নিসর্গের সৌন্দর্যভূমি নেত্রকোনা
মোঃ জাভেদ হাকিম
ইতিহাস-ঐতিহ্যের ও পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জেলা নেত্রকোনা। ভ্রমণপিপাসু সংগঠন ‘দে ছুট’ ছুটি পেয়েই ছুটেছে সেখানে। নেত্রকোনা শহরের বড় বাজারের আপন সুজের স্বত্বাধিকারী গোলাম মোস্তফা নির্বিঘ্নে ভ্রমণের সব প্রস্তুতি করে রেখেছিলেন। পুরনো শহর, মগ্রা নদীর তীরে অবস্থিত। এক সময়কার প্রমত্তা মগ্রা এখন কোনো কোনো স্থানে হেঁটেই পার হওয়া যায়। বুকের ভেতর হাহাকার করে ওঠে যেন বলার কেউ নেই। দেখা হলো শতবর্ষী বটবৃক্ষ, সুফি আঃ জব্বার (রহ.) স্থাপিত ঐতিহাসিক বড় বাজার জামে মসজিদ। শহরে বড় বড় কয়েকটি দীঘি রয়েছে। যেগুলো দ্বারা শহরটি হয়েছে সমৃদ্ধ। মসজিদ-মন্দিরগুলো পাশাপাশি, যা কিনা সম্প্রীতির সাক্ষী। জেলার নামকরা খাদ্য বালিশ (মিষ্টি)। বড় বাজারের সুধীজন হাজী মোঃ আশ্রাফ আলী ‘দে ছুট’ দলকে আপ্যায়ন করালেন। দেখা হলো সুসং দুর্গাপুরের বিজয়পুর গ্রামের মানুষের প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে ক্ষতবিক্ষত হওয়া চীনা মাটির ন্যাড়া পাহাড়। যে মাটি দেশের সিরামিক শিল্পের জন্য ব্যবহৃত হয়।
চারদিকে সবুজ বৃক্ষে মোড়ানো পাহাড়, মাঝে সমতল ভূমি। পাহাড়ি নদী সোমেশ্বরী। দু’তীর সিলিকন বেলাভূমি। স্বচ্ছ টলটলে নদীর জলের তলদেশ। ১৬ রাইফেল ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পের পাহাড় থেকে দুর্গাপুরের সৌন্দর্য দু’নয়ন ভরে উপভোগ করা যায়। সুসং দুর্গাপুরে অবস্থিত ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয়া উপজাতি টঙ আন্দোলনের মহান নেতা মণি সিংহের স্মৃতিসৌধ, আরও আছে আদিবাসী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। আগে থেকেই যোগাযোগ করলে গারো আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য উপভোগ করা সম্ভব।
রানীকং দুর্গাপুরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এবার যাচ্ছি লেঙ্গুরা। পিচ করা রাস্তা, পানি কেটে চলা, সুড়ঙ্গ পথ, কখনও ধুলোর আস্তরণ, খড়খড়া সুড়কি, কখনওবা সোঁদা মাটির গন্ধ শুঁকে মোটরসাইকেল সামনে এগিয়ে চলা। দুর্গম অঞ্চল, প্রচণ্ড কষ্টে গুটিকয়েক বন্ধুর চিত্কার, ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর, দু’একজনের এলোমেলো কথা তখন সিদ্ধান্ত নেই এদের নিয়ে আর ভ্রমণে আসব না, কিন্তু যখন ওরা প্রকৃতির নতুন কোনো এক রূপ আবিষ্কার করে তৃপ্তির হাসি হেসে বলে, ‘দোস্ত তোর জন্যই আমাদের এ প্রাপ্তি’ তখন নিমিষেই সব ভুলে যাই। পথের দু’পাশের দৃশ্য বাংলার চিরায়িত সৌন্দর্যের রূপ। অগ্রহায়ণ মাস, পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধে মন আনচান। ফসলের মাঠে কৃষাণ-কৃষাণির হাসির সঙ্গে আমরাও একাত্ম হয়ে যাই। উপজাতি মেয়েরা মনের আনন্দে ধান কাটছে। পাহাড়ের ঢালুতে গভীর বন। কোনো কোনো স্থানে রক্ত জমাট হওয়ার মতো হিম ঠাণ্ডা। আদিবাসীদের বসতভিটা সে এক অন্যরকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি। সরকারের সংশ্লিষ্ট পর্যটন বিভাগ আন্তরিক হলে নেত্রকোনা জেলাকে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করা সম্ভব। বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রে যখন পর্যটক আকর্ষণে কৃত্রিম স্থাপনা তৈরিতে ব্যস্ত তখন আমরা চোখ মেলে ঘুমিয়ে। ‘দে ছুট’-এর এবারের ভ্রমণ সঙ্গী জসিম, কচি, কালাম এবং অলরাউন্ডার টুরিস্ট আক্তার। ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭টা সাড়ে ৭টার মধ্যে কিছুক্ষণ পরপর বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া গেটলক ২০০ টাকা। শহরের বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেলের মধ্যে আল নূর রাতযাপনের জন্য যথেষ্ট ভালো। ভাড়া ডাবল বেড ৩৫০ টাকা। খাওয়ার জন্য স্টেশন রোডের আলেফ খাঁর হোটেল ও বিকালের নাস্তার জন্য বড় বাজারের ইসমাইলের হোটেল। ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনির জন্য বিখ্যাত। দুর্গাপুর, লেঙ্গুরা যাওয়ার জন্য লোকাল বাস আছে। বেবিট্যাক্সি আছে, তবে মোটরসাইকেল উপযুক্ত বাহন। সারাদিনের জন্য মোটরসাইকেল প্রতি এক হাজার টাকা ভাড়া, যাবতীয় খরচ তাদের। মোটরসাইকেল ভাড়া করার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যে, চালক অভিজ্ঞ কিনা। আর একটি বিষয় এখানে লক্ষ্য রাখতে হবে তা হলো চালক যেন মাদকাসক্ত না হয়। সীমান্ত এলাকায় গিয়ে আপনাকে গাইড না করে সে নিজের নেশাদ্রব্যের আশায় ব্যস্ত হয়ে পড়বে এমন সতর্কতা আমাদের জানিয়ে দিয়েছিলেন অনেকে। দু’দিনের ভ্রমণে জনপ্রতি ২ হাজার ২শ’ টাকা হলেই যথেষ্ট। বসন্তে হালকা শীতেই ভ্রমণ পিপাসু বন্ধুরা ঘুরে আসুন প্রকৃতি কন্যা নয়ন জুড়ানো নেত্রকোনা।
ছবি : লেখক
চারদিকে সবুজ বৃক্ষে মোড়ানো পাহাড়, মাঝে সমতল ভূমি। পাহাড়ি নদী সোমেশ্বরী। দু’তীর সিলিকন বেলাভূমি। স্বচ্ছ টলটলে নদীর জলের তলদেশ। ১৬ রাইফেল ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পের পাহাড় থেকে দুর্গাপুরের সৌন্দর্য দু’নয়ন ভরে উপভোগ করা যায়। সুসং দুর্গাপুরে অবস্থিত ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয়া উপজাতি টঙ আন্দোলনের মহান নেতা মণি সিংহের স্মৃতিসৌধ, আরও আছে আদিবাসী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। আগে থেকেই যোগাযোগ করলে গারো আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য উপভোগ করা সম্ভব।
রানীকং দুর্গাপুরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এবার যাচ্ছি লেঙ্গুরা। পিচ করা রাস্তা, পানি কেটে চলা, সুড়ঙ্গ পথ, কখনও ধুলোর আস্তরণ, খড়খড়া সুড়কি, কখনওবা সোঁদা মাটির গন্ধ শুঁকে মোটরসাইকেল সামনে এগিয়ে চলা। দুর্গম অঞ্চল, প্রচণ্ড কষ্টে গুটিকয়েক বন্ধুর চিত্কার, ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর, দু’একজনের এলোমেলো কথা তখন সিদ্ধান্ত নেই এদের নিয়ে আর ভ্রমণে আসব না, কিন্তু যখন ওরা প্রকৃতির নতুন কোনো এক রূপ আবিষ্কার করে তৃপ্তির হাসি হেসে বলে, ‘দোস্ত তোর জন্যই আমাদের এ প্রাপ্তি’ তখন নিমিষেই সব ভুলে যাই। পথের দু’পাশের দৃশ্য বাংলার চিরায়িত সৌন্দর্যের রূপ। অগ্রহায়ণ মাস, পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধে মন আনচান। ফসলের মাঠে কৃষাণ-কৃষাণির হাসির সঙ্গে আমরাও একাত্ম হয়ে যাই। উপজাতি মেয়েরা মনের আনন্দে ধান কাটছে। পাহাড়ের ঢালুতে গভীর বন। কোনো কোনো স্থানে রক্ত জমাট হওয়ার মতো হিম ঠাণ্ডা। আদিবাসীদের বসতভিটা সে এক অন্যরকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি। সরকারের সংশ্লিষ্ট পর্যটন বিভাগ আন্তরিক হলে নেত্রকোনা জেলাকে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করা সম্ভব। বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রে যখন পর্যটক আকর্ষণে কৃত্রিম স্থাপনা তৈরিতে ব্যস্ত তখন আমরা চোখ মেলে ঘুমিয়ে। ‘দে ছুট’-এর এবারের ভ্রমণ সঙ্গী জসিম, কচি, কালাম এবং অলরাউন্ডার টুরিস্ট আক্তার। ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭টা সাড়ে ৭টার মধ্যে কিছুক্ষণ পরপর বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া গেটলক ২০০ টাকা। শহরের বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেলের মধ্যে আল নূর রাতযাপনের জন্য যথেষ্ট ভালো। ভাড়া ডাবল বেড ৩৫০ টাকা। খাওয়ার জন্য স্টেশন রোডের আলেফ খাঁর হোটেল ও বিকালের নাস্তার জন্য বড় বাজারের ইসমাইলের হোটেল। ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনির জন্য বিখ্যাত। দুর্গাপুর, লেঙ্গুরা যাওয়ার জন্য লোকাল বাস আছে। বেবিট্যাক্সি আছে, তবে মোটরসাইকেল উপযুক্ত বাহন। সারাদিনের জন্য মোটরসাইকেল প্রতি এক হাজার টাকা ভাড়া, যাবতীয় খরচ তাদের। মোটরসাইকেল ভাড়া করার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যে, চালক অভিজ্ঞ কিনা। আর একটি বিষয় এখানে লক্ষ্য রাখতে হবে তা হলো চালক যেন মাদকাসক্ত না হয়। সীমান্ত এলাকায় গিয়ে আপনাকে গাইড না করে সে নিজের নেশাদ্রব্যের আশায় ব্যস্ত হয়ে পড়বে এমন সতর্কতা আমাদের জানিয়ে দিয়েছিলেন অনেকে। দু’দিনের ভ্রমণে জনপ্রতি ২ হাজার ২শ’ টাকা হলেই যথেষ্ট। বসন্তে হালকা শীতেই ভ্রমণ পিপাসু বন্ধুরা ঘুরে আসুন প্রকৃতি কন্যা নয়ন জুড়ানো নেত্রকোনা।
ছবি : লেখক
No comments:
Post a Comment