বর্ষায় সুন্দরবন
০০ আলোকচিত্র ও লেখা মুস্তাফিজ মামুন ০০
মেঘের লুকোচুরির মধ্যেই মংলা থেকে আমাদের নিয়ে নোঙ্গর তুলল এমভি ভেলা। পশুরের বুক চিড়ে চলছি আমরা। শত শত জেলে নৌকা নদীতে মাছ ধরতে ব্যস্ত। ঢাংমারী ফরেস্ট স্টেশনে প্রয়োজনীয় ফরমালিটিজ সেরে বনরক্ষী নিয়ে চলছি আমরা। চলতে চলতে পশুরকে পেছনে ফেলে ঢুকে পড়ি ছোট খালে। দুই পাশে ঘন জঙ্গল, মাঝে ছোট খাল দিয়ে চলছে আমাদের ভেলা। লঞ্চের আগে আগে লাফিয়ে চলছিল ডলফিনের দল।
বর্ষাকাল। বৃষ্টির ছোঁয়ায় বনের পাতায় প্রাণ ফিরে এসেছে- সবুজ আরো সবুজ হয়েছে। দিনভর অাঁকাবাঁকা খাল পেরিয়ে বিকেলে এসে ভেলা আমাদের নিয়ে পেঁৗছায় কটকা। লঞ্চ থেকে নেমে কটকার বনে হাঁটছি সবাই। চিত্রা হরিণের দল আমাদের আগমন টের পেয়ে গেছে। নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে উঁকিঝুঁকি মেরে আমাদের দেখার চেষ্টা করছে। ম্যানগ্রোভের ফাঁকে ফাঁকে হাঁটছি সবাই। সামনে পেছনে বন্দুকহাতে প্রহরী। হঠাৎ বনের মধ্যে শুরু হলো বৃষ্টি। ক্যামেরায় রেইনকোট লাগিয়ে ছাতা মাথায় বনের মধ্যে বৃষ্টি উপভোগের চেষ্টা। সহযাত্রীদের অনেকেই তড়িঘড়ি করে লঞ্চে ফিরে গেলেও আমরা কয়েক জন বনের ধারে বৃষ্টি উপভোগের জন্য কিছুটা সময় থেকে গেলাম এক প্রহরীকে নিয়ে।
কটকা খালে নোঙ্গর করে রাত কাটালাম আমরা। সারা রাত থেমে বৃষ্টি। সকাল বেলা উঠে দেখি আকাশ পরিষ্কার। সূর্য ওঠার আগেই সবাই বেড়িয়ে পড়ি নৌকাযোগে ওয়াইল্ড লাইফ দেখতে। ছোট খাড়িতে ঢুকে আমাদের নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ করে দেয়া হলো। নিঃশ্বব্দে এবার বৈঠা দিয়ে চালানো হচ্ছে নৌকা। এরই মধ্যে সূর্য উঠেছে। গাছের পাতা ভেদ করে সূর্যের নরম আলো এসে আমাদের শরীরে লাগছে। বনের নিস্তব্ধতা ভেঙে ডেকে চলছে বন মোরগ। গাছের ডালে বসে থাকা মাছরাঙাগুলো আমাদের উপস্থিতি জানতে পেরে এডাল-ওডাল ওড়াউড়ি করছে। গোলপাতার ফাঁকে মাথা গুঁজে আমাদের দেখতে চেষ্টা করছে ছোট্ট হরিণ শাবক। বাচ্চা কোলে গাছের ডালে বসে আছে বানর। দু ঘণ্টা নৌকায় ঘুরে নানা বন্যপ্রাণী দেখা হলো। লঞ্চে এসে তারাহুড়া করে সকালের নাস্তা সেরে আবারো বেড়িয়ে পড়ি সবাই। টাইগার পটয়েন্ট ধরে হাঁটতে হাঁটতে এবার জামতলা সৈকতে যাবার পালা। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম না যাবার। এ সৈকতে বহুবার এসেছি। তাই আমার কাছে এর আকর্ষণটা একটু কমই। তারচেয়ে পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠে চুপচাপ বসে থাকাই আমার শ্রেয় মনে হলো। যদি বাড়তি কিছু ওয়াইল্ডলাইফ চোখে পড়ে। টাওয়ারে উঠে দু চোখ মেলে চুপ চাপ বসে রইলাম। ধীরে ধীরে ঘাসের ফাঁকে ফাঁকে বের হতে লাগল চিত্রা হরিণের দল। সমুদ্র থেকে ফেরার পথে আমি আবার মিশে গেলাম দলের সঙ্গে।
দুপুরের পরে আমাদের লঞ্চ নোঙ্গর তুলল কচিখালির উদ্দেশ্যে। কটকা থেকে কচিখালি যাবার জন্য বনের ভেতরের পথটিই বেছে নিলেন আমাদের গাইড। চলতে চলতে ক্রমশ আমরা ছোট খালে ঢুকে পড়ি। নির্জন বনের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমরা চলতে থাকি। হঠাৎ আকাশ কালো হয়ে আসে। অঝোর ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়। লঞ্চের মাস্টার গতি কমিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে চলতে থাকেন। আমরা উপভোগ করতে থাকি সুন্দরবনের বৃষ্টি।
সুন্দরবনে কখনো বৃষ্টি দেখিনি। সে এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। বনের নির্জনতার মাঝে বৃষ্টি যে কতটা উপভোগ্য হতে পারে তা বুঝতে পারলাম সুন্দরবনের সুন্দর বৃষ্টি দেখে।
বর্ষায় সুন্দরবনে এরকম ভ্রমণের আয়োজন করে থাকে বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থা দ্য বেঙ্গল টু্যরস। বর্ষাকালের সুন্দরবন ভ্রমণের আয়োজনটি তারা সম্পন্ন করে থাকে তাদের ২৬ আসনের দ্বিতল ভ্রমণতরী এমভি ভেলা'র মাধ্যমে। ঢাকা থেকে এসি বাসে খুলনা, সেখান থেকে এমভি ভেলায় করে সুন্দরবন। লঞ্চের কেবিনে দ্বৈতাবাসিক অবস্থান। পাঁচ রাত চারদিনের এ ভ্রমণে জনপ্রতি খরচ নয় হাজার টাকা, বিদেশিদের জন্য এগারো হাজার টাকা। দুই থেকে বারো বছরের শিশুদের জন্য ৩০ ভাগ ছাড়। প্যাকেজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ভ্রমণকালীন খাবার, সুন্দরবনে প্রবেশ, গাইড সার্ভিস, আর্মস গার্ড, ঢাকা-ঢাকা যাতায়াত ইত্যাদি। যোগাযোগ- দ্য বেঙ্গল টু্যরস, বাড়ি ৪৫, সড়ক ২৭, ব্লক এ, বনানী, ঢাকা। ফোন ৮৮৩৪৭১৬, ৮৮৫৭৪২৪।
বর্ষাকাল। বৃষ্টির ছোঁয়ায় বনের পাতায় প্রাণ ফিরে এসেছে- সবুজ আরো সবুজ হয়েছে। দিনভর অাঁকাবাঁকা খাল পেরিয়ে বিকেলে এসে ভেলা আমাদের নিয়ে পেঁৗছায় কটকা। লঞ্চ থেকে নেমে কটকার বনে হাঁটছি সবাই। চিত্রা হরিণের দল আমাদের আগমন টের পেয়ে গেছে। নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে উঁকিঝুঁকি মেরে আমাদের দেখার চেষ্টা করছে। ম্যানগ্রোভের ফাঁকে ফাঁকে হাঁটছি সবাই। সামনে পেছনে বন্দুকহাতে প্রহরী। হঠাৎ বনের মধ্যে শুরু হলো বৃষ্টি। ক্যামেরায় রেইনকোট লাগিয়ে ছাতা মাথায় বনের মধ্যে বৃষ্টি উপভোগের চেষ্টা। সহযাত্রীদের অনেকেই তড়িঘড়ি করে লঞ্চে ফিরে গেলেও আমরা কয়েক জন বনের ধারে বৃষ্টি উপভোগের জন্য কিছুটা সময় থেকে গেলাম এক প্রহরীকে নিয়ে।
কটকা খালে নোঙ্গর করে রাত কাটালাম আমরা। সারা রাত থেমে বৃষ্টি। সকাল বেলা উঠে দেখি আকাশ পরিষ্কার। সূর্য ওঠার আগেই সবাই বেড়িয়ে পড়ি নৌকাযোগে ওয়াইল্ড লাইফ দেখতে। ছোট খাড়িতে ঢুকে আমাদের নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ করে দেয়া হলো। নিঃশ্বব্দে এবার বৈঠা দিয়ে চালানো হচ্ছে নৌকা। এরই মধ্যে সূর্য উঠেছে। গাছের পাতা ভেদ করে সূর্যের নরম আলো এসে আমাদের শরীরে লাগছে। বনের নিস্তব্ধতা ভেঙে ডেকে চলছে বন মোরগ। গাছের ডালে বসে থাকা মাছরাঙাগুলো আমাদের উপস্থিতি জানতে পেরে এডাল-ওডাল ওড়াউড়ি করছে। গোলপাতার ফাঁকে মাথা গুঁজে আমাদের দেখতে চেষ্টা করছে ছোট্ট হরিণ শাবক। বাচ্চা কোলে গাছের ডালে বসে আছে বানর। দু ঘণ্টা নৌকায় ঘুরে নানা বন্যপ্রাণী দেখা হলো। লঞ্চে এসে তারাহুড়া করে সকালের নাস্তা সেরে আবারো বেড়িয়ে পড়ি সবাই। টাইগার পটয়েন্ট ধরে হাঁটতে হাঁটতে এবার জামতলা সৈকতে যাবার পালা। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম না যাবার। এ সৈকতে বহুবার এসেছি। তাই আমার কাছে এর আকর্ষণটা একটু কমই। তারচেয়ে পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠে চুপচাপ বসে থাকাই আমার শ্রেয় মনে হলো। যদি বাড়তি কিছু ওয়াইল্ডলাইফ চোখে পড়ে। টাওয়ারে উঠে দু চোখ মেলে চুপ চাপ বসে রইলাম। ধীরে ধীরে ঘাসের ফাঁকে ফাঁকে বের হতে লাগল চিত্রা হরিণের দল। সমুদ্র থেকে ফেরার পথে আমি আবার মিশে গেলাম দলের সঙ্গে।
দুপুরের পরে আমাদের লঞ্চ নোঙ্গর তুলল কচিখালির উদ্দেশ্যে। কটকা থেকে কচিখালি যাবার জন্য বনের ভেতরের পথটিই বেছে নিলেন আমাদের গাইড। চলতে চলতে ক্রমশ আমরা ছোট খালে ঢুকে পড়ি। নির্জন বনের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমরা চলতে থাকি। হঠাৎ আকাশ কালো হয়ে আসে। অঝোর ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়। লঞ্চের মাস্টার গতি কমিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে চলতে থাকেন। আমরা উপভোগ করতে থাকি সুন্দরবনের বৃষ্টি।
সুন্দরবনে কখনো বৃষ্টি দেখিনি। সে এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। বনের নির্জনতার মাঝে বৃষ্টি যে কতটা উপভোগ্য হতে পারে তা বুঝতে পারলাম সুন্দরবনের সুন্দর বৃষ্টি দেখে।
বর্ষায় সুন্দরবনে এরকম ভ্রমণের আয়োজন করে থাকে বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থা দ্য বেঙ্গল টু্যরস। বর্ষাকালের সুন্দরবন ভ্রমণের আয়োজনটি তারা সম্পন্ন করে থাকে তাদের ২৬ আসনের দ্বিতল ভ্রমণতরী এমভি ভেলা'র মাধ্যমে। ঢাকা থেকে এসি বাসে খুলনা, সেখান থেকে এমভি ভেলায় করে সুন্দরবন। লঞ্চের কেবিনে দ্বৈতাবাসিক অবস্থান। পাঁচ রাত চারদিনের এ ভ্রমণে জনপ্রতি খরচ নয় হাজার টাকা, বিদেশিদের জন্য এগারো হাজার টাকা। দুই থেকে বারো বছরের শিশুদের জন্য ৩০ ভাগ ছাড়। প্যাকেজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ভ্রমণকালীন খাবার, সুন্দরবনে প্রবেশ, গাইড সার্ভিস, আর্মস গার্ড, ঢাকা-ঢাকা যাতায়াত ইত্যাদি। যোগাযোগ- দ্য বেঙ্গল টু্যরস, বাড়ি ৪৫, সড়ক ২৭, ব্লক এ, বনানী, ঢাকা। ফোন ৮৮৩৪৭১৬, ৮৮৫৭৪২৪।
No comments:
Post a Comment