November 22, 2010, 3:30 am
সুন্দরবন ঘুরে বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা শুধু বেতনই পান। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কাজ করেও ঝুঁকি ভাতা পান না। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে এই বন সংরক্ষণকারীদের হিল এলাউন্স রয়েছে। যদিও পার্বত্য এলাকার চেয়ে অনেক বেশি দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা সুন্দরবন। অসংখ্য নদী-খাল দিয়ে ঘেরা সুন্দরবন পাহার দেয়ার জন্য যে পরিমাণ নৌযানের প্রয়োজন সেই পরিমান নৌকা নেই তাদের।
একটা বিট অফিসে মাত্র ৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন। আর ক্যাম্পগুলোতে ৩ কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন। কিন্তু এই ক্যাম্প, বিট ও রেঞ্জ অফিসের আওতায় রয়েছে বনের বিশাল এলাকা। বনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা পাহারা দিতে অন্তত ১০ হাজার লোকবলের প্রয়োজন। কিন্তু গোটা সুন্দরবন সংরক্ষণ করছে মাত্র ১ হাজার লোকবল।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন, চাঁদপাই রেঞ্জের আওতায় ৪টি ষ্টেশন ও ২১টি টহল ফাঁড়িতে কর্মরত লোকবলের সংখ্যা ২'শ। কিন্তু এ রেঞ্জের প্রায় ১ লাখ হেক্টরের বিশাল সুন্দরবনে কম হলেও ৩ শতাধিক জনবলের প্রয়োজন। এছাড়া প্রতিটি টহল ফাঁড়িতে ২টি করে ট্রলার ও ১টি করে ডিঙ্গি নৌকার প্রয়োজন থাকলে ২১টির মধ্যে ১০টিতেই কোন জলযান নেই। আর যে সকল ষ্টেশন ও ক্যাস্পে ১টি করে ট্রলার রয়েছে সেগুলোতে রয়েছে তীব্র জ্বালানী সংকট। প্রতি মাসে ১টি ট্রলারের বিপরীতে সাড়ে ৩শ থেকে ৫শ লিটার জ্বালানী তেলের চাহিদা থাকলেও কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করে থাকে মাত্র ৭০ থেকে ৮০ লিটার। সুন্দরবনের একটি ষ্টেশনে ১৫ জন আর একটি টহল ফাঁড়িতে ৮ জন করে লোক থাকার কথা থাকলেও রয়েছে অর্ধেক। একজন বনরক্ষীর বেতন ২ হাজার টাকা। দুর্গম এলাকায় যারা আছেন তাদের খাবার খেতেই দেড় হাজার টাকার ওপর খরচ হয়। বেশির ভাগ বন প্রহরী তাদের বাড়ীতে কোন টাকা পাঠাতে পারে না।
কয়েকজন বন কর্মচারী বলেন, যে বেতন পাই তাতে নিজেদেরই চলে না- সংসার চালব কি করে। আমাদের যদি ঝুঁকি ভাতা থাকত, স্যালাইন ভাতা ও রেশন দেয়া হতো তাহলে বনজ সম্পদ রক্ষা ও গাছ চোরদের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করতাম। কেউ কোন গাছ কাটতে পারত না। আমাদের একজন বনরক্ষী আবু সাইদ সিডরের আঘাতে মারা গেছেন। তাকে দাফন কাফনের ব্যবস্থা করতে হয়েছে চাঁদা তুলে। সরকারীভাবে তার জন্য কিছুই করা হয়নি। দেয়া হয়নি তার পরিবারকে আর্থিক কোন সুবিধা। যে চাকরিতে জীবনের নিরাপত্তা প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন সেই চাকরি করে আমাদের কোন সঞ্চয় থাকেনা।
এমনও জায়গা আছে যেখান থেকে মংলা বা খুলনা আসাতে ১১ থেকে ১৩ ঘন্টা সময় লেগে যায়। এই যাতায়াতের জন্য বন সংরক্ষকদের অনেক টাকা লাগে। বনকে রক্ষা করতে বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আকর্ষনীয় বেতন ভাতা দিতে হবে। চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা সাহাবুদ্দিন আরো বলেন, বর্তমানে সুন্দরবনের বিভিন্ন ষ্টেশন ও টহল ফাঁড়িগুলোতে যারা কর্মরত রয়েছেন তাদের অধিকাংশই পঞ্চাশোর্ধ। ফলে বনের দুর্গম এলাকায় দায়িত্ব পালন করতে তাদের হিমশিম খেতে হয়। দীর্ঘ বছরের পর বছর বনবিভাগে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ না থাকায় যারা কর্মরত আছেন তারা অনেকটা ঠেকেই দায় এড়াচ্ছেন। এ সকল সমস্যা নিরসনে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন ভুক্তভোগী বন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এমনই এক পরিস্থিতির মধ্যে সুন্দরবন সংরক্ষণ ব্যবস্থা যুগের পর যুগ চলে আসছে। এখান থেকে উত্তরনের কোন পদক্ষেপ রাজনৈতিক সরকারগুলো নেয়নি।
Source: www.bangladeshfirst.com
No comments:
Post a Comment