Search This Blog

FCO Travel Advice

Bangladesh Travel Advice

AFRICA Travel Widget

Asia Travel Widget

Sunday, December 5, 2010

সাতছড়ির বনে

সাতছড়ির বনে

০০ আলোকচিত্র ও লেখা মুস্তাফিজ মামুন ০০

সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। রঘুনন্দন পার্বত্য বনভূমিতে সংরক্ষিত এ বনাঞ্চলের বিস্তৃতি প্রায় ২৪৩ হেক্টর। উদ্যানটির গোড়ার ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, জুমচাষ করতে করতে এক সময় রঘুনন্দন পাহাড়ের বনভূমি শেষ হয়ে যায়। পরে ১৯০০ সালের দিকে কাঠ উৎপাদনের জন্য প্রচুর গাছ লাগানো হয় পাহাড়ি এ অঞ্চলে। এরপরে ১৯১৪ সালে সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে সরকারের খাতায় নাম লেখায় জায়গাটি। এর দীর্ঘকাল পরে ২০০৫ সালে এ এলাকার নির্দিষ্ট কিছু জায়গা নিয়ে জাতীয় এ উদ্যানটির প্রতিষ্ঠা। সাতছড়ি অর্থ সাতটি ছড়া, অর্থাৎ পাহাড়ি ঝরণা। এসব ছড়ার কোনো কোনটির দেখা মেলে আজও।



রাজধানী থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত জাতীয় এ উদ্যানটিতে জীববৈচিত্র্যের কমতি নেই। উদ্যানের বাসিন্দা প্রায় ১৯৭ প্রজাতির জীবের মধ্যে ১৪৯ প্রজাতিই পাখি। সাতছড়িকে তাই পাখির রাজ্য বললেও কমবেশি বলা হবে না। এছাড়া ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৬ প্রজাতির উভচর প্রাণীর সন্ধান মিলেছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে। মুখপোড়া হনুমান, চশমা হনুমান, উলস্নুক, লজ্জ্বাবতী বানর, কুলু বানরের মতো বিরল প্রাণীর দেখা মেলে এ উদ্যানে। এছাড়া মায়া হরিণ, খিদির শুকর, বন্য শুকর, বেজি, গন্ধ গোকুল, বনবিড়াল, মেছো বাঘ, কটকটি ব্যাঙ, গেছো ব্যাঙ, গিরগিটি, বিভিন্ন রকমের সাপ, গুঁইশাপ প্রভৃতি রয়েছে এ বনে। ফিঙ্গে, কাঠঠোকরা, মথুরা, বনমোরগ, ধনেশ, লাল ট্রগন, পেঁচা, সুই চোরা এ বনের উলেস্নখযোগ্য পাখি।

পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে তিনটি ট্রেইল পথ আছে। একটি আধা ঘণ্টার, অন্যটি এক ঘণ্টার এবং আরেকটি তিন ঘন্টার হাঁটাপথ।

আধা ঘণ্টার হাঁটা পথটির শুরু সাতছড়ি রেঞ্জ কার্যালয়ের প্রবেশপথের কাছাকছি প্রধান সড়কের পাশে 'ওয়াইল্ডারনেস এরিয়া' লেখা বোর্ডের কাছ থেকে। সড়কের দক্ষিণ দিকে পথের শুরু হয়ে চক্রাকারে ঘুরে আবার একই জায়গায় এসে পথটি ইতি টেনেছে। সাতছড়ি উদ্যানের ভেতরে একমাত্র ত্রিপুরা বা টিপরা আদিবাসী পাড়াটিতে এ পথেই যেতে হবে।

এক ঘণ্টার হাঁটাপথটির শুরু আগের ট্রেইলটি অর্থাৎ আধাঘণ্টার পথ ধরে। এ পথের শুরুতে ডানদিকে প্রথম যে বাঁকটি টিপরা পাড়ার দিকে গেছে, সেদিকে না গিয়ে আরো কিছুটা পথ চলে দ্বিতীয় বাঁকটি ধরে চলতে হবে। একটু সকালের দিকে এবং নিরবতা বজায় রাখলে এ পথে দেখা মিলতে পারে উলস্নুকের মতো বিপন্ন প্রাণী।

তিন ঘণ্টার হাঁটাপথটির দৈর্ঘ্য প্রায় ছয় কিলোমিটার। অন্য দুটি পথের পাশ থেকেই এটিরও শুরু। তবে শেষ হয়েছে পূর্ব দিকের চাকলাপুঞ্জি চাবাগানের কাছাকাছি প্রধান সড়কে এসে। এ পথটির বেশিরভাগই শুকনা ছড়াপথ। উলস্নুক, চশমা হনুমান, মুখপোড়া হনুমানসহ নানান পাখির দেখা মিলতে পারে এ পথে।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানটির মধ্যে যে টিপরা পাড়াটি আছে, সেখানে আদিবাসী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ২৪টি পরিবারের বসবাস। বন দেখার সঙ্গে সঙ্গে এখানে দেখে আসতে পারেন এ আদিবাসীদের জীবনধারা।

এছাড়া সাতছড়ির আশপাশে বেশ কটি চাবাগানও আছে। এখানকার উলেস্নখযোগ্য বাগানগুলো হলো সাতছড়ি, লালচান্দ, দেউন্দি, লস্করপুর, চণ্ডিছড়া, চাকলাপুঞ্জি, চান্দপুর, নালুয়া, শ্রীবাড়ি, দারাগাঁও, রেমা, পারকুল প্রভৃতি। এই চাবাগানগুলোর সৌন্দর্যও অবর্ণনীয়। এ সময়ে গেলে দেখতে পাবেন চা-শ্রমিকদের পাতা তোলার কৌশল।

সাতছড়ি উদ্যানে খরচপাতি

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে প্রবেশের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক জনপ্রতি ২০ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও ছাত্র জনপ্রতি ১০ টাকা, বিদেশিদের জন্য ৫ ইউএস ডলারের সমমূল্যের টাকা। উদ্যানের বনভোজনকেন্দ্র ব্যবহার করতে চাইলে জনপ্রতি ১০ টাকা হিসেবে দিতে হবে। এছাড়া কার, জিপ ও মাইক্রোবাস পার্কিং ২৫ টাকা। উদ্যানের নির্ধারিত গাইড সেবা পাওয়া যাবে ১৫০-৩০০ টাকা ঘণ্টায়।

কিভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে সাতছড়ি যাবার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো সিলেটগামী যে কোনো বাসে মাধবপুর মুক্তিযোদ্ধাচত্ত্বরে নেমে সেখান থেকে বাস কিংবা ম্যাক্সিতে চড়ে একেবারে উদ্যানের দুয়ারে যাওয়া যায়। এছাড়া ঢাকা থেকে রেল ও সড়কপথে হবিগঞ্জ গিয়ে, সেখান থেকেও সাতছড়ি আসা যায়। ট্রেনে হবিগঞ্জ যেতে হলে নামতে হবে সায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে। স্টেশন থেকে শহরের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬.৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, দুপুর ২.০০ মিনিটে প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাাহের প্রতিদিন রাত ১০.০০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া এসি সিট ২৯৯ টাকা, প্রথম শ্রেণী বার্থ ২৬০ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ১৭৫ টাকা, সি্নগ্ধা শ্রেণী ৩০৫ টাকা, শোভন চেয়ার ১২০ টাকা, শোভন ৯৫ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮.১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯.০০ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া প্রথমশ্রেণী বার্থ ৩৩৫ টাকা, প্রথমশ্রেণী সিট ২২৫ টাকা, সি্নগ্ধা শ্রেণী ৩৯৭ টাকা, শোভন চেয়ার ১৫৫ টাকা, শোভন ১৪০ টাকা। ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে অগ্রদূত পরিবহন (০১৭১৬০৩৮৬৯), দিগন্ত পরিবহন (০১৭১১৩২৯৯৪৪) এবং বিছমিলস্নাহ পরিবহন (০১৭১১৯০৮৬৮৪) হবিগঞ্জ যায় । ভাড়া এসি ২৫০ টাকা এবং নন-এসি ২০০ টাকা। হবিগঞ্জ সদর থেকে বাসে চড়ে আসা যায় সাতছড়ি।

কোথায় থাকবেন :ঢাকা থেকে দিনে দিনেই সাতছড়ি বেড়িয়ে আসা সম্ভব। তবে থাকতে চাইলে সারাদিন ঘুরে হবিগঞ্জ শহরে গিয়ে থাকা যাবে। সেজন্য খুব সকালে সিলেটের যে কোনো বাসে এসে মাধবপুরের মুক্তিযোদ্ধাচত্ত্বরে নেমে সাতছড়ি আসতে হবে। তবে ফিরতি পথে হবিগঞ্জ হয়ে ফেরাই উত্তম। কারণ মুক্তিযোদ্ধা চত্ত্বরে ঢাকাগামী ভালো বাস স্টপেজ দেয় না। আর হবিগঞ্জ শহরে থাকার জন্য কয়েকটি সাধারণ মানের হোটেল আছে। হোটেল সোনার তরী (০১৭১১২৩৩৩৩২, এসি দ্বৈত কক্ষ ৭০০ টাকা, নন-এসি একক কক্ষ ৩০০ টাকা, নন-এসি দ্বৈত কক্ষ ৩৫০ টাকা), হোটেল জামিল (০১৭১৮৭৯২১৭৪, এসি দ্বৈত কক্ষ ৭০০ টাকা, নন-এসি একক কক্ষ ৩০০ টাকা, নন-এসি দ্বৈত কক্ষ ৪০০ টাকা)।

জরুরি প্রয়োজনে : আধুনিক সদর হাসপাতাল ০১৭৩০৩২৪৮১৭, চুনারুাঘাট উপজেলা স্বাস্থ্যকমপেস্নক্স ০১৭৩০৩২৪৭৩১, পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ০৮৩১-৫২২৫৭, সদর থানা ০৮৩১-৫২২২৩, চুনারুঘাট থানা (০৮৩২৫-৫৬০০২, ০১৭১৩-৩৭৪৪০০)।

No comments:

Post a Comment