Search This Blog

FCO Travel Advice

Bangladesh Travel Advice

AFRICA Travel Widget

Asia Travel Widget

Tuesday, August 17, 2010

বান্দরবানে সবুজ নিসর্গে

বান্দরবানে সবুজ নিসর্গে

বান্দরবানে সবুজ নিসর্গে

বাস ছেড়েছিল মাঝরাতেরও একটু পর।
‘বান্দরবান খুব সুন্দর, না?’
দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যের এই প্রশ্নের উত্তরে বান্দরবান নিয়ে নানা ইতিবাচক কথা বলা হয়। তার পর থেকেই ওর চোখে স্বপ্ন। সে স্বপ্ন বাকি কজন শিশুর মধ্যেও ছড়িয়ে যায়। শিশুরা উত্তেজনায় ঘুমাতে পারছিল না। কিন্তু আমরা জানি, বাসের গতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওদের চোখে ভর করা স্বপ্ন আরও বড় হবে…।
গন্তব্য বান্দরবান। উপলক্ষ ঈদের ছুটিতে বেড়ানো। ঈদের ছুটিতে বান্দরবানে যেতে চাইলে আগে থেকেই হোটেল, রেস্টহাউস বা রিসোর্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিতে হবে, নইলে থাকার জায়গা পাওয়া যাবে না।
বাংলাদেশ যেখানে সবচেয়ে বেশি আকাশের কাছাকাছি, সে জেলাই বান্দরবান। ঈদ কবে হচ্ছে, সে দ্বিধা কেটে গেছে সন্ধ্যার পরপরই। সুতরাং ভোর হতে শুরু করলেই ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’ গানটি সার্থকতা পেয়ে যাবে।
যাঁরা কাজের চাপে বছরের অন্য সময় বের হতে পারেন না, ঈদের বড় ছুটিটাকেই তাঁরা বেছে নেন বেড়ানোর জন্য। ঢাকার কলাবাগান বাসপাড়ায় অপেক্ষমাণ ব্যক্তিদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী-সন্তানসমেত অনেকগুলো পরিবার দেখে সে কথাই মনে হয়েছিল। বাক্সপেটরা বেঁধে নিয়ে তিন দিনের জন্য ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা’ সব পরিবার।
দ্রুতগতিতে চলা বাসের জানালার বাইরে মেঘের সঙ্গে চাঁদের লুকোচুরি। সরু একফালি চাঁদ কী আনন্দটাই না দিচ্ছে মানুষকে! মহাসড়কের এখানে-ওখানে মাঝেমধ্যেই সৃষ্টি হওয়া যানজটও মাটি করতে পারছে না সে আনন্দকে। বাসটি সবাইকে শুধু বান্দরবানে পৌঁছে দেবে না, পৌঁছে দেবে ঈদ-উৎসবের কাছেও।
২.
ভোরের আকাশ এসে যখন রাঙিয়ে দিচ্ছিল দিগন্ত, তখন অনেকের চোখই জানালার বাইরে। অন্ধকার ছিন্ন করে সূর্য ওঠার আগেই আকাশে লাগছিল লালের পরত। চট্টগ্রাম কালুরঘাট সেতু পেরিয়ে বাস ছুটে চলেছে কক্সবাজার সড়ক দিয়ে। এ পথে কিছুদূর যাওয়ার পর সাতকানিয়া থেকে বাঁ-দিকের আঁকাবাঁকা, উঁচু-নিচু পথটিতে পৌঁছে জুড়িয়ে গেল মন। এ পথই আমাদের পৌঁছে দেবে বান্দরবানে।
সূর্য উঠছে। সমতল থেকে পাহাড়ি পথে পড়তেই দৃশ্যবদল। সবুজ পাহাড়ের মধ্য দিয়ে পথ। কালো রাস্তাটি ছাড়া আশপাশের সবই সবুজ। নীল আকাশে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘ। ঘন কালো মেঘও স্থায়ী হচ্ছে কিছুক্ষণের জন্য—বৃষ্টির সম্ভাবনা নিয়ে। ভ্রমণে থাকা মানুষ দেখতে পেল, পথে-ঘাটে নেমে এসেছে মানুষ। এই মানুষের ভিড়েই কিছু মানুষকে কোলাকুলি করতে দেখে বোঝা গেল, ঈদের নামাজ শেষ হয়েছে।
৩.
থাকব মিলনছড়িতে গাইড ট্যুরের রিসোর্টে। বান্দরবান শহরে পৌঁছে অটোরিকশায় করে তিন মাইল দূরের রিসোর্টটিতে পৌঁছানো গেল দ্রুতই। ধাপের পর ধাপ সিঁড়ি পেরিয়ে ওদের রেস্তোরাঁয় বসার সঙ্গে সঙ্গেই বাটিতে করে এল সেমাই। ঠান্ডা জল। ঈদ উপলক্ষে খাবারটি রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের উপহার।
‘কখন বেড়াতে যাব?’—আশপাশে ঘুরঘুর করতে থাকা শিশুদের প্রশ্ন।
দলের কনিষ্ঠ সদস্যরা এরই মধ্যে দল পাকিয়ে ফেলেছে। ভ্রমণজনিত ক্লান্তির পর বড়রা যখন বিশ্রামের কথা ভাবছেন, তখনই শিশুরা জানিয়ে দিল, মাত্র তিন দিনের ছুটির একটি মুহূর্তও নষ্ট করা চলবে না। অতঃপর ঠিক করা চাঁদের গাড়িতে উঠে পড়া। গন্তব্য চিম্বুক পাহাড়। পথটি আকর্ষণীয়। একদিকে পাহাড়, অন্যদিকে গভীর খাদ। চিম্বুক পাহাড়ের নিচে এসে আমরা গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। হেঁটে হেঁটে উঠি। একটু একটু করে উঠি, আর মনে হয় আকাশের সিঁড়ি ধরেই বুঝি উঠছি।
চিম্বুক থেকে ফেরার পথে ঢুকে পড়ি শৈলপ্রপাতে। এটি একটি পার্কের মতো জায়গা, ঝরনা নেমে এসেছে ওপর থেকে। বড় বড় পাথরের চাঁই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ক্ষীণ জলের ধারা ছুটে চলেছে। জল দেখেই আমাদের মনে হয় বান্দরবানের নদটি দেখব। তাই চলে যাই শঙ্খ নদে। নদটিকে সাঙ্গু নদও বলা হয়। এত স্বচ্ছ জলের নদ দেখা ভাগ্যের ব্যাপার। নৌকায় বসে জলের দিকে তাকালে দেখা যায় মাছের সাঁতার।
এরই মধ্যে আমরা জেনে ফেলেছি, বান্দরবানে আছে মুরং, ত্রিপুরা, বম, তঞ্চ্যঙ্গা, চাকমা, চাক, খ্যাং, খুমি, লুসাই ও পাঙ্খো আদিবাসীরা। বমপাড়ায় গিয়ে আমরা দেখে আসি ভাটিয়াপাড়া স্কুল। সেখানে বমদের বাড়িতে হূষ্টপুষ্ট মোরগ-মুরগি, শূকর দেখা গেল।
দুপুরে খাবার পর আবার যাত্রা। সঙ্গে হালকা খাবার। কক্ষ্যাংঝিরি থেকে নৌকায় করে রুমাবাজার। শঙ্খ নদ বেয়ে যেতে যেতে দুই তীরের জীবনযাত্রা দেখা যায়। রুমা বাজারে কিছুক্ষণ ঘোরার পরই সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ে। আমরা নৌকায় উঠে বসি। ফিরতে হবে। ঈদের দিনটি এত অসাধারণ আনন্দের সঙ্গে কাটবে, তা কে জানত আগে! আফসোস থেকে যায়, নীলগিরি যাওয়া হলো না!
রাতে খাবার পর আমরা একটু হাঁটতে বের হই। একজন বলে ওঠে, আকাশের দিকে তাকাও!
যাঁরা হাঁটছিলেন, তাঁরা কিছুক্ষণের জন্য থমকে দাঁড়ান। আকাশে নক্ষত্রের মেলা! একসঙ্গে এত তারা কখনো কি কেউ দেখেছে! পাহাড়ি পথ ধরে হাঁটতে থাকা মানুষেরা মাঝেমধ্যেই আকাশের দিকে তাকায় আর হয়তো ভাবে, ‘সারাটি রাত্রি তারাটির সাথে তারাটির কথা হয়’ (জীবনানন্দ দাশ)।
এই বান্দরবানেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুটি শৃঙ্গ: তাজিনডং আর কেওক্রাডাং; কিন্তু তা অনেক দূরে। তিন দিনের ছোট ছুটিতে সেখানে পৌঁছানো যায় না। বেশি সময় নিয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে যাওয়ার জন্যও প্রস্তুতি শুরু হয় সেদিন থেকেই।

ঈদের ছুটিতে রাঙামাটি ও বান্দরবানে
অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের হাতছানি দেয় রাঙামাটি ও বান্দরবান। এই ঈদের ছুটিতে পরিবার-পরিজন, বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এসব অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে। তার আগে জেনে নিন কয়েকটি ভ্রমণ সংস্থার ঠিকানা ও বিভিন্ন প্যাকেজ।

রিভার অ্যান্ড গ্রিন
বান্দরবান: এখানে প্রতিজন ঘুরে আসতে পারেন দুই রাত তিন দিনের প্যাকেজে। এতে খরচ পড়বে চার হাজার ৫০০ টাকা।
এর মধ্যে নন-এসি বাস, এসি বাস, সকালের নাশতা ও বেড়ানোর সময় গাইড-সুবিধা পাওয়া যাবে।
এ ছাড়া বান্দরবান ও নিলাগিরি দুই রাত তিন দিনের প্যাকেজে নন এসি বাসে করে যাওয়া, গাড়িতে ঘোরা ও থাকার ব্যবস্থাসহ প্রতিজন প্যাকেজের খরচ পড়বে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা।
রাঙামাটি: দুই রাত তিন দিনের প্যাকেজে ঢাকা থেকে নন-এসি বাস, নন-এসি রুম ও রাঙামাটির আশপাশে ঘুরতে প্রতিজন খরচ পড়বে তিন হাজার ৫০০ টাকা। ফোন: ৮৮২৬৭৫৯।

পেট্রো অ্যান্ড এভিয়েশন
বান্দরবান: ঢাকা-রাঙামাটি-ঢাকা দুই রাত তিন দিন প্রতিজন থাকা-খাওয়া চাহিদাভেদে তিন থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ পড়বে।
রাঙামাটি: ঢাকা থেকে রাঙামাটি দুই রাত তিন দিন প্রতিজন থাকা-খাওয়া ও ঘুরে বেড়ানো চাহিদাভেদে দুই হাজার ৪৫০ থেকে সাত হাজার ৮০০ টাকা খরচ পড়বে। ফোন: ০১৭৩০০৪৩৬১৯।
বেঙ্গল ট্যুর: এই প্রতিষ্ঠানের আলাদাভাবে রাঙামাটি ও বান্দরবানের কোনো প্যাকেজ নেই। তবে দলবেঁধে বা পরিবার-পরিজন নিয়ে যেতে চাইলে তারা ব্যবস্থা করে দেয়। খরচটাও পড়বে চাহিদা অনুযায়ী। ফোন: ৮৮৫৭৪২৪।
জার্নি প্লাস: এই প্রতিষ্ঠানটিও রাঙামাটি ও বান্দরবান ঘুরে বেড়ানোর আয়োজন করে। তবে আলাদা কোনো প্যাকেজ নেই। যেতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন। ফোন: ৯৬৬০২৩৪।

জাহীদ রেজা নূর
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১৭, ২০১০

No comments:

Post a Comment