Search This Blog

FCO Travel Advice

Bangladesh Travel Advice

AFRICA Travel Widget

Asia Travel Widget

Friday, December 31, 2010

ঘুরে আসুন সুন্দরবনে:

ঘুরে আসুন সুন্দরবনে:

সুন্দরবনের প্রতিটি মুহূর্ত যেন রহস্য ও রোমাঞ্চঘেরা। একদিকে অ্যাডভেঞ্চার অন্যদিকে ভয় ও শিহরণ। জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ। প্রকৃতির অকৃপণ হাতের সৃষ্টি। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, সাপ, বানর, মাছসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী পৃথিবী বিখ্যাত।

পর্যটকদের কাছে সুন্দরবনের আকর্ষণ তাই দুর্নিবার। পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম হতে পারে সুন্দরবন। আর তাই ভোটিংয়ে বার বার সুন্দরবনের নাম চলে আসছে শীর্ষ তালিকায়।

কী আছে সুন্দরবনে?
কী নেই সুন্দরবনে? জগদ্বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, বনমোরগ, শূকর, হরেক রকম বানর, অজগর, বহু প্রজাতির পাখি, অপরূপ লতাগুল্ম ও বৃক্ষরাজি নদীতে নানা প্রজাতির মাছ রয়েছে। গাছের মধ্যে সুন্দরী, কেওড়া, গরান, বাইন, গেওয়া, পশুর, গোলপাতা, হেতাল, কাঁকড়া, ঝানা, সিংড়া, খলসা ইত্যাদি।

নদীতে নানা প্রজাতির মাঝে কুমির ও ভয়াল অজগরসহ প্রায় ৩৩ প্রজাতির সরীসৃপ বাস করে সুন্দরবনে। এছাড়াও শীতকালে অসংখ্য অতিথি পাখির আগমন ঘটে সুন্দরবন অঞ্চলে। প্রকৃতির নিজ হাতে গড়া সুন্দরবনের এই অপরূপ সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করে। সুন্দরবনে সুন্দরী গাছের প্রাচুর্য থেকে বা এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে এর নামকরণ করা হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন।

সুন্দরবন মানুষের দেওয়া নাম। বাংলাদেশের দক্ষিণসীমায় অবস্থিত সমুদ্রকূলবর্তী জঙ্গলাকীর্ণ ভূভাগই সুন্দরবন। সুন্দরবনের নরখাদক নামের বইতে বলা হয়েছে প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে গাঙ্গেয় বদ্বীপে এ বনের সৃষ্টি। নিকোলাসপাই মেন্টা নামের বিখ্যাত একজন পর্যটকের ভ্রমণ কাহিনীতেও এ বনের নাম উল্লেখ রয়েছে

সুন্দরবনের সীমা ও অবস্থান
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে খুলনা-বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার সাতটি থানা এলাকায় সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার। বঙ্গোপসাগরের তীরে ৮৯ ডিগ্রি থেকে ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ ও ২১.০৩ ডিগ্রি হতে ২২.৩০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের মাঝে সুন্দরবন অবস্থিত

এর মধ্যে বন প্রায় ৪০১৬.৮৫ বর্গ কিলোমিটার, নদী খাল ও অন্যান্য চ্যানেল ১৭৫৬ বর্গ কিলোমিটার। সুন্দরবনের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে রায়মঙ্গল, হাড়িয়াডাঙ্গা ও কালিন্দি নদী। উত্তরে বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা, পূর্বে ধলেশ্বর ও হরিণঘাটা নদী, পিরোজপুর ও বরিশাল জেলা।

সুন্দরবনের আকর্ষণ
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। ক্যামেরার সাহায্যে বন্যজন্তুর ছবি তোলার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে পৃথিবী বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ ছাড়াও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর দর্শন সহজলভ্য। তবে নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই বিবেচ্য।

জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালদের সঙ্গে দেখা ও কথা বলার সুযোগ পেতে পারেন অনায়াসেই। রাতে সুন্দরবনের শান্ত স্নিগ্ধ রূপ আর নদী সমুদ্রের সৌন্দর্য অপরূপ। এসব ছাড়াও সুন্দরবনের আশপাশে রয়েছে অসংখ্য পর্যটন আকর্ষক স্থানসমূহ।

হিরণ পয়েন্ট
হিরণ পয়েন্ট পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম স্থান। ভাগ্যে থাকলে এখান থেকে বাঘ, হরিণ ও নানাজাতের পশুপাখি দর্শনের সুযোগ পেতে পারেন। এখানে বানর, কুমির ছাড়াও নানা প্রজাতির পাখি দেখতে পারবেন। প্রকৃতির নানা সৌন্দর্য যেন ছড়িয়ে রয়েছে এর আশপাশে।

কটকা-কচিখালি
কচিখালি এলাকার সংলগ্ন সমুদ্র তীরবর্তী অংশের তৃণভূমি জাতীয় বনভূমি ১২০ বর্গমাইল এলাকায় কটকা-কচিখালি অভয়ারণ্য অবস্থিত। এই বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে প্রায় সারা বছর বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী নির্ভয়ে বিচরণ করে। এখানে বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে।

দুবলার চর
এটি একটি নয়নাভিরাম দ্বীপ। এখানে চিত্রল হরিণের দল ঝাঁকে ঝাঁকে চরতে দেখা যায়। এই দ্বীপকে দুবলার ট্যাকও বলা হয়। দুবলার মাটি খুঁড়লে মিষ্টি পানি পাওয়া যায়। দুবলার চর কটকা কিংবা হিরণ পয়েন্টের চেয়ে আরও মনোরম জায়গা।

কার্তিক মাসে এখানে মেলা বসে। এখানে এ সময় প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। এই মেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা দেবতা নীলকমল ও গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করে থাকে।

অভয়ারণ্য
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে প্রতিবছর সুন্দরবনের অনেক দুষ্প্রাপ্য প্রাণী সম্পদের বিলুপ্তির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার গাছ ও উদ্ভিদের বিলুপ্তি ঘটেছে। বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ বংশবিস্তার ও নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে বনের নির্দিষ্ট কিছু অংশকে সরকার অভয়ারণ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বর্তমানে সুন্দরবনে এরূপ তিনটি অভয়ারণ্য রয়েছে।

এগুলো হলো কটকা রুচিখালি অভয়ারণ্য, নীলকমল অভয়ারণ্য ও পশ্চিম অভয়ারণ্য। নীলকমল অভয়ারণ্য হিরণ পয়েন্ট ও নীলকমল এলাকায় পর্যটকদের খুবই আকর্ষণীয় স্থান। ঝাঁকে ঝাঁকে হরিণ এ এলাকায় বিচরণ করে। ১১০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে এটি বিস্তৃত। মংলা বন্দর থেকে এখনে যেতে ৬/৭ ঘণ্টা সময় লাগে।

কেওড়াসুটি নামক স্থানে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে। সুন্দরবনের পশ্চিমে ২৪৬ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে পশ্চিম অভয়ারণ্যটির স্থান নির্দিষ্ট রয়েছে। এখানে ভালোমানের কোনো বিশ্রামাগার না থাকায় শীতকালে তেমন লোক সমাগম হয় না। ফলে এই সমুদ্রতটে অসংখ্য বন্যপ্রাণী নির্ভয়ে বিচরণ করে।

কীভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে সরাসরি খুলনা দূরপাল্লার পরিবহন বাসে। এরপর মংলা বন্দর বা খুলনা নতুন বাজার লঞ্চঘাট থেকে সুন্দরবন যাওয়া যায়। সুন্দরবন যেতে প্রাইভেট মোটর, লঞ্চ, স্পিড বোট, নৌবা বা মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের যান ভাড়া করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।
ঢাকা থেকে প্লেনে যশোর, সেখান থেকে সরাসরি খুলনা কিংবা সদরঘাট থেকে গাজী ও শাহীন বেলায়েত নামক রকেটে খুলনা যাতায়াত করা হয়। বাসে ঢাকা থেকে খুলনায় যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি আধুনিক ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবহন বাস চালু আছে।

কোথায় থাকবেন
হিরণ পয়েন্টে মংলাপোর্ট কর্তৃপক্ষের আরামদায়ক ত্রিতল বিশিষ্ট রেস্টহাউস রয়েছে যেখানে ৮ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। অগ্রিম প্রদান সাপেক্ষে খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অফিস থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এছাড়া ট্যুর অপারেটর নিজেদের উদ্যোগেই থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন।

পানীয় জল
খুলনা ও এর দক্ষিণাঞ্চলের সব পানি লবণাক্ত। তাই পূর্বেই পর্যাপ্ত সুপেয় পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখা জরুরি।

প্রবেশাধিকার
সুন্দরবনে ভ্রমণ করতে হলে ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার বাগেরহাট বা ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার খুলনা বরাবরে দরখাস্ত করে অনুমতি নিতে হয় এবং প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করতে হয়।

ক্যামেরা ও ট্যুরিস্ট ফি
স্টিল ক্যামেরা (দেশী) ২০ টাকা, বিদেশীদের জন্য ৬০ টাকা প্রতিদিন। ভিডিও ক্যামেরা (অভ্যন্তরীণ) ১০০ টাকা, বিদেশীদের জন্য ২০০ টাকা প্রতিদিন। প্রফেশনাল ফটোগ্রাফির জন্য নিউজ ও টিভি মিডিয়া স্টিল (অভ্যন্তরীণ) ২০০ টাকা বিদেশীদের জন্য ৭০০ টাকা প্রতিদিন। ক্যামেরা ক্রু (অভ্যন্তরীণ) ৫০ টাকা বিদেশীদের জন্য ৭০০ টাকা প্রতিদিন।

যা নেবেন
ট্রাউজার, টি-শার্ট, শর্টস, ক্যানভাস সু, প্রয়োজনীয় ওষুধ, স্পিলার তোয়ালে, টুথপেস্ট, ব্রাশ, শেভিং ক্রিম, সানস্ক্রিম, বাইনোকুলার, ক্যামেরা, ফিল্ম, টর্চ, ব্যাটারি, হ্যাট অথবা ক্যাপ। কোনো আগ্নেয়াস্ত্র বহন করা যাবে না।

প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ-৭৬১৮৩০, ৭৬১০৫৬ রকেট স্টিমার রিজার্ভেশন (ঢাকা)- ৯৫৫৯৭৭৯ রকেট স্টিমার রিজার্ভেশন (খুলনা)- ৭২১৫৩২, ৭২৫৯৭৮ ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার (খুলনা)-৭২০৬৬৫ বিমান বুকিং অফিস খুলনা-৭৩১০২০ খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ-০৪১ ৭২০৪৪৪ সদর হাসপাতাল-০৪১ ৭২৩৪৩৩ হোটেল রয়েল-০৪১ ৭২১৬৩৮-৯, ০১৭১৮৬৭৯৯০০ পর্যটন মোটেল মংলা-০৪৬৬২, ৭৫১০০ হোটেল ক্যাসেল সালাম-০৪১ ৭৩০৭২৫, ০১৭১১৩৯৭৬০৭।

খরচ
দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সরাসরি খুলনায় পৌঁছে প্রথমে মংলা। এরপর বোটে কিংবা ভাড়া করা লঞ্চে সুন্দরবন যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে ২ দিন ২ রাতের ভ্রমণে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গেলে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় ঘুরে আসা যায়। বেশ কয়েকটি ট্যুর অপারেটর সুন্দরবন ভ্রমণের ওপর প্যাকেজ ট্যুরের আয়োজন করে থাকে। জেনে নিন ট্যুর অপারেটরদের কিছু তথ্য।

দ্য বেঙ্গল ট্যুরস
ঢাকা-সুন্দরবন-ঢাকা ৪ রাত ৪ দিনের প্যাকেজ ট্যুরের খরচ নেবে ৯ হাজার টাকা, ফোন : ৮৬২৮৫৭৭। দ্য গাইড ট্যুরস লিমিটেড ঢাকা-সুন্দরবন-ঢাকা তিন রাত ৪ দিনের জন্য নেবে ১০ হাজার টাকা, ফোন : ৯৮৮৬৯৮৩।

রিভার অ্যান্ড গ্রিন ট্যুরস
ঢাকা-সুন্দরবন-ঢাকা ৪ রাত ৩ দিনের প্যাকেজ ট্যুর খরচ নেবে ৮ হাজার ৫০০ টাকা।

অবকাশ পর্যটন লিমিটেড
ঢাকা-সুন্দরবন-ঢাকা ৪ রাত ৪ দিনের প্যাকেজ ট্যুরের খরচ নেবে জনপ্রতি ৮ হাজার ৫০০ টাকা। ভ্রমণের পূর্বে ভালোমতো জেনে যেকোনো ট্যুর অপারেটরকে বুকিং দিন। এবার শীত মৌসুমে বেরিয়ে পড়ুন পৃথিবীর অন্যতম দর্শনীয় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন দর্শনে।
Source: amaderbook.yolasite.com

No comments:

Post a Comment