বান্দরবানে এর আগেও বেশ কবার গিয়েছি—কখনো সহকর্মীদের সঙ্গে, কখনো পরিবারের সঙ্গে, কখনো বা বন্ধুদের সঙ্গে। এবার নতুন একটি জায়গার সন্ধান দিল বন্ধু সুমনা। আমি তো চল্ বলতেই বোঁচকা বাঁধি। ছুটলাম চার বন্ধু। আমি, হাসিনা, রুকু ও সুমনা। বান্দরবানের পর্যটনকেন্দ্রগুলো সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানেন। মেঘলা, চিম্বুক, শৈলপ্রপাত, নীলাচল, নীলগিরি ইত্যাদি। কিন্তু এবার আমাদের গন্তব্য ছিল বান্দরবান শহর থেকে প্রায় পাঁচ-ছয় কিলোমিটার আগে ন্যাচারাল পার্ক নামে নতুন আনকোরা একটি স্পট।
প্রায় ১০০ একর পাহাড়ি টিলায় এই সুন্দর স্পটটি নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি করেছেন একজন প্রকৃতিপ্রেমী, তাঁর নাম ওসমান গনি। এর নাম দিয়েছেন ন্যাচারাল পার্ক। তবে মনে হলো, নামটি ঠিক যুত্সই না, একটি কাব্যিক বাংলা নাম হলে এর প্রতি সুবিচার করা হতো। তো আমি-ই মনে মনে নাম দিয়ে দিলাম প্রকৃতির কাছে। আক্ষরিক অনুবাদ হলো না, তবে শুনতে ভালোই। কী নেই এই পার্কে? ফলের বাগান, ফুলের বাগান, চা-বাগান, কফি বাগান, আম বাগান ছাড়াও গাছের মধ্যে পেঁপে, পেয়ারা, কলা, আমলকী, হরীতকী, বহেরা, পাইন্যাগুলা—আরও কত কী।
প্রায় ১০০ একর পাহাড়ি টিলায় এই সুন্দর স্পটটি নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি করেছেন একজন প্রকৃতিপ্রেমী, তাঁর নাম ওসমান গনি। এর নাম দিয়েছেন ন্যাচারাল পার্ক। তবে মনে হলো, নামটি ঠিক যুত্সই না, একটি কাব্যিক বাংলা নাম হলে এর প্রতি সুবিচার করা হতো। তো আমি-ই মনে মনে নাম দিয়ে দিলাম প্রকৃতির কাছে। আক্ষরিক অনুবাদ হলো না, তবে শুনতে ভালোই। কী নেই এই পার্কে? ফলের বাগান, ফুলের বাগান, চা-বাগান, কফি বাগান, আম বাগান ছাড়াও গাছের মধ্যে পেঁপে, পেয়ারা, কলা, আমলকী, হরীতকী, বহেরা, পাইন্যাগুলা—আরও কত কী।
পাহাড়ি টিলা কেটে পথ তৈরি করা হয়েছে নিখুঁতভাবে। গাছগাছালির ছায়ায় ঢাকা সরু পথ। আবার গাছের নিচে পর্যটকদের জন্য বসার ব্যবস্থাটাতেও চমত্কার রুচির ছোঁয়া। গাছের গুঁড়ি কেটে কোনো ফিনিশিং ছাড়াই তৈরি হয়েছে বেঞ্চ। কোথাও বা বাঁশের মাচায় বৃত্তাকার শনের ছাউনি। বিশ্রামের জন্য দারুণ জায়গা। জিপে চেপে যখন পার্কে ঢুকলাম, আমাদের স্বাগত জানান পার্কের স্বত্বাধিকারী ওসমান ভাই। তাঁর সঙ্গে পোষা ছোট্ট বানরছানাটি ঘুরে বেড়াচ্ছিল পায়ের কাছে। প্রথমে টিপ টিপ বৃষ্টি এবং পরে একেবারে ঝমঝম ধারায় নেমে প্রকৃতিও যেন অভ্যর্থনা জানাল আমাদের। মাথায় বর্ষাতি ধরে হেঁটেছি বৃষ্টিভেজা পাহাড়ি মাটিতে। গাঢ় বেগুনি ফুলগুলো আমাদের দৃষ্টি কেড়ে নিল। রুকু হলুদ জবার মতো দুটি ফুল ছিঁড়ে আমার আর হাসিনার চুলে গুঁজে দিল। অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য আর হঠাত্ বৃষ্টির অবিরল ধারাপাতে এ গহিন অরণ্যে মনে হলো যেন এক রহস্যপুরীতে এসে পড়েছি। আমরা ভ্রমণক্লান্ত পথিকেরা কাঠের সিঁড়ি বেয়ে যখন শনের ছাউনিতে উঠে বসলাম, তখনই বৃষ্টির দাপট গেল বেড়ে। পাহাড়, গাছপালা আর অরণ্য যেন একাকার হয়ে গেল কিছুটা সময়। আর অসীম মুগ্ধতায় আমরা চারজন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে রইলাম।
এই পার্কের সঙ্গে রয়েছে একটি ছোট্ট চিড়িয়াখানা। সেখানে রয়েছে বানর, বনমোরগ, খরগোশ, রাজহাঁস, টিয়া, ময়ূরের মতো পুচ্ছধারী এক ধরনের মোরগ, আরও নাম না-জানা কত রকমের পাখি ও প্রাণী।
এরই মধ্যে দুপুরের খাওয়ার সময় হয়ে গেল। পাহাড়জুড়ে তখনো অবিরাম বৃষ্টি। জলের ঝাপটায় ভিজে শীতল হচ্ছি। আর গল্প করতে করতে খাচ্ছি সাদা ভাতের সঙ্গে বনমোরগের ঝোল। অপূর্ব স্বাদ।
খাওয়া-দাওয়ার পর যাত্রা করলাম বান্দরবান শহরের দিকে। শহর থেকে ফেরার পথে ‘নীলাচল’ দেখার জন্য ছুটলাম বিশাল গিরিশৃঙ্গের সন্ধানে। তখন বৃষ্টি থেমেছে। পড়ন্ত বিকেলে মেঘের ফাঁকে ফাঁকে সূর্য কখনো বা উঁকি মারছে আবার আড়াল হচ্ছে। মেঘ আর রোদের লুকোচুরির মাঝে পৌঁছালাম নীলাচলের চূড়ায়। সেদিন পর্যটকদের কোলাহলে পাহাড়ি নির্জনতাকে উপলব্ধি করার সুযোগ পেলাম না। তবে পাহাড়ের চূড়া থেকে চারদিকের সারি সারি পাহাড়মালার খাঁজে খাঁজে টুকরো টুকরো মেঘপুঞ্জ দেখে মন ভরে গেল। চূড়া থেকে দেখলাম পুরো বান্দরবান শহর। সন্ধ্যার আগমুহূর্তে সবুজ পাহাড়গুলো আস্তে আস্তে ধূসর হতে থাকে। আমাদেরও বাড়ি ফেরার সময় হয়ে আসে।
কী একটা আরণ্যক সুর, অথবা জোনাকির ক্ষীণ আলো কিংবা বর্ষার পানিতে ব্যাঙের ঘ্যানর ঘ্যানর ডাক শুনতে শুনতে ফিরে আসছিলাম কোলাহলমুখর কর্মব্যস্ত নগরে। স্বল্প সময়ের ভ্রমণ হলেও স্মৃতির ঝাঁপি তখন ভরে উঠেছে কানায় কানায়
By: ডেইজী মউদুদ
এই পার্কের সঙ্গে রয়েছে একটি ছোট্ট চিড়িয়াখানা। সেখানে রয়েছে বানর, বনমোরগ, খরগোশ, রাজহাঁস, টিয়া, ময়ূরের মতো পুচ্ছধারী এক ধরনের মোরগ, আরও নাম না-জানা কত রকমের পাখি ও প্রাণী।
এরই মধ্যে দুপুরের খাওয়ার সময় হয়ে গেল। পাহাড়জুড়ে তখনো অবিরাম বৃষ্টি। জলের ঝাপটায় ভিজে শীতল হচ্ছি। আর গল্প করতে করতে খাচ্ছি সাদা ভাতের সঙ্গে বনমোরগের ঝোল। অপূর্ব স্বাদ।
খাওয়া-দাওয়ার পর যাত্রা করলাম বান্দরবান শহরের দিকে। শহর থেকে ফেরার পথে ‘নীলাচল’ দেখার জন্য ছুটলাম বিশাল গিরিশৃঙ্গের সন্ধানে। তখন বৃষ্টি থেমেছে। পড়ন্ত বিকেলে মেঘের ফাঁকে ফাঁকে সূর্য কখনো বা উঁকি মারছে আবার আড়াল হচ্ছে। মেঘ আর রোদের লুকোচুরির মাঝে পৌঁছালাম নীলাচলের চূড়ায়। সেদিন পর্যটকদের কোলাহলে পাহাড়ি নির্জনতাকে উপলব্ধি করার সুযোগ পেলাম না। তবে পাহাড়ের চূড়া থেকে চারদিকের সারি সারি পাহাড়মালার খাঁজে খাঁজে টুকরো টুকরো মেঘপুঞ্জ দেখে মন ভরে গেল। চূড়া থেকে দেখলাম পুরো বান্দরবান শহর। সন্ধ্যার আগমুহূর্তে সবুজ পাহাড়গুলো আস্তে আস্তে ধূসর হতে থাকে। আমাদেরও বাড়ি ফেরার সময় হয়ে আসে।
কী একটা আরণ্যক সুর, অথবা জোনাকির ক্ষীণ আলো কিংবা বর্ষার পানিতে ব্যাঙের ঘ্যানর ঘ্যানর ডাক শুনতে শুনতে ফিরে আসছিলাম কোলাহলমুখর কর্মব্যস্ত নগরে। স্বল্প সময়ের ভ্রমণ হলেও স্মৃতির ঝাঁপি তখন ভরে উঠেছে কানায় কানায়
By: ডেইজী মউদুদ
No comments:
Post a Comment