Search This Blog

FCO Travel Advice

Bangladesh Travel Advice

AFRICA Travel Widget

Asia Travel Widget

Wednesday, November 17, 2010

ঐতিহ্যময় সুন্দরবন - সুজন মজুমদার

ঐতিহ্যময় সুন্দরবন - সুজন মজুমদার

sundarbanদক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। এই বনভূমি বিশ্ব পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের ভূমিকায় অপরিসীম। শুধু তাই নয়, এই সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ জীবন জীবিকার একমাত্র নির্ভরশীল করে থাকে।

কেউ গাছ কাটে, কেউ মধু আহরণ করে, কেউ মাছ ধরে, কেউ গোলপাতা কাটে, কেউ বা কাঁকড়া ধরে এবং শুঁটকিও রফতানি করে থাকে কেউ কেউ। বঙ্গোপসাগরের কূলঘেঁষে জেগে ওঠা বিশাল এই সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক ঘাতক সিডর, আইলার নামক ঝড়ের তা-বে ল-ভ- করে দিয়ে গেছে। যার কারণে যারা নদীর বুক থেকে বিভিন্ন রকম উপার্জনের একমাত্র সম্বল তারা আজ ভীষণ দুর্ভিৰের সঙ্গী। তাদের বেঁচে থাকা হয়ে পড়েছে আজ অসম্ভব দায়। শুধু তাই নয়, মৎস্যজীবীদের প্রাণও কেড়ে নিচ্ছে এই আইলার-সিডর। কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট করে দিয়ে গেছে। দক্ষিণবঙ্গের খুলনা, মংলা, বাগেরহাট ও সাতৰীরাজুড়ে বিশাল অংশ হিসেবে গড়ে ওঠা এই সুন্দরবন প্রায় ২ হাজার ৩০০ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যময় সুন্দরবনের লীলাভূমি। ৬০ মাইল লম্বা সুন্দরবনে শীত মৌসুমে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ হাজার, হাজার মানুষ ভিড় জমায় তাদের জীবন-জীবিকার খোঁজে। তাছাড়া বার মাসই এই সুন্দরবনে মানুষ তাদের কর্মতৎপরতা চালায় বেঁচে তাকার তাগিদে। সাগরকূলে দুবলারচরসহ বিভিন্ন চরে বিভিন্ন জেলার হাজার, হাজার জেলে তাদের আনুষঙ্গিক সামগ্রী নিয়ে অস্থায়ীভাবে বসতি করে। তারা ৪/৫ মাসের জন্য ৫০ থেকে ৬০ হাজার জেলে সারিবদ্ধভাবে ছোট ছোট ঘর করে জীবনযাপন করে। ছোট-বড় ট্রলার নিয়ে সাগর ও বনের ভেতর ঢুকে তারা মাছ, কাঁকড়া, হরিণ, পাখি, মধু গোলপাতাসহ আরও অনেক কিছু আহরণ করে। সুন্দরবনে আহরিত মাছ থেকে প্রতিবছর প্রায় চলতি মৌসুমে এক শ' থেকে সোয়া শ' কোটি টাকা আহরণ করা হয়। ৫ মাসের আয় দিয়ে প্রায় সারা বছরই জেলেরা সুন্দরভাবে জীবন-জীবিকা করে থাকে। প্রতি জেলের পরিবারে কমপৰে ৫ জন সদস্য থাকে। গড় প্রতি ৩০-৩৫ হাজার জেলের হিসাবও যদি করা হয় তাহলে ধরা যায় অনত্মত দেড় লাখ থেকে শোয়া লাখ লোকের জীবিকা নির্ধারণ হয় এই দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবন থেকে। ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় সুন্দরবনে প্রবেশ বাওয়ালীদের। এসময় বাওয়ালীদের মূলত সুন্দরবনে প্রবেশের উত্তম মৌসুম। বন বিভাগ এসময় প্রতিবছর বনের প্রকৃতি আহরণের সুযোগ দিয়ে থাকে। তাই বাওয়ালীরা এসময় ফরেস্টারের কাছ থেকে বনের মধ্যে যাওয়ার পারমিশন বা পাস নিয়ে কাঠ, গোলপাতা, মধু আহরণসহ বিভিন্ন কাজের তাগিদে তারা বনের মধ্যে প্রবেশ করে থাকে এবং এই কাজের মধ্যে তাদের জীবন-জীবিকা নির্ভর বলে এদের এক কথায় বলা হয়ে থাকে বনজীবী। প্রতিবছর ডিসেম্বরে সুন্দরবনে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার বাওয়ালী আসে। বন রৰাকারীরা বাওয়ালীদের কাছ থেকে আবার নৌকার আকৃতি দেখে মানে ছোট বড় অনুমান করে মোটামুটি একটা নির্ধারিত রাজস্ব আদায় করে থাকে। সুন্দরবনের প্রশাসন সুন্দরবনে বাওয়ালীদের সুবিধার জন্য জায়গায় জায়গায় প্রশাসনিক ভাগ করে টহল দেয়ার কাজ করে। ২ হাজার ৩০০ বর্গ মাইলজুড়ে রয়েছে দুটি বিভাগ। একটি সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ আর অপরটি সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ। সুন্দরবন বিভাগে বিভিন্ন রফতানি পণ্যের মাধ্যমেই দৰিণাঞ্চলে হাজার হাজার মানুষ জীবন-জীবিকায় বেঁচে আছে এবং গোটা সুন্দরবন রাজস্ব আয় প্রতি বছরে প্রায় ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা। সুন্দরবনের হিসাব অনুযায়ী গত (২০০৬-২০০৭) বছরে সুন্দবনের ৪টি রেঞ্জ এলাকা থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ৬ কোটি ৫৯ লাখ ২৩ হাজার ৪১০ টাকা। (২০০৫-২০০৬) এ বন বিভাগ থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৩২৬ টাকা। আর গত (২০০৪-২০০৫) অর্থবছরে সুন্দরবনের রাজস্ব আয় হয়েছিল ৬ কোটি ৭২ লাখ ৩৮ হাজার ১২০ টাকা। কিন্তু বিধ্বস্ত সিডর, আইলার নির্মম কান্ডযজ্ঞে ১৫ নবেম্বর বিশ্ব ঐতিহ্যের এ সুন্দরবনকে একেবারেই ধূলিসাত করে দিয়ে গেছে। শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ ছিল না দানব সিডর, আইলার। তারা নির্দ্বিধায় কেড়ে নিয়েছে কয়েক হাজার জেলের প্রাণ। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এই সিডর, আইলার কারণে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার ৰয়ৰতি হয়েছে সুন্দরবনের। বাংলাদেশের সর্বশেষ দৰিণে পশ্চিমাঞ্চলে তীরঘেঁষে বঙ্গোপসাগরের ৮৯.০০৮৯.৫৫ পূর্ব অক্ষাংশ এবং ২১.৩০.২২.৩০ উত্তর দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ভূখ-জুড়ে বিস্তৃত। বাংলাদেশের ভূখন্ডের এ বনের আয়তন ৫৫,৭৮৫ হেক্টরের মধ্যে ৪১,১৬৮৫ হেক্টর বনভূমি। বাকি ১৫,৫৬০০ হেক্টর নদী খাল খাড়ি এবং মোহনার অঞ্চল। সুন্দরবনে এরকম অসংখ্য মোহনার জলাভূমি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

ম্যানগ্রোভ সম্পদ : অন্যান্য বৈশিষ্ট্যধর্মী সুন্দরবনের বিশেষ একটি সম্পদ। এই ঐতিহ্যময় সুন্দরবনে রয়েছে এক বিশাল বনজ সম্পদ। যা থেকে আমরা কাঠ এবং কাজগের মন্ড তৈরির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি হয়ে থাকে। বর্তমানে অর্থমূলক সুন্দরবনে মোট ৩৩৪ প্রজাতির গাছ পাওয়া যায়। উলেস্নখযোগ্য যেমন সুন্দরী, গেওয়া, বাইন, উড়া, কেওড়া, মেহগনি, জির, গড়ান, গোলপাতা, হেতাল ইত্যাদি। রফতানির ভিত্তিতে আহরিত অন্যান্য দ্রব্য হচ্ছে মধু, মোম, কাঁকড়া, বাগদা এবং গলদা চিংড়ির পোনা, ঝিনুকের শেল, বড় বাগদা এবং গলদা চিংড়িসহ নানা প্রজাতির মাছ। এই সুন্দরবনে ৪.২৫ রকম বন্যপ্রাণী, ৩১৫টি পাখি, ৫৩টি সরীসৃপের প্রজাতি এবং ৮টি উভচর প্রাণীর প্রজাতি রয়েছে। এসবের বন্য প্রাণী যথারীতি সারা বাংলাদেশের স্তন্যপায়ী প্রাণীর শতকরা ৩৪ ভাগ, পাখি ৩৫ ভাগ এবং সরীসৃপ প্রাণীর প্রজাতির শতকরা ২৯ ভাগ রয়েছে। সবচেয়ে সত্য কথা যে, বাংলাদেশের দৰিণাঞ্চলে নদী উপকূলে এলাকাজুড়ে হাজার, হাজার মানুষ বসবাস করে থাকে। যেমন মংলা, চানপাই, খেজুরে শরণখোলা, জয়খাঁ, বুড়ির ডাঙ্গা, পেড়িখালি, হুড়কা, রামপালসহ জেলা থানা গ্রামজুড়ে হাজার হাজার মানুষের জীবন রক্ষাকারী প্রাকৃতিক বন্ধু এই একমাত্র সুন্দরবন। কারণ দৰিণ, পশ্চিম, পূর্ব এলাকাজুড়ে ঝড়ের তান্ডব থেকে ধ্বংসযজ্ঞে একমাত্র প্রথমেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবন। যার কারণে দৰিণ অঞ্চলের মানুষ এখনও বেঁচে আছে। তাই বন বিভাগ ও সরকারের সমন্বয় উদ্যোগে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে এই সুন্দরবন বৃৰ নিধনে সাবাড় না হয়ে যায়। তাহলে বাঁচবে দৰিণাঞ্চলের হাজার, হাজার প্রাণ, বাঁচবে বন, বাঁচবে পরিবেশ, বাঁচবে আমাদের প্রজন্ম।

No comments:

Post a Comment