Search This Blog

FCO Travel Advice

Bangladesh Travel Advice

AFRICA Travel Widget

Asia Travel Widget

Sunday, November 14, 2010

সুন্দরবন ভ্রমন : সম্পূর্ণ

সুন্দরবন ভ্রমন : সম্পূর্ণ

১লা ডিসেম্বর সোমবার বিকেল ৬টায় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম এর ক্যামপাস্ থেকে আমরা ৫০ জন ছাত্র শতাব্দী পরিবহনের গাড়ীতে রওনা দিলাম মংলা বন্দরের উদ্দেশে। চট্টগ্রাম হতে ঢাকা হয়ে মাওয়া ফেরীঘাট পার হয়ে দীর্ঘ ১৫ঘন্টা লাগলো মংলা বন্দরে পৌছাতে। মাওয়া ফেরীঘাট পার হতেই লাগলো দীর্ঘ ৪ঘন্টা। পদ্মা নদীর এপার থেকে ওপারে নেওয়ার ফেরীতে অবশ্য ৪ঘন্টা সময় কাটাতে তেমন কষ্ট হয়নি। কারণ একেতো সুন্দরবন যাওয়ার উত্তেজনা,তার উপর বিশাল ৫তলা ফেরী। আর পদ্মার সৌন্দর্য্যতো আছেই। ফেরী যখন পদ্মা নদীর মাঝামাঝি তখন কেবল ধীরে ধীরে ভোরের আলো ফুটছিল।সে এক অসাধারণ দৃশ্য। ২রা ডিসেম্বর ৯টায় আমরা মংলা বন্দরে পৌছালাম।ওখান থেকেই মূলত আমাদের মূল ভ্রমন শুরু। তবে মংলা বন্দরের দূরাবস্থা দেখে খারাপ লাগলো খুব।

মংলা বন্দরে আমরা...
আগে থেকেই ঠিক করে রাখা রেডসান-১ লঞ্চ এ করে আমরা রওনা দিলাম সুন্দরবন এর দিকে।
ঢাংমারী ফরেষ্ট ষ্টেশন থেকে সুন্দরবন ঢুকার মুখেই নিতে হলো প্রয়োজনীয় অনুমতি এবং সুন্দরবন ঘোরার জন্য গানম্যান। তারপর আমরা রওনা দিলাম ভৌগলিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিরইন পয়েন এর দিকে।মংলা বন্দর থেকে হিরইন পয়েন এ যেতে লাগলো প্রায় ৫ঘন্টা। এই ৫ঘন্টা পশুর নদীর দু পাশের সুন্দরবনের দৃশ্য ও সবাই মিলে গল্প করে কাটালাম।মাঝে দুপুরের খাওয়াটা ও শেষ করে নিলাম লঞ্চ এর ডাইনিং এ।
৪টার দিকে আমরা হিরইন পয়েন এ পৌছালাম।


ড়াইনিং এ...
চট্টগ্রাম থেকে সুন্দরবনের হিরইন পয়েন দীর্ঘ ২০-২১ ঘন্টার ভ্রমন । দীর্ঘ এই ভ্রমন শেষে লঞ্চ যখন হিরইন পয়েন ঘাটে ভিড়লো তখন দিনের আলো প্রায় শেষের পথে।নিরাপত্তা জনিত কারণে কাউকে লঞ্চ থেকে নামার অনুমতি দিলেন না শিক্ষকরা। দু পাশে সুন্দরবন আর আমরা নদীর মাঝে,সূর্যের পড়ন্ত আলোয় চারদিকে এক মায়াবী পরিবেশ। সবাই তখন নিশ্চুপ বসে বসে কেবল উপভোগ করছে প্রকৃতি। সূর্যের আলো পশ্চিম আকাশে মিলিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই লঞ্চের বৈদ্যতিক আলো জলে উঠলো আর সাথে সাথেই সবাই ছুঠলো যার যার নির্ধারিত কেবিন এ।কারণ আর কিছুই নই,সবাই মোবাইল চার্জ দিয়ে নিচ্ছিলো। যদি ও হিরইন পয়েন এ আসার অনেক আগে থেকেই কোন মোবাইলেই নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছিলোনা। রাতের আধারে বাইরের কিছুই যেহেতু স্পষ্ট নয়,তাই ঐ দিন লঞ্চের ভিতরে সবাই গানবাজনা আর গল্প করেই কাটিয়ে দিলাম। স্যারেরাও আমাদের সাথে অংশ নিলেন।রাত ৯টার দিকে আমরা রাতের খাবার খেয়ে সবাইকে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর সুযোগ করে দিলাম যাতে পরদিন সূর্যদোয় মিস্ না হয়।তাছাড়া সবাই দীর্ঘ ভ্রমনজনিত ক্লান্তও ছিল।


রাতের আধারে হিরইন পয়েনে ...
৩রা ডিসেম্বর বুধবার, ভোর ৪.৩০ এ ঘুম ভাঙ্গলো।উঠেই কেবিন থেকে বের হয়ে দেখি সবাই প্রায় উঠে গেছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি চারপাশ কুয়াশার চাদরে ঢাকা।তারপর মুখহাত ধুয়ে সবাই যখন তৈরী হয়ে এলো ততোক্ষণে সূর্য পূব আকাশে উকিঁ দেয়া শুরু করছে।

ভোরের আলো ফুটছে...

লঞ্চের সাথে থাকা ইন্জ্ঞিন চালিত নৌকায় করে আমরা ৫০ জন রওনা দিলাম ভোর রাতের সুন্দরবন দেখার উদ্দেশ্যে।
দুই পাশে ঘন বন,গোলপাতা,সুন্দরী সহ আরও অনেক নাম না জানা গাছগাছালি দেখতে দেখতে এগুচ্ছে আমাদের নৌকা।দুই তীরে এবং গাছের ডালে অলস বসে আছে বিভিন্ন জাতের বক ও নাম না জানা পাখিরা।নানান রঙের,নানান সৌন্দর্যের মাছরাঙাগুলোই কেবল ব্যস্ত সময় পার করছিল মাছ শিকার করে। নদীর দুই পাড়ে স্থানীয় জেলেরা ব্যস্ত ছিল তাদের লাগানো জাল থেকে মাছ ছড়ানোতে।আমরা সবাই তখন ব্যস্ত প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য্য অবলোকন করায়।

জেলেদের মাছ ধরা...

এমন সময় হঠাৎ হামিদ স্যার এর চিৎকারে আমরা অবাক হয়! ব্যাপার কি? আর কিছুই না,গাছের ফাঁকে সুন্দরবনের এক মায়াবী হরিণ।আমরা সবাই অবাক চোখে হরিণটাকে দেখছি,ঠিক তেমনি হরিণটিও অবাক হয়ে আমাদের দেখছে! তারপর আবার চিৎকার... আরও হরিণ... অসাধারণ সেই অনুভূতি। আমাদের নেওয়া ডিজিটাল ক্যামরাগুলোর তথ্য ভান্ডার দ্রুত সমৃদ্ধ হচ্ছিল হরিণ,পাখি এবং নাম না জানা অচেনা সব গাছের ছবি তুলে ও ভিড়িও করে। এইভাবে কখন যে সূর্য পূব আকাশে সম্পূর্ণ উঠে গেছে খেয়ালি করেনি কেউ। এরপর আমরা ইন্জ্ঞিন নৌকায় গেলাম হিরইন পয়েন এর জেঠিতে।উদ্দেশ্য হিরইন পয়েন ঘুরে দেখা।হিরইন পয়েন এ ঢোকার মুখেই ছিল বিশ্ব ঐতিয্য ফলক।আগে-পিছে ২জন নিরাপত্তা রক্ষী নিয়ে আমাদের পুরো দলটাই প্রথমবারের মত সুন্দরবনের ভিতরে প্রবেশ করলো। অবশ্য হিরইন পয়েন এ আমরা তেমন কোন প্রাণীই দেখিনি।তবে গানম্যান যখন আমাদের ডেকে বাঘ মামার পায়ের ছাপ দেখালো তখন যে সবার মনে অজানা ভয় এসে ভর করলো তা সবার চোখেমুখেই ভেসে উঠলো।কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর আমরা উঠলাম হিরইন পয়েন এর পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এ। এই টাওয়ারটির বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক।৫ তলা বিশিষ্ট এই টাওয়ার এ ৫ জনের বেশী একসাথে ওঠা নিষেধ।
টাওয়ার এর উপর থেকে তেমন কিছু দেখাও যায়নি।


বিশ্ব ঐতিয্য ফলকের সামনে...
হিরইন পয়েন দেখে লঞ্চ এ ফিরে এসেই সবাই সকালের নাস্তা শেষ করলো।তারপর আমাদের লঞ্চের ক্যাপ্টেন ঘোষণা দিলেন,আমরা হিরইন পয়েন থেকে লঞ্চ ছেড়ে দুবলার চরের উদ্দেশ্যে রওনা করছি।এভাবেই শেষ হলো আমাদের হিরইন পয়েন এর অভিযান। লঞ্চ এখন দুবলার চরের পথে... বাতাসে শুটকির গন্ধ পেয়েই বুঝলাম আমরা দুবলার চরে পৌছে গেছি।দুবলার চরে পৌছাঁলাম তখন সকাল ১০.৩০। সবাই নামলাম।স্যারেরা সময় বেধে দিলেন আধা ঘন্টা।কারণ আমাদের পরের গন্তব্য কটকায় পৌছাতে হবে দ্রুত।


দুবলার চর...
দুবলার চরে নেমেই ছুটে গেলাম শুটকি পরিদর্শনে। নানা জাতের নানা ধরনের শুটকি শুকানো হচ্ছে।সবচেয়ে ভালো লাগলো যখন জানলাম,ওখানে কাজ করা মানুষগুলো বেশীর ভাগই চট্টগ্রাম জেলার।নিজেদের জেলার মানুষ পেয়ে তারাও খুব খুশি, এই সুযোগ এ আমরাও কিছুটা কম দামে শুটকি পেয়ে গেলাম তাদের কাছে!অনেকেই শুটকি কিনলাম আমরা।ফাকেঁ ফাকেঁ ছবি তুলছিল সবাই।বেশ কিছু গ্রুপ ছবি তুললাম।আমার ক্যামেরাও থেমে ছিল না। আরও কিছুক্ষণ এদিক সেদিক হেটেঁ সবাই লঞ্চ এ ফিরে এলাম।এরপর লঞ্চ আবার যাত্রা শুরু করলো কটকার উদ্দেশ্যে।
আবার সেই লঞ্চের একঘেয়ে বটবট আওয়াজ। কিন্তু নদীর দু পাশের প্রকৃতি সেই একঘেয়েমি দূর করে দেয় নিমেষেই।তার সাথে ছাত্রদের গীটারের টুংটাং আওয়াজ ও দরাজ গলায় গাওয়া গান
ওরে..নীল দরিয়া...
আমায়... দে রে দে... ছাড়িয়...
সে এক দারুন অনুভূতি...
এভাবে কখন যে সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো খেয়ালই করিনি।হঠাৎ লঞ্চের হুইসেল এ সম্বিত ফিরে পেলাম সবাই।বুঝতে পারলাম কটকা চলে এসেছি আমরা।
তাড়াতাড়ি দুপুরের খাবার সেরে নিলাম সবাই।তারপর সবাই দ্রুত তৈরী হয়ে নিলাম কটকা ভ্রমনের জন্য।লঞ্চ ঘাটে ভিড়লে ধীরে ধীরে সবাই নেমে পড়লাম কটকার মূল ভূমিতে।শুরু হলো কটকা অভিযান... সুন্দরবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর জায়গা কটকা.... লঞ্চ থেকে কটকা ঘাটে নামার পূর্বেই বুঝতে পারলাম কেন কটকা এতো আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট।নদীর দু পাশেই ঘন জঙ্গল,তার ফাঁকে ফাঁকে হঠাৎ দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির বানর,পাখি ও হরিণ।আমাদের আসার আওয়াজ পেয়ে তারা লুকাতে থাকে বনের গভীরে।
সবাই নামলাম লঞ্চ থেকে।তারপর স্যারেরা আমাদের ৭টি গ্রুপে ভাগ করে দিলেন,প্রতি গ্রুপে একজন গ্রুপ লিডারও ঠিক করে দিলেন যাতে গ্রুপ লিডার সবার প্রতি নজর রাখতে পারে ।সুন্দরবনের অন্য সব জায়গা থেকে কটকায় অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন এর ব্যাপারে আমাদের আগেই বলে দেওয়া হয়েছিল।অতঃপর কটকা অভিযান শুরু...


কটকা প্রবেশ...

সবার সামনে নিরাপত্তা রক্ষী তারপর আমরা এবং সবশেষেও আর একজন নিরাপত্তা রক্ষী,এভাবেই আমরা শুরু করি কটকার অভ্যন্তরে যাত্রা।কটকায় ঢুকার মুখেই পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।তাই ৭দলে ভাগ হয়ে আলাদা আলাদা ভাবে টাওয়ার এ উঠলাম। সে এক অসাধারণ দৃশ্য! চারপাশে সবুজ আর তার মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে হরিণের দল।আমরা যে হরিণের এত কাছে তা টাওয়ার এ উঠার আগ পর্যন্ত বুঝতেই পারিনি।ঐ মূহুর্তে সবাইকে প্রকৃতি যেন যাদু করে রেখেছিল তার সৌন্দর্য দিয়ে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে নেমে সবাই বনের গভীরে রওনা দিলাম। কারও মুখে আওয়াজ নেই... নিঃশব্দ... যেন সবাই বাকহারা...
আসলে সবাই চুপ করেছিল হরিণের দল যাতে পালিয়ে না যায় সেজন্য।
হরিণগুলো দলবল সহ ঘুরছিল ।কিন্ত যখনই আমাদের অস্থিত্ব বুঝতে পেলো তখন পালিয়ে গেলো এদিক সেদিক...কিন্তু পালালে কি হবে আমাদের ক্যামেরাগুলোর শক্তিশালী লেন্স ঠিকই তাদের বন্দি করে ফেলেছে ! ততোক্ষণে আমাদের ছাত্রদের দলগুলো মিলেমিশে একাকার।যে যার মত উপভোগ করতে লাগলো এইসব দূর্লভ দৃশ্য।অবশ্য দল ভাঙ্গলেও আমরা সবাই একত্রে ছিলাম সবসময়।তাই স্যারেরাও তেমন বাধাঁ দিলেন না।


হরিণ দর্শন...
এভাবে প্রকৃতি ও হরিণ দেখতে দেখতে কখন যে আমরা গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করেছি বুঝতেই পারিনি। যখন খেয়াল করলাম দেখি দু পাশেই ঘন জঙ্গল। হাজারো গাছ। একটু ভালোভাবে খেয়াল করতেই দেখলাম শত শত ভাঙ্গাঁ গাছ।
ঘূর্ণিঝড় সিডরের তান্ডব। সিডর এর ভয়াবহ তান্ডব থেকে পুরো দেশকে রক্ষা করতে সুন্দরবন নিজেকে বিলিয়ে কীভাবে দেশকে রক্ষা করেছে তা নিজে না দেখলে বোঝা অবিশ্বাস্য...! কিন্তু আশার কথা আবারও জেগে উঠেছে সুন্দরবন । নতুন নতুন গাছগাছালিতে ভরে উঠেছে পুরো সুন্দরবন।যেন এই শীতেই বসন্তের আগমন শোনাচ্ছে সুন্দরবন।সুন্দরবনের এই নতুন জাগরণ সুন্দরবনকে নিয়ে গেছে অন্য এক মাত্রায়।তাই এখনকার সুন্দরবন আগের চেয়ে আরও বেশী সুন্দর,আরও বেশী আকর্ষনীয়।

সিডরের তান্ডব...

আমরা এগিয়ে চলছি ঘন জঙ্গলের মধ্যখান দিয়ে.... দুপাশে হাজারো গাছ,নানা প্রজাতির পাখির আওয়াজ এবং গাইডের মুখে বাঘের লোমহর্ষক ঘটনা শুনতে শুনতে আমরা এগুচ্ছি ঘন জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে।
সবাই চুপচাপ,অজানা আতংক মনে, কখন আবার বাঘ মামার শিকার হতে হয় ! হঠাৎ শো শো গর্জন কানে এলো...বাঘ যেন ছুটে আসছে এইদিকে !!
তারপরেও সবাই এগিয়ে যায় সামনের দিকে। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠে গর্জন।হঠাৎ করেই পুরো দৃশ্যপঠ বদলে গেল!! সুন্দরবন তার রূপ যেন বদলে ফেললো নিমেষেই।আমাদের সামনে এখন বিশাল জলরাশি।সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে সুন্দরবনের উপর।সে এক অন্যরকম সৌন্দর্য্য,ভাষায় প্রকাশ করার নয়।সাগর জীবনে অনেকবার দেখেছি কিন্তু এমন ভাবে আর কখনো আমার চোখে ধরা পড়েনি।সবাই সাগর দেখে যেন পাগল হয়ে গেল।এতক্ষণের একতাবদ্ধ দলটি ভেঙ্গে,সবাই ছোটাছুটি শুরু করলো।
কেউ গেল পানিতে,কেউ শামুক কুড়াতে,কেউবা গলা ছেড়ে গান ধরলো।


কটকা সমুদ্র সৈকত...
সংবিৎ ফিরে পেলাম যখন গার্ড জানালো ২০০৪ এর এক মর্মান্তিক ঘটনা। ১১ জন ছাত্র-ছাত্রীর পানিতে মৃত্যুবরনের ঘটনা শুনে স্যাররা সবাইকে সাবধান করে দিলেন। এমন সময় দূর থেকে এক ছাত্রের চিৎকারে পরিবেশ আরও ভীতিকর হয়ে উঠে।কাছে গিয়ে দেখি তরতাজা বাঘের পায়ের ছাপ।একটা-দুটা নয় অনেকগুলো।
গার্ড এগিয়ে এসে এই ছাপ পর্যবেক্ষণ শেষে ঘোষণা করলো এই ছাপ অল্প কিছুক্ষণ আগের।কারণ সমুদ্রের পাড়ের প্রচুর বাতাসে বালিতে এই ছাপ আধা ঘন্টার বেশি থাকেনা।আরও বললো অন্তত দুইটি বাঘ এসেছিল।

বাঘের পায়ের চাপ...
আমাদের অবস্থা হলো তখন দেখার মতো।সবাই যেন বাঘ মামার গন্ধ পাচ্ছিলো।এই বুঝি বাঘ মামা এলো!
কিছুক্ষণ পর গার্ডদের পীড়াপীড়ি ও শেষে স্যারদের নির্দেশে আমরা পূণরায় জঙ্গল পার হয়ে ফিরে এলাম লঞ্চে।শেষ হলো সুন্দরবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অভিযান।আমরা তৈরী হতে থাকলাম পরের দিনের কারমজল অভিযানের জন্য.... সকালে ঘুম ভাঙ্গলো লঞ্চের ভটভট আওয়াজে... উঠেই দেখি লঞ্চ করামজলের উদ্দ্যেশে রওনা দিয়েছে ভোর রাতেই।লঞ্চের পিছনে গিয়ে দেখি কটকা এখনো দেখা যাচ্ছে।মনটা খারাপ হয়ে গেল,প্রিয় কটকা থেকে বিদায় নেওয়া হলোনা বলে।করামজল কটকা থেকে দীর্ঘ ৬-৭ ঘন্টার ভ্রমন
এই দীর্ঘ সময় খুবই আনন্দে কাটালাম আমরা সবাই মিলে।ছোটখাট একটা অনুষ্ঠান হয়ে গেল লঞ্চের ছাদে,যাতে ছাত্র-শিক্ষক সবাই অংশগ্রহন করলো।
গান,কৌতুক,অভিনয় সবই ছিল...

অভিনয়ের একাংশ...


পুরস্কার বিতরণ...

এভাবে কখন যে দিন কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না।বিকেল নাগাদ আমরা করামজল পৌছালাম। করামজল আসলে একটা সাফারী পার্ক বলা চলে।এখানে ঢোকার মুখেই সুন্দরবনের একটা বিশাল মানচিত্র।পাশেই আছে বাঘ মামার কঙ্কাল, কুমিরের ডিম ইত্যাদি। একটু সামনে এগুতেই দেখি হরিণ।হরিণগুলো সুন্দরবনের বন্য হরিণের মতো পালালোনা খাবারের লোভে।উম্মুক্ত বানরগুলো খুব মজা দিল সবাইকে। এরপর সবাই ঢুকলাম বনের গভীরে অবশ্য কটকার মতো নয় এখানে বন বিভাগের বানানো সুদৃশ্য পথে আমরা রওনা হলাম ভিতরে। এখানে দেখার তেমন কিছু নাই, তবে গাছের গায়ে নাম লেখা থাকায় গাছগুলো চিনতে পারলাম সবাই।

বনের গহীনে বন্ধুর সাথে আমি...
বন থেকে বের হয়ে গেলাম কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র দেখতে।এখানে একটা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার আছে যেখান থেকে পুরো করামজল দৃশ্যমান।অবশেষে সব দেখা শেষে সবাই ফিরে এলো লঞ্চেআসার সময় অবশ্য সবাই সুন্দরবনের মধু কিনতে ভুল করলোনা।
অতঃপর শেষ হলো আমাদের সুন্দরবন ভ্রমন...

বিদায় সুন্দরবন...
গত ৫দিনের সুখ স্মৃতি নিয়ে সবাই রওনা হলাম নিজ গন্ত্যব্যে।
tayub লেখক আবু তৈয়ব
Prothom-alo Blog

No comments:

Post a Comment