Search This Blog

FCO Travel Advice

Bangladesh Travel Advice

AFRICA Travel Widget

Asia Travel Widget

Thursday, November 18, 2010

কৃষি মত্স্য ও ভেড়া পালনের অপার সম্ভাবনার নিঝুম দ্বীপ

কৃষি মত্স্য ও ভেড়া পালনের অপার সম্ভাবনার নিঝুম দ্বীপ

কৃষি, মত্স্যচাষ ও ভেড়া পালনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে নিঝুম দ্বীপে। দ্বীপের বিশাল জলসীমায় রয়েছে বিপুল পরিমাণ মাছের ভাণ্ডার। উর্বর মাটি খুঁড়লেই মিঠাপানির সংরক্ষণাগার কৃষিতে এক বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে। কৃষি বিভাগ বা সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থা উদ্যোগ নিয়ে দ্বীপবাসীকে আধুনিক চাষ পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেই এই দ্বীপ থেকে প্রতি বছর বিপুল রাজস্ব জমা হতে পারে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে।
দেশের মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখা যাবে নিঝুম দ্বীপের অবস্থান বঙ্গোপসাগরের মত্স্যচারণ এলাকার প্রবেশপথে। এখানেই রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বিশাল ভাণ্ডার। কিন্তু আমাদের জেলেরা প্রযুক্তিগত দিক থেকে পিছিয়ে থাকায় আধুনিক থাই ও ভারতীয় ট্রলার আমাদের সীমানা থেকে প্রতিনিয়ত টন টন ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
ইলিশ মৌসুমে নিঝুম দ্বীপের জলরাশি থেকে ধরা পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। প্রাচীনকাল থেকে এই ইলিশের কারণে জেলেদের কাছে নিঝুম দ্বীপের আরেক নাম ইলিশ নগরী। যদিও এখন আগেরমত ব্যাপক ইলিশ জালে পড়ে না। তবু যে ইলিশ পাওয়া যায়, তার পরিমাণও একেবারে কম নয়। এই দ্বীপের ইলিশ শিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, বছর দশেক আগেও প্রতি রাতে কমলার খালের শেষ মাথায় বিশাল জেনারেটর বসিয়ে গোটা এলাকা আলোকিত করে চলত ইলিশ ও জাটকা ধরার মহোত্সব। সে সময় নির্বিচারে জাটকা ধরায় মাছের পরিমাণ কমে গেছে। তবে স্থানীয় জেলেরা এখন অনেক সচেতন। তারা আর জাটকা বা কারেন্ট জালে মাছ ধরে না। এভাবে চললে অল্প সময়ের মধ্যে আবারও ইলিশ নগরীর ঐতিহ্য ফিরে আসবে বলে বিশ্বাস করেন স্থানীয় জেলেরা। এছাড়া দ্বীপের উপকূল ও চরাঞ্চলগুলো চিংড়ি চাষের জন্যও অত্যন্ত উপযোগী। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে সাগরের লোনা জোয়ারের সঙ্গে প্রচুর পোনা ভেসে আসে। এ সময় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মত্স্য ব্যবসায়ীরা শত শত ট্রলার নিয়ে এসে এখান থেকে চিংড়ি পোনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। নদীর জোয়ারের পানি থেকে চিংড়ি পোনা ধরার জন্য দ্বীপের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নেটের জাল সরবরাহ করে তারা। এসব চিংড়ি পোনা ধরে দেয়ার জন্য প্রতি একশ’ পোনার বিপরীতে ২০-২৫ টাকা করে দেয়া হয়। অথচ খুলনায় একশ’ চিংড়ি পোনা বিক্রি হয় ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। সরকার খুলনাকে চিংড়ি জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে। অথচ খুলনার ব্যবসায়ীরা ৬০ ভাগ চিংড়ি পোনা সংগ্রহ করে নিঝুম দ্বীপ থেকে। দ্বীপ সংলগ্ন চরকমলা, চরকামার, চরমোহাম্মদপুর, দমার চর, শুইনার চর, চরবেহানিয়া, চরনুরুল ইসলাম, চরপিয়া, ঢাল চর, মৌলভীর চর, চরগিয়াস উদ্দিন, তেলিয়ারচর, বয়ার চর, চররশিদ, চরআজমল ও সাগরদি এলাকায় প্রচুর চিংড়ি পোনার ভাণ্ডার রয়েছে। এসব চরে বেড়িবাঁধের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষ করলে খুব সহজেই দেশের বৃহত্তর চিংড়ি জোন হিসেবে পরিচিতি পেতে পারে নিঝুম দ্বীপ।
দ্বীপের ভেতরকার খাল ও জলাশয়গুলোতে বিপুল পরিমাণ মিঠাপানির উত্স কৃষিতে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। কিন্তু দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপবাসী আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির সঙ্গে সম্পূর্ণ অপরিচিত। এখানে জমি চষা হয় গবাদিপশু দিয়ে। আবার অনেকে কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়েও চাষাবাদ করেন। বিভিন্ন ধরনের সার, বালাইনাশক ব্যবহার সম্পর্কেও অজ্ঞ। উন্নত বীজের সরবরাহ ব্যবস্থাও অপ্রতুল। এককথায় মান্ধাতা আমলের চাষাবাদ পদ্ধতিতেই চাষ করে এখানকার কৃষকরা। চাষাবাদে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সচেতনতার অভাবে কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসছে না। কৃষি বিভাগ বা সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থা উদ্যোগ নিয়ে এখানকার কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে একটু সচেতন করে তুললেই কৃষিখাতে স্বনির্ভরতা আসবে বলে মনে করেন চাষাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দ্বীপবাসী।
মাছ ধরার পাশাপাশি ভেড়া পালনকেও এই দ্বীপের বাসিন্দাদের অনেকেই একরকম পেশা হিসেবে নিয়েছেন। দ্বীপবাসীর বেশিরভাগের ঘরেই ভেড়া পালন করতে দেখা যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় গৃহপালিত পশুর মধ্যে ভেড়াই এই দ্বীপে উপযোগী প্রাণী। কারণ মানুষের মতো এসব ভেড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সংগ্রাম করতে জানে। এছাড়া অন্যান্য পশুর তুলনায় রোগবালাইও কম হয়। তোলা খাবার দেয়ার ঝামেলা নেই বললেই চলে। সারাদিন বনে-বাদাড়ে, ফসলি জমির আশপাশে এমনকি খাবারের সন্ধানে পানিতে নামতেও দ্বিধা করে না ভেড়ার দল। দ্বীপের অবস্থাসম্পন্ন পরিবারগুলো আর্থিকভাবে আরও সচ্ছলতা আনতে ভেড়া পালন করে। বিক্রির উপযোগী ভেড়া হাতিয়াসহ নোয়াখালীর বিভিন্ন হাটে ট্রলারে নিয়ে বিক্রি করে তারা। আবার ভেড়ার মাংসও সুস্বাদু। স্থানীয় বাজারগুলোতে ভেড়ার মাংসও বেশ চড়া দামে বিক্রি হয়। ভেড়া পালন শর্তে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা স্বল্পসুদে দ্বীপবাসীর মধ্যে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করলে ভেড়া পালনের মাধ্যমেই অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটাতে পারে নিঝুম দ্বীপের বাসিন্দারা

No comments:

Post a Comment