Search This Blog

FCO Travel Advice

Bangladesh Travel Advice

AFRICA Travel Widget

Asia Travel Widget

Tuesday, January 12, 2010

বিনাশের পথে সুন্দরবন

বিনাশের পথে সুন্দরবন

০০ নাসিম আলী, পিরোজপুর অফিস

'সাইড না ফাইট'- এই উক্তিটি হচ্ছে সুন্দরবনে ডাকাতদের সাথে বন বিভাগের সহাবস্থানের কৌশল। বনের ভিতরের নৌ-পথে চলাচলের সময় যখন উভয়পক্ষ মুখোমুখি হয় তখন ডাকাতরা বন কর্মকতা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে এই কথাটি আওড়ায়। বন কর্মীরা তখন এর জবাবে 'সাইড' বলেই যে যার মত পরস্পরকে পথ ছেড়ে দেয়। সশস্ত্র বনরক্ষীরা চ্যালেঞ্জ করে কখনও 'ফাইট' বলে দ্বিতীয় শব্দটি উচ্চারণ করেছে এমন উদাহরণ সুন্দরবনে মেলা ভার। এভাবেই এক ধরনের অনাক্রমণ নীতিতে চলে সুন্দরবনের অসহায় বন প্রশাসন আর পরাক্রমশালী বন দসু্যরা।

গত অক্টোবরের কোন এক সময় দুবলার চরের কাছাকাছি নারিকেলবাড়িয়া জেলে পলস্নীর বন অফিসের কাছাকাছি দুবলা টহল ফাঁড়ির এক পুলিশ কর্মকর্তা এভাবেই একবার ডাকাতদের মুখোমুখি হন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী মৎস্য ব্যবসায়ী জানান। যথারীতি ঐ কর্মকর্তা টহল নৌ-যান থেকে উত্তর আসে 'সাইড'। এরপর দু'পক্ষ কাছাকাছি হয় এক সময় ঐ কর্মকর্তাকে আরোহণ করেন কুখ্যাত ডাকাত সর্দার জুলফিকারের ট্রলারে। ডাকাত সর্দার ও কর্মকর্তার সাথে একান্তে কিছুক্ষণ কথা হয়। ঐ কর্মকর্তা ফিরে আসেন বন বিভাগের টহল যানে। সাথে নিয়ে আসেন আপেল-কমলাসহ কিছু খাদ্যসামগ্রী ও উপঢৌকন। সুন্দরবনে বন বিভাগের সাথে ডাকাতদের এরূপ সহাবস্থান চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। বিভিন্ন বন অফিস, টহল ফাঁড়ি, কূপ অফিস ডাকাতদের আশ্রয়স্থল হিসাবে ব্যবহূত হওয়ার খবর পুরোন। রাতে ডাকাতরা বন অফিসে গেলে তাদের সর্দারের নিশিযাপনের জন্য বন কর্মকর্তার বিছানাটি ছেড়ে দেয়া, ভূড়িভোজ করানো, সুযোগ থাকলে নারীসঙ্গ উপহার এসবই বন বিভাগের পরিচিত রীতি। অথচ এই বন বিভাগের উপর সুন্দরবন সংরক্ষণের দায়িত্ব ন্যস্ত।

গত ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের শেষে দুবলার চরের বিভিন্ন জেলে পলস্নীতে গণডাকাতি ও কক্সবাজারের এক মৎস ব্যবসায়ীর পুত্রের অপহরণের ঘটনায় প্রমাণ মিলেছে এই জাতীয় সম্পদ সুন্দরবন রক্ষায় বন বিভাগ সেখানে কতটা অসহায়। এ ঘটনার খবর করতে গিয়ে এ প্রতিবেদকের বিভিন্ন সময় কথা হয়েছে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ কামাল উদ্দিন ও দুবলা টহল ফাঁড়ির ওসি অনীল কুমার সাহার সাথে। তাদের উভয়ের বক্তব্য ছিল সুন্দরবনের ডাকাতদলগুলো এতটাই আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত এবং দলে ভারী যে সীমিতসংখ্যার বন রক্ষীদের পক্ষে কোন প্রতিরোধ সৃষ্টি করা অসম্ভব। বন বিভাগ কিছু রুটিন টহল আর আদায়কৃত রাজস্ব রক্ষা করেই তাদের দায়িত্বসম্পন্ন করেন মাত্র। অথচ সামপ্রতিককালে সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরে ডাকাতদের বেপরোয়া দৌরাত্ম্য উপকূলের মৎস্য আহরণ ক্ষেত্রকে মারাত্মক হুমকির মুখোমুখি করেছে।

পর দু'টি শুঁটকি মৌসুমে দুবলার চরসহ সুন্দরবন উপকূলের শুটকি ব্যবসা ক্রমান্বয়ে ডাকাতদের হাতে চলে গেছে। ডাকাতরা জেলেদের অর্থকড়ি কেড়ে নিচ্ছে এবং এ লুণ্ঠিত অর্থ হাত বদল হয়ে শুঁটকি ব্যবসায় পুঁজি হিসাবে খাটছে। মংলা ও রামপাল উপজেলা বাসিন্দা জুলফিকার, রাজু, গামা, নাসির, মজনু'র মত ডাকাত সর্দারদের নেতৃত্বাধীন প্রধান প্রধান বনদসু্য বাহিনীগুলো এ এলাকার কিছু প্রভাবশালী সমাজপতি, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধিদের মদদে উঠতি একদল মৎস্য ব্যবসায়ীর মাধ্যমে সুন্দরবন উপকূলে আধিপত্য বিস্তার করছে। মংলার জলমনি এলাকার বাসিন্দা বনদসু্য সর্দার রাজু টাকা খাটাতে শুরু করেছে শুঁটকি মাছ ব্যবসায়। একই এলাকাবাসী হওয়ায় ডাকাত ও তথাকথিত ব্যবসায়ীদের মাঝে গড়ে উঠেছে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অাঁতাত। চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের বহরদার ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের দীর্ঘকাল ধরে যে অবস্থান দুবলার চরে ছিল তা ডাকাতদের উপদ্রবে দুর্বল হয়ে গেছে। গত ডিসেম্বরের শেষে গণডাকাতির পর চট্টগ্রাম অঞ্চলের বহরদারসহ বড় বড় ব্যবসায়ীরা ভয়ে দুবলার চরের জেলে পলস্নী ছেড়ে চলে গেছেন। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এ উপকূলে শুঁটকি আহরণ নিয়ন্ত্রণকারী দুবলা ফিশার মেন গ্রুপেরও নিয়ন্ত্রণ ক্রমান্বয় দুর্বল হয়ে পড়েছে। এক কথায় বলা যায় সুন্দরবনের শুঁটকি ব্যবসা হাত বদল হয়ে ডাকাত ও তাদের দোসর তথাকথিত মৎস্য ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে। ডাকাত ভীতি সুন্দরবনের পর্যটনেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলেছে। গত কয়েক মাসে কিছু কিছু ডাকাত বিরোধী অভিযান সুন্দরবনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিচালনা করছে। এ বছর লোকালয় থেকে দুই-একজন ডাকাত ধরা পড়লেও তাদের বিরুদ্ধে ডাকাতি আইনে মামলা হয় না বলে দসু্যদের দাপট বেড়েই চলছে। গত সেপ্টেম্বরের গোড়ায় মংলার দিগরাজ থেকে রাজু বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড শহীদুল বাগেরহাটের গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই দণ্ডবিধির ৫৪ ধারায় আদালতে সোপর্দ করা হলে একমাস পর সে ছাড়া পায়। এ সময় তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কোন উদ্যোগ না নিয়ে মংলার একটি প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে শহীদুলের পক্ষে পুলিশ রিপোর্ট প্রদান করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
Source: Daily Ittefaq, 13th January-2011

No comments:

Post a Comment