সেন্টার (০৮২১-৭১০০১৮)। এসব হোটেলে ৪০০-১২,০০০ টাকায় বিভিন্ন মানের কক্ষ আছে।
Source: www.ruralinfobd.com & Daily Ittefaq

No comments:

Post a Comment