পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার : ঐতিহ্য আর পুরাকীর্তির হাতছানি
রাজিব পাল রনি
শীতের সকাল। সুনীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো ঘন কুয়াশা ভেসে বেড়াচ্ছে। কুয়াশার ফাঁকে ফাঁকে সূর্যের আলো প্রকৃতির বুকে বুলিয়ে দিচ্ছে কোমল পরশ। যাব যাব করছি অথচ যাওয়া হয়নি। ভাবছি আর ভাবছি কোথায় যাওয়া যায় এ শীতে নতুন বছরে। এ শীতে বছরের শুরুতে আমরা বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন নওগাঁ জেলার পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ইউনেস্কো ঘোষিত ৩২২তম বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত। ১৯৮৫ সালে এটি বিশ্ব ঐতিহ্য’র অন্তর্ভুক্ত হয়। তাই আমি ও আমার বন্ধুরা মিলে এই ঐতিহ্যকে দেখার জন্য এ বছরের প্রথম সপ্তাহে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। আমি ছাড়া আমার সঙ্গে আরও কয়েকজন বন্ধু ও রতন মামা ছিল। কল্যাণপুর থেকে নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের বাস ছাড়ল। নতুন একটা জায়গায় যাচ্ছি—আনন্দ লাগছিল। গল্পে গল্পে কেটে যাচ্ছে পথের দূরত্ব। যমুনা সেতু পার হয়ে যাত্রাবিরতি পাওয়া গেল। এরপর আবার ছুটে চলা। চারপাশে সবুজ গাছ আর প্রাকৃতির সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর বাসের তীব্র ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙে গেল আমাদের। তাকিয়ে দেখি আমরা নওগাঁয় চলে এসেছি। নওগাঁ থেকে ৩৪ কিলোমিটারের-এর পথ পাহাড়পুর। নওগাঁ শহর থেকে লোকাল বাসে বদলগাছি যেতে সময় লাগে ঘণ্টা দেড়েক। নওগাঁ জেলার বদলগাছি থানার পাহাড়পুর গ্রামে ‘পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার’ অবস্থিত।
পাহাড়পুর গ্রামে এসে প্রথমেই চোখ পড়ল পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ও জাদুঘরে। প্রথমেই বন্ধুরা মিলে টিকিট কেটে পাহাড়পুর জাদুঘরে প্রবেশ করলাম। জাদুঘরে প্রবেশের পরে বিশাল বাগান ও নানান ফুলের সমারোহ সবাইকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য যেন প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। জাদুঘরের ভেতরে ঐতিহ্য আর পুরার্কীতির নিদর্শন। পাহাড়পুর জাদুঘরে রয়েছে— অলঙ্কৃত পোড়ামাটির ইট, বেলে পাথরের শিশু ও নারীর ভার্স্কয, মৃত্পাত্রের হাতল, সেকালের পোড়ামাটির খেলনা, দশম শতাব্দীর বেলে পাথরের সূর্যদেবতা, নবম শতাব্দীর কালো পাথরের লোকনাথ মূর্তি, একাদশ শতাব্দীর কালো পাথরের বিষ্ণু মূর্তি, সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহর রাজত্বকালে (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রি.) পুকুর খনন উপলক্ষে আরবি শিলালিপি ও কালোপাথরে শিবমূর্তি এই জাদুঘরে রয়েছে। জাদুঘর ঘুরে দেখা শেষ হতেই তারপর খোলাবাগানে কিছুক্ষণ আড্ডা চলল। রোদ পড়ে আসতেই জাদুঘরে দর্শনার্থীদের আনাগোনা বাড়তে লাগল। খ্রিস্টীয় আট শতকের দিকে অথবা নয় শতকের প্রথমদিকে তৈরি করা হয়েছে। খ্রিস্টীয় বারো শতকের দিকে বঙ্গাল সৈন্যদের দ্বারা অগ্নি সংযোজিত হলে বিহারটি পরিত্যক্ত হয়। যুগ যুগ ধরে এর ধ্বংসাবশেষের ওপর মাটিচাপা পড়ে বিশাল আকৃতির পাহাড়ে রূপ নেয়। বিহারের প্রবেশদ্বারে বিশাল সাইনবোর্ডে পাহাড়পুরের ইতিহাস লেখা রয়েছে, সাইনবোর্ডটি পড়লে এর ইতিহাস জেনে নেয়া যায়। জানা যায় ৭৭০-৮১০ খ্রি. দ্বিতীয় পাল সম্রাট শ্রী ধর্মপাল এই বিহার নির্মাণ করেছিলেন। যার প্রকৃত নাম সোমপুর বিহার। দূর থেকে মন্দিরের চূড়াটি দেখে মনে হয় পাহাড়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ধুলার আস্তরণে চাপা পড়ে এখন পাহাড় চূড়ার মতোই মনে হয়। পুরোটাই সবুজ ঘাসের চাদরে ঘেরা। চত্বরের অন্যান্য স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে একাধিক নৈবেদ্য স্তূপ, ভোজনশালা, মণ্ডপ ভবন। হিমালয়ের দক্ষিণাংশে একক ভবন হিসেবে গড়ে ওঠা বিহারগুলোর মধ্যে এটা সর্ববৃহত্ এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নসম্পদ। এ বিহারটি বেশ কয়েকবার প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের ভেতরে উন্মুক্ত স্থানের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে কেন্দ্রীয় মন্দির। প্রায় ২৭ বর্গমিটার জায়গার ওপর মন্দিরটির ধবংসাবশেষের উচ্চতা প্রায় ২১ মিটার। আমরা আস্তে আস্তে যে যার মতো করে দেখে নিচ্ছি। কী অপূর্ব! বিহারের বাইরের দেয়ালগুলোর গায়ে পোড়ামাটির ফলকে অঙ্কিত মূর্তি, যা হাজার বছর আগের শিল্পীর রীতিকেই মনে করিয়ে দেবে। শীতে এখানে বেড়ানোর মজাই আলাদা। পাহাড়পুর বিহার উত্তর-দক্ষিণে ৯২২ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১১৯ ফুট। বিহারের উন্মুক্ত আঙ্গিনার চারপাশে চার বাঁ থেকে ১৭৭টি কক্ষ আছে। আমরা বন্ধুরা মিলে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম, তখন পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়েছে।
কীভাবে যাবেন : দেশের যে কোনো স্থান থেকেই সড়কপথে পাহাড়পুর যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে দূরত্ব ২৮০ কিলোমিটার। বাস ও রেলপথ দু’ভাবেই যাওয়া যায়। ঢাকার কল্যাণপুুর থেকে ও গাবতলী থেকে বাসযোগে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে নওগাঁর পাশের জেলা জয়পুরহাট থেকে পাহাড়পুর যাওয়া যায়। কারণ, জয়পুরহাট থেকে সময় লাগে ৩০ মিনিট। মনটাকে আরওও চাঙ্গা করতে চাইলে জয়পুরহাটের কোনো আবাসিক হোটেলে থেকে আপনি পাহাড়পুরসহ আরও কয়েকটি স্থাপনা ঘুরে আসতে পারেন যেমন—বগুড়ার মহাস্থান গড় ও জাদুঘর। ঢাকা থেকে জয়পুরহাট হয়ে পাহাড়পুর হানিফ, শ্যামলী, জোনাকি পরিবহনে যাওয়া যায়। তাতে ভাড়া পড়বে ৩৫০-৪০০ টাকার মধ্যে।
কোথায় থাকবেন : নওগাঁ শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন রকম আবাসিক ও অনাবাসিক হোটেল রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম অবকাশ, যমুনা, আরিফ ইত্যাদি হোটেল রয়েছে। ইচ্ছে করলে আপনি অল্প খরচে রাতযাপন করতে পারেন। তাছাড়া নওগাঁর পাশের জেলা জয়পুরহাট সদরের সৌরভ, পূরবী, পৃথিবী ইত্যাদি আবাসিক হোটেল রয়েছে, যা কিনা পাহাড়পুর থেকে ৩০ মিনিটের পথ। শীতকালীন সময়সূচি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। রোববার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধ এবং অন্যান্য ছুটির দিনে বন্ধ থাকে।
পাহাড়পুর গ্রামে এসে প্রথমেই চোখ পড়ল পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ও জাদুঘরে। প্রথমেই বন্ধুরা মিলে টিকিট কেটে পাহাড়পুর জাদুঘরে প্রবেশ করলাম। জাদুঘরে প্রবেশের পরে বিশাল বাগান ও নানান ফুলের সমারোহ সবাইকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য যেন প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। জাদুঘরের ভেতরে ঐতিহ্য আর পুরার্কীতির নিদর্শন। পাহাড়পুর জাদুঘরে রয়েছে— অলঙ্কৃত পোড়ামাটির ইট, বেলে পাথরের শিশু ও নারীর ভার্স্কয, মৃত্পাত্রের হাতল, সেকালের পোড়ামাটির খেলনা, দশম শতাব্দীর বেলে পাথরের সূর্যদেবতা, নবম শতাব্দীর কালো পাথরের লোকনাথ মূর্তি, একাদশ শতাব্দীর কালো পাথরের বিষ্ণু মূর্তি, সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহর রাজত্বকালে (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রি.) পুকুর খনন উপলক্ষে আরবি শিলালিপি ও কালোপাথরে শিবমূর্তি এই জাদুঘরে রয়েছে। জাদুঘর ঘুরে দেখা শেষ হতেই তারপর খোলাবাগানে কিছুক্ষণ আড্ডা চলল। রোদ পড়ে আসতেই জাদুঘরে দর্শনার্থীদের আনাগোনা বাড়তে লাগল। খ্রিস্টীয় আট শতকের দিকে অথবা নয় শতকের প্রথমদিকে তৈরি করা হয়েছে। খ্রিস্টীয় বারো শতকের দিকে বঙ্গাল সৈন্যদের দ্বারা অগ্নি সংযোজিত হলে বিহারটি পরিত্যক্ত হয়। যুগ যুগ ধরে এর ধ্বংসাবশেষের ওপর মাটিচাপা পড়ে বিশাল আকৃতির পাহাড়ে রূপ নেয়। বিহারের প্রবেশদ্বারে বিশাল সাইনবোর্ডে পাহাড়পুরের ইতিহাস লেখা রয়েছে, সাইনবোর্ডটি পড়লে এর ইতিহাস জেনে নেয়া যায়। জানা যায় ৭৭০-৮১০ খ্রি. দ্বিতীয় পাল সম্রাট শ্রী ধর্মপাল এই বিহার নির্মাণ করেছিলেন। যার প্রকৃত নাম সোমপুর বিহার। দূর থেকে মন্দিরের চূড়াটি দেখে মনে হয় পাহাড়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ধুলার আস্তরণে চাপা পড়ে এখন পাহাড় চূড়ার মতোই মনে হয়। পুরোটাই সবুজ ঘাসের চাদরে ঘেরা। চত্বরের অন্যান্য স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে একাধিক নৈবেদ্য স্তূপ, ভোজনশালা, মণ্ডপ ভবন। হিমালয়ের দক্ষিণাংশে একক ভবন হিসেবে গড়ে ওঠা বিহারগুলোর মধ্যে এটা সর্ববৃহত্ এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নসম্পদ। এ বিহারটি বেশ কয়েকবার প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের ভেতরে উন্মুক্ত স্থানের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে কেন্দ্রীয় মন্দির। প্রায় ২৭ বর্গমিটার জায়গার ওপর মন্দিরটির ধবংসাবশেষের উচ্চতা প্রায় ২১ মিটার। আমরা আস্তে আস্তে যে যার মতো করে দেখে নিচ্ছি। কী অপূর্ব! বিহারের বাইরের দেয়ালগুলোর গায়ে পোড়ামাটির ফলকে অঙ্কিত মূর্তি, যা হাজার বছর আগের শিল্পীর রীতিকেই মনে করিয়ে দেবে। শীতে এখানে বেড়ানোর মজাই আলাদা। পাহাড়পুর বিহার উত্তর-দক্ষিণে ৯২২ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১১৯ ফুট। বিহারের উন্মুক্ত আঙ্গিনার চারপাশে চার বাঁ থেকে ১৭৭টি কক্ষ আছে। আমরা বন্ধুরা মিলে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম, তখন পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়েছে।
কীভাবে যাবেন : দেশের যে কোনো স্থান থেকেই সড়কপথে পাহাড়পুর যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে দূরত্ব ২৮০ কিলোমিটার। বাস ও রেলপথ দু’ভাবেই যাওয়া যায়। ঢাকার কল্যাণপুুর থেকে ও গাবতলী থেকে বাসযোগে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে নওগাঁর পাশের জেলা জয়পুরহাট থেকে পাহাড়পুর যাওয়া যায়। কারণ, জয়পুরহাট থেকে সময় লাগে ৩০ মিনিট। মনটাকে আরওও চাঙ্গা করতে চাইলে জয়পুরহাটের কোনো আবাসিক হোটেলে থেকে আপনি পাহাড়পুরসহ আরও কয়েকটি স্থাপনা ঘুরে আসতে পারেন যেমন—বগুড়ার মহাস্থান গড় ও জাদুঘর। ঢাকা থেকে জয়পুরহাট হয়ে পাহাড়পুর হানিফ, শ্যামলী, জোনাকি পরিবহনে যাওয়া যায়। তাতে ভাড়া পড়বে ৩৫০-৪০০ টাকার মধ্যে।
কোথায় থাকবেন : নওগাঁ শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন রকম আবাসিক ও অনাবাসিক হোটেল রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম অবকাশ, যমুনা, আরিফ ইত্যাদি হোটেল রয়েছে। ইচ্ছে করলে আপনি অল্প খরচে রাতযাপন করতে পারেন। তাছাড়া নওগাঁর পাশের জেলা জয়পুরহাট সদরের সৌরভ, পূরবী, পৃথিবী ইত্যাদি আবাসিক হোটেল রয়েছে, যা কিনা পাহাড়পুর থেকে ৩০ মিনিটের পথ। শীতকালীন সময়সূচি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। রোববার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধ এবং অন্যান্য ছুটির দিনে বন্ধ থাকে।