বেড়ানো : ভারতের পশ্চিমবঙ্গ দেশের বাইরে চেনা পরিবেশ
লিয়াকত হোসেন খোকন
বর্ধমানের দর্শনীয় স্থান হলো—বিজয় তোরণ, শের আফগানের সমাধি, খাজা আবুল কাশেমের স্মৃতিসৌধ, হাওয়া মহল, শিবমন্দির প্রভৃতি।
আসানসোলের কাছেই চুরুলিয়া। এখানের অজয়ের তীরে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মভূমি। তার স্মরণে চুরুলিয়ায় স্থাপিত হয়েছে নজরুল একাডেমি। নজরুলের জন্মবার্ষিকীতে প্রতি বছর এখানে ৭ দিন ধরে মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
বীরভূম জেলায় রয়েছে শান্তিনিকেতন। এখানের মূল আকর্ষণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ জীবনের আবাস ‘উত্তরায়ণ’। শান্তিনিকেতনের জন্মদিন ৭ পৌষ। তখন এখানে উত্সব হয় জাঁকালো—মেলা বসে, আতশবাজি পোড়ে আকাশকে রাঙিয়ে দিয়ে, এরই নাম পৌষ মেলা। ওই সময় বাউলেরাও আসে গ্রাম-গঞ্জ থেকে—তান ধরে, গান গায় তিন দিন তিন রাত মেলার আসরে। আর ঋতুরাজ বসন্তে শান্তিনিকেতনের আরেক আকর্ষণীয় উত্সব—‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’—এটি বসন্তোত্সব বা হোলির সূচনা।
পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী হলো কলকাতা। কলকাতার দর্শনীয় স্থান হলো—টিপু সুলতানের মসজিদ, কালীঘাটের কালীমন্দির, পরেশনাথ মন্দির, নাখোদা মসজিদ, আর্মেনিয়ান চার্চ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, শহীদ মিনার, ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম, ভাসমান জাদুঘর, ফোর্ট উইলিয়াম, বিড়লা মন্দির, রাজভবন, রবীন্দ্র সরোবর, জুওলজিক্যাল গার্ডেন, জোড়া সাঁকোর ঠাকুরবাড়ি, হাইকোর্ট, ময়দান, রবীন্দ্র সেতু, বিদ্যাসাগর সেতু, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বিধান শিশু উদ্যান, দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির, বেলুড় মঠ, আদ্যাপীঠ, বন বিভাগ, নিক্কো পার্ক, বড় বাজার, আকাশ বাণী, বিবাদী বাগ, রাইটার্স বিল্ডিংস, রিজার্ভ ব্যাংক, পোস্টাল মিউজিয়াম, জাতীয় গ্রন্থাগার, নেতাজী মিউজিয়াম, এমপি বিড়লা প্ল্যানেটিরিয়াম, বালিগঞ্জ প্রমথেশ বড়ুয়া সরণি, ঠনঠনিয়া কালীমন্দির, কারবালা মসজিদ, মদন মোহন মন্দির প্রভৃতি আরও কত কী!
প্রাচীনতম মসজিদটি ধর্মতলায় টিপু সুলতানের মসজিদ। মহাত্মা গান্ধী রোড থেকে চিত্পুর ধরে দক্ষিণমুখী ৫ মিনিটের পথে জাকারিয়া স্ট্রিট সংযোগে নাখোদা মসজিদ। এটি কলকাতার বৃহত্তম মসজিদ। আগ্রার সিকান্দ্রাতে তৈরি আকবরের সমাধির আদলে ইন্দো-শৈলীতে লাল বেলে পাথরে রূপ পেয়েছে নাখোদা মসজিদটিতে। একত্রে ১০ হাজার মুসল্লি এখানে নামাজ পড়তে পারেন। পাশেই রয়েছে সিঁদুরিয়া পট্টিতে হাফিজ জালাল উদ্দিনের মসজিদ। আর সুন্দর কারুকার্যময় মানিকতলায় কারবালা মসজিদটিও কিন্তু কম আকর্ষণীয় নয়।
ছবির মতো সাজানো শহর কোচবিহার। অসংখ্য দীঘি-জলাশয় কোচবিহারের বৈশিষ্ট্য। তা ছাড়া এখানে রয়েছে রাজপ্রাসাদ আর মন্দির। কোচবিহার শহরের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় রাজপ্রাসাদের কথা। রোমের সেন্ট পিটার্স চার্চের আদলে গড়া এই রাজপ্রাসাদ তৈরি করেছিলেন রাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ সিংহ। এখানে হাতির মূর্তি-সংবলিত তোরণদ্বারের কারুকাজ কতই না অপূর্ব। প্রাসাদের প্রবেশ পথে রয়েছে ভুটানের রাজাকে যুদ্ধে হারানোর স্মারক দুটি কামান। শীর্ষ গম্বুজের নিচে প্রাসাদের দরবার হলও কম আকর্ষণীয় নয়। রাজপ্রাসাদের সংগ্রহশালায় রয়েছে বিপুল ছবির সম্ভার আর প্রত্নসামগ্রী। রাজপ্রাসাদ দেখে এবার যেতে হবে মদন মোহন মন্দির। মন্দিরের সামনে বৈরাগি দীঘি। বাংলার চিরন্তন চারচালা শৈলীর মন্দির। সোনা আর অষ্টধাতুর তৈরি আসল মদন মোহন বিগ্রহ চুরি গেছে প্রায় ২০ বছর আগে।
রাত যাপন করার জন্য কোচবিহারে রয়েছে ইলোরা হোটেল, রয়্যাল প্যালেস, কোচবিহার হোটেল, ময়ূর হোটেল প্রভৃতি।
জয়ন্তী এক আদর্শ স্থান। কী নেই সেখানে! নদী, পাহাড়, জঙ্গল আর পাখি ছাড়া জয়ন্তীর আরেকটি বড় আকর্ষণ হলো এখানকার স্থানীয় মানুষ। তারা অকপট, আন্তরিক এবং অতিথিবত্সল। জয়ন্তী এমনই এক বিশেষ জায়গা, যেখানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে অনাবিল শান্তি আর নিরিবিলিতে কাটানো যায় কয়েকটা দিন। বন্যপ্রাণী অধ্যুষিত গভীর জঙ্গল যাদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে, তারা জয়ন্তী থেকে বক্সা টাইগার রিজার্ভের অন্দরমহলে যেতে পারেন। জয়ন্তী যেতে হলে প্রথমে আলিপুর দুয়ারে আসতে হবে। কোচবিহার হতে সড়ক পথে বাসে আলিপুর দুয়ার যাওয়া যায়। আলিপুর দুয়ার থেকে সড়ক পথে জয়ন্তীর দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার।
আলিপুর দুয়ারে রাত যাপন করার জন্য রয়েছে হোটেল মা সন্তোষী, হোটেল চিত্রা, হোটেল এলিট, কাঞ্চনজঙ্গা লজ, হোটেল রাজলক্ষ্মী। তবে জয়ন্তীতে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি বেসরকারি লজ রয়েছে।
জলঢাকা ও মূর্তি নদীর মধ্যবর্তী সমতলে গরুমারার বিস্তার। উঁচু বনাঞ্চলে শাল, বহেড়া, জাম, ওদাল, চিকরাশি আর নিচু বনাঞ্চলে শিমুল, শিরীষ আর খয়ের গাছের দেখা মেলে। গরুমারায় রয়েছে—হাতি, গাউর, শূকর, সম্বর, কাঁকর, লেপার্ড, ভল্লুক প্রভৃতি বন্যপ্রাণী। এছাড়া গরুমারা বিখ্যাত একশৃঙ্গী গ নে দ্বিশয্যার ঘর রয়েছে, ভাড়া ১,১০০ টাকা। গরুমারা ইকো ভিলেজ রয়েছে, এখানেও থাকা যায়। এখানে গিয়ে আদিবাসীদের নাচ-গানও দেখা যাবে।
বহরমপুর জেলার মুর্শিদাবাদ ঐতিহাসিক শহর। বাংলা বিহার উড়িষ্যার রাজধানী ছিল নবাব সিরাজউদ্দৌলার আমলে। মুর্শিদাবাদে আকর্ষণীয় যা যা দেখবেন—হাজার দুয়ারি, কাটরা মসজিদ, ঘড়িঘর, ইমামপাড়া, ফুটি মসজিদ, জগেশঠের বাড়ি, কাঠপোলা বাগান, নন্দীপুর রাজবাড়ী, নন্দীপুর আখড়া, নিমক হারাম দেউড়ি, জাফরাগঞ্জ সমাধি, কালো মসজিদ, মোতিঝিল, সিরাজউদ্দৌলার সমাধি, খোশবাগ, রোশনাইবাগ, হীরাঝিল ইত্যাদি।
কৃষ্ণনগরের কাছেই নবদ্বীপ। গৌর গঙ্গার দেশ বলা হয় নবদ্বীপকে। জানা যায়, ভাগীরথীর পাড়ে নবদ্বীপে ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দের দোল পূর্ণিমায় স্ত্রী চৈতন্যদেবের জন্ম। নবদ্বীপে আছে মন্দিরের ছড়াছড়ি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—মহাপ্রভুর বিগ্রহ মন্দির, বুড়ো শিব, হরিসভা, নিত্যানন্দ প্রভুর মন্দির প্রভৃতি। নবদ্বীপের আরেক আকর্ষণ তার রাস উত্সব। নবদ্বীপ ও শান্তিপুরের রাস মেলা সে তো বঙ্গ সংস্কৃতির অঙ্গ। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের রাসে মূর্তি পূজায় বৈচিত্র্য আছে নবদ্বীপে।
মালদহ জেলার আকর্ষণ গৌড় আর পান্ডুয়া। গৌড়ে রয়েছে—পিয়াসবারি, রামকেলি, বারো দুয়ারি, বড় সোনামসজিদ, ফিরোজ মিনার, চিকা মসজিদ, দাতন মসজিদ, লুকোচুরি গেট, লোটন মসজিদ। পূরাণে মেলে সূর্যবংশীয় রাজা মান্ধাতার দৌহিত্র গৌড় এই ভূখ ের রাজা ছিলেন। তার নাম থেকেই স্থানের নাম হয়েছে গৌড়। পান্ডুয়ার দ্রষ্টব্য হলো বড়দরগা, সালামী দরওয়াজা, একলাখী মসজিদ, কুতুবশাহী মসজিদ প্রভৃতি।
জলপাইগুড়ি জেলার আকর্ষণ জলদাপাড়া অভয়ারণ্য। ১১৪ বর্গ কিমি জুড়ে ১৯৪১ সালে গড়ে উঠেছে এই অভয়ারণ্য। এখানের গহীন অরণ্যের মাঝ থেকে বয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী তোরসা। একশৃঙ্গী গ ার, হাতি, সম্বর, চিতাবাঘ রয়েছে এখানের অরণ্যে।
৭১০০ ফুট উঁচুতে দার্জিলিংয়ের অবস্থান। রূপসী দার্জিলিংয়ের তুলনা হয় না। মেঘেরা এখানে কানে কানে কথা কয়। ঘরেতেও হানা দেয় জানালা খোলা পেলে। এখানে সামনেই চিরহরিত্ বর্ণ ঘন পল্লব বিটপীম িত পর্বতরাজি বেষ্টিত দিগন্ত কাঞ্চনজঙ্গা। সারা বছরই বরফে মোড়া দূর থেকে দেখেই এর রূপে পাগলপারা হয়ে ওঠেন ট্যুরিস্টরা।
বাঁকুড়ার আকর্ষণ বিষ্ণুপুর। ১৪ শতকে উনবিংশ মল্লরাজ জগত্মল্ল এখানে এসে রাজধানী গড়েন। সেই মল্লরাজদের ঐতিহাসিক কীর্তিকলাপ, ললিতকলা, টেরাকোঠায় সমৃদ্ধ প্রাচীন বাংলার মন্দির স্থাপত্য পর্যটন মানচিত্রে বিষ্ণুপুরকে আজ অনন্য করে তুলেছে। এখানের পোড়ামাটির ভাস্কর্যের শৈল্পিক আকর্ষণ অনবদ্য। মন্দিরের খিলানগুলিও শিল্পকর্মে সমৃদ্ধ। উল্লেখযোগ্য মন্দির হলো জোড়বাংলা, রাধে শ্যাম মন্দির, শ্রীমন্দির, রাধা লাল জিউর মন্দির প্রভৃতি।
পুরুলিয়া জেলায় রয়েছে অযোধ্যা পাহাড়। বাঁকুড়া থেকে ট্রেনে কিংবা বাসে পুরুলিয়ায় গিয়ে অযোধ্যা পাহাড়ে যাওয়া যায়। সবুজে ছাওয়া-নিথর নিস্তব্ধ অযোধ্যা পাহাড়। শাল-শিরীষ সেগুনে ছাওয়া অরণ্য ভূমি ঋতুভেদে রং বদলায় অযোধ্যায় পাহাড়ে। এখানের পাহাড় ঢালে আদিবাসীদের বাস । পাহাড়ি অরণ্যে হাতি, হরিণ, বন মোরগের দেখা মেলে। মেদিনীপুর জেলার দক্ষিণে রয়েছে সমুদ্রসৈকত দীঘা।
আসানসোলের কাছেই চুরুলিয়া। এখানের অজয়ের তীরে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মভূমি। তার স্মরণে চুরুলিয়ায় স্থাপিত হয়েছে নজরুল একাডেমি। নজরুলের জন্মবার্ষিকীতে প্রতি বছর এখানে ৭ দিন ধরে মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
বীরভূম জেলায় রয়েছে শান্তিনিকেতন। এখানের মূল আকর্ষণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ জীবনের আবাস ‘উত্তরায়ণ’। শান্তিনিকেতনের জন্মদিন ৭ পৌষ। তখন এখানে উত্সব হয় জাঁকালো—মেলা বসে, আতশবাজি পোড়ে আকাশকে রাঙিয়ে দিয়ে, এরই নাম পৌষ মেলা। ওই সময় বাউলেরাও আসে গ্রাম-গঞ্জ থেকে—তান ধরে, গান গায় তিন দিন তিন রাত মেলার আসরে। আর ঋতুরাজ বসন্তে শান্তিনিকেতনের আরেক আকর্ষণীয় উত্সব—‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’—এটি বসন্তোত্সব বা হোলির সূচনা।
পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী হলো কলকাতা। কলকাতার দর্শনীয় স্থান হলো—টিপু সুলতানের মসজিদ, কালীঘাটের কালীমন্দির, পরেশনাথ মন্দির, নাখোদা মসজিদ, আর্মেনিয়ান চার্চ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, শহীদ মিনার, ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম, ভাসমান জাদুঘর, ফোর্ট উইলিয়াম, বিড়লা মন্দির, রাজভবন, রবীন্দ্র সরোবর, জুওলজিক্যাল গার্ডেন, জোড়া সাঁকোর ঠাকুরবাড়ি, হাইকোর্ট, ময়দান, রবীন্দ্র সেতু, বিদ্যাসাগর সেতু, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বিধান শিশু উদ্যান, দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির, বেলুড় মঠ, আদ্যাপীঠ, বন বিভাগ, নিক্কো পার্ক, বড় বাজার, আকাশ বাণী, বিবাদী বাগ, রাইটার্স বিল্ডিংস, রিজার্ভ ব্যাংক, পোস্টাল মিউজিয়াম, জাতীয় গ্রন্থাগার, নেতাজী মিউজিয়াম, এমপি বিড়লা প্ল্যানেটিরিয়াম, বালিগঞ্জ প্রমথেশ বড়ুয়া সরণি, ঠনঠনিয়া কালীমন্দির, কারবালা মসজিদ, মদন মোহন মন্দির প্রভৃতি আরও কত কী!
প্রাচীনতম মসজিদটি ধর্মতলায় টিপু সুলতানের মসজিদ। মহাত্মা গান্ধী রোড থেকে চিত্পুর ধরে দক্ষিণমুখী ৫ মিনিটের পথে জাকারিয়া স্ট্রিট সংযোগে নাখোদা মসজিদ। এটি কলকাতার বৃহত্তম মসজিদ। আগ্রার সিকান্দ্রাতে তৈরি আকবরের সমাধির আদলে ইন্দো-শৈলীতে লাল বেলে পাথরে রূপ পেয়েছে নাখোদা মসজিদটিতে। একত্রে ১০ হাজার মুসল্লি এখানে নামাজ পড়তে পারেন। পাশেই রয়েছে সিঁদুরিয়া পট্টিতে হাফিজ জালাল উদ্দিনের মসজিদ। আর সুন্দর কারুকার্যময় মানিকতলায় কারবালা মসজিদটিও কিন্তু কম আকর্ষণীয় নয়।
ছবির মতো সাজানো শহর কোচবিহার। অসংখ্য দীঘি-জলাশয় কোচবিহারের বৈশিষ্ট্য। তা ছাড়া এখানে রয়েছে রাজপ্রাসাদ আর মন্দির। কোচবিহার শহরের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় রাজপ্রাসাদের কথা। রোমের সেন্ট পিটার্স চার্চের আদলে গড়া এই রাজপ্রাসাদ তৈরি করেছিলেন রাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ সিংহ। এখানে হাতির মূর্তি-সংবলিত তোরণদ্বারের কারুকাজ কতই না অপূর্ব। প্রাসাদের প্রবেশ পথে রয়েছে ভুটানের রাজাকে যুদ্ধে হারানোর স্মারক দুটি কামান। শীর্ষ গম্বুজের নিচে প্রাসাদের দরবার হলও কম আকর্ষণীয় নয়। রাজপ্রাসাদের সংগ্রহশালায় রয়েছে বিপুল ছবির সম্ভার আর প্রত্নসামগ্রী। রাজপ্রাসাদ দেখে এবার যেতে হবে মদন মোহন মন্দির। মন্দিরের সামনে বৈরাগি দীঘি। বাংলার চিরন্তন চারচালা শৈলীর মন্দির। সোনা আর অষ্টধাতুর তৈরি আসল মদন মোহন বিগ্রহ চুরি গেছে প্রায় ২০ বছর আগে।
রাত যাপন করার জন্য কোচবিহারে রয়েছে ইলোরা হোটেল, রয়্যাল প্যালেস, কোচবিহার হোটেল, ময়ূর হোটেল প্রভৃতি।
জয়ন্তী এক আদর্শ স্থান। কী নেই সেখানে! নদী, পাহাড়, জঙ্গল আর পাখি ছাড়া জয়ন্তীর আরেকটি বড় আকর্ষণ হলো এখানকার স্থানীয় মানুষ। তারা অকপট, আন্তরিক এবং অতিথিবত্সল। জয়ন্তী এমনই এক বিশেষ জায়গা, যেখানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে অনাবিল শান্তি আর নিরিবিলিতে কাটানো যায় কয়েকটা দিন। বন্যপ্রাণী অধ্যুষিত গভীর জঙ্গল যাদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে, তারা জয়ন্তী থেকে বক্সা টাইগার রিজার্ভের অন্দরমহলে যেতে পারেন। জয়ন্তী যেতে হলে প্রথমে আলিপুর দুয়ারে আসতে হবে। কোচবিহার হতে সড়ক পথে বাসে আলিপুর দুয়ার যাওয়া যায়। আলিপুর দুয়ার থেকে সড়ক পথে জয়ন্তীর দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার।
আলিপুর দুয়ারে রাত যাপন করার জন্য রয়েছে হোটেল মা সন্তোষী, হোটেল চিত্রা, হোটেল এলিট, কাঞ্চনজঙ্গা লজ, হোটেল রাজলক্ষ্মী। তবে জয়ন্তীতে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি বেসরকারি লজ রয়েছে।
জলঢাকা ও মূর্তি নদীর মধ্যবর্তী সমতলে গরুমারার বিস্তার। উঁচু বনাঞ্চলে শাল, বহেড়া, জাম, ওদাল, চিকরাশি আর নিচু বনাঞ্চলে শিমুল, শিরীষ আর খয়ের গাছের দেখা মেলে। গরুমারায় রয়েছে—হাতি, গাউর, শূকর, সম্বর, কাঁকর, লেপার্ড, ভল্লুক প্রভৃতি বন্যপ্রাণী। এছাড়া গরুমারা বিখ্যাত একশৃঙ্গী গ নে দ্বিশয্যার ঘর রয়েছে, ভাড়া ১,১০০ টাকা। গরুমারা ইকো ভিলেজ রয়েছে, এখানেও থাকা যায়। এখানে গিয়ে আদিবাসীদের নাচ-গানও দেখা যাবে।
বহরমপুর জেলার মুর্শিদাবাদ ঐতিহাসিক শহর। বাংলা বিহার উড়িষ্যার রাজধানী ছিল নবাব সিরাজউদ্দৌলার আমলে। মুর্শিদাবাদে আকর্ষণীয় যা যা দেখবেন—হাজার দুয়ারি, কাটরা মসজিদ, ঘড়িঘর, ইমামপাড়া, ফুটি মসজিদ, জগেশঠের বাড়ি, কাঠপোলা বাগান, নন্দীপুর রাজবাড়ী, নন্দীপুর আখড়া, নিমক হারাম দেউড়ি, জাফরাগঞ্জ সমাধি, কালো মসজিদ, মোতিঝিল, সিরাজউদ্দৌলার সমাধি, খোশবাগ, রোশনাইবাগ, হীরাঝিল ইত্যাদি।
কৃষ্ণনগরের কাছেই নবদ্বীপ। গৌর গঙ্গার দেশ বলা হয় নবদ্বীপকে। জানা যায়, ভাগীরথীর পাড়ে নবদ্বীপে ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দের দোল পূর্ণিমায় স্ত্রী চৈতন্যদেবের জন্ম। নবদ্বীপে আছে মন্দিরের ছড়াছড়ি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—মহাপ্রভুর বিগ্রহ মন্দির, বুড়ো শিব, হরিসভা, নিত্যানন্দ প্রভুর মন্দির প্রভৃতি। নবদ্বীপের আরেক আকর্ষণ তার রাস উত্সব। নবদ্বীপ ও শান্তিপুরের রাস মেলা সে তো বঙ্গ সংস্কৃতির অঙ্গ। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের রাসে মূর্তি পূজায় বৈচিত্র্য আছে নবদ্বীপে।
মালদহ জেলার আকর্ষণ গৌড় আর পান্ডুয়া। গৌড়ে রয়েছে—পিয়াসবারি, রামকেলি, বারো দুয়ারি, বড় সোনামসজিদ, ফিরোজ মিনার, চিকা মসজিদ, দাতন মসজিদ, লুকোচুরি গেট, লোটন মসজিদ। পূরাণে মেলে সূর্যবংশীয় রাজা মান্ধাতার দৌহিত্র গৌড় এই ভূখ ের রাজা ছিলেন। তার নাম থেকেই স্থানের নাম হয়েছে গৌড়। পান্ডুয়ার দ্রষ্টব্য হলো বড়দরগা, সালামী দরওয়াজা, একলাখী মসজিদ, কুতুবশাহী মসজিদ প্রভৃতি।
জলপাইগুড়ি জেলার আকর্ষণ জলদাপাড়া অভয়ারণ্য। ১১৪ বর্গ কিমি জুড়ে ১৯৪১ সালে গড়ে উঠেছে এই অভয়ারণ্য। এখানের গহীন অরণ্যের মাঝ থেকে বয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী তোরসা। একশৃঙ্গী গ ার, হাতি, সম্বর, চিতাবাঘ রয়েছে এখানের অরণ্যে।
৭১০০ ফুট উঁচুতে দার্জিলিংয়ের অবস্থান। রূপসী দার্জিলিংয়ের তুলনা হয় না। মেঘেরা এখানে কানে কানে কথা কয়। ঘরেতেও হানা দেয় জানালা খোলা পেলে। এখানে সামনেই চিরহরিত্ বর্ণ ঘন পল্লব বিটপীম িত পর্বতরাজি বেষ্টিত দিগন্ত কাঞ্চনজঙ্গা। সারা বছরই বরফে মোড়া দূর থেকে দেখেই এর রূপে পাগলপারা হয়ে ওঠেন ট্যুরিস্টরা।
বাঁকুড়ার আকর্ষণ বিষ্ণুপুর। ১৪ শতকে উনবিংশ মল্লরাজ জগত্মল্ল এখানে এসে রাজধানী গড়েন। সেই মল্লরাজদের ঐতিহাসিক কীর্তিকলাপ, ললিতকলা, টেরাকোঠায় সমৃদ্ধ প্রাচীন বাংলার মন্দির স্থাপত্য পর্যটন মানচিত্রে বিষ্ণুপুরকে আজ অনন্য করে তুলেছে। এখানের পোড়ামাটির ভাস্কর্যের শৈল্পিক আকর্ষণ অনবদ্য। মন্দিরের খিলানগুলিও শিল্পকর্মে সমৃদ্ধ। উল্লেখযোগ্য মন্দির হলো জোড়বাংলা, রাধে শ্যাম মন্দির, শ্রীমন্দির, রাধা লাল জিউর মন্দির প্রভৃতি।
পুরুলিয়া জেলায় রয়েছে অযোধ্যা পাহাড়। বাঁকুড়া থেকে ট্রেনে কিংবা বাসে পুরুলিয়ায় গিয়ে অযোধ্যা পাহাড়ে যাওয়া যায়। সবুজে ছাওয়া-নিথর নিস্তব্ধ অযোধ্যা পাহাড়। শাল-শিরীষ সেগুনে ছাওয়া অরণ্য ভূমি ঋতুভেদে রং বদলায় অযোধ্যায় পাহাড়ে। এখানের পাহাড় ঢালে আদিবাসীদের বাস । পাহাড়ি অরণ্যে হাতি, হরিণ, বন মোরগের দেখা মেলে। মেদিনীপুর জেলার দক্ষিণে রয়েছে সমুদ্রসৈকত দীঘা।
No comments:
Post a Comment