Search This Blog

FCO Travel Advice

Bangladesh Travel Advice

AFRICA Travel Widget

Asia Travel Widget

Thursday, December 30, 2010

মাধবপুর থেকে মাধবকুণ্ড

মাধবপুর থেকে মাধবকুণ্ড

মাধবপুর থেকে মাধবকুণ্ড

মাধবপুর হ্রদে পৌঁছে বিস্ময়ে চোখ স্থির হয়ে যায়। এ যে নীল পদ্ম! একজন কবিতা আওড়ানো শুরু করলেন, ‘বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টি নীল পদ্ম…।’ গাইড শুধরে দিলেন এটা ঠিক ‘নীল পদ্ম’ নয়, ‘নীল শাপলা’। দলের সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ক্যামেরার ফ্রেমে স্মৃতি ধরে রাখতে। আমাদের গাইড জানালেন, ‘দেশে নীল শাপলা মাধবপুর ছাড়া অন্য কোথাও খুব একটা দেখা যায় না। এই নীল শাপলা দেখতে প্রতিদিন অনেক পর্যটক ভিড় জমায়।’ চারপাশে চা-বাগানের মধ্যে মাধবপুর যেন একটুকরো স্বর্গ। টলটলে লেকের পানি, চারপাশে চা-গাছ, বুনোফুল, নাম না জানা পাখির ডাক—সব মিলিয়ে উদাস করা সব মুহূর্ত।
ঈদের ছুটিতে আমাদের গন্তব্য ছিল শ্রীমঙ্গল—বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে জোগাড় করা হলো দর্শনীয় স্থানগুলোর ঠিকানা। কিন্তু এর অনেকগুলোরই অবস্থান শ্রীমঙ্গলের বাইরে। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত পড়েছে বড়লেখা উপজেলায়। মাধবপুর হ্রদ কমলগঞ্জে। লাউয়াছড়া বন শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ মিলিয়ে। আর পাখিদের অভয়ারণ্য ‘বাইক্কা বিল’ পড়েছে শ্রীমঙ্গলে। সবাই নিশ্চিত করলেন, শ্রীমঙ্গলে আস্তানা গাঁড়াটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
শ্রীমঙ্গলজুড়ে বাগানের পর বাগান চা-গাছের সারি। শ্রীমঙ্গল পৌঁছে সহজেই আবহাওয়ার বদলটা টের পাওয়া গেল। কিছুটা বিশ্রামের পর ঠিক করা হলো তিন দিনের ‘মহাপরিকল্পনা’। ঠিক হলো, প্রথম দিনই যাব মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে। দ্বিতীয় দিন লাউয়াছড়া বন, মাগুরছড়া পুঞ্জি ও মাধবপুর লেক। আর তৃতীয় দিন বাইক্কা বিল ও সিতেশ বাবুর মিনি চিড়িয়াখানায়। তিন দিনের জন্য একটা গাড়ি রিজার্ভ করা হলো।
শ্রীমঙ্গলে আমরা ছিলাম চা-গবেষণাকেন্দ্রের রেস্ট হাউসে। প্রথম দিন আমাদের চোখ মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের দিকে। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে মাধবকুণ্ডের দূরত্ব ৯৩ কিলোমিটার। সময় লাগল ঘণ্টা দুয়েক। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমরা পৌঁছালাম মাধবকুণ্ডে। স্রোতস্বিনী জলের কলকল ধ্বনি শোনা যাচ্ছে কিছুটা দূর থেকেই। প্রায় ২০০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে তীব্রবেগে সশব্দে নেমে আসছে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের ধারা। জলতরঙ্গের আরও কাছে এগিয়ে যাই। নিরাপত্তারক্ষীর ‘না’। কাছে যেতে মানা—দুর্ঘটনা ঠেকাতে বেষ্টনী দিয়ে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সময় গড়িয়ে যায়। জলপ্রপাতের সঙ্গে মেশে বিকেলের আলোর খেলা। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই রওনা দিই শ্রীমঙ্গলের পথে।
পরদিনের জন্যও গাড়ি ঠিকঠাক। গন্তব্য লাউয়াছড়া। শ্রীমঙ্গল থেকে লাউয়াছড়ার দূরত্ব মাত্র আট কিলোমিটার। সময় লাগল মিনিট বিশেক। এবার লাউয়াছড়ায় সবুজের অরণ্যে হারিয়ে যাওয়ার সুখ। এত প্রাণবৈচিত্র্যে ভরা বন বাংলাদেশের আর কোথাও চোখে পড়ে না। এ বনের আয়তন এক হাজার ২৫০ হেক্টর। সারা দিন ঘুরেও শেষ করা যায় না। তবে এক ঘণ্টায় সংক্ষেপে কীভাবে ঘুরে আসা যাবে, তারও একটা রুট আছে। লাউয়াছড়া বনে চোখে পড়বে বানর, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, বনবিড়াল, কাঠবিড়ালিসহ নানা প্রজাতির প্রাণী। কখনো কখনো দেখা মেলে মায়াহরিণ আর শজারুর।
লাউয়াছাড়া উদ্যান থেকে এবার আমরা আদিবাসী খাসি (খাসিয়া) অধ্যুষিত মাগুরছড়া পুঞ্জিতে গেলাম। মাতৃতান্ত্রিক খাসি পরিবারের মেয়েরাই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। খাসিপল্লিতে দেখা গেল, খাসি মেয়েরা অসম্ভব দ্রুততায় পান সাজিয়ে সাজিয়ে পালা করছে। পাইকার ব্যবসায়ীরা ঘরে ঘরে এসে পান কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এখান থেকে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধের দূরত্ব ১২ কিলোমিটারের মতো। মুক্তিযুদ্ধের এই বীর যোদ্ধাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিরে আসতে আসতেই দুপুর গড়িয়ে বিকেল।
তৃতীয় দিন আমাদের গন্তব্য ‘বাইক্কা বিল’। শ্রীমঙ্গল থেকে বাইক্কা বিলের দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। হাইল হাওরের অন্তর্ভুক্ত বাইক্কা বিল পাখির অভয়ারণ্য। নানা প্রজাতির হাজারও পাখি রয়েছে এখানে। ছোট্ট নৌকায় বিল পরিদর্শনের সময় কোলে এসে বসবে কত যে পাখি! ওরাও জেনে গেছে, এরা শিকারি নন, পর্যটক। সারা দিনই এখানে কাটাতে ইচ্ছা করবে। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে, তাই ফিরতে হয়।
আমাদের রেস্ট হাউসের চারপাশে চা-বাগান। বিকেলে সিতেশ বাবুর মিনি চিড়িয়াখানায় একটু ঢুঁ দিয়ে আমরা চলে যাই ‘নীলকণ্ঠ চায়ের দোকানে’। এখানে নানা রঙের চা পাওয়া যায়। দুই, তিন, চার থেকে সাত লেয়ার।
শ্রীমঙ্গলে এলাম আর মণিপুরি শাড়ি কেনা হবে না, তা কী হয়। নীলকণ্ঠ চায়ের দোকানের কাছেই মণিপুরি আদিবাসীদের বেশ কয়েকটি শোরুম রয়েছে। মণিপুরি শাড়ি, কামিজ, ওড়না, ফতুয়া কেনার ধুম পড়ে গেল পুরো দলে।
রাতে ফিরে ‘সমাপনী আড্ডা’। ট্রেনের টিকিট কাটা ছিল। মধ্যরাত এগিয়ে আসে। রাতের ট্রেনের স্লিপিং বার্থে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পরদিন সকালে পৌঁছালাম ঢাকায়। ঢাকা তখনো ফাঁকা। এবং সুন্দর।

কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন
ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে শ্রীমঙ্গলে (মৌলভীবাজার) আধাঘণ্টা পর পর বাস রয়েছে। নন-এসির মধ্যে শ্যামলী পরিবহন ও হানিফ পরিবহন। এ ছাড়া টিআর ট্রাভেলসের এসি বাস রয়েছে। বাসে ঢাকা থেকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌঁছাতে সময় লাগবে সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টার মতো।
ট্রেনে যাওয়ারও পথ রয়েছে। উপবন এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস। তবে সময় একটু বেশি লাগবে। ছয় থেকে সাড়ে ছয় ঘণ্টা। ঈদের মৌসুমে ট্রেনের টিকিট অবশ্যই আগাম কেটে রাখা উচিত।
শ্রীমঙ্গলে থাকার অনেক ধরনের ভালো বন্দোবস্ত রয়েছে। চা-গবেষণা ইনস্টিটিউটের রেস্ট হাউস, টি-রিসোর্ট। টি-রিসোর্টে একটি বাংলো পুরোটাই ভাড়া নিতে হয়। শ্রীমঙ্গল শহরে মানসম্পন্ন অনেক হোটেল রয়েছে। টি-টাউন রেস্ট হাউস, সন্ধ্যা হোটেল, এলাহী প্লাজা, হোটেল তাজমহল, হোটেল বিরতি, হোটেল রহমানিয়া উল্লেখযোগ্য। ভাড়াও নাগালের মধ্যেই। এ ছাড়া দলের সদস্যসংখ্যা বেশি হলে তিন-চার দিনের জন্য বাড়িও ভাড়া নিতে পারেন। এ ছাড়া কমলগঞ্জেও রয়েছে হিড বাংলাদেশ নামের একটা উন্নয়ন সংস্থার রেস্ট হাউস। ঈদের ছুটিতে শ্রীমঙ্গল যাওয়ার আগে হোটেল বা বাংলোর বুকিং নিশ্চিত করে যাওয়া উচিত।

ফিরোজ জামান চৌধুরী
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ২৪, ২০১০

পর্যটকের পদভারে মুখরিত মাধবকুণ্ড

০০০ বিয়ানীবাজার সংবাদদাতা

বড়লেখার মাধবকুণ্ডে ইংরেজি নববর্ষের দ্বিতীয় দিনেও হাজার হাজার পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিপাসুরা মাধবকুণ্ডে জড়ো হতে থাকেন। বেলা যত বাড়তে থাকে পর্যটকদের ভিড় ও জনসমুদ্রে রূপ নেয়। পিকনিক স্পট ও ইকোপার্ক মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের নিচে পর্যটকদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না।

বড়লেখা-কুলাউড়ার সহকারী পুলিশ সুপার আহাদুজ্জামান ইত্তেফাককে জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পুলিশ বিশেষ নজরদারি করায় পর্যটকরা কম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পর্যটকরা জানান, দেশের একমাত্র জলপ্রপাত মাধবকুণ্ডকে যে রকম সাজিয়ে তোলা দরকার সে রকম হচ্ছে না। নতুন সাজে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়ে তুললে শুধু নতুন বছরের এক দিন নয়, প্রতিদিনই দেশ-বিদেশ থেকে হাজারও পর্যটকের পদভারে মুখরিত হবে।
Source: Daily Ittefaq, 6th january, 2011

No comments:

Post a Comment