বেড়ানো : বিজয়ের মাসে ঘুরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় জায়গা
রাজীব পাল রনী
ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এ মাসেই অর্জিত হয় আমাদের বিজয় এবং স্বাধীনতা। প্রতি বছর এই মাসটি আমাদের মাঝে উজ্জীবিত করে তোলে স্বাধীনতার চেতনা। নতুন প্রজন্মের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তেমন জানেন না। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অনেকটা রূপকথার মতো। তাই এই ডিসেম্বর মাসে আপনার সন্তানকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত জায়গাগুলোতে। এই ডিসেম্বরে নতুন প্রজন্মের সন্তানদের নিয়ে যেতে পারেন জাদুঘর, বধ্যভূমি, স্মৃতিসৌধ অথবা মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্যের কাছে ইতিহাস জানানোর জন্য। তাহলে হয়তো তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চিত্র কিছুটা হলেও ফুটে উঠবে। তাই বিজয়ের মাসে বেড়িয়ে আসতে পারেন নিচের জায়গাগুলোতে—
জাতীয় স্মৃতিসৌধ : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকা থেকে ৩৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সাভারে নির্মাণ করা হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ। স্মৃতিসৌধের উচ্চতা ১৫০ ফুট। সাতটি সমদ্বিবাহু ত্রিভুজাকৃতি সমন্বয়ে স্মৃতিসৌধ গঠিত হলেও স্তম্ভগুলোর উচ্চতা ও ভূমির ক্ষেত্রফলে রয়েছে ভিন্নতা। সৌধের স্তম্ভগুলো মাঝখান থেকে মোড়ানো এবং ধারাবাহিকভাবে সাজানো। স্থাপত্যটি পুরোপুরি কনক্রিটের তৈরি। স্মৃতিসৌধের দিকে তাকালেই যেন দৃশ্যমান হয়ে ওঠে ১৯৭১ সালে আমাদের বিজয়ের গৌরবগাথা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও দেশের জন্য অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেয়া লাখো শহীদের মুখ। স্মৃতিসৌধের পুরো কমপ্লেক্সটি ৩৪ হেক্টরজুড়ে (৮৪ একর) বিস্তৃত। স্তম্ভটির সামনে বেশক’টি গণকবর ও একটি প্রতিফলন সৃষ্টিকারী জলাশয় আছে। এই স্মৃতিস্তম্ভের চারদিক ঘিরে রয়েছে সুন্দর গাছপালা, বাগান ও নির্মল বায়ু। পাখির কলকাকলিতে মুখর এই এলাকা অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত থাকে সবসময়। আপনার সন্তানদের নিয়ে গিয়ে বেড়ানোর পাশাপাশি জানাতে পারেন অতীত ইতিহাসের কথা।
রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয় যখন অবশ্যম্ভাবী, ঠিক তখন এদেশের গুণীজন ও বুদ্ধিজীবীদের হাত-পা-চোখ বেঁধে গভীর রাতে রায়েরবাজার ইটখোলার সামনে এনে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। ১৮ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের ক্ষতবিক্ষত লাশ আবিষ্কৃত হয়। অবশেষে দুই যুগেরও বেশি সময় পর ১৯৯৬ সালে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের কাজ শুরু হয় ও শেষ হয় ১৯৯৯ সালে। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশে বেড়িবাঁধের ভেতরে নির্মিত হয়। এ সৌধের স্থপতি ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ ও জামি-আল-শফি। তাদের নকশা অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৩ একর জমির ওপর সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ দৃষ্টিনন্দন সৌধটি গড়ে ওঠে। সৌধটির প্রবেশপথ থেকে পুরোটাতেই লাল ইট ব্যবহার করা হয়। সামনের দিকটি কৃষ্ণচূড়া ও বট গাছ দিয়ে সুশোভিত অত্যন্ত নিরিবিলি পরিবেশে অবস্থিত। এ স্মৃতিসৌধের পেছন দিক দিয়ে বয়ে গেছে বুড়িগঙ্গা নদী। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এখানে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন। খোলা থাকে সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর : রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর অবস্থিত। এ জাদুঘর ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ উদ্বোধন হয়। বাঙালির অতীত ঐতিহ্য ও স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাসকে ৬টি গ্যালারির মাধ্যমে এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে। জাদুঘরের প্রবেশমুখেই জ্বলছে ‘শিখা অম্লান’। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন স্মৃতিবিজড়িত অসংখ্য দুর্লভ ছবি। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত অস্ত্র, জামা-কাপড়, বধ্যভূমি থেকে ৭০টি মাথার খুলিসহ ৫ হাজার ৩৯২টি হাড় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে, যা স্মরণ করিয়ে দেবে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতাকে। এই জাদুঘরে কিনতে পাওয়া যাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কিত বই, গানের সিডি এবং ভিডিও চিত্র। শীতকালীন সময়সূচি (অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে। রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ। টিকিটের মূল্য ৫ টাকা।
জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠ : মিরপুর ১০ নং সেকশনের জুটপট্টিতে জল্লাদখানা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম বড় বধ্যভূমি। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ‘জল্লাদখানা’ নামে পরিচিত ওয়াসার এই পরিত্যক্ত পাম্প হাউসে খনন চালিয়ে ৭০টি মাথার খুলি, ৫ হাজার ৩৯২টি অস্থিখণ্ড এবং শহীদদের ব্যবহৃত নানা সামগ্রী পাওয়া যায়। জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে বর্তমানে দেয়াল ঘেঁষে কাচে ঘেরা পাত্রে রাখা আছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার বধ্যভূমির পবিত্র মাটি। দক্ষিণের দেয়ালে পস্তরফলকে লেখা রয়েছে বিভিন্ন জায়গার নাম, যেখানে গণমানুষেরা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছে জীবন। পূর্বপাশে রয়েছে টেরাকোটা ইট ও লোহার সমন্বয়ে তৈরি শিল্পী রফিকুন নবী ও মুনিরুজ্জামানের যৌথভাবে করা একটি ভাস্কর্য। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। প্রবেশে কোনো টিকিট লাগে না।
বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর : ঢাকার বিজয় সরণির এই জাদুঘরে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ পউন্ডার গান, রাশিয়ার তৈরি ১৯৭১ সালে যুদ্ধে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর কাছ থেকে উদ্ধার ট্যাঙ্ক পিটি-৭৬, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ১৭ পাউডার ট্যাঙ্কবিধ্বংসী গান, অষ্টাদশ শতাব্দীর কামান, ব্যারেল ১০০ সিসি ট্যাঙ্ক গান, ১৯৬৭ সালে জার্মানিতে তৈরি কামান ১০৫/৫২ সিএম ক্রুপগান যা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘরে দ্বিতীয় তলায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন জায়গার দলিলপত্র রয়েছে। রয়েছে সামরিক বাহিনীর ব্যাজ, অস্ত্র, পোশাক। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীর কাছে ৯১ হাজার ৫৪৯ সৈন্য আত্মসমর্পণের পর স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক দলিলের প্রতিলিপি। এ জাদুঘর সবার জন্য উন্মুক্ত। জাদুঘরে প্রবেশের জন্য টিকিট লাগে না। সামরিক জাদুঘর শীতকালে সকাল ১০টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ও গ্রীষ্মকালে সকাল ১০.৩০ থেকে বিকাল ৬.৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। বুধবার সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ থাকে জাদুঘর।
জতীয় জাদুঘর : জাতীয় জাদুঘর রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত। এ জাদুঘরের তিন তলায় মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিতে আছে যুদ্ধ-পূর্ব ও যুদ্ধ সময়ের বিভিন্ন স্মারক, তাজউদ্দীনের ভাষণ, গণহত্যার ছবি, সেক্টর কমান্ডারদের ছবি, পোস্টার, মুক্তিযোদ্ধাদের জিনিসপত্র, খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা, বুদ্ধিজীবী ও বীরশ্রেষ্ঠ ডাকটিকিট ইত্যাদি। শনিবার থেকে বুধবার প্রতিদিন সকাল ১০.৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৫.৩০ মিনিট (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) ও ৯.৩০ মিনিট থেকে ৪.৩০ মিনিট (অক্টোবর থেকে মার্চ) এর্ব শুক্রবার বিকাল ৩.৩০ মিনিট থেকে ৭.৩০ মিনিট পর্যন্ত জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটি এবং অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন জাদুঘর বন্ধ থাকে। প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা।
অন্যান্য জাদুঘর : ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু সংগ্রহশালা, বিডিআর সদর দফতরে বাংলাদেশ রাইফেলস জাদুঘর, ঢাকার কুর্মিটোলাস্থ বিজয় নিকেতন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ইত্যাদি নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে নিয়ে যেতে হবে এসব জায়গায়।
ছবি : লেখক
জাতীয় স্মৃতিসৌধ : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকা থেকে ৩৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সাভারে নির্মাণ করা হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ। স্মৃতিসৌধের উচ্চতা ১৫০ ফুট। সাতটি সমদ্বিবাহু ত্রিভুজাকৃতি সমন্বয়ে স্মৃতিসৌধ গঠিত হলেও স্তম্ভগুলোর উচ্চতা ও ভূমির ক্ষেত্রফলে রয়েছে ভিন্নতা। সৌধের স্তম্ভগুলো মাঝখান থেকে মোড়ানো এবং ধারাবাহিকভাবে সাজানো। স্থাপত্যটি পুরোপুরি কনক্রিটের তৈরি। স্মৃতিসৌধের দিকে তাকালেই যেন দৃশ্যমান হয়ে ওঠে ১৯৭১ সালে আমাদের বিজয়ের গৌরবগাথা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও দেশের জন্য অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেয়া লাখো শহীদের মুখ। স্মৃতিসৌধের পুরো কমপ্লেক্সটি ৩৪ হেক্টরজুড়ে (৮৪ একর) বিস্তৃত। স্তম্ভটির সামনে বেশক’টি গণকবর ও একটি প্রতিফলন সৃষ্টিকারী জলাশয় আছে। এই স্মৃতিস্তম্ভের চারদিক ঘিরে রয়েছে সুন্দর গাছপালা, বাগান ও নির্মল বায়ু। পাখির কলকাকলিতে মুখর এই এলাকা অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত থাকে সবসময়। আপনার সন্তানদের নিয়ে গিয়ে বেড়ানোর পাশাপাশি জানাতে পারেন অতীত ইতিহাসের কথা।
রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয় যখন অবশ্যম্ভাবী, ঠিক তখন এদেশের গুণীজন ও বুদ্ধিজীবীদের হাত-পা-চোখ বেঁধে গভীর রাতে রায়েরবাজার ইটখোলার সামনে এনে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। ১৮ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের ক্ষতবিক্ষত লাশ আবিষ্কৃত হয়। অবশেষে দুই যুগেরও বেশি সময় পর ১৯৯৬ সালে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের কাজ শুরু হয় ও শেষ হয় ১৯৯৯ সালে। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশে বেড়িবাঁধের ভেতরে নির্মিত হয়। এ সৌধের স্থপতি ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ ও জামি-আল-শফি। তাদের নকশা অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৩ একর জমির ওপর সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ দৃষ্টিনন্দন সৌধটি গড়ে ওঠে। সৌধটির প্রবেশপথ থেকে পুরোটাতেই লাল ইট ব্যবহার করা হয়। সামনের দিকটি কৃষ্ণচূড়া ও বট গাছ দিয়ে সুশোভিত অত্যন্ত নিরিবিলি পরিবেশে অবস্থিত। এ স্মৃতিসৌধের পেছন দিক দিয়ে বয়ে গেছে বুড়িগঙ্গা নদী। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এখানে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন। খোলা থাকে সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর : রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর অবস্থিত। এ জাদুঘর ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ উদ্বোধন হয়। বাঙালির অতীত ঐতিহ্য ও স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাসকে ৬টি গ্যালারির মাধ্যমে এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে। জাদুঘরের প্রবেশমুখেই জ্বলছে ‘শিখা অম্লান’। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন স্মৃতিবিজড়িত অসংখ্য দুর্লভ ছবি। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত অস্ত্র, জামা-কাপড়, বধ্যভূমি থেকে ৭০টি মাথার খুলিসহ ৫ হাজার ৩৯২টি হাড় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে, যা স্মরণ করিয়ে দেবে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতাকে। এই জাদুঘরে কিনতে পাওয়া যাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কিত বই, গানের সিডি এবং ভিডিও চিত্র। শীতকালীন সময়সূচি (অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে। রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ। টিকিটের মূল্য ৫ টাকা।
জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠ : মিরপুর ১০ নং সেকশনের জুটপট্টিতে জল্লাদখানা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম বড় বধ্যভূমি। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ‘জল্লাদখানা’ নামে পরিচিত ওয়াসার এই পরিত্যক্ত পাম্প হাউসে খনন চালিয়ে ৭০টি মাথার খুলি, ৫ হাজার ৩৯২টি অস্থিখণ্ড এবং শহীদদের ব্যবহৃত নানা সামগ্রী পাওয়া যায়। জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে বর্তমানে দেয়াল ঘেঁষে কাচে ঘেরা পাত্রে রাখা আছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার বধ্যভূমির পবিত্র মাটি। দক্ষিণের দেয়ালে পস্তরফলকে লেখা রয়েছে বিভিন্ন জায়গার নাম, যেখানে গণমানুষেরা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছে জীবন। পূর্বপাশে রয়েছে টেরাকোটা ইট ও লোহার সমন্বয়ে তৈরি শিল্পী রফিকুন নবী ও মুনিরুজ্জামানের যৌথভাবে করা একটি ভাস্কর্য। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। প্রবেশে কোনো টিকিট লাগে না।
বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর : ঢাকার বিজয় সরণির এই জাদুঘরে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ পউন্ডার গান, রাশিয়ার তৈরি ১৯৭১ সালে যুদ্ধে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর কাছ থেকে উদ্ধার ট্যাঙ্ক পিটি-৭৬, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ১৭ পাউডার ট্যাঙ্কবিধ্বংসী গান, অষ্টাদশ শতাব্দীর কামান, ব্যারেল ১০০ সিসি ট্যাঙ্ক গান, ১৯৬৭ সালে জার্মানিতে তৈরি কামান ১০৫/৫২ সিএম ক্রুপগান যা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘরে দ্বিতীয় তলায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন জায়গার দলিলপত্র রয়েছে। রয়েছে সামরিক বাহিনীর ব্যাজ, অস্ত্র, পোশাক। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীর কাছে ৯১ হাজার ৫৪৯ সৈন্য আত্মসমর্পণের পর স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক দলিলের প্রতিলিপি। এ জাদুঘর সবার জন্য উন্মুক্ত। জাদুঘরে প্রবেশের জন্য টিকিট লাগে না। সামরিক জাদুঘর শীতকালে সকাল ১০টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ও গ্রীষ্মকালে সকাল ১০.৩০ থেকে বিকাল ৬.৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। বুধবার সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ থাকে জাদুঘর।
জতীয় জাদুঘর : জাতীয় জাদুঘর রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত। এ জাদুঘরের তিন তলায় মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিতে আছে যুদ্ধ-পূর্ব ও যুদ্ধ সময়ের বিভিন্ন স্মারক, তাজউদ্দীনের ভাষণ, গণহত্যার ছবি, সেক্টর কমান্ডারদের ছবি, পোস্টার, মুক্তিযোদ্ধাদের জিনিসপত্র, খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা, বুদ্ধিজীবী ও বীরশ্রেষ্ঠ ডাকটিকিট ইত্যাদি। শনিবার থেকে বুধবার প্রতিদিন সকাল ১০.৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৫.৩০ মিনিট (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) ও ৯.৩০ মিনিট থেকে ৪.৩০ মিনিট (অক্টোবর থেকে মার্চ) এর্ব শুক্রবার বিকাল ৩.৩০ মিনিট থেকে ৭.৩০ মিনিট পর্যন্ত জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটি এবং অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন জাদুঘর বন্ধ থাকে। প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা।
অন্যান্য জাদুঘর : ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু সংগ্রহশালা, বিডিআর সদর দফতরে বাংলাদেশ রাইফেলস জাদুঘর, ঢাকার কুর্মিটোলাস্থ বিজয় নিকেতন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ইত্যাদি নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে নিয়ে যেতে হবে এসব জায়গায়।
ছবি : লেখক
No comments:
Post a Comment