Search This Blog

FCO Travel Advice

Bangladesh Travel Advice

AFRICA Travel Widget

Asia Travel Widget

Friday, November 27, 2009

বান্দরবান জেলার মানচিত্র জেড ইসলাম

বান্দরবান জেলার মানচিত্র


পাহাড়, ঝরনা, নদী ও অনেক নৃগোষ্ঠীঅধ্যুষিত বান্দরবান জেলাটি বাংলাদেশের খুবই সুন্দর একটি স্থান। তবে আজও এই জেলার সৌন্দর্য পুরোটা আবিস্কার হয়নি বলেই মনে হয়। আজও সবাই বান্দরবান বলতে কেবল বান্দরবান সদর, রুমা, বগা লেক আর ক্রিওক্রাডংই বোঝে। অথচ বান্দরবান তো কেবল রুমা, বগা লেক আর ক্রিওক্রাডং নিয়েই তো নয়- বরং বান্দরবান আরও বড়- আরও সুন্দর; তীব্র সুন্দর। এদেশের প্রত্যেকেই যেন সে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে সে জন্য সর্বপ্রথমে বান্দরবান জেলার মানচিত্রের পাঠ জরুরি।

বান্দরবান জেলার মানচিত্র। লক্ষ করুন-সাঙ্গু নদীটি বয়ে গেছে উত্তর থেকে পুব দিকে। রোয়াংছড়ির অবস্থান বান্দরবান ও রুমার মাঝখানে । রুমার দক্ষিণে থানচি; পশ্চিমে লামা। লামার দক্ষিণ-পুবে আলিকদম। সাঙ্গু ছাড়াও আরও একটি নদী রয়েছে বান্দরবানে- মাতামুহুরী। লামা আর আলিকদম হয়ে মাতামুহুরী নদী চলে গেছে দক্ষিণ পুবে। দক্ষিণ-পশ্চিমে নাইক্ষ্যংছড়ি। কাজেই বান্দরবান আজও দেশিও পর্যটকদের কাছে প্রায় অধরাই রয়ে গেছে।
কী ভাবে বান্দরবান ভ্রমনের পরিসর বাড়ানো যায়?
উত্তর ঐ একই। সরকারি উদযোগ, নিরাপত্তা ও বেসরকারি বিনিয়োগ। আগে নিরাপত্তার সমস্যা ছিল। আজ সেরকম উদ্বেগজনক পরিস্থিতি আর নেই। এ প্রসঙ্গে আমার সাম্প্রতিক একটি লেখা-

পাহাড়ে নেমেছে শান্তি

কবে যেন রক্ত ঝরেছিল শালগাছের গুঁড়িতে
ছিন্ন করেছিল বুলেট নিরীহ শালপাতাদের?
কবে যেন সাঙ্গুর রক্তিম জলে
ভাসানে গিয়েছিলেন ভয়ার্ত দেবতা বুঙঅ?
কবে যেন মৃত্যুর আগে সাপছড়ির গন্ধ
পেয়েছিল প্রতিরোধ যোদ্ধাটি ...

কবে?

এখন চারিদিকে ভালোবাসাময় রোদ্দুর ছড়িয়ে আছে।
এখন পূর্বেকার বিরোধসমূহ সব অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়;
এখন শালগাছের পাতায় পাতায় প্রতিফলিত ঝলমলে রোদ
এখন পূর্ন শান্তি নেমেছে নদী ও পাহাড়ে ...
এখন পর্যটকে পূর্ন পাহাড়ে ও নদীতে কাটছে নিরুদ্বিগ্ন দিন ও রাত।
এখন পূর্বেকার সব রক্তপাত দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়

পাহাড়ে নেমেছে শান্তি।
এ শান্তি অক্ষয় হোক।




বান্দরবান জেলার মানচিত্র আমাদের জানিয়ে দেয় -আমরা এখনও পাহাড়, ঝরনা, নদী ও অনেক নৃগোষ্ঠীঅধ্যুষিত বান্দরবান জেলাটি সম্পূর্নরুপে এক্সপ্লোর করতে পারিনি। এই ১০/১৫ বছর আগেও পর্যটকশূন্য চিম্বুক বা রুমা থমথম করত। এখন ওখানে ক্রমেই দেশিও ট্যুরিষ্টদের ভিড় জমে উঠছে। তবে এখনও বান্দরবান জেলার সৌন্দর্য আবিস্কার পুরোটা হয়নি। কী ভাবে বান্দরবানের রুপ পুরোটা দেখা যায়? লামা, থানচি ও নাইক্ষ্যংছড়িতে কি গড়ে উঠতে পারে না সরকারি ও বেসরকারি উদ্যেগে ট্যুরিষ্ট কটেজ? আলীকদমের একটি পাঙ্খো গ্রামে কি একবেলা বনমোরগের মাংশ দিয়ে ভাত খাওয়া যায় না? রোয়াংছড়ির খুমিদের গ্রামের উঠানে বসে আহারান্তে এক রৌদ্রময় দুপুরের আড্ডা কি হতে পারে না? মাতামুহুরী নদীতে কি সাদা রঙের স্টিমার ভাসতে পারে না? শুনেছি নাইক্ষ্যংছড়ি তে রয়েছে বিশাল বিশাল আনারস ক্ষেত। সে মনোরম দৃশ্য কি দেখবে না এদেশের অন্যরা? সবাই চা বাগান দেখতে সিলেটে যায়-দিনবদলের পালা শুরু হোক। আসলে বাংলাদেশ আমাদের অনেকটাই অদেখা। নতুন পথ খুলছে।


এই শান্ত নির্জন গ্রামে আছে অপার শান্তি

এই ঝরনার শীতল জলেও আছে শান্তি

এই গভীর নির্জনতা আপনাকে ডাকছে

ছবিগুলো ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত ।
বান্দরবান জেলার মানচিত্র; বাংলাপিডিয়ার সৌজন্যে।
By- জেড ইসলাম
skzihad@hotmail.com

Tuesday, November 17, 2009

জার্নি টু 'সাজেক' - পাহাড়ের এক রানী ।

জার্নি টু 'সাজেক' - পাহাড়ের এক রানী ।


কিছুদিন পুর্বে সাজেক গিয়েছিলাম কোনো একটা কাজে। অসম্ভম রকমের চোখ ধাঁধানো সুন্দর জায়গা বলে কিছু ছবি তুলে এনেছিলাম। পাঠকদের জন্য দিলাম, আশা করি ভাল লাগবে।
সাজেকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
রাঙামাটির জেলার বাঘাইছরি উপজেলার একটি ইউনিয়ন সাজেক। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন সাজেক আয়তনে বিশাল, বাংলাদেশের অনেক উপজেলার চেয়েও আয়তনে বড়। এটির অবস্হান খাগড়াছড়ি জেলা থেকে উত্তর-পুর্ব দিকে। মুল সাজেক বলতে যে স্হানকে বুঝায় সেটি হলো 'রুইলুই' এবং 'কংলাক' নামের দুটি বসতি, স্হানীয় ভাষায় 'পাড়া'। সমতল ভুমি থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্হিত 'রুইলুই' এবং 'কংলাক' বসতি, (এই উচ্চতা আমার নিজের মাপা জিপিএস দিয়ে)। রুইলুই-এর উচ্চতা কিছুটা কম, প্রায় ১৭৮০ ফুট; সবচেয়ে উচু হলো কংলাক পাড়া, প্রায় ১৮০০ ফুট।
রুইলুই এবং কংলাক থেকে ভারতের মিজোরাম রাজ্য বেশ কাছাকাছি, হাটার দুরত্ব প্রায় দুই ঘন্টার। এজন্য সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রায়, পোষাক-পরিচ্ছদে আধুনিকতার ছাপ পড়েছে। মেয়েরা প্রায় সবাই পশ্চিমা স্টাইলে জিন্স প্যান্ট, গেন্জি বা টি-শার্ট পরিধান করে থাকে। তাদের প্রায় সবারই ছেলেমেয়েকে বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না দিয়ে মিজোরামের উন্নত এবং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল-কলেজে পড়ালেখার জন্য পাঠায়। একারনে তাদের অনেকেই ইংরেজিতে কথা বলতে অভ্যস্ত। পাহাড়ী জীবনযাত্রায় তারাই সবচেয়ে উন্নত।


পাঠকদের জন্য কিছু ছবি :
১) সর্বশেষ কংলাকে উঠতে পাথরের সিড়ি


২) কংলাকের পাহাড়ের চুড়াটি পাথরের

৩) নিচে একটি পাড়া এবং দুরে ভারতীয় সীমানায় উচু পাহাড়ের সারি
৪) দিগন্তে পাহাড়ের সারি

৫) বিস্তীর্ন পাহাড়ের উপর মেঘের ছায়া

৬) পাহাড়ি বাঁশের জঙ্গল

৭) মেঘের সাগর

৮) মেঘের সাগরে পাহাড় মাথা উচু করে দাড়িয়ে

৯) পাহাড় ডুবে আছে মেঘের সাগরে

১০) উচুতে একা দাড়িয়ে সে, তাকে আমার ভাল লেগেছে

১১) এই স্হানটুকুই সম্ভবত সাজেকের সর্বোচ্চ স্হান

১২) কংলাকে যাওয়ার পথে এই উচু বটগাছটি দেখা গেল

১৩) সাজেকের অধিবাসীদের ঘরগুলো এমনই সুদৃশ্য

৪) ওখানে অনেক কফি গাছ হয়, কফি গাছের ফল

১৫) এগুলো হলো কফি গাছ

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২১

By- জেড ইসলাম
skzihad@hotmail.com

Thursday, November 5, 2009

ঐতিহ্যের লীলাভূমি বিক্রমপুর

ঐতিহ্যের লীলাভূমি বিক্রমপুর

রাজীব পাল রনী
এক সময় ছিল ঢাকার দক্ষিণ থেকে বরিশালের উত্তর পর্যন্ত। পশ্চিমে পদ্মা থেকে মেঘনা, বহ্মপুত্র জলরাশি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। গুপ্তবংশ, চন্দ্রবংশ, বর্মবংশ, পালবংশ ও সেন বংশীয় পর্যায়ক্রমে রাজাদের রাজধানী ছিল বিক্রমপুর। প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে বিক্রমপুর নানা কারণে বিখ্যাত। বর্তমানে এ অঞ্চলটি মুন্সীগঞ্জ হিসেবে পরিচিত। এ জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে অনেক প্রাচীন নিদর্শন। বাংলার প্রাচীন রাজধানী বিক্রমপুরের সেই জৌলুস এখন তেমন আর নেই। কিন্তু ইতিহাস ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এখনও প্রাচীন বিক্রমপুরের কথা মনে করিয়ে দেয়। তাই ঐতিহ্যের লীলাভূমি বিক্রমপুর শীতের এই ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন।
ইদ্রাকপুর দুর্গ : মুন্সীগঞ্জ শহরের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন ইদ্রাকপুর দুর্গ। জলদস্যু ও পর্তুগিজদের আক্রমণ থেকে বাংলার রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ সমগ্র এলাকাকে রক্ষা করার জন্য এই দুর্গ নির্মিত হয়। বাংলার সুবেদার ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলার মেঘনা, ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গমস্থলের পশ্চিম তীরে ইদ্রাকপুর নামক স্থানে দুর্গটি নির্মাণ করেন। এটি মোগল স্থাপত্যের অনন্য সাক্ষী। সুউচ্চ প্রাচীর বিশিষ্ট এই দুর্গের প্রতিটি কোনায় রয়েছে একটি বৃত্তাকার বেষ্টনী। দুর্গের মাঝে মূল দুর্গ ড্রামের মতো দেখতে। দুর্গের প্রাচীর শাপলা ফুলের পাপড়ির মতো ছড়িয়ে আছে ও প্রতিটি পাপড়িতে ছিদ্র রয়েছে। ছিদ্র দিয়ে শত্রুকে মোকাবিলা করার জন্য বন্দুক ও কামান ব্যবহার হতো। মূল প্রাচীরের পূর্ব দেয়ালের মাঝামাঝি অংশে ৩৩ মিটার ব্যাসের একটি গোলাকার উঁচু মঞ্চ রয়েছে, দূর থেকে শত্রু চলাচল পর্যবেক্ষণের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। দুর্গের উত্তরদিকে প্রাচীর মূল বিশালাকার প্রবেশপথ রয়েছে। এই দুর্গের প্রবেশপথের পাশেই একটি সুড়ঙ্গ পথ রয়েছে। কথিত আছে, এই সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে ঢাকা লালবাগের দুর্গে যাওয়া যেত।
অতীশ দীপঙ্কর স্মৃতিস্তম্ভ : সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী অতীশ দীপঙ্কর ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে মুন্সীগঞ্জ জেলার তথা বিক্রমপুর পরগনার বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার স্মৃতিকে চিরঞ্জীব করে রাখার জন্য বজ্রযোগিনী গ্রামে তার ভিটায় স্থাপিত হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। সে সময় প্রখ্যাত বৌদ্ধ পণ্ডিত অবধূত জেতারির কাছ থেকে ব্যাকরণ ও অংক শাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শী হয়ে ওঠেন। চীন সম্রাট দীপঙ্করের পাণ্ডিত্য ও বিজ্ঞতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ‘অতীশ শ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তার রচিত বহু মূল্যবান গ্রন্থ ইতালির টুচি ও পণ্ডিত হরপ্রসাদ আবিষ্কার করেন। স্তম্ভটি দেখতে যেতে হলে মুন্সীগঞ্জ থেকে স্কুটারে অথবা রিকশায় যাওয়া যায়। মুন্সীগঞ্জ শহর থেকে বজ্রযোগিনী ৪ কিলোমিটার।
জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি জাদুঘর : বাংলাদেশের কৃতী সন্তান এবং বিশ্বে স্বীকৃতি অর্জনকারী প্রথম সফল বিজ্ঞানী হলেন স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু। তিনি বেতার বার্তার পথদ্রষ্টা ও উদ্ভিদের যে প্রাণ আছে তিনি প্রথম প্রমাণ করেন। পৈতৃক আদি নিবাস বিক্রমপুরের শ্রীনগর থানার ঢ়াঢ়িখাল গ্রামে যা কিনা মুন্সীগঞ্জ শহর থেকে যেতে সময় লাগে ৫০ মিনিট। বিশ্ববরেণ্য এ বিজ্ঞানীর মৃত্যুর পর পৈতৃক বাড়িটি স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। এই বাড়ির মধ্যে রয়েছে ৬টি পুকুর। এছাড়া তার মধ্যে ১৯২১ সালে স্কুল ও পরে ১৯৯১ সালে কলেজ স্থাপন করা হয়। ৬ কক্ষবিশিষ্ট বিল্ডিংয়ের মধ্যে একটি কক্ষকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে। এ জাদুঘরের মধ্যেও তেল রং দিয়ে আঁকা ১৭টি দুর্লভ ছবি রয়েছে। জাদুঘরে জগদীশ চন্দ্র বসুর উপর উক্তি করা লেখা ও চিঠি রয়েছে। জাদুঘরের ভেতরে শোকেসগুলোর মধ্যে তার স্মৃতি বিজড়িত কিছু ব্যবহৃত বাসনপত্র রয়েছে।
তাছাড়া বিক্রমপুরের ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে সোনা রংয়ের জোড়া মঠ, বাবা আদমের মসজিদ, পোড়া মাটির নকশা করা এবং আদম মসজিদ সুলতানি আমলে তৈরি করা হয়েছে। উপমহাদেশের বিখ্যাত সাঁতারু ব্রজেন দাসের বাড়ি, বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী ঔপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি, রাজা বল্লাল সেনের দীঘি, ৮০০ বছরের ইটের পুল এবং সর্বোচ্চ মঠ শ্রীনগরের শ্যামসিদ্ধির মঠ ইত্যাদি বিক্রমপুরের ইতিহাসের পাতায় কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে যুগ যুগ ধরে। ভ্রমণপিপাসুরা ঐতিহ্যের লীলাভূমি বিক্রমপুরকে একনজর দেখার জন্য ছুটে আসে। আপনিও ইচ্ছা করলে ঘুরে আসতে পারেন ঐতিহ্যের লীলাভূমি বিক্রমপুরে।
কীভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে ৩০ কিলোমিটারের পথ বিক্রমপুরের মুন্সীগঞ্জ। গুলিস্তান থেকে বাসে সময় লাগে এক ঘণ্টা। শঙ্খচিল, গাংচিল, নয়ন, ডিটিএল পরিবহনে মুন্সীগঞ্জে ঘুরে আসা যায়। মুন্সীগঞ্জ থেকে সিএনজিতে সারাদিনের জন্য রিজার্ভ করে ঘুরে আসতে পারেন। মুন্সীগঞ্জের ভেতরে আবাসিক ও অনাবাসিক হোটেল রয়েছে। তাছাড়া মুন্সীগঞ্জের পদ্মা রিসোর্টে থাকার সুব্যবস্থা আছে। এই রিসোর্টটিতে চারদিকে পদ্মা নদী প্রবাহিত হওয়ায় চরাঞ্চলের গ্রামজীবন ও পুরো চরজুড়ে চোখে পড়বে পদ্মা নদীর স্রোতধারা। দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য রয়েছে পদ্মার টাটকা ইলিশ মাছ, সবজি, ঘন ডাল ও মুরগির মাংস। পদ্মা রিসোর্টে ঘুরতে চাইলে অথবা খাওয়া-দাওয়া করতে চাইলে যোগাযোগ করুন : মিলেনিয়াম ট্যুর অপারেটর, ৮৪ নয়া পল্টন, ঢাকা, মোবাইল : ০১১৯-৯৪২৮৩৫৪, ০১৯১-৩৫৩১৮২০ অথবা ০১৭১-৩০৩৩০৪৯।

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার : ঐতিহ্য আর পুরাকীর্তির হাতছানি

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার : ঐতিহ্য আর পুরাকীর্তির হাতছানি

রাজিব পাল রনি
শীতের সকাল। সুনীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো ঘন কুয়াশা ভেসে বেড়াচ্ছে। কুয়াশার ফাঁকে ফাঁকে সূর্যের আলো প্রকৃতির বুকে বুলিয়ে দিচ্ছে কোমল পরশ। যাব যাব করছি অথচ যাওয়া হয়নি। ভাবছি আর ভাবছি কোথায় যাওয়া যায় এ শীতে নতুন বছরে। এ শীতে বছরের শুরুতে আমরা বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন নওগাঁ জেলার পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ইউনেস্কো ঘোষিত ৩২২তম বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত। ১৯৮৫ সালে এটি বিশ্ব ঐতিহ্য’র অন্তর্ভুক্ত হয়। তাই আমি ও আমার বন্ধুরা মিলে এই ঐতিহ্যকে দেখার জন্য এ বছরের প্রথম সপ্তাহে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। আমি ছাড়া আমার সঙ্গে আরও কয়েকজন বন্ধু ও রতন মামা ছিল। কল্যাণপুর থেকে নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের বাস ছাড়ল। নতুন একটা জায়গায় যাচ্ছি—আনন্দ লাগছিল। গল্পে গল্পে কেটে যাচ্ছে পথের দূরত্ব। যমুনা সেতু পার হয়ে যাত্রাবিরতি পাওয়া গেল। এরপর আবার ছুটে চলা। চারপাশে সবুজ গাছ আর প্রাকৃতির সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর বাসের তীব্র ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙে গেল আমাদের। তাকিয়ে দেখি আমরা নওগাঁয় চলে এসেছি। নওগাঁ থেকে ৩৪ কিলোমিটারের-এর পথ পাহাড়পুর। নওগাঁ শহর থেকে লোকাল বাসে বদলগাছি যেতে সময় লাগে ঘণ্টা দেড়েক। নওগাঁ জেলার বদলগাছি থানার পাহাড়পুর গ্রামে ‘পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার’ অবস্থিত।
পাহাড়পুর গ্রামে এসে প্রথমেই চোখ পড়ল পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ও জাদুঘরে। প্রথমেই বন্ধুরা মিলে টিকিট কেটে পাহাড়পুর জাদুঘরে প্রবেশ করলাম। জাদুঘরে প্রবেশের পরে বিশাল বাগান ও নানান ফুলের সমারোহ সবাইকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য যেন প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। জাদুঘরের ভেতরে ঐতিহ্য আর পুরার্কীতির নিদর্শন। পাহাড়পুর জাদুঘরে রয়েছে— অলঙ্কৃত পোড়ামাটির ইট, বেলে পাথরের শিশু ও নারীর ভার্স্কয, মৃত্পাত্রের হাতল, সেকালের পোড়ামাটির খেলনা, দশম শতাব্দীর বেলে পাথরের সূর্যদেবতা, নবম শতাব্দীর কালো পাথরের লোকনাথ মূর্তি, একাদশ শতাব্দীর কালো পাথরের বিষ্ণু মূর্তি, সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহর রাজত্বকালে (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রি.) পুকুর খনন উপলক্ষে আরবি শিলালিপি ও কালোপাথরে শিবমূর্তি এই জাদুঘরে রয়েছে। জাদুঘর ঘুরে দেখা শেষ হতেই তারপর খোলাবাগানে কিছুক্ষণ আড্ডা চলল। রোদ পড়ে আসতেই জাদুঘরে দর্শনার্থীদের আনাগোনা বাড়তে লাগল। খ্রিস্টীয় আট শতকের দিকে অথবা নয় শতকের প্রথমদিকে তৈরি করা হয়েছে। খ্রিস্টীয় বারো শতকের দিকে বঙ্গাল সৈন্যদের দ্বারা অগ্নি সংযোজিত হলে বিহারটি পরিত্যক্ত হয়। যুগ যুগ ধরে এর ধ্বংসাবশেষের ওপর মাটিচাপা পড়ে বিশাল আকৃতির পাহাড়ে রূপ নেয়। বিহারের প্রবেশদ্বারে বিশাল সাইনবোর্ডে পাহাড়পুরের ইতিহাস লেখা রয়েছে, সাইনবোর্ডটি পড়লে এর ইতিহাস জেনে নেয়া যায়। জানা যায় ৭৭০-৮১০ খ্রি. দ্বিতীয় পাল সম্রাট শ্রী ধর্মপাল এই বিহার নির্মাণ করেছিলেন। যার প্রকৃত নাম সোমপুর বিহার। দূর থেকে মন্দিরের চূড়াটি দেখে মনে হয় পাহাড়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ধুলার আস্তরণে চাপা পড়ে এখন পাহাড় চূড়ার মতোই মনে হয়। পুরোটাই সবুজ ঘাসের চাদরে ঘেরা। চত্বরের অন্যান্য স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে একাধিক নৈবেদ্য স্তূপ, ভোজনশালা, মণ্ডপ ভবন। হিমালয়ের দক্ষিণাংশে একক ভবন হিসেবে গড়ে ওঠা বিহারগুলোর মধ্যে এটা সর্ববৃহত্ এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নসম্পদ। এ বিহারটি বেশ কয়েকবার প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের ভেতরে উন্মুক্ত স্থানের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে কেন্দ্রীয় মন্দির। প্রায় ২৭ বর্গমিটার জায়গার ওপর মন্দিরটির ধবংসাবশেষের উচ্চতা প্রায় ২১ মিটার। আমরা আস্তে আস্তে যে যার মতো করে দেখে নিচ্ছি। কী অপূর্ব! বিহারের বাইরের দেয়ালগুলোর গায়ে পোড়ামাটির ফলকে অঙ্কিত মূর্তি, যা হাজার বছর আগের শিল্পীর রীতিকেই মনে করিয়ে দেবে। শীতে এখানে বেড়ানোর মজাই আলাদা। পাহাড়পুর বিহার উত্তর-দক্ষিণে ৯২২ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১১৯ ফুট। বিহারের উন্মুক্ত আঙ্গিনার চারপাশে চার বাঁ থেকে ১৭৭টি কক্ষ আছে। আমরা বন্ধুরা মিলে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম, তখন পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়েছে।
কীভাবে যাবেন : দেশের যে কোনো স্থান থেকেই সড়কপথে পাহাড়পুর যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে দূরত্ব ২৮০ কিলোমিটার। বাস ও রেলপথ দু’ভাবেই যাওয়া যায়। ঢাকার কল্যাণপুুর থেকে ও গাবতলী থেকে বাসযোগে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে নওগাঁর পাশের জেলা জয়পুরহাট থেকে পাহাড়পুর যাওয়া যায়। কারণ, জয়পুরহাট থেকে সময় লাগে ৩০ মিনিট। মনটাকে আরওও চাঙ্গা করতে চাইলে জয়পুরহাটের কোনো আবাসিক হোটেলে থেকে আপনি পাহাড়পুরসহ আরও কয়েকটি স্থাপনা ঘুরে আসতে পারেন যেমন—বগুড়ার মহাস্থান গড় ও জাদুঘর। ঢাকা থেকে জয়পুরহাট হয়ে পাহাড়পুর হানিফ, শ্যামলী, জোনাকি পরিবহনে যাওয়া যায়। তাতে ভাড়া পড়বে ৩৫০-৪০০ টাকার মধ্যে।
কোথায় থাকবেন : নওগাঁ শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন রকম আবাসিক ও অনাবাসিক হোটেল রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম অবকাশ, যমুনা, আরিফ ইত্যাদি হোটেল রয়েছে। ইচ্ছে করলে আপনি অল্প খরচে রাতযাপন করতে পারেন। তাছাড়া নওগাঁর পাশের জেলা জয়পুরহাট সদরের সৌরভ, পূরবী, পৃথিবী ইত্যাদি আবাসিক হোটেল রয়েছে, যা কিনা পাহাড়পুর থেকে ৩০ মিনিটের পথ। শীতকালীন সময়সূচি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। রোববার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধ এবং অন্যান্য ছুটির দিনে বন্ধ থাকে।