Search This Blog

FCO Travel Advice

Bangladesh Travel Advice

AFRICA Travel Widget

Asia Travel Widget

Sunday, October 17, 2010

খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের উপচে পড়াভিড়

খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের উপচে পড়াভিড়

আব্দুল্লাহ আল- মামুন, খাগড়াছড়ি থেকে :

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খাগড়াছড়ি। এখানে পাহাড়, ঝরনা, নদী, আকাশ মিলেমিশে একাকার। এখানকার প্রকৃতির নির্মল পটে দেশী বিদেশি পর্যটক ছুটে আসছে। সবুজে ঘেরা পাহাড়ি এ জনপদ এখন পর্যটকদের পদভারে মুখরিত। পর্যটন স্পটগুলোতে দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড়। ঈদের ছুটিতে শহরের হোটেল-মোটেল, রেস্ট হাউস এবং গেস্টহাউসগুলো অনেক আগেই বুকিং হয়েছে। কোথাও সীট না পেয়ে পর্যটকদের শেষ ঠিকানা উপজাতিদের বসত-বাড়ি। অজানা অচেনা অতিথির আশ্রয় মিলছে তাদের ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘরে। পাহাড়িদের অতিথি আপ্যায়নে আগন্তুকরাও মুগ্ধ। পর্যটন শহর খাগড়াছড়ির ছায়া ঢাকা মায়া ভরা গ্রামগুলোতে এখন প্রতিদিন পাহাড়ি-বাঙালির মিলন মেলা বসছে। কেউ আবার বেড়াতে এসেও হোটেল-মোটেলে সীট না পেয়ে জেলা শহর থেকে উপজেলা শহরগুলোর পর্যটন স্পটের কাছাকাছি হোটেল অথবা পরিচিত জনদের ঠিকানায় অন্যত্র পাড়ি জমাচ্ছে।
কোথায় যাবেন?
খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্পটগুলো হচ্ছে- খাগড়াছড়ি জেলা শহরের অদূরেই অবস্থিত আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র অবস্থিত। এ পাহাড় চূড়ায় বসে এক পলকে পুরো খাগড়াছড়ি শহরের অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করা যাবে। তখন আপনার কা্ছে মনে হবে আপনি নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডুতে অবস্থান করছেন। কারণ খাগড়াছড়ির মতই নেপাল শহরটি পাহাড় ঘেরা নির্মল পরিবেশে অবস্থিত। খাগড়াছড়ির এ দৃশ্য অনেকের কাছে কল্পনার দার্জিলিং হিসেবে খ্যাত। আলুটিলা পাহাড়ের নিচেই সিঁড়ি বেয়ে নেমে দেখতে পাবেন রহস্যময় কৃষ্ণ কালো গুহা। যেখানে মশাল জ্বালিয়ে যেতে হয়। এর এক প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে অন্য প্রান্ত দিয়ে বেড়িয়ে আসার পথে আপনাকে নিজে যাওয়া হবে রহস্যের অন্য কোন ভুবনে। এ গুহার নিচে স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা, মাথার কাছে বাদুরের ঝাক আরও কত কিছু...। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রিসাং ঝরনা, এই ঝরনাধারায় অনবরত ঝরনা ধারা ঝরঝর শিরশির বইছে; আর হাতছানিতে আপনাকেই ডাকছে। এখানে গোসলটাও সেরে নিতে পারেন। অনুমতি সাপেক্ষে শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত সেনাবাহিনীর রিজিয়ন কর্তৃক সৃষ্ট গিরী সোভা হ্রদকে ঘিরে গড়ে ওঠা নান্দনিক সাজে সজ্জিত নতুন পর্যটন কেন্দ্র সত্যি আপনাকে অন্য ভুবনে নিয়ে যাবে। খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দেবতা পুকুর, পথে দেখা মিলবে পাহাড়ে পাহাড়ে উপজাতিদের সৃজিত জুম ধানের ক্ষেত, এখানে আসার পথে মারমা, ত্রিপুরা ও চাকমা উপজাতির ঐতিহ্যবাহী ও বৈচিত্রময় জীবনধারা দেখা যাবে, শহরের প্রবেশমুখে রয়েছে নবনির্মিত আনসার ও ভিডিপির নান্দনিকতার ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত হেরিটেজ পার্ক, এখানে বসে এঁকে বেঁকে বয়ে যাওয়া চেঙ্গি নদী, উঁচু ঢেউ তোলা পাহাড়, দূরের নিল আকাশে সাদা মেঘের খেলা দেখার অপূর্ব সুযোগ রয়েছে। যা পর্যটকদের জন্য নতুন সংযোজন। খাগড়াছড়ি শহরের মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রকে ঘিরে হরেক রঙের ফুল,ফলজ, বনজ ও ভেষজ বাগান, পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে ছোট্ট একটি হ্রদ ও লোহার ব্রিজ। খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলা থেকে একটু ভিতরে রয়েছে এশিয়া উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তর বৌদ্ধমূর্তি। এই মূর্তিকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা বিশাল আয়তনের অরণ্য কুটির আপনাকে নিয়ে যাবে চীন, জাপান, কোরিয়ার মত মঙ্গোলীয়ন কোন একদেশের বুড্ডিস জগতে। পানছড়ি উপজেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে রয়েছে তবলছড়ি ঝরনাটিলা। এখানে একটি পাহাড় ছড়ায় ছোট বড় পাথরের উপর দিয়ে প্রবাহমান স্বচ্ছ পানি, কয়েকটি ঝরনা ও বিরাশি টিলার গায়ে আদা-হলুদ, কচু, বিভিন্ন সবজিসহ জুম চাষ দেখার সুযোগটি বেশ ব্যতিক্রম। এখানে গামারি, সেগুনসহ বিভিন্ন ফলজ, বনজ পাহাড়ে হরেক রকম পাখ-পাখালি ছাড়াও বন্য শুকুর, বন্য বানর, বন্য হরিণের হাক-ডাক আনাগোনার দৃশ্যটিও কি কম ব্যতিক্রম?
এছাড়াও খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে একটি বিশাল ঝরনা আবিষ্কৃত হয়েছে। যা দেশের সবচেয়ে বড় ঝরনা বলা হচ্ছে। তবে এখনই এ ঝরনায় যাওয়ার পরিবেশ তৈরি হয়নি। ওদিকে মাটিরাঙ্গার ১০ মাইল এলাকায় শতবর্শী বটবৃক্ষ, রামগড়ের বিডিআরের জন্মস্থানকে ঘিরে গড়ে ওঠা নতুন ঝুলন্ত ব্রিজ ও লেক দেখার মত একটি স্থান। এখানে সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ব বিষয় রামগড় উপজেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট্ট পাহাড়ি ফেনী নদীর ওপারেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য অবস্থিত। যা কাঁটা তাঁরের বেড়া দারা পরিবেষ্টিত। দেশের মানচিত্রে গ্রথিত ও প্রায় চিকন একটি দাগের মত সংযুক্ত স্থানটিই হচ্ছে রামগড়। এই রামগড় সীমান্ত ঘেঁষে রয়েছে বিশাল আকারের একটি চা বাগান সেখানেও আপনারা হারিয়ে যেতে পারেন। যে কোন সময়ে, যে কোন মূহুর্তে...
কিভাবে যাবেন?
রাজধানী ঢাকার কমলাপুর, সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, কলাবাগান থেকে সরাসরি বাস খাগড়াছড়ি আসে। এস আলম, সৌদিয়া, স্টার লাইন(এসিসহ), শান্তি পরিবহন, শ্যামলী বাসযোগে খাগড়াছড়ি আসতে ভাড়া লাগবে ৩০০-৩৫০ টাকা। অভ্যন্তরীণভাবে পাহাড়ি পথে ঘোরাঘুরির জন্য চাঁদের গাড়ি (জীপ) সবচেয়ে ভালো। খোলা গাড়িতে বসে প্রকৃতিও দেখা হবে, ছবি তোলা যাবে। তাছাড়া এক জিপে ২০জন উঠলেও সমস্যা নেই। তাই ভাড়াও অনেক কম। এছাড়া মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার সবই পাওয়া যাবে। এখন খাগড়াছড়ি শহরে ঘোরারোর জন্য অসংখ্য বেটারি চালিত দূষণমুক্ত টমটম গাড়িতো রয়েছেই। টমটম গাড়িতে চেপে কম সময়ে শহরের নিউজিল্যান্ড পর্যটন কেন্দ্র, ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের স্থান খাগড়াছড়ি স্টেডিয়াম, বিভিন্ন দোকানে কেনাকাটার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
কোথায় থাকবেন?
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের খুব কাছে পাহাড় চূড়ায় নবনির্মিত ইমাং রির্সোস এন্ড নেচারাল রেস্টুরেন্ট ডবল কক্ষ নন এসি ১০০০ টাকা, সিঙ্গেল নন এসি ৮০০ টাকা, ডবল এসি রুম ১৮০০ টাকা। শহরের প্রবেশমুখে চেঙ্গী নদীর পারে অবস্থিত পর্যটন মোটেলের ডবল রুম নন এসি ১০৫০ টাকা, ডবল এসি রুম ১৫০০ টাকা, ভিআইপি সুইট রুম ২৫০০ টাকা ও সিঙ্গেল রুম ৩০০ টাকা, এসি রুম ৬০০ নন এসি ডবল নন এসি ৫০০ টাকা, সিঙ্গেল রুম ২০০ টাকা। এছাড়া আরও কম মূল্যে খাগড়াছড়ি বাজার এলাকায় রয়েছে হোটেল আল-মাসুদ, হোটেল লবিয়ত, হোটেল ফোর স্টারসহ অনেকগুলো হোটেল।

Source: www.dailysangram.com

No comments:

Post a Comment