জুন ২৭, ২০১০
ঢাকা থেকে বাস ছেড়ে সরাসরি এসে থামে রাঙ্গামাটি শহরে। রাত দশটার বাস ছাড়লে খুব ভোরেই পৌঁছায়। রাঙামাটি শহরে রয়েছে বেশ কয়েকটি হোটেল। এখন সেখানে পর্যটকদের ভিড় তেমন একটা নেই। রাঙামাটি ভ্রমণ শুরম্ন করা যেতে পারে শহরের একপ্রান্তô থেকে। প্রথমেই যেতে পারেন উপজাতীয় জাদুঘরে। যে কোন বেবিটেক্সিওয়ালাকে বললেই আপনাকে নিয়ে যাবে জাদুঘরে। এখানে রয়েছে রাঙামাটিসহ পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত নানা আদিবাসিদের ব্যবহৃত বিভিন্ন সময়ের নানা সরঞ্জামাদী, পোশাক, জীবনাচরণ এবং বিভিন্ন ধরণের তথ্য। ছোট অথচ অত্যন্তô সমৃদ্ধ এ জাদুঘরটি খোলা থাকে সোম থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৪ টা ৩০ মিনিট পর্যন্তô। শনি, রবি ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতে জাদুঘর বন্ধ থাকে। জাদুঘরে বড়দের প্রবেশ মূল্য পাঁচ টাকা ও ছোটদের দুই টাকা
উপজাতীয় জাদুঘর থেকে কাছেই রাজ বনবিহার। এ অঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর তীর্থ স্থান এটি। এখানে আছে একটি প্রার্থনালয়, একটি প্যাগোডা, বনভান্তেôর (বৌদ্ধ ভিড়্গু) আবাসস্থল ও বনভান্তেôর ভোজনালয়। প্রতি শুক্রবার ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলড়্গে এখানে চলে প্রার্থনা। রাজ বনবিহারে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে পারেন কাপ্তাই লেকের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য।
রাজবনবিহারের পাশেই কাপ্তাই লেকের ছোট্ট একটি দ্বীপজুড়ে রয়েছে চাকমা রাজার রাজবাড়ি। নৌকায় পার হয়ে খুব সহজেই যাওয়া যায় এই রাজবাড়িতে। আঁকা-বাঁকা সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে গাছের ছায়ায় ইট বাঁধানো পথের মাথায় এ সুন্দর বাড়িটি। এখানে আরো রয়েছে চাকমা সার্কেলের প্রশাসনিক দপ্তর।
রাঙামাটি শহরের একেবারে শেষ প্রান্তেô রিজার্ভ বাজার ছাড়িয়ে আরো প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে রয়েছে পর্যটন কমপেস্নক্স। এই কমপেস্নক্সের ভেতরেই রয়েছে সবার চেনা সুন্দর ঝুলন্তô সেতুটি। সেতু পেরিয়ে সামনের পাহাড়ে উঠলে কাপ্তাই লেকের বড় অংশ দেখা যায়। এখান থেকে কাপ্তাই লেকে নৌ ভ্রমণও করা যায়। তবে এখানে সাম্পানে চড়ে ঝুলন্তô সেতুর আশপাশে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগবে। ঘণ্টা ১০০ টাকায় এখানে পাওয়া যাবে পাঁচজনের চড়ার উপযোগী সাম্পান।
পরদিনটি রাখুন কাপ্তাই লেক ভ্রমণের জন্য। ১৯৬০ সালে জল বিদুøৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে কর্ণফুলী হ্রদ তথা কাপ্তাই লেকের জন্ম। প্রায় ১৭২২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ লেকের স্বচ্ছ পানি আর বাঁক বাঁকে পাহাড়ের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। শহরের রিজার্ভ বাজার ঘাটে পাওয়া যায় কাপ্তাই লেকে ভ্রমণের নানা রকম ইঞ্জিন নৌকা। ঝুলন্তô সেতুর কাছেও এরকম অনেক নৌকা আছে, তবে সেখানে ভাড়াটা একটু বেশিই গুনতে হবে। সারাদিনের জন্য একটি বোট ভাড়া করে সকালে চলে যাওয়া যায় শুভলং বাজার। এখানে আর্মি ক্যাম্পের পাশ থেকে সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ের উপরে উঠে কাপ্তাই লেকের অপার সৌন্দর্য উপভোগ কার যায়, তবে এখানে বানর থেকে সাবধান! এদের বিরক্ত করা যাবে না। আর সেটা করলে ওরা কিন্তু চড়াও হতে পারে। শুভলংয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে ফিরতি পথের শুরম্নতেই হাতের ডানে শুভলং ঝরনা। এখন বর্ষাকাল। শুভলংয়ের ঝরণায় তাই অঝোর ধারা। ঝরনার শীতল জলে শরীরটা ভিজিয়ে নিতে পারেন। কাপ্তাই লেকের দুপাশের আকাশছোঁয়া পাহাড়গুলোর সৌন্দর্য দেখতে দেখতে চলতে থাকুন। পথে দুপুরের খাবার সেরে নিতে পারেন টুক টুক ইকো ভিলেজ কিংবা পেদা টিংটিং-এ। শুরম্নতেই পড়বে টুকটুক ইকো ভিলেজ। কাপ্তাই লেকের একেবারে মাঝে এই ইকো ভিলেজটির সুন্দর সুন্দর কটেজে রাত কাটানোরও ব্যবস্থা আছে। এর রেস্তেôাঁরাটিতে পাওয়া যায় বিভিন্ন রকম পাহাড়ি মেনুø। এখান থেকে রাঙ্গামাটি শহরের দিকে আসতে সামান্য কিছু পথ এগুলেই পড়বে পেদা টিংটিং। এখানকার রেস্তেôাঁরাটিতেও থাকে নানা রকম খবারের সঙ্গে পাহাড়ি নানা পদের খাবার। সারাদিন কাপ্তাই লেকের এসব জায়গা ভ্রমণের জন্য একটি ইঞ্জিন বোটের ভাড়া পড়বে ১০০০-২৫০০ টাকা। এছাড়া রাঙামাটি শহর থেকে এখন প্রতিদিন শুভলং ছেড়ে যায় আধুনিক ভ্রমণতরী কেয়ারি কর্ণফুলী। প্রতিদিন সকালে ছেড়ে আবার বিকেলে ফিরে আসে। ফিরতি পথে টুক টুক ইকো ভিলেজ কিংবা পেদা টিংটিংয়ে থাকে বিরতি। যাওয়া-আসার ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা।
প্রয়োজনীয় তথ্যঃ
বাংলাদেশের একমাত্র রিকশামুক্ত শহর রাঙ্গামাটি। তাই এই শহরের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হয় বেবিটেক্সিতে। এক স্টপেজ থেকে আরেক স্টপেজে পৌরসভা নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া হলো ১০ টাকা। এছাড়া রিজার্ভ নিলে শহরের এক প্রান্তô থেকে অন্য প্রান্তেô ভাড়া ৬০-১০০ টাকা। রাঙামাটি শহর থেকে কিনতে পারেন আদিবাসীদের পোশাক,রাঙামাটির তাঁতের কাপড়, আদিবাসীদের তৈরি নানা রকম হস্তôশিল্প সামগ্রী ইত্যাদি। কাপ্তাই লেকে ভ্রমণের জন্য ইঞ্জিন বোটটি দেখে-শুনে নিন। বর্ষাকাল বলে ছাউনি আছে এমন বোট ভাড়া করম্নন। বোটে লাইফ জ্যাকেট আছে কিনা আগেই জেনে নিন।
ভ্রমণ পরিকল্পনাঃ
প্রথম দিনে শহর ও এর আশপাশের দর্শনীয় জায়গাগুলোতে বেড়ানো যেতে পারে। পরের দিনটি পুরোপুরি রাখুন কাপ্তাই লেক ভ্রমণের জন্য।
জররি প্রয়োজনেঃ
সদর হাসপাতাল ০৩৫১-৬৩০৩০, ফায়ার সার্ভিস ০৩৫১-৬২২২০, সদর থানা ০৩৫১-৬২০৬০, ৬২০২২।
Source: http://amaderitaly.com
No comments:
Post a Comment