Search This Blog

AFRICA Travel Widget

Error loading feed.

Asia Travel Widget

Error loading feed.

Sunday, January 30, 2011

যাবেন... মধুটিলা ইকোপার্ক!

যাবেন... মধুটিলা ইকোপার্ক!
সবুজ পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে যাচ্ছে সাদা ঝরণারাশি। যেন সবুজ মখমলের গায়ে মুক্তোর ধারা। এর সঙ্গে বৈচিত্র্যময় আদিবাসী জীবনযাপন। শাল, সেগুন পরিবেষ্টিত টিলাময় মধুটিলা ইকোপার্ক আপনার নাগরিক জীবনের অবসরে প্রশান্তি এনে দেবে...

পাহাড়ি ঝরনার ঝিরঝির শব্দ আর পাখির কলকাকলি গারো পাহাড়ের আকর্ষণ। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ গারো পাহাড়। সবুজ-শ্যামল বন, পাহাড়, টিলা আর ঝরনাবেষ্টিত দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা মধুটিলা। ভ্রমণবিলাসীদের জন্য এক মনোরম স্থান। ভ্রমণকে আরও আনন্দময় করে তুলতে এই অবকাশ কেন্দ্রে রয়েছে ব্যাপক আয়োজন। নগরীর যান্ত্রিক সভ্যতা থেকে অনেক দূরে গারো পাহাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে নয়নাভিরাম এক শৈল্পিক ভুবন। কোলাহলমুক্ত পরিবেশ আর নির্মল বাতাসের স্বাদ নিতে সেখানে পাহাড়ের টিলাকে অবিকল রেখে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে গড়ে তোলা হয়েছে সুদৃশ্য ভবন। সেখানে পাহাড়ের টিলাকে অবিকল রেখে এখানকার সবুজ প্রকৃতি যেন আপন করে নেয়। শ্যামল বৃক্ষরাজির মাঝ দিয়ে পাকা সড়কপথ যেন সুড়ঙ্গের দিকে ঢুকে যাচ্ছে। সারি সারি শাল, গজারি, সেগুন ও লতাগুল্মের বিন্যাস প্রকৃতিপ্রেমীদের দোলা দিয়ে যাবে নিশ্চয়ই। শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের সমশ্চুড়া ইকোপার্কের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ভ্রমণবিলাসীরা বারবার ছুটে আসেন এখানে। পড়ন্ত বিকেলে এখানকার পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে ভারতের তোড়া পাহাড়কে দেখা যায়। মনে হবে ওই তোড়া পাহাড় যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। মনের মাঝে জাল বুনবে, হায় জন্ম যদি হতো এই গারো পাহাড়ে। তাই তো আবারও গারো পাহাড়ের মধুটিলা ইকোপার্কে আসার জন্য মন আকুলি-ব্যাকুলি করবে। ফি বছর শীত মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে এখানে ভ্রমণবিলাসীদের ঢল নামে। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বন বিভাগের জমিতে এ ইকোপার্ক গড়ে তোলা হয়।
কীভাবে যাবেন :ঢাকা থেকে নিজস্ব বাহনে শেরপুর আসতে সময় লাগে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টা। আবার শেরপুর থেকে মধুটিলা ইকোপার্কের দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার। ঢাকার মহাখালী টার্মিনাল থেকে ড্রিমল্যান্ড বাসে শেরপুর আসা যায়। ভাড়া ১৯০ টাকা। এখান থেকে সকাল সাড়ে ৭টায় সাদিকা গেটলক বাস ছাড়ে। দুপুর দেড়টায় ছাড়ে এসি বাস। এসি বাসের ভাড়া ২২০ টাকা। ভুল করে স্পেশাল ড্রিমল্যান্ড ছাড়া অন্য গাড়িতে উঠবেন না। এসব ছাড়া অন্য বাসগুলো লোকাল। এসব বাসে সময়ও লাগে বেশি, ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। শেরপুর নবীনগর বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিএনজি নিয়ে সোজা চলে যেতে পারেন ইকোপার্কে। ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। আবার নিউমার্কেট অথবা জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সামনে থেকে মাইক্রোবাস পাওয়া যায়। ভাড়া ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা। আর বাসে শেরপুর থেকে ইকোপার্ক পর্যন্ত ভাড়া ৩০ টাকা।
কী কী দেখবেন : প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি দেখতে পাবেন আদিবাসী গারো, হাজং, কোচ, হদি বর্মণ সম্প্র্রদায়ের অধিবাসীদের। গারো পাহাড়ের গজারি বনের মাঝ দিয়ে সরু রাস্তায় গাড়ি চালানোর রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলো আপনি উপভোগ করতে পারেন। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে চিন্তার তো কোনো অবকাশই নেই বরং মনকে প্রফুল্ল রাখতে আছে টাটকা খাবারের সুব্যবস্থা। মধুটিলা ইকোপার্কে ঢুকতে প্রবেশ মূল্য দু'জন যাত্রীসহ মোটরসাইকেল ২০, বড় বাস ৫০০, মিনিবাস ২০০ ও লোকাল বাস ৪৫০ টাকা। ইকোপার্কের গেট পার হলেই চোখে পড়বে দু'পাশে গাছের সারির মাঝ দিয়ে রাস্তা। মনে হবে নিচের দিকে ঢুকে যাচ্ছি। আবার ওপরে উঠতেই দু'পাশে দণ্ডায়মান দুটি হাতি আপনাকে অভিবাদন জানাচ্ছে। আরেকটু এগোলে দেখবেন সাপ, বানর, পাখি আপনাকে সালাম দিচ্ছে। এখানে লেখা রয়েছে আমাকে মারবেন না, আমি বনের অলঙ্কার। সামনে এগোলেই মিনি চিড়িয়াখানা। তারপর কৃত্রিম লেক। লেকে প্যাডেল বোট চলছে। প্রতি প্যাডেল বোটে ৫-৬ জন বসা যায়। ৩০ মিনিট চালাতে ভাড়া ৫০ টাকা। বাঁয়ে ১০০ গজ এগিয়ে গেলে ৫৫ ফুট উঁচু টাওয়ার। টাওয়ারে ওঠার টিকিট ৫ টাকা। এখানে দাঁড়িয়ে খালি চোখে আবছা আবছা ভারতের বিএসএফ ক্যাম্প দেখা যায়। আবার পরিষ্কারভাবে দেখতে চাইলে টাওয়ারে বাইনোকুলার রয়েছে। আপনি টাওয়ারে উঠতেই ডাক শুনবেন, স্যার ভারতের ক্যাম্প দেখবেন! দূরবিন হাতে দিয়েই বলবে, দেখুন স্যার কী পরিষ্কার ভারতের ক্যাম্প দেখা যাচ্ছে। আরও জানাবে, দেখেন ক্যাম্পে ২টি পতাকা উড়ছে না স্যার। একটা পতাকা লাল আর একটা সাদা। দূরবিনে ভারতের ক্যাম্প দেখতে ৫ টাকা লাগে। টাওয়ার থেকে ডানদিকে এগোলে উঁচু পাহাড়ে ওঠার সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়িটি এত খাড়া যে, এটাতে কেউ একবার উঠলে বসে একটু বিশ্রাম না নিলে হাঁফিয়ে উঠতে হবে। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই চোখে পড়বে অত্যাধুনিক বন বিভাগের রেস্ট হাউস। এ রেস্ট হাউস থেকে নেমে আসার পথে চোখে পড়বে শিশুদের জন্য শিশুপার্ক। রেস্ট হাউসে প্রতি রুমের ভাড়া ৫০০ টাকা। তবে এখানে রাত কাটানো নিরাপদ নয়। ফিরে আসুন শেরপুরে।

লেখা ও ছবি : আমিরুজ্জামান লেবু
Source: Daily Samakal, 25 th January-2011

No comments:

Post a Comment