বন থেকে পাওয়া রাজস্বের অর্ধেক দেওয়া হবে গ্রামবাসীকে
সুন্দরবন পাহারা দেবে ৭৬ গ্রামের মানুষ
সুন্দরবনসংলগ্ন ৭৬টি গ্রামের মানুষ বন বিভাগের পাশাপাশি বনের প্রাকৃতিক সম্পদ পাহারা দেবে। বন সংরক্ষণে অংশ নেওয়ার বিনিময়ে গ্রামবাসীকে সুন্দরবন থেকে পাওয়া রাজস্বের অর্ধেক দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন বিভাগ ও গ্রামবাসীর এই যৌথ বন পাহারা কার্যক্রমের অনুমোদন দিয়েছেন। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সুন্দরবন সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা জোরদার করার জন্য সরকার নতুন এই উদ্যোগ নিয়েছে।
সূত্র জানায়, সুন্দরবনে পর্যটন বাবদ বর্তমানে বছরে এক কোটি টাকা আয় হয়। প্রাথমিকভাবে এই টাকার অর্ধেক গ্রামবাসীকে দেওয়া হবে। বনের মধু ও গোলপাতা আহরণের মাধ্যমে যে ছয় থেকে সাত কোটি টাকা আসে, শিগগিরই তারও অর্ধেক গ্রামবাসীকে দেওয়া হবে। অর্থ বিভাগের কাছ থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অনুমতিও নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার মানুষের এই বনের সম্পদের ওপর কোনো আইনগত অংশীদারি নেই। অথচ এসব মানুষের একটি অংশ বনের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে বন বিভাগের জনবল কম হওয়ায় সুন্দরবন রক্ষা তাদের পক্ষে দুরূহ হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আবার অসাধু চক্রের সঙ্গে মিলে বেআইনিভাবে বনের বিভিন্ন সম্পদ চুরিতে জড়িয়ে পড়ছে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালী জেলার ছয়টি উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নের দুই লাখ ২৭ হাজার ৭২৭ জন অধিবাসীকে বন সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হবে। প্রতিটি গ্রামে আট থেকে ১০ জনের একটি যৌথ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হবে। গ্রামের প্রতিটি দরিদ্র পরিবার থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ওই কমিটির সদস্য করা হবে। বন বিভাগ এসব কমিটির কাজ তদারক করবে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব মিহির কান্তি মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, বনজীবীদের দিয়ে বন রক্ষা করার এ ধরনের উদ্যোগ বিশ্বের অন্য কয়েকটি দেশে সফল হয়েছে। সুন্দরবনসংলগ্ন গ্রামের মানুষ সফলভাবে বন রক্ষা করলে বন থেকে আসা রাজস্বের অর্ধেক তাদের দেওয়া হবে। এ ছাড়া সামাজিক বনায়নের জন্য তাদের জমিও (প্লট) দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বন রক্ষা করতে গিয়ে কোনো গ্রামবাসী ডাকাত ও বণ্য প্রাণীর হাতে মারা পড়লে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য একটি নীতিমালাও তৈরি হচ্ছে।
গ্রামবাসী মূলত সুন্দরবনের ভেতরে কোনো গাছ চুরি, বণ্য প্রাণী হত্যা বা পাচারের ঘটনা সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করবে। বন প্রহরীদের সঙ্গে টহলেও তারা যোগ দেবে, তবে তাদের হাতে কোনো অস্ত্র দেওয়া হবে না। কোন দিন ব্যবস্থাপনা কমিটির কোন সদস্য এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হবে, তা গ্রামবাসীই ঠিক করবে।
সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (সেড) পরিচালক ফিলিপ গাইন প্রথম আলোকে বলেন, বনজীবীদের সম্পৃক্ত করার এ ধরনের উদ্যোগ ইতিবাচক। তবে বন বিভাগের দুর্নীতি কমাতে না পারলে এই উদ্যোগ সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। তিনি বলেন, সুন্দরবনের খুলনা ও সাতক্ষীরা অংশের অনেক জমি চিংড়ি চাষিদের দখলে। বাণিজ্যিক চিংড়ি চাষের কারণে ওই এলাকার অনেক মানুষ নিয়মিতভাবে নিঃস্ব হয়ে ক্রমাগতভাবে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। চিংড়ির চাষ টিকিয়ে রেখে সুন্দরবন রক্ষা করা কঠিন হবে। তিনি বলেন, সুন্দরবন ও সংশ্লিষ্ট এলাকা নিয়ে একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা করা দরকার।
২০০৪ সালের বননীতিতে বলা ছিল: ‘বন খাতের উন্নয়নে বনায়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মহিলাসহ জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।’ ১৯২৭ সালের বন আইনের ২৮ ধারায় বলা হয়েছে: ‘সরকার কোনো গঠিত সংরক্ষিত বনে বা উহার উপর সরকারের অধিকার কোনো গ্রামীণ সম্প্রদায়ের উপর অর্পণ করতে পারেন এবং এরূপ অর্পণ বাতিল করতে পারেন।’
সুন্দরবন বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মূল বনভূমির পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত গ্রামবাসীকে তিন ভাগে ভাগ করে বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কোনো ঘরবাড়ি ও জমি নেই এবং জীবিকার জন্য বছরের বেশির ভাগ সময় সুন্দরবনের মধ্যে অবস্থান করে—এমন মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া গ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ বা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
খুলনা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে সুন্দরবনের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের এই উদ্যোগে সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের উপকারভোগীদের তালিকা তৈরির কাজ শেষ হবে। তবে গ্রামবাসীর জন্য কোন ধরনের জীবিকা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা গ্রামবাসী নিজেরাই ঠিক করবে।
সূত্র বলছে, বন বিভাগ থেকে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ ব্যবস্থাপনার জন্য কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ৬৫ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হবে। এ ছাড়া বনজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়টি তদারকিতে ২৯ সদস্যের আরেকটি কমিটি কাজ করবে।
Source:সূত্র জানায়, সুন্দরবনে পর্যটন বাবদ বর্তমানে বছরে এক কোটি টাকা আয় হয়। প্রাথমিকভাবে এই টাকার অর্ধেক গ্রামবাসীকে দেওয়া হবে। বনের মধু ও গোলপাতা আহরণের মাধ্যমে যে ছয় থেকে সাত কোটি টাকা আসে, শিগগিরই তারও অর্ধেক গ্রামবাসীকে দেওয়া হবে। অর্থ বিভাগের কাছ থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অনুমতিও নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার মানুষের এই বনের সম্পদের ওপর কোনো আইনগত অংশীদারি নেই। অথচ এসব মানুষের একটি অংশ বনের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে বন বিভাগের জনবল কম হওয়ায় সুন্দরবন রক্ষা তাদের পক্ষে দুরূহ হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আবার অসাধু চক্রের সঙ্গে মিলে বেআইনিভাবে বনের বিভিন্ন সম্পদ চুরিতে জড়িয়ে পড়ছে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালী জেলার ছয়টি উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নের দুই লাখ ২৭ হাজার ৭২৭ জন অধিবাসীকে বন সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হবে। প্রতিটি গ্রামে আট থেকে ১০ জনের একটি যৌথ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হবে। গ্রামের প্রতিটি দরিদ্র পরিবার থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ওই কমিটির সদস্য করা হবে। বন বিভাগ এসব কমিটির কাজ তদারক করবে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব মিহির কান্তি মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, বনজীবীদের দিয়ে বন রক্ষা করার এ ধরনের উদ্যোগ বিশ্বের অন্য কয়েকটি দেশে সফল হয়েছে। সুন্দরবনসংলগ্ন গ্রামের মানুষ সফলভাবে বন রক্ষা করলে বন থেকে আসা রাজস্বের অর্ধেক তাদের দেওয়া হবে। এ ছাড়া সামাজিক বনায়নের জন্য তাদের জমিও (প্লট) দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বন রক্ষা করতে গিয়ে কোনো গ্রামবাসী ডাকাত ও বণ্য প্রাণীর হাতে মারা পড়লে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য একটি নীতিমালাও তৈরি হচ্ছে।
গ্রামবাসী মূলত সুন্দরবনের ভেতরে কোনো গাছ চুরি, বণ্য প্রাণী হত্যা বা পাচারের ঘটনা সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করবে। বন প্রহরীদের সঙ্গে টহলেও তারা যোগ দেবে, তবে তাদের হাতে কোনো অস্ত্র দেওয়া হবে না। কোন দিন ব্যবস্থাপনা কমিটির কোন সদস্য এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হবে, তা গ্রামবাসীই ঠিক করবে।
সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (সেড) পরিচালক ফিলিপ গাইন প্রথম আলোকে বলেন, বনজীবীদের সম্পৃক্ত করার এ ধরনের উদ্যোগ ইতিবাচক। তবে বন বিভাগের দুর্নীতি কমাতে না পারলে এই উদ্যোগ সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। তিনি বলেন, সুন্দরবনের খুলনা ও সাতক্ষীরা অংশের অনেক জমি চিংড়ি চাষিদের দখলে। বাণিজ্যিক চিংড়ি চাষের কারণে ওই এলাকার অনেক মানুষ নিয়মিতভাবে নিঃস্ব হয়ে ক্রমাগতভাবে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। চিংড়ির চাষ টিকিয়ে রেখে সুন্দরবন রক্ষা করা কঠিন হবে। তিনি বলেন, সুন্দরবন ও সংশ্লিষ্ট এলাকা নিয়ে একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা করা দরকার।
২০০৪ সালের বননীতিতে বলা ছিল: ‘বন খাতের উন্নয়নে বনায়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মহিলাসহ জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।’ ১৯২৭ সালের বন আইনের ২৮ ধারায় বলা হয়েছে: ‘সরকার কোনো গঠিত সংরক্ষিত বনে বা উহার উপর সরকারের অধিকার কোনো গ্রামীণ সম্প্রদায়ের উপর অর্পণ করতে পারেন এবং এরূপ অর্পণ বাতিল করতে পারেন।’
সুন্দরবন বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মূল বনভূমির পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত গ্রামবাসীকে তিন ভাগে ভাগ করে বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কোনো ঘরবাড়ি ও জমি নেই এবং জীবিকার জন্য বছরের বেশির ভাগ সময় সুন্দরবনের মধ্যে অবস্থান করে—এমন মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া গ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ বা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
খুলনা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে সুন্দরবনের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের এই উদ্যোগে সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের উপকারভোগীদের তালিকা তৈরির কাজ শেষ হবে। তবে গ্রামবাসীর জন্য কোন ধরনের জীবিকা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা গ্রামবাসী নিজেরাই ঠিক করবে।
সূত্র বলছে, বন বিভাগ থেকে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ ব্যবস্থাপনার জন্য কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ৬৫ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হবে। এ ছাড়া বনজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়টি তদারকিতে ২৯ সদস্যের আরেকটি কমিটি কাজ করবে।
No comments:
Post a Comment