Search This Blog

FCO Travel Advice

Bangladesh Travel Advice

AFRICA Travel Widget

Asia Travel Widget

Monday, January 17, 2011

আলুটিলা আর নয়নাভিরাম রিসাং

আলুটিলা আর নয়নাভিরাম রিসাং
এপ্রিলের এক রৌদ্রময় সকালে বেরিয়ে পড়লাম পার্বত্য চট্টগ্রামের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের লীলাভূমি খাগড়াছড়ির উদ্দেশে। সঙ্গে আমার সবসময়কার ভ্রমণসঙ্গী বন্ধু মুসা আহমেদ, সাকিব হোসেন আর আবদুর রউফ। শিক্ষাজীবন চট্টগ্রামে হওয়ায় তাদের সঙ্গে চষে বেড়িয়েছি চট্টগ্রাম আর পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় সব জায়গা। এবার খাগড়াছড়ি ভ্রমণে আমাদের মূল গন্তব্য ছিল আলুটিলা আর রিসাং ঝরনা। ঘুরে এসে লিখেছেন কাউসার মোঃ নূরুন্নবী
বাসস্ট্যান্ডে গিয়েই পড়লাম বিপাকে। সকাল সকাল পেঁৗছলেও বাস মিস করলাম। কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা জানালেন, ২ ঘণ্টার আগে আর কোনো গাড়ি নেই। আমাদের তো মাথায় হাত! কারণ রাতেই আবার চট্টগ্রাম ফিরে আসতে হবে। উপায়ান্তর না দেখে চড়ে বসলাম লোকাল বাসে। আর এখানেই ভুলটা করে বসলাম। রীতিমতো যুদ্ধ করে বাসে সিট দখল করতে হলো। একে তো মানুষের উপচেপড়া ভিড়, তার ওপর বাসের পেছনের সিটে বসায় ঝাঁকি খেতে খেতে প্রাণ যায় অবস্থা। তবে মাটিরাঙা পেঁৗছার পর অবস্থা পাল্টে গেল। পথের দুই ধারের মনকাড়া রূপ আস্তে আস্তে আমাদের ক্লান্তির অনেকখানিই প্রশমিত করে দিল। সারি সারি উঁচু পাহাড় আর জুমক্ষেত পেছনে ফেলে আমাদের বাস ছুটে চলেছে। আমরা একেকজন হারিয়ে গেলাম মায়াবী এক জগতে। কিছুক্ষণ পর আমাদের বাসটি উঁচু-নিচুু রাস্তায় গিয়ে পেঁৗছল। হঠাৎ বাসটি একবার খাড়া ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছে তো এই আবার বিপজ্জনকভাবে নেমে আসছে। কিছু কিছু জায়গায় দেখলাম, সেতুর আগে ঝুঁকিপূর্ণ সতর্ক নির্দেশ দেওয়া। খাগড়াছড়ির পথে পথে এরকম অনেক ছোট ছোট ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতু চোখে পড়ে।
বাসের হেলপারকে আগেই বলে রেখেছিলাম আলুটিলা নামিয়ে দিতে। ৩ ঘণ্টার বাস জার্নিটাকে ৪ ঘণ্টা বানিয়ে খাগড়াছড়ি শহরের প্রায় ছয় কিলোমিটার আগে বাস নামিয়ে দিল আমাদের গন্তব্যস্থল আলুটিলায়। অনেকেই হয়তো জানেন, আলুটিলা বিখ্যাত তার রহস্যময় সুড়ঙ্গের কারণে। আমাদেরও ব্যাপারটা আগে থেকেই জানা ছিল। তাই আলুটিলায় নেমেই আমাদের মধ্যে একটা অ্যাডভেঞ্চার অ্যাডভেঞ্চার ভাব চলে এলো। পাঁচ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম। প্রবেশমুখেই দেখতে পেলাম পর্যটকদের আকর্ষণ করতে আলুটিলা কর্তৃপক্ষের সাইনবোর্ড। অনেকখানি হেঁটে আর প্রায় শ'খানেক ধাপ সিঁড়ি ভাঙার পর গিয়ে মিলল সুড়ঙ্গমুখের দেখা। বন্ধু রউফ মোবাইলটর্চের আলোতে সুড়ঙ্গের ভেতর ঢুকে পড়ল। তবে কিছুদূর গিয়েই বোঝা গেল, এরকম ঘুটঘুটে অন্ধকারে সুড়ঙ্গ জয় সম্ভব নয়। তাছাড়া কোনো কারণ ছাড়াই গা ছমছম করছিল। তাই আবার ফিরে গিয়ে মশাল কিনে আনলাম। সুড়ঙ্গের পথ কিছুটা কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল। তলদেশে প্রবহমান ঝরনা। মাথার ওপর ঘুটঘুটে অন্ধকারে বাদুড়ের কর্কশ চিৎকার। পাহাড়ের নিচে খুব সাবধানে মশাল নিয়ে সুড়ঙ্গের ভেতর যেতে হয়। এভাবে মিনিট দশেক যাওয়ার পর পাওয়া গেল সুড়ঙ্গের অপর প্রান্ত। বেশ একটা অ্যাডভেঞ্চার হয়ে গেল ভাব নিয়ে আমরা মনোযোগ দিলাম মশাল হাতে ফটোসেশনে।
আলুটিলা সুড়ঙ্গ জয় (!) শেষে আমরা বেরিয়ে এলাম। আলুটিলার উল্টোপাশেই রয়েছে আবাসিক হোটেল 'ইমাং'। পাহাড়ের ওপর অবস্থিত এ হোটেল থেকে খাগড়াছড়ি শহরটিকে ছবির মতো সুন্দর দেখায়। ইমাংয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আমরা রওনা হলাম রিসাংয়ের উদ্দেশে। আলুটিলা থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার আগে রিসাং। সেখান থেকে ঝাড়া সোয়া দুই কিলো হাঁটাপথ। সমতল পথ নয়, জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ি পথ। যাওয়ার সময় ঝিরিঝিরি বৃষ্টি সঙ্গী হওয়ায় হেঁটে যেতে তেমন কষ্ট হলো না। কিন্তু ফেরার সময় প্রচণ্ড রোদ থাকায় পাহাড়ি রাস্তায় চলতে চলতে আমাদের দম বের হওয়ার জোগাড়। স্থানীয়দের কাছে রিসাং ঝরনা 'তেরাংতৈ কালাই ঝরনা' নামে বেশি পরিচিত। আর মারমা ভাষায়, 'রিসাং' মানে পাহাড় থেকে পানি পড়া।
রিসাং যাওয়ার পথে আদিবাসীদের ঘরবাড়িগুলো চোখে পড়ার মতো। বেশিরভাগ বাড়িই পাহাড়ি মাটির তৈরি। দেখতে চমৎকার। স্থানীয় একজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মাটির তৈরি হলেও বাড়িগুলো যথেষ্ট মজবুত। জানা গেল, ওখানে টিপরা বা ত্রিপুরার অধিবাসীদের বাস।
হাঁটতে হাঁটতে পেয়ে গেলাম সিঁড়ির দেখা। কয়েকশ' ধাপ। কিছু ধাপ পেরোতেই শুনতে পেলাম পাহাড় থেকে অনবরত জলপতনের ধ্বনি। বুঝে গেলাম রিসাংয়ের খুব কাছে চলে এসেছি। আরও কিছুটা নামার পর দেখা গেল যৌবনবতী রিসাংয়ের। সিঁড়ির শেষ ধাপটি পেরিয়ে কাদাময় পিচ্ছিল পথ আর ছড়াটা অনেকটা দৌড়ে রিসাংয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। চোখ জুড়িয়ে গেল, মন ছেয়ে গেল প্রশস্তিতে। আর দেরি করলাম না। কাপড়-চোপড় নিয়েই আমরা নেমে পড়লাম ঝরনার পানিতে শরীর জুড়াতে। দুঃসাহসী কয়েকজনকে দেখলাম, ঝরনার ঢালু অংশ থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে নিচের ছড়ায় পড়ছে। ব্যাপারটা আনন্দদায়ক সন্দেহ নেই; কিন্তু বিপজ্জনকও বটে। রিসাংয়ে গিয়ে আমাদের কারোরই ফিরতে মন চাইছিল না।
রিসাং থেকে বাসে করে খাগড়াছড়ি শহরে গিয়ে পেঁৗছলাম। রিসাংয়ের মায়াবী রূপ আমাদের আবার বাস মিস করিয়ে দিল। শহরে পেঁৗছে জানলাম, বিরতিহীন শেষ বাসটি মাত্র ছেড়ে গেছে। শেষ লোকাল বাসটি আর মিনিট বিশেক পর ছাড়বে। টিকিট কেটে তড়িঘড়ি করে কিছু খেয়ে নিলাম। ক্লান্ত বিধ্বস্ত শরীর নিয়ে বাসে উঠে দেখি, আমাদের সিটে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একজন বসে আছে। মাটিরাঙা পর্যন্ত তার স্ত্রী আর সন্তানকে বসতে দিতে লোকটি আমাদের অনুরোধ করলেন। কী আর করা! ক্লান্ত বিধ্বস্ত শরীরে প্রায় অর্ধেকটা পথ বাসে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
খাগড়াছড়িতে গেলে ফেরার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। পাহাড়ি রাস্তায় কোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য সন্ধ্যার পর বাস চলাচল করতে দেওয়া হয় না। পার্বত্য চট্টগ্রামের সব জায়গাতেই সন্ধ্যার আগেই শেষ বাসটি ছেড়ে যায়।
যেভাবে যাবেন
একদিনের ভ্রমণ হওয়ায় খাগড়াছড়ি শহরটি খুব ভালো করে দেখার সুযোগ হয়নি। তবে বাস থেকে শহরটিকে মনে হয়েছে, ছিমছাম সাজানো-গোছানো। খাগড়াছড়ি যেতে চাইলে ঢাকা থেকে যে কোনো এসি বা নন-এসি পরিবহনে যাওয়া যাবে। এসি পরিবহন স্টারলাইনের ভাড়া ৪০০ টাকা। আর শ্যামলী, এস আলমসহ বিভিন্ন নন-এসি পরিবহনের ভাড়া ৩০০ টাকা। ট্রেনে গেলে প্রথমে চট্টগ্রাম নামতে হবে। তারপর যেতে হবে বাসে। চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকে পাওয়া যাবে বিরতিহীন বাস 'শান্তি'। ভাড়া ১৪০ টাকা। যেতে লাগবে ৩ ঘণ্টা। রিসাংয়ের কাছাকাছি থাকার জায়গা হচ্ছে পর্যটন মোটেল । তবে প্রকৃতির দুর্গমতাকে জয় করে সৌন্দর্য উপভোগ করার মজাটা কিন্তু একেবারেই আলাদা।

ছবি : লেখক
Source: Daily Samakal


No comments:

Post a Comment