Search This Blog

FCO Travel Advice

Bangladesh Travel Advice

AFRICA Travel Widget

Asia Travel Widget

Friday, February 11, 2011

পর্যটন প্যারাডাইজ কক্সবাজার

পর্যটন প্যারাডাইজ কক্সবাজার
শহীদুল ইসলাম

কক্সবাজারের প্রাচীন নাম বাকোলী। সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এর নাম চঊঘএডঅ হয়। রাখাইন শব্দ চঊঘএডঅ অর্থ হলুদ ফুল। পরবতর্ীতে ঈড়ী'ং ইধমধৎ নামের পিছনে আছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। সংক্ষেপে বলতে গেলে ১৭৮৪ সালে বার্মার রাজা বোধপায়া (১৭৮২-১৮১৯) আরাকান দখল করে আরাকানীদের উপর নৃশংস অত্যাচার চালায়। বমর্ীদের অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আরাকানীরা দলে দলে কক্সবাজার অঞ্চলে আশ্রয় নেয়। জঙ্গলাকীর্ণ এলাকাকে আবাদযোগ্য করে তোলার উদ্দেশ্যে কোম্পানী উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দেয়। ১৭৯৯ সালে আরাকানী উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের জন্য ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তিনি প্রতিটি উদ্বাস্তু পরিবারকে ১ হেক্টর জমি বন্দোবস্ত দেন এবং ছয় মাসের রসদ বাবদ ২৬ মণ করে খাদ্যশষ্য ঋণ প্রাদন করেন। কিন্তু আরাকানী উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের কাজ শেষ করার আগেই হিরাম কক্স মৃতু্যবরণ করেন (১৭৯৯)। ক্যাপ্টেন কক্সের স্মৃতি রক্ষার্থে তার নামে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই থেকেই কক্সবাজার নামের উৎপত্তি।
মাইলের পর মাইল সোনালী বালুকাময় বেলাভূমি। লতা-গুল্ম বন-বনানী দিয়ে সুশোভিত তরঙ্গায়িত খাড়া পাহাড়। তরঙ্গ বিধৌত ফেনাযুক্ত ঢেউ। রঙ্গিন শামুক-ঝিনুকের সম্ভার, সু-স্বাদু সামুদ্রিক খাদ্য, ১২০ কিলোমিটার পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত যা বঙ্গোপসাগরের নীল জল রাশির দিকে ক্রম ঢালু। কক্সবাজারের উত্তরে আছে চট্টগ্রাম এবং পাহাড়ি জেলা বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি, পূর্বের দিকে মায়ানমার, দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বঙ্গোপসাগর, সুসজ্জিত সমুদ্র তীর, প্রধান সড়কের দুইধারে সৌখিক দ্রব্যাদিসহ সজ্জিত দোকান, রাখাইনদের কুঁড়ে ঘর। এখানে আকাশ নীল। উচ্ছ্বসিত শিশুর মত ঢেউ খেলে যায় সাগরের বেলাভূমিতে। নারিকেলের বীথি মিতালি করে রাখাইন কিশোরীদের সাথে। পশ্চিম আকাশে আগুনে পুড়ে লাল করে ডুবে যায় দিনের সূর্য। বিদায়ী সেই লগন ব্যথাতুর করে মানব হূদয়কে । সারা রাত এইভাবে কাটিয়ে পাহাড়ের বুক চিরে ঝুটিওয়ালা মুরগীর ডিমের লাল কুসুমের মতো গোল সূর্য ওঠে আবার। সেটি আভা ছড়ায়, আকাশের গায়ে আবীর মাখায়। পাহাড়ের ঢালে লুকিয়ে থাকে ভোরের সূর্য। এ যেন এক তরুণীর না বলা অব্যক্ত গল্প গাঁথা। ঠিক এমনই ছবির মত সাজানো সাগর কন্যা কক্সবাজার।
মনে হয় স্রষ্টা আপন হাতে উপুড় করে দিয়েছেন তার সৌন্দর্য। এ যেন স্বর্গ নরকের রহস্যপুরী।
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ও বনভূমির নয়নাভিরাম দৃশ্য কক্সবাজারকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করেছে। এখানে প্রতি বছর ১৫ মিলিয়ন লোক আগমন করে যার ৩% হলো বিদেশী। প্রায় দুই শত কোটি টাকা সরকারের প্রতি বছর রাজস্ব আয় হয়। পর্যটনকে কেন্দ্র করে এখানে বহুধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে বহু হোটেল, মোটেল, কটেজ গড়ে উঠেছে। কক্সবাজারকে ঘিরে বিজ্ঞাপন টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকায় প্রচার হচ্ছে-নতুন নতুন সুরম্য অট্টালিকা তৈরি হচ্ছে যা কক্সবাজারকে টু্যরিস্ট প্যারাডাইজে পরিণত করেছে।
সরকারও শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে পর্যটন শিল্পকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
পর্যটনকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে মৎস্য, গবাদি পশু ও হাঁস মুরগীর খামার। এছাড়া সীমান্ত পথে বার্মা, থাইল্যান্ড, চীন প্রভৃতি দেশ থেকে আগত বিলাস সামগ্রীর বাজার বার্মিজ মার্কেট। বার্মিজ মার্কেটে সুন্দরীদের জিনিসপত্র বিক্রি কার না দৃষ্টি কাড়ে। প্রভৃতির মাধ্যমে সরকারের আয় ছাড়াও স্থানীয়দের কর্ম সংস্থানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক বাণিজ্যের পথ প্রশস্ত করেছে। কক্সবাজারের খনিজ সম্পদের মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস, গন্ধক, জিরকন, ইলমেনাইট, ব্রুটাইল, ম্যাগিনাটাইট, সোনাজাইট, কয়নাইট প্রভৃতি উলেস্নখযোগ্য। তাছাড়া সৈকতে মূল্যবান ইউরেনিয়াম এবং ইষধপশ এড়ষফ পাওয়ার ঘটনাও ঘটছে যা আমাদের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরাতে পারে।
একুশ শতকে বাঙালির অতীতের জ্বরা জীর্ণ অবস্থা কাটিয়ে নতুনভাবে জাগার ডাক পড়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পর্যটন একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা পালন করে চলেছে। থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বহু দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একমাত্র পথ হল পর্যটন শিল্প। নেপালের মোট রাজস্ব আয়ের প্রায় চলিস্নশ ভাগই এই খাত হতে অর্জিত হয়। পর্যটনকে বলা হয় ওহারংরনষব বীঢ়ড়ৎঃ মড়ড়ফং- বা অদৃশ্য রপ্তানি পণ্য। বাংলাদেশের মত অনেক দেশে যেখানে রপ্তানি পণ্য বই কম সেখানে কক্সবাজার এর মত সমুদ্র সৈকত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অফুরন্ত সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি বেকারত্ব দূরীকরণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রীতি সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
[ লেখক : গবেষক]

No comments:

Post a Comment